শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
আদিখণ্ডঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    আদিখণ্ডঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ


    আদিখণ্ডঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ

    আদিখণ্ড
    দ্বিতীয় তরঙ্গ
    বন্দনা
    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

    মহাপ্রভুর পূর্ব পুরুষগণের বিবরণ
    দীর্ঘ-ত্রিপদী
    নাম ছিল রামদাস,        রাঢ়দেশে ছিল বাস,
    তীর্থযাত্রা করি বহুদিন।
    স্ত্রী পুরুষ দুইজনে,        শেষে যান বৃন্দাবনে,
    কৃষ্ণ প্রেমে হয়ে উদাসীন।।
    কৃষ্ণনাম উচ্চারণে,        ধারা বহিত নয়নে,
    হেরিলে পবিত্র হয় জীব।
    কাশী কাঞ্চি মধুপুরী,      সরস্বতী গোদাবরী,
    শান্তিপুর আদি নবদ্বীপ।।
    বিষয় সম্পত্তি ত্যাজে,    তীর্থ-যাত্রী পদব্রজে,
    পরে যান শ্রীচন্দ্রশেখর।
    নবগঙ্গা নাম শুনি,        দেখিবারে সুরধনী,
    লক্ষ্মীপাশা এল তারপর।।
    কৃষ্ণভক্ত শিরোমণি,      সবলোকে ধন্য মানি,
    যত্ন করি রাখিল তথায়।
    কৃষ্ণ ভক্তের সঙ্গে,        প্রেমকথা রসরঙ্গে,
    থাকিলেন শ্রীলক্ষ্মীপাশায়।।
    চন্দ্রমোহন তার পুত্র,      ক্রমে শুন তার সূত্র,
    তার পুত্র শুকদেব নাম।
    লক্ষ্মী পাশার উত্তর,        নবগঙ্গা নদী পার,
    বাস করে জয়পুর গ্রাম।।
    তস্য পুত্র কালিদাস,       বহুদিন কৈল বাস,
    তিনি যান পাথরঘাটায়।
    রবিদাস নিধিরাম,         কনিষ্ঠ শ্রীজীব নাম,
    তিনপুত্র সহিত তথায়।।
    সর্বদায় সাধুসেবা,          সংকীর্তন রাত্রি দিবা,
    মাঝে মাঝে বাণিজ্য করিত।
    যাহা করে উপার্জন,       তাহাতে সাধু সেবন,
    ক্ষেত্র কার্য্য অল্প পরিমিত।।
    একদিন কৃষ্ণ ধ্যানে,      তুলসী বেদীর স্থানে,
    বসিয়াছে কালীদাস যিনি।
    করে করে মালা জপ,     অপরে কৃষ্ণ আরোপ,
    হেনকালে হল দৈববাণী।।
    সাধুসেবা যে দিনেতে,     হবে তব ভবনেতে,
    এই বিলে আছয় প্রস্তর।
    আসিয়া বিলের কূলে,     দাঁড়াইও হরিবলে,
    ভূরি ভূরি উঠিবে পাথর।।
    সে সব পাথর লয়ে,       নিজ ভবনেতে গিয়ে,
    সাধুসেবা করিও যতনে।
    সাধুসেবা হলে পরে,      লইয়া বিলের কূলে,
    সে পাত্র রাখিও পূর্বস্থানে।।
    এরূপ করেন তিনি,        গ্রাম্য লোক তাই শুনি,
    মহোৎসব হলে কোন ঠাঁই
    প্রস্তর লইব বলে,         দাঁড়াত বিলের কূলে,
    দিয়া কালীদাসের দোহাই।।
    সে সব পাথর লয়ে,       আনিয়া নিজ আলয়ে,
    ভোজন করায় লোক সবে।
    লোকের ভোজন পরে,    আনিয়া বিলের তীরে,
    পাথর রাখিলে যায় ডুবে।।
    পুরাতন লোক জানে,     সেই বিলের দক্ষিণে,
    পাবুনে গ্রামের ছিল নাম।
    পাথর আসিত ঘাটে,       যে ঘাটে পাথর উঠে,
    হইল পাথরঘাটা গ্রাম।।
    এক বাটী একদিনে,       সে সব পাথর এনে,
    বহুলোক ভোজন করায়।
    প্রস্তর ঘাটেতে এনে,       রেখে গেল সেই স্থানে,
    একখানি পাথর না দেয়।।
    সন্ধ্যা হইল উত্তীর্ণ,         সেই পাথরের জন্য,
    হু হু শব্দ উঠিতেছে জলে।
    বিলের যত পাথর,         সবে হয়ে একুত্তর,
    সেই জল বৃদ্ধি হয়ে চলে।।
    যে ঘরে পাথর ছিল,       জলেতে ভাঙ্গিয়া নিল,
    মধুমতি নদীর মাঝেতে।
    দেবশিলা স্বপ্নাদেশে,      বলে গেল কালীদাসে,
    কলুষ পশিল এ গ্রামেতে।।
    সে কালীদাসের সুত,      নিধিরাম জ্যেষ্ঠ পুত্র,
    তিনি হন পরম নৈষ্ঠিক।
    শ্রীনিধিরামের ঘরে,        দুই পুত্র জন্ম ধরে,
    মুকুন্দরাম কনিষ্ঠ কার্ত্তিক।।
    জ্যেষ্ঠ শ্রীমুকুন্দরাম,       অশেষ গুণের ধাম,
    ঠাকুর মোচাই নামে খ্যাত।
    সফলানগরী এসে,         বাস করিলেন শেষে,
    পঞ্চ পুত্র লয়ে আনন্দিত।।
    যশোমন্ত সনাতন,         প্রাণকৃষ্ণ রামমোহন,
    রণকৃষ্ণ এ পাঁচ সন্তান।
    সর্বজ্যেষ্ঠ যশোমন্ত,       তার হল পঞ্চ পুত্র,
    এ পঞ্চের ঠাকুর আখ্যান।।
    এ বংশে জন্মিল যত,     শুদ্ধ শান্ত কৃষ্ণভক্ত,
    সবে মত্ত হরি গুণ গানে।
    কৃষ্ণ ভক্তির গুণে,         তার এক এক জনে,
    সাধু কি বৈষ্ণব সবে মানে।।
    এ কয় পুরুষ মাঝে,       মত্ত সাধু সেবা কাজে,
    কৃষ্ণপ্রেম ভক্তি নিরবধি।
    কেহ বা হল সন্ন্যাসী,     কেহ বৃন্দাবনবাসী,
    তাতে বংশে ঠাকুর উপাধি।।
    ঠাকুরের এ বংশেতে,     হরিচাঁদ অবনীতে,
    করিলেন জনম গ্রহণ।
    কহিছে তারকচন্দ্র,         অবতীর্ণ হরিশ্চন্দ্র,
    হরি হরি বল সর্বজন।।

    অথ যশোমন্ত চরিত্র কথা
    প্রনাম শ্রীযশোমন্ত ঠাকুরের পায়।
    জনমে জনমে যেন পদে মতি রয়।।
    ঠাকুর বৈষ্ণব বলে উপাধি যাঁহার।
    আমি মূঢ় কিবা গুণ বর্ণীব তাঁহার।।
    বৈষ্ণব সঙ্গেতে সাধু কীর্তন করিত।
    ভাবেতে বিভোর হয়ে কত ভাব হত।।
    অশ্রু কম্প স্বেদ বীর বীভৎস পুলক
    লোমকূপ কন্ডুলোম ঈষৎ কন্টক।
    অষ্ট সাত্ত্বিক দশাতে বাহ্যহারা হয়ে।
    প্রেমস্বরে কহিতেন কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে।।
    মম দেহগৃহে কৃষ্ণ এই মাত্র ছিল।
    দেখিতে দেখিতে যেন কাহা লুকাইল।।
    কাহারে বাপরে কৃষ্ণ কাহা বলরাম।
    কাহারে  আমার সেই শ্রীদাম সুদাম।।
    করুণা করিত সাধু বাৎসল্য প্রকাশি।
    কোন দিন কৃষ্ণ গোষ্ঠে পোহাইত নিশি।।
    শুদ্ধরাগ ভক্তি শুদ্ধ কৃষ্ণ অনুরাগী।
    বৈষ্ণবেরা যশোমন্তে বলিত বৈরাগী।।
    বৈষ্ণব উপাধি বৈষ্ণব পদ সেবি।
    অন্নপূর্ণা মাকে সবে বলিত বৈষ্ণবী।।
    বৈরাগী ঠাকুর আর ঠাকুর বৈষ্ণব।
    এ হেন উপাধিতে হইল জনরব।।
    যতকিছু সংসারেতে করিতেন আয়।
    যত্র আয় তত্র ব্যয় বৈষ্ণব
      সেবায়।।
    গো-সেবা করিত বহু করিয়া যতন।
    দুই তিন গাভী সদা থাকিত দোহন।।
    ঘৃত বানাইত দধি করিয়া মন্থন।
    বৈষ্ণবেরা দধি দুগ্ধ করিত ভোজন।
    মন্থন সময় হলে বৈষ্ণবাগমন।
    বৈষ্ণবের মুখে তুলে দিতেন মাখন।
    নির্মল দয়ার্দ্র চিত্ত না মেলে এমন।
    একদিন শুন এক আশ্চর্য্য ঘটন।।
    ভাণ্ডপুরে ঘৃত লয়ে সাধু গেলেন হাটে।
    ঘৃত বেচিলেন এক  দ্বিজের নিকটে।।
    ব্রাহ্মণ বলেন সাধু বৈস হেথাকারে।
    মূল্যসহ ভাণ্ড দিয়া যাব কিছু পরে।।
    ব্রাহ্মণ এল না ফিরে মূল্য নাহি দিল।
    ঘৃতভাণ্ড লয়ে দ্বিজ পলাইয়া গেল।।
    উত্তীর্ণ হইল সন্ধ্যা হাট ভেঙ্গে যায়।
    নির্জনে বসিয়া সাধু কৃষ্ণগুণ গায়।।
    গৃহেতে পশিয়া সাধু মৌন হয়ে রয়।
    ঠাকুরানী হাট বেসাতি কোথায়।।
    কোথায় ঘৃতের ভাণ্ড কিছুই না দেখি।
    কি হয়েছে ওহে নাথ বসিয়া ভাব কি।।
    লবণ তামাক পান কিছুই না আনিলে।
    কি উপায় হবে সাধু বৈষ্ণব আসিলে।।
    সাধু কহে কি বলিব শুন গো বৈষ্ণবী
    যে দায় ঠেকেছি আমি বসে তাই ভাবি।।
    ঘৃত গেল ভাণ্ড গেল তাতে দুঃখ নাই।
    না হইল হাট করা যদিও না খাই।।
    যা হোক বৈষ্ণব সেবা বৈষ্ণব কৃপায়।
    কর্মবসে যদি দুদিন উপবাস হয়।।
    যে দায় ঠেকেছি আমি জানাব কাহায়।
    অপরাধে অব্যহতি পাইব কোথায়।।
    ব্রাহ্মণেতে আমার যে হল অবিশ্বাস।
    এ দায় কোথায় যাই হল সর্বনাশ।।
    আদি অন্ত সে বৃত্তান্ত দেবীকে জানাল।
    যে ভাবে ব্রাহ্মণ ঘৃতভাণ্ড লয়ে গেল।।
    ঠাকুরানী বলে নাথ না ভেব বিস্ময়।
    যবে যে ঘটনা ঘটে ঈশ্বর ইচ্ছায়।।
    ঈশ্বর তোমায় যদি বুঝিবারে মন।
    ব্রাহ্মণ দ্বারায় হেন করে নারায়ণ।।
    কেন তাতে দুঃখ ভাব, ভাব বিপরীত।
    ঘটন কারণ ঈশ্বরের নিয়োজিত।
    এ কথা শুনিয়া সাধু শান্তি পেল মনে।
    তারক স্বভাব যাচে যশোমন্ত স্থানে।।

    শ্রীমদ্রামকান্ত বৈরাগীর উপাখ্যান।
    রামকান্ত নামে সাধু মুখডোবা গাঁয়।
    বৈরাগী উপাধি তার সাধু অতিশয়।।
    রামকান্ত যশোমন্ত আলয় আসিত।
    স্ত্রী পুরুষে একত্তরে সাধুকে সেবিত।।
    সদা ছিল সে সাধুর উত্তার নয়ন।
    শিবনেত্র প্রায় যেন আরোপ লক্ষণ।।
    কখন কখন সাধু বেড়াইতে যেত।
    কোন কোন ঠাঁই গিয়া উপস্থিত হত।।
    সর্বদা থাকিত সাধু মহাভাব হয়ে।
    কোন কোন ভাগ্যবানে দয়া প্রকাশিয়ে।।
    যদি কোন পুত্রবতী সতী নারী পেত
    মা বলিয়া দুগ্ধ পান তাহার করিত।।
    সে নারীর গর্ভে যদি হইত সন্তান।
    ধনে ধান্যে সুখী তারা সবে ভাগ্যবান।।
    ন পুত্র ন গর্ভবতী কোন নারী পেয়ে।
    যদি তার স্তন পান করিতেন গিয়ে।।
    আহার করিত দুগ্ধ পানের সময়।
    স্তন পান অন্তে দুগ্ধ শুকাইয়া যায়।।
    যাহা বলি দিত বর তাহাই ফলিত।
    বাক্য সিদ্ধ পুরুষের যা মনে লইত।।
    একদিন প্রাতে যশোমন্তের গৃহিণী।
    পূর্বভাব অন্তরেতে জাগিল অমনি।।
    প্রাতঃকৃত্য কৃষ্ণ নাম লইতে লইতে।
    ব্রজভাব আসি তার জাগিল মনেতে।।
    বাহ্যস্মৃতি হারা হয়ে বলে বার বার।
    কোথা রাম কৃষ্ণ প্রাণ পুতলি আমার।।
    এই ভাব তাহার হইত হৃদিমাঝ।
    রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

    অন্নপূর্ণা মাতার যশোদা আবেশ
    পয়ার
    ধরিয়া গোপাল বেশ পিয়াইত স্তন।
    এই সেই মায়াপুরী এই  বৃন্দাবন।।
    যশোদা আবেশ হয়ে অন্নপূর্ণা কয়।
    মা বলে ডাকরে বাছা এ দুঃখিনী মায়।।
    কোথা বাপ বিশ্বরূপ আয়রে কোলেতে
    দেখিনা ও চাঁদমুখ বহু দিন হতে
    ।।
    শান্ত্বনা করিছে শ্রীযশোমন্ত ঠাকুর।
    কি কহিলি কি গাইলি শুনিতে মধুর।।
    সুস্থিরা হইয়া পরে কহে ঠাকুরাণী

    কি কহিনু কি গাইনু কিছুই না জানি।।
    দেখিলাম হেন সেই নন্দের নন্দন

    মা মা বলিয়া মোরে পান করে স্তন।।
    সাধু বলে কৃষ্ণ গুণ গাইতে গাইতে।
    ব্রজ ভাব হয়ে থাকে ভক্তের দেহেতে।।
    তোমার কি ভাব হয় বুঝিতে না পারি।
    কাহা কিছু না বলিয়া থাক চুপ করি
    ।।
    এ সময় ঠাকুরাণীর একটি কুমার

    কৃষ্ণদাস নাম বিশ্বরূপ অবতার
    ।।
    সেই পুত্র করিতেন লালন পালন।
    কৃষ্ণ ধ্যান কৃষ্ণ জ্ঞান করে অনুক্ষণ।।
    যে দিন যশোদা ভাব আবেশ হইল।
    সেইদিন রামকান্ত বৈরাগী আসিল
    ।।
    শুভ দিন বেলা এক প্রহর সময়

    দেবী চিড়া বানিবারে ঢেঁকিশালে যায়
    ।।
    পশ্চিমাভিমুখ দেবী দক্ষিণেতে ঢেঁকি

    কৃষ্ণ বলে চিড়া আলে ঝরে দুটি আখি।।
    হেন কালে রামকান্ত বৈরাগী আসিয়া

    স্তন্যদুগ্ধ পান করে গালে হাত দিয়া
    ।।
    পুত্রভাবে ঠাকুরাণী রাখিলেন কোলে।
    স্নেহাবেশে ভাসে দুটি নয়নের জলে
    ।।
    বলে অদ্য পোহাইল কি সুখ যামিনী।
    প্রভাত আবেশ বুঝি ফলিল এখনি
    ।।
    রামকান্ত বলে মাগো বলি যে তোমারে

    বাসুদেব জন্মিবেন তোমার উদরে
    ।।
    কিছুদিন পরে রামকান্ত আর দিনে

    বাসুদেব কোলে করি বসিল যতনে
    ।।
    বাসুদেব বলে যাব সফলা নগরে

    পূজাদি লইব মাতা অন্নপূর্ণা ঘরে
    ।।
    বাসুদেবে লয়ে সাধু পরম কুশলে।
    যশোমন্ত গৃহে আসি উপনীত হলে
    ।।
    মুহূর্তেক দিবা আছে সন্ধ্যার অগ্রেতে।
    অন্নপূর্ণা ঝাড়ু দেন ঝাঁটা লয়ে হাতে
    ।।
    ঠাকুরাণী ঝাঁট দেন পূর্ব্বাভিমুখেতে।
    রামকান্ত আসিলেন পূর্ব্ব দিক হতে।।
    সন্মুখে যাইয়া সাধু বলে যে মাতায়

    কোলে কর বাসুরে সময় বয়ে যায়
    ।।
    আস্তে ব্যস্তে ঠাকুরাণী বাসুদেবে ধরে।
    রাখিলেন পুত্র স্নেহে বাম কক্ষ পরে
    ।।
    হইল অপূর্ব্ব শোভা দরশন করে

    রামকান্ত নাচে চারিদিকে ঘুরে ফিরে।।
    সজল নয়ন সাধু প্রেমে পুলকিত

    হাতে তালি দিয়া নেচে নেচে গায় গীত
    ।।
    দেখরে নগরবাসী হল কি আনন্দ

    অন্নপূর্ণা অনায়াসে পাইল গোবিন্দ
    ।।
    কিবা পূন্য করেছিল চৌধুরীর ঝি

    সেই পূণ্যে পুত্র পেল বাসুদেব জী
    ।।
    রামকান্ত কহে যশোমন্ত বৈরাগীরে।
    কিছুদিন বাসুদেবে রাখ তব ঘরে
    ।।
    ওঢ়াকাঁদি মাচকাঁদি ঘৃতকাঁদি আদি।
    বহু গ্রামে ভ্রমিতেন কান্ত গুণনিধি
    ।।
    দুই চারি দিন পরে অথবা সপ্তাহে।
    মাঝে মাঝে আসিতেন অন্নপূর্ণা গৃহে।।
    যে যে দিন না আসিত থাকিতেন দূরে।
    অন্নপূর্ণা পূজিতেন বাসুদেব জীরে
    ।।
    তুলসী চন্দন মেখে নানা পুষ্প তুলে।
    দিত রাণী বাসুদেবে লহ লহ বলে
    ।।
    এইরূপে পক্ষান্তর ভ্রমণ করিয়ে

    দেশে গেল রামকান্ত বাসুদেবে লয়ে
    ।।
    কিছুদিন পরে সেই অন্নপূর্ণা সতী

    স্ত্রী আচারে যে দিন হইল শুদ্ধমতি।।
    শয়নে ছিলেন শ্রীযশোমন্ত বৈরাগী।
    অন্নপূর্ণা বসিলেন পদসেবা লাগি
    ।।
    পদ সেবি প্রণমিয়া করি জোড়পাণি

    পদ পার্শ্বে শয়ন করিলা ঠাকুরাণী
    ।।
    যশোদা আবেশ বর দিলা রামকান্ত

    বিরচিল তারক রসনা এ বৃত্তান্ত
    ।।
    আদেশে গোলোকচন্দ্র নরহরি কায়

    পূর্ণ কর বাসনা রসনা গীত গায়
    ।।

    শ্রীহরি ঠাকুরের জন্ম বিবরণ
    পয়ার
    এবে শুন ঠাকুরের জন্ম বিবরণ।
    যেই রূপে প্রভূ ভবে অবতীর্ণ হন।।
    পূর্ব্বেতে কড়ার ছিল ভক্তগণ সঙ্গে।
    উৎকলেতে দৈববানী ছিল যে প্রসঙ্গে।।
    আর এক বাক্য ছিল শূন্যবাণী সনে

    শেষ লীলা করিব আমি ঐশন্য কোণে।।
    নীচ হয়ে করিব যে নীচের উদ্ধার

    অতি নিন্মে না নামিলে কিসে অবতার।।
    কৃষ্ণ প্রেম সুনির্ম্মল উচ্চেতে না রবে

    নিম্ন খাদে থাকে বারি দেখ মনে ভেবে
    ।।
    নীচ জন উচ্চ হবে বুদ্ধ তপস্যায়

    বুদ্ধদেব অবতার যে সময় হয়
    ।।
    বুদ্ধের কামনা তাহা পরিপূর্ণ জন্য

    যশোমন্ত গৃহে হরি হৈল অবতীর্ণ
    ।।
    বুদ্ধদেব বহুদিন তপস্যা করিল

    তাতে ব্রহ্ম প্রণবাদি শূদ্রেতে পাইল।।
    নীচ জন প্রতি দয়া বুদ্ধদেব করে

    প্রণবেতে অধিকারী শূদ্র তার পরে
    ।।
    বুদ্ধদেব তপস্যাতে হইয়া সদয়

    বরং গুরু বলে প্রভু বর দিতে চায়
    ।।
    বুদ্ধ বলে বর যদি দিবে মহাশয়

    অগ্রভাগে কর প্রভূ শূদ্রের উপায়
    ।।
    প্রভু বলে তব নামে অবতার হব।
    প্রণব ত্রিগুণ নাম শূদ্রেরে বিলা
    ।।
    এক হরি নাম মধ্যে গুণ দিয়া সব

    নীচজনে করাইব পরম বৈষ্ণব।।
    বুদ্ধ বলে যদি প্রভু হও অবতার।
    এ দেশে থাকেনা যেন জাতির বিচার।।
    আর এক প্রশ্ন তার মধ্যেতে উদয়

    সংক্ষেপে বলিব যাতে পুথি না বাড়ায়
    ।।
    কুবের নামেতে জোলা জাতি সে যবন

    পরম বৈষ্ণব রাম মন্ত্রে উপাসন

    তাহার নন্দন হল নামেতে নকিম।
    নিরবধি কৃষ্ণপ্রেম যাহার অসীম
    ।।
    কুবের আরোপে থেকে কৃষ্ণরূপ দেখে।
    নকিম বুনায় তাঁত হরি বলে মুখে
    ।।
    কুবের আরোপে গাঁথে কুসুমের হার।
    গলে দিবে সাজাইবে শ্যাম নটবর
    ।।
    ভক্তিফুলে মনোসূতে হার গাঁথি নিল।
    সেই মালা ত্রিভঙ্গের গলে তুলে দিল
    ।।
    চূড়ায় ঠেকিয়া হার নাহি পড়ে গলে

    দিতে হার পুনর্ব্বার চূড়ায় ঠেকিলে
    ।।
    নকিম আরোপে তাঁত বুনায়েছে হাতে

    মুখে হরি বলে কৃষ্ণ দেখে আরোপেতে
    ।।
    বাপের আরোপ দেখি নকীমের সুখ

    বলে হাত আরো কিছু উপরে উঠুক
    ।।
    দেখহ জোলার এই প্রেমভক্তি গুণ

    কি করে তাহার কাছে স্বত্ত্বঃ রজঃ গুণ
    ।।
    দারু ব্রহ্ম অবতার হল যে সময়

    কুবেরের কীর্ত্তি রাখিলেন এ ধরায়
    ।।
    কুবেরের তোড়ানী খাইবে যেইজন

    তার হবে দারু ব্রহ্ম রূপ দরশন
    ।।
    আর এক প্রস্তাব যে আসিল তাহাতে

    একদা নারদ মুনি গেল বৈকুন্ঠেতে
    ।।
    বিষ্ণুর প্রসাদ মুনি খাইল তথায়

    কৈলাসেতে আসি মুনি হইল উদয়
    ।।
    শিবেরে বলেন মুনি হরষিত মন

    অদ্য হৈনু শ্রীনাথের প্রসাদ ভাজন।।
    শিব বলে আমারে ত দিলেনা কিঞ্চিৎ।
    প্রভুর প্রসাদে মোরে করিলে বঞ্চিৎ
    ।।
    নারদের নখাগ্রে প্রসাদ কণা ছিল

    প্রেমভরে হরের বদনে তুলে দিল
    ।।
    প্রেমে মত্ত হইলেন নারদ শঙ্কর

    বঞ্চিতা হইয়া গৌরী করে আঙ্গীকার।।
    আমি যদি সাধ্বী নারী হই তব ঘরে

    এ প্রসাদ বিলাইব বাজারে বাজারে
    ।।
    তপস্যা করিল হরি বর দিতে এল

    প্রসাদ বাজারে বিকি বর চেয়ে নিল।।


    শ্লোক
    কমলা রন্ধনাযুক্তা ভোজনে চ জনার্দ্দনঃ।
    কুক্কুরেণ মুখাদ্‌ভ্রষ্টা দেবানাং দুর্ল্লভামপি
    ।।


    পয়ার
    বুদ্ধদেব বাসনা হইয়া গেল পূর্ণ

    ঘরে ঘরে নীচ শূদ্র সবে হল ধন্য।।
    এই মত দেখ নানা কারণ বশতঃ।
    গোকক বিহারী হল যশোমন্ত সূত
    ।।
    অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী ছিলেন শয়নে

    কৃষ্ণ দাস পুত্র কোলে আনন্দিত মনে।।
    রাম-কৃষ্ণ মুখে বলে কোলে কৃষ্ণদাস।
    প্রভুর অগ্রজ যিনি ভুবনে প্রকাশ
    ।।
    দ্বাপরেতে সংকর্ষণ যিনি বলরাম

    আপনি অনন্ত শক্তি সুন্দর সুঠাম
    ।।
    সেই অংশে বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়

    শচী গর্ভে জনমিল এসে নদিয়ায়
    ।।
    গৃহত্যাগী অনুরাগী সন্নাসী হইল

    পুত্র শোকে শচীমাতা কাঁদিয়া ফিরিল
    ।।
    যদ্যপিও বিষ্ণু অংশে স্বয়ং অবতার

    কেহ না শোধিতে পারে মাতৃ ঋণ ধার
    ।।
    যখন গৌরাঙ্গ গেল মাকে তেয়াগিয়া।
    কড়ার দিলেন জন্ম লইব আসিয়া
    ।।
    কিছু না বলিয়া বিশ্বরূপ উদাসীন

    তার জন্য শচীমাতা কাঁদে রাত্রি দিন
    ।।
    সে কারণ মাতৃসেবা অপরাধ ছিল

    সেই ঋণ শোধিবারে জনম লভিল
    ।।
    স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে।
    আর আর অবতার তাতে এসে মিলে
    ।।
    যিনি ছিল বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়

    তিনি কৃষ্ণদাস যশোমন্ত পুত্র হয়
    ।।
    একমাত্র পুত্র নববর্ষ কৃষ্ণদাস

    এক পুত্রে সুখী মাতা নাহি অন্য আশ
    ।।
    এ হেন সময় প্রভুর মনে হল আশ

    অন্নপূর্ণা গর্ভ সিন্ধু ইন্দু পরকাশ
    ।।
    নানারূপ বিভীষিকা দেখে অন্নপূর্ণা

    শচীমাতা নিদ্রাযুক্তা নহে অচৈতন্যা
    ।।
    জাগরিতা যেন কিছু নিদ্রার আবেশ

    দেখে যেন জয়ধ্বনি হয় সর্ব্ব দেশ
    ।।
    যশোমন্ত বলে প্রিয়া শুনহ বচন।
    যে রূপ আমার মনে জাগে সর্ব্বক্ষণ।।
    নবীন মেঘের বর্ণ বনমালা গলে

    ভৃগুপদ চিহ্ন দেখা যায় বক্ষঃস্থলে।।
    পিতাম্বর ধর কোকনদ পদাম্বুজে

    শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম শোভে চতুর্ভুজে।।
    এই রূপ আভা মম হৃদয় পশিয়া

    সে যে তব কোলে বৈসে দ্বিভুজ হইয়া
    ।।
    ঠাকুরাণী বল নাথ নিশার স্বপন

    নিশাকালে প্রকাশ না করে বুধজন।।
    কৃষ্ণময় চিত্ত তব কৃষ্ণ প্রতি আর্ত্তি

    শয়নে স্বপনে দেখ ঈশ্বর শ্রীমূর্ত্তি
    ।।
    ঠাকুর বলেন প্রিয়া নহেত যামিনী।
    উদয় হইল দীপ্তিকর দিনমণি
    ।।
    ঠাকুরাণী বলে এত বাতুল লক্ষণ
    ।।
    কিম্বা দানবের কার্য্য না বুঝি কারণ
    ।।
    ঠাকুর বলেন যদি বাতুল লক্ষণ

    তবে কেন দেখিলাম মুরলী বদন
    ।।
    ঠাকুরাণী বলে তবে জ্যোতির্ম্ময় রূপ

    সে রূপ দেখিয়া ভাব দিবার স্বরূপ
    ।।
    শতসূর্য্য সম রশ্মি বায়ুতে মিশিল

    অন্নপূর্ণা গর্ভে আসি প্রবেশ করিল
    ।।
    এ হেন প্রকারে মাতা হৈল গর্ভাবতী

    ঈশ্বর ইচ্ছায় হৈল বায়ুগর্ভে স্থিতি
    ।।
    শুভগ্রহ নক্ষত্র শুভ লগ্ন হইল

    মাহেন্দ্র সুযোগে পুত্র প্রসব করিল
    ।।
    বারশ আঠার সাল শ্রীমহাবারুণী

    কৃষ্ণপক্ষ ত্রয়োদশী তিথি সে ফাল্গুণী
    ।।
    হরি সাল বলি সাল ভক্তগণে গণে

    নাহিক বৈদিক ক্রিয়া শ্রীবারুণী বিনে
    ।।
    ধন্য অন্নপূর্ণা হেন পুত্র পেল কোলে

    দ্বাপরে যশোদা যিনি ছিলেন গোকুলে
    ।।
    দ্বাপরে ছিলেন নন্দ যশোদার কান্ত

    যশোমতি কান্ত এবে হল যশোমন্ত
    ।।
    ধরা দ্রোণ দুইজন তস্য পূর্ব্বে ছিল

    নন্দ যশোমতি তেই দ্বাপরে হইল
    ।।
    কলিকালে জগন্নাথ মিশ্র শচীরাণী

    এবে যশোমন্ত অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী
    ।।
    ধন্য রামকান্ত সাধু ধন্য এ জগতে

    প্রভু আসি জনমিল যাহার বরেতে
    ।।
    প্রভুর জনমখন্ড সুধা হতে সুধা

    কহিছে রসনা খেলে খন্ডে ভব ক্ষুধা
    ।।

    রামকান্ত বৈরাগীর পূর্ব্বা‌পর প্রস্তাব কথন
    পয়ার
    রামকান্ত মহাসাধু পরম উদার

    অন্নপূর্ণা মাতাকে দিলেন পুত্র বর।।
    সান্দিপণি দ্বাপরে ত্রেতায় বিশ্বামিত্র।
    কলিকালে গঙ্গাদাস পন্ডিত সুপাত্র
    ।।
    ভারতী গোঁসাই শক্তি হইয়া মিশ্রিত।
    মুক ডোবা রামকান্ত হৈল উদ্ভাবিত
    ।।
    তাহাতে মিশ্রিত হল বাসুদেব শক্তি।
    স্নেহ ভাবে বাসুদেবে করিতেন ভক্তি
    ।।
    বাসুদেবে সমর্পিয়া আত্ম স্বার্থ-আত্মা।
    ব্রজের মাধুর্য্যভাবে করিত মমতা
    ।।
    সাধুর সঙ্গেতে ছিল বাসুদেব মুর্ত্তি।
    কভু সখ্য ভাব কভু ব্রজভাবে আর্ত্তি
    ।।
    ধুপ দীপ নৈবিদ্যাদি আতপ তন্ডুলে।
    পূজিতেন রম্ভা দুর্ব্বা তুলসীর দলে
    ।।
    নিবেদিয়া করিতেন ভোজন আরতি।
    বাসুদেব খাইতেন দেখিত সুমতি
    ।।
    মূলা থোড় মোচা কাচা রম্ভার ব্যঞ্জন

    আতপের অন্ন দিত না দিত লবণ
    ।।
    ছোলা ডাল মুগ বুট গোধুম চাপড়ী

    তৈল হরিদ্রা বিনে ঘৃত পক্ক বড়ি
    ।।
    ভোগ লাগাইয়া সাধু আরতি করিত

    বাসুদেব খেত তাহা চাক্ষুস দেখিত
    ।।
    একদিন গ্রামবাসী বিপ্র একজন

    বাসুদেব ভোগ রাগ করিল দর্শন
    ।।
    ক্রোধ করি বলে বিপ্র এ কোন বিচার

    শূদ্রের কি আছে অন্নভোগ অধিকার
    ।।
    শূদ্র হয়ে বাসুদেবে অন্ন দিলি রাধি।
    কোথায় শুনিলি বেটা এমত অবিধি
    ।।
    হারে রে বৈরাগী তোর এত অকল্যাণ

    শূদ্র হয়ে হবি নাকি ব্রাহ্মণ সমান
    ।।
    ব্রাহ্মণ কহিল গিয়া ব্রাহ্মণ সকলে।
    শুনিয়া ব্রাহ্মণ সব ক্রোধে উঠে জ্বলে।।
    দশ জন বিপ্র গেল বৈরাগীর বাড়ী

    ক্রোধভরে বাসুদেবে লয়ে এল কাড়ি
    ।।
    বৈরাগী নির্মল চিত্তে দিলেন ছাড়িয়া

    বলিল রে প্রাণবাসু সুখে থাক গিয়া
    ।।
    কাঙ্গালের কাছে তুমি ছিলে অনাদরে।
    আদরে খাইও এবে ষোড়শোপচারে
    ।।
    ভাল হল ব্রাহ্মণেরা লইল তোমারে।
    সুখেতে থাকিবা এবে খট্টার উপরে
    ।।
    দঃখিত দরিদ্র আমি কপর্দ্দক নাই।
    বহু কষ্টে থোড় মোচা তোমারে খাওয়াই।।
    দধি দুগ্ধ ঘৃত মধু পায়স পিষ্টক

    লুচি পুরি মন্ডা খেও যাহা লয় সখ।

    চির দিন রাখিয়াছ ব্রাহ্মণের মান।
    যাও যাও বিপ্র ঘরে নাহি অপমান
    ।।
    আমি অজ্ঞ নাহি জানি তোমারে পূজিতে।
    এখন পূজিবে তোমা মন্ত্রের সহিতে
    ।।
    যেখানে সেখানে থাক তাতে ক্ষতি নাই

    তুমি যেন সুখে থাক আমি তাই চাই
    ।।
    ব্রাহ্মণেরা বাসুদেবে লয়ে হরষেতে

    বাসুদেবে অভিষেক করে তন্ত্রমতে
    ।।
    কেহ বলে রাখ দেবে প্রতিষ্ঠা করিয়ে

    জাতি নেশে নমঃশূদ্রের পক্ক অন্ন খেয়ে
    ।।
    প্রতিষ্ঠা করিয়ে পঞ্চ গব্য দ্বারে স্নান

    অভিষিক্ত করিয়া মণ্ডপে দিল স্থান।।
    খাট্টার উপরে রজতের পদ্মাসন

    তাহার উপরে দেবে করিলা স্থাপন।।
    শ্বেতপদ্ম রক্তপদ্ম শতদল পদ্ম

    নীলপদ্ম স্থলপদ্ম কোকনদ পদ্ম
    ।।
    গোলাপ টগর আর পুষ্প জাতি জুতি

    গন্ধার অপরাজিতা মল্লিকা মালতী
    ।।
    গন্ধরাজ সেফালিকা ধবল করবী

    কৃষ্ণকেলী কৃষ্ণচূড়া কামিনী মাধবী।।
    দূর্ব্বা তুলসীর পত্র অগুরু চন্দন

    শ্রীঅঙ্গে লেপন আর শ্রীপদ সেবন
    ।।
    মন্ত্রপুত করি পরে তন্ত্র অনুসারে

    ভোগাদি নৈবেদ্য দেন নানা উপহারে
    ।।
    আতপ তন্ডুল ভোগ দেয় যে কখন

    যেখানে যে মিষ্ট ফল পায় যে ব্রাহ্মণ।।
    আনিয়া লাগায় ভোগ বাসুদেব ঠাঁই

    রন্ধনশালান্য ভোগ সুপক্ক মিঠাঁই
    ।।
    সব দ্বিজ বাসুদেবের ভক্ত হইল

    পূজারি ব্রাহ্মণ এক নিযুক্ত করিল।।
    সন্ধ্যাকালে ঘৃত দ্বীপ পঞ্চ বাতি জ্বালি

    আরতি করেন সব ব্রাহ্মণমণ্ডলী
    ।।
    শঙ্খ ঘন্টা কংশ করতাল ঝাঁজ খোল

    রাম শিঙ্গে ভেরী তুরী মধুর মাদল
    ।।
    এই রূপে বাসুদেব ব্রাহ্মণের পূজ্য

    আর এক লীলাগুণ বড়ই আশ্চর্য্য
    ।।
    এই বাসুদেব জন্ম সফলা নগরী

    তারক রসনা ভরি বল হরি হরি
    ।।

    রাম কান্তের বাসুদেব দর্শন
    দীর্ঘ ত্রিপদী
    ভিক্ষা করে রামকান্ত,      মনেতে চিন্তা একান্ত,
    মম বাসুদেব আছে সুখে
    পূজা করে দ্বিজগণে,      অনেক দিন দেখিনে,
    আমার বাসুরে আসি দেখে।।
    ইহা ভাবি মনে মনে,      দ্বিজগণ অদর্শনে,
    মণ্ডপের পিছে গিয়া রয়
    আমি নাহি দিব দেখা,     গোপনে রহিব একা,
    দেখি বাসু কিভাবে কি খায়।।
    দক্ষিণাভিমুখ হয়ে,        বাসুদেব দণ্ডাইয়ে,
    সর্ব্বদাই মন্ডপেতে রয়
    পূজক ব্রাহ্মণ গিয়া,        মন্ডপ-দ্বার খুলিয়া,
    উত্তরাভিমুখ দেখতে পায়।।
    পূজক ব্রাহ্মণ কয়,         কে এসে ঠাকুরালয়,
    ঠাকুর ফিরায়ে রেখে গেল
    কপাট নাহি খুলিল,        মন্ডপেতে কে আসিল,
    বাসুদেব কেন হেন হ।।
    কেহ বলে দ্বার রুদ্ধ,        কার হেন আছে সাধ্য,
    ঘরে এসে ফিরায় দেবলা

    তবে যে ফিরিল কেনে,    দেবমায়া কেবা জানে,
    কি জানি কি ঠাকুরের লীলা
    ।।
    ঠাকুরের ভোগ দিতে,     ভোগ রাগ সমাধিতে,
    দিবা দুই প্রহর সময়

    রন্ধন করি শাল্যন্ন,         ঘৃত মিশ্রিত ব্যাঞ্জন,
    ডাল্‌না শাক শুক্ত লাবেড়ায়
    ।।
    দক্ষিণ মুখ করিয়ে,        ঠাকুরে ফিরায়ে ল,য়ে,
    পুরোহিত বসিল পূজায়

    তাম্র রজতের পাতে,      কতই মিষ্টান্ন তাতে,
    লিখিতে পুস্তক বেড়ে যায়
    ।।
    নয়ন মুদ্রিত করে,         ভোগ নিবেদিল পরে,
    ভোগ রহে বাসুদেব পিছে

    যবে নয়ন মেলিল,        পূজক দেখিতে পেল,
    বাসুদেব ফিরিয়া রয়েছে
    ।।
    বক্ষ দেশে হস্ত দিয়া,      বাসুদেবকে ধরিয়া,
    দক্ষিণ মুখ করিতে চায়

    বাসুদেব নাহি ঘুরে,        বিপ্র ডাকে উচ্চৈঃস্বরে,
    কে তোরা দেখিবি আয় আয়
    ।।
    বাসুদেব ফিরে গেল,       উত্তর মুখ রহিল,
    ফিরাইলে আর নাহি ফিরে

    হইনু আশ্চর্য্যান্বিত,        অকস্মাৎ বিপরীত,
    না জানি কি অমঙ্গল করে
    ।।
    সে বানী শুনি তরাসে,     চারি পাঁচ বিপ্র এসে,
    কেহ যায় মন্ডপের পিছে

    এক বিপ্র তরাসেতে,      দেখে গিয়া স্বচক্ষেতে,
    রামকান্ত গোপনেতে আছে
    ।।
    বিপ্র বলে দফা সারা,      কার বাসুদেব তোরা,
    জোর করে এনেছিস সবে

    যার ভক্তি তার হরি,       মোরা যে গৌরব করি,
    সে কেবল ব্রাহ্মণ গৌরবে
    ।।
    যার বাসুদেব এই,         উদয় হইল সেই,
    সাধু পানে কেন নাহি চাও

    মূল মর্ম্ম নাহি জান,       দেবলা ধরিয়া টান,
    জোর করে দেবতা ঘুরাও
    ।।
    এক বিপ্র ক্রোধ ভরে,      রামকান্তে নিল ধরে,
    মন্ডপের সম্মুখেতে রাখি

    বিপ্র বলে যদি আলি,     সম্মুখে কেন না ছিলি,
    পিছে থেকে করেছ বুজরুকি
    ।।
    যদি নিজ ভালো চাও,    শীঘ্র করে উঠে যাও,
    শুনি রামকান্ত চলে গেল

    ভোগ রাগ লাগিবে কি,    বৈরাগীর ভোজ ভেল্কি,
    বাসুদেব সদ্ভাব হইল
    ।।
    কান্ত লীলা চমৎকার,      যেন অমৃতের ধার,
    কর্ণ ভরি পিও সাধুজন

    ওঢ়াকাঁদি অবতীর্ণ,         নমঃশূদ্র কূল ধন্য,
    রসনা, রসনা কি কারণ
    ।।

    শ্রীশ্রীবাসুদেবজীর স্নান যাত্রা
    দীর্ঘ ত্রিপদী
    জগন্নাথ স্নানযাত্রা,         ব্রাহ্মণেরা একত্রতা
    ল সবে স্নানের কারণ

    গিয়া পুকুরের ঘাটে,       বাসুদেবে রেখে তটে,
    করে জলকেলী সংকীর্ত্তন
    ।।
    ঝাঁজ শঙ্খ ঘন্টা ধ্বনী,     কুলবতীর হুলুধ্বনী,
    সুগন্ধি কুসুম ফেলাফেলি

    বাসুদেবে লয়ে কোলে,   নামি পুষ্করিনী জলে,
    সব মেলি করে জলকেলি
    ।।
    বাসুদেব ছিল কোলে,     কোল হতে নামি জলে,
    ছল করি লুকাইয়া রয়

    সে বিপ্র জলে নামিয়া,    বাসুদেবে হারাইয়া,
    আর নাহি অন্বেষিয়া পায়
    ।।
    বিপ্র বলে কিবা হ,      বাসুদেব কোথা গেল,
    ডুব দিল না পাই খুজিয়া

    সব দ্বিজ তাহা শুনি,       জলে ডুবয়ে অমনি,
    খুজিতেছে ডুবিয়া ডুবিয়া
    ।।
    যত ছিল প্রেমানন্দ,       সব হল নিরানন্দ,
    জলে হারাইয়া বাসুদেব

    কেহ বলে হায় হায়,       কোথা বাসুদেব রায়,
    কেহ কাঁদে হাহাকার রবে
    ।।
    কূলে তার বক্ষঃদেশ,     মধ্যে তার গলদেশ,
    পুকুরের বারি পরিমাণ

    পুকুরের অল্প জলে,        বাসুদেব লুকাইলে,
    কি হল কোথায় অন্তর্ধান
    ।।
    গ্রামের ব্রাহ্মণ মাত্র,       সকলে হয়ে একত্র,
    বাসুদেবে অন্বেষণ করে

    হয়ে এল সন্ধ্যাকাল,       ডুবাইয়া চক্ষু লাল,
    হাহাকার করে উচ্চৈঃস্বরে
    ।।
    কেহ বলে অমঙ্গল,       কেহ বলে হরিবোল,
    কেহ বলে রামকান্তে কও

    তার বাসুদেব এনে,        জোর করে রাখ কেনে,
    সে কারণ অপরাধী হও
    ।।
    যে দিনে ফিরিয়া ছিল,    হইত না অমঙ্গল,
    তার বাসুদেব তারে দিলে

    মোদের থাকিলে ভক্তি,   কেন বাসুদেব মূর্ত্তি,
    ছল করি ডুব মারে জলে
    ।।
    দ্বিজগণ সকাতর,          জাগরণে নিশি ভোর,
    রামকান্তে সংবাদ জানায়

    স্বান করাবার তরে,        বাসুদেবে লয়ে নীরে,
    হারালেম বাসুদেব রায়
    ।।
    রামকান্ত ধীরে ধীরে,      গিয়া পুকুরের তীরে,
    অতঃপর জলে নামিলেন

    জলমধ্যে দণ্ডাইয়া,        বাসুদেবের লাগিয়া,
    পদ দিয়া তল্লাস করেণ
    ।।
    ব্রাহ্মণেরা বলে রাগী,      দুরাচার রে বৈরাগী,
    পা দিয়া তালাসে বাসুদেবে

    মুনি ঋষি করে ধ্যান,      ব্রহ্মা করে ব্রহ্ম জ্ঞান,
    কমলা যাহার পদ সেবে
    ।।
    বাসুদেব কক্ষমধ্যে,        রামকান্ত বামপদে,
    ঠেলে ফেলে পুকুরের পার

    হাতে ধরি লয়ে কোলে,   বাসুদেবে ডেকে বলে,
    হারে বাসু কি মন তোমার
    ।।
    ব্রাহ্মণের বাড়ী রহিবা,     কিম্বা মম সঙ্গে যাবা,
    হাস্য মুখে কহত আমায়

    বাসুদেব হাস্য করে,       দ্বিজগণ সবে হেরে,
    হাসি লুকায় বিদ্যুতের ন্যায়
    ।।
    রামকান্ত কুতুহলে,         দ্বিজগণে ডেকে বলে,
    বাসুদেব আমার দেবলা

    না রহিবে দ্বিজালয়,       মোর সঙ্গে যেতে চায়,
    আমার যে হতে চায় চেলা
    ।।
    ব্রাহ্মণেরা ছিল রুষী,       দেবলা মুখেতে হাসি,
    দেখে আর নাহি সরে বাক

    বলে ওরে রামকান্ত,       তোর ভকতি একান্ত,
    তোর বাসু তুই নিয়া রাখ
    ।।
    বাসুদেব রামকান্ত,         মহিমার নাহি অন্ত,
    লীলামৃত মাধুর্য্যের সার

    পাগলচন্দ্র আদেশে,       হরিচাঁদ কৃপালেশে,
    কহে কবি রায় সরকার
    ।।

    বাসুদেব ও রামকান্ত বৈরাগীর চরিত্র কথন, নৌকা গঠন ও রথ যাত্রা
    পয়ার
    বাসুদেবে নিতে আসে বহু শিষ্যগণ

    কান্ত বলে না শুনিয়া বলি কি বচন
    ।।
    ইচ্ছাময় বাসু যদি যান ইচ্ছা করি

    বাসুর হইয়া বাসো* যাইবারে পারি
    ।।
    এত বলি বাসুর নিকতে কান্ত গিয়া

    শিষ্যগণ নিকটেতে বলিত আসিয়া
    ।।
    কাহারে বলিত বাপু যাওয়া হবে না

    আমার পরাণ বাসু কিছু কহিল না
    ।।
    কেহ কেহ আসামাত্র অমনি যাইত

    কেহ কেহ এলে তারে যাইব কহিত
    ।।
    বাসুদেবে কোলে করি শিষ্য বাড়ী যেত

    গুণ-গুণ বাসু গুণ সদায় গাইত
    ।।
    বাসুদেব ইচ্ছা করে তরণীতে যেতে

    কান্তের হইল মন তরণী গঠিতে
    ।।
    চারিজন শিষ্য দিল নিযুক্ত করিয়া

    বাওয়ালীরা যেতে ছিল বাওয়াল লইয়া
    ।।
    চকে গিয়া দিত বাসুদেবের দোহাই

    নির্ব্বিঘ্নে বাওয়াল করি এসেছে সবাই
    ।।
    বাসুদেব নৌকা গঠিবেন জানাইল

    বাওয়ালীরা বড় এক গাছ দিয়া গেল
    ।।
    সেই গ্রামে ভক্ত এক কর্মকার ছিল

    লাগিল পাতাম প্রেক যত তাহা দিল
    ।।
    তরণী গঠিত হইল জয় জয় ধ্বনি

    নাম হল বাসুদেবের পান্সী তরণী
    ।।
    নৌকায় চড়িয়া মাত্র যায় দুগোঁসাই

    বাসুদেব রামকান্ত আর কেহ নাই
    ।।
    ছাপ্পর বাঁধিয়া মধ্যে থাকেন বসিয়া

    রামকান্ত বাসুদেব একত্র হইয়া
    ।।
    পাল তুলে দিত মাত্র দাড়ি মাঝি নাই

    তরণী চলিত বেগে দেখিত সবাই
    ।।
    বাতাস উজান হলে বাঁক ঘুরে গেলে

    রামকান্ত দাড় বাহে বাসুদেব হালে
    ।।
    কতক্ষণ দাড় বেয়ে বলে ওরে বাসো

    এ সময় আগা নায় একবার এস
    ।।
    এত বলি রামকান্ত পাছা নায় গিয়া

    হাল ধরে মনো সুখে থাকিত বসিয়া
    ।।
    আগা নায় বাসুদেব দাড়াইয়া আছে

    দাড় পড়িতেছে নৌকা বেগে চলিতেছে
    ।।
    মাধুর্য্য প্রাচুর্য্য লীলা দেখিত সবায়

    কেহ কেহ দেখে বাসুদেব দাড় বায়
    ।।
    রামকান্ত ধেয়ে গিয়ে বলে ওরে বাসো

    পরিশ্রম হয়েছে ছায়ায় এসে বস
    ।।
    বাসুকে করিয়া কোলে বলে মনোদুঃখে

    ঘামিয়াছে চাঁদমুখ হাসি নাই মুখে
    ।।
    ওরে বাসো! তুমি দাড় বাহিওনা আর

    আমার বক্ষের নিধি বক্ষে রও আমার
    ।।
    এত বলি বাসুদেবে বসাইয়া বুকে

    ঘুম পড় বলিয়া চুম্বিত চাঁদ মুখে
    ।।
    শিষ্যদের ঘাটে গিয়া ঘোনাইত নাও

    বলিত উঠরে বাসো শিষ্যবাড়ী যাও
    ।।
    কান্তলীলা মধুর শুনিতে চমৎকার

    ভনে শ্রীতারক খেলে জন্ম নাহি আর
    ।।
    *বাসো অর্থাৎ নৌকা বাহক

    রামকান্তের বাসুদেব ও জগন্নাথ রথযাত্রা
    পয়ার
    রামকান্ত বাসুদেব গলাগলি ধরে

    শয়ন করিত সুখে শয্যার উপরে
    ।।
    এই ভাবে প্রবীণ হইল রামকান্ত

    বর্ণনে অতীত লীলা নাহি তার অন্ত
    ।।
    এদিকে ব্রাক্ষণগণ রথযাত্রা করে

    কান্তের হইল মন রথ করিবারে
    ।।
    বাঁশ দিয়া রামকান্ত রথ বানাইল

    বাঁশো রথে বাসুদেব উঠিতে ইচ্ছিল
    ।।
    অধিবাস দিনে সব লোক আসে যায়

    লোকের সংঘট হল লোকারণ্য ময়
    ।।
    ব্রাক্ষণেরা সবে মিলে করে পরামিশে

    রথযাত্রা না হইতে এত লোক আসে
    ।।
    আমাদের রথে কল্য মানুষ হবে না

    বৈরাগীর রথে কল্য লোক ধরিবে না
    ।।
    ভাল বলি বাসুদেবে দিলাম ফিরায়ে

    এতেক স্পর্ধা তার বাদ হাটা মিলায়ে
    ।।
    কল্য প্রাতে সবে মিলে গিয়ে তার বাড়ী

    আর বার বাসুদেব লয়ে এস কাড়ি
    ।।
    প্রভাতে সকল দ্বিজ ক্রোধভরে যায়

    জোর করি বাসুদেব আনিল আলয়
    ।।
    রামকান্ত বলে মম কি দোষ পাইলে

    পরাণ পুতুলী বাসু কেড়ে নিয়ে গেলে
    ।।
    রথে উঠাঁইয়া দেখিতাম বাসুরাজে

    দেখিতাম বাসুদেব কি রকম সাজে
    ।।
    বাসুরে লইয়া গেল আর লক্ষ্য নাই

    লয়ে গেল বাসুরে জগার কাছে যাই
    ।।
    অবশ্য যাইব আমি জগার নিকটে

    দেখি সে বাসুর মত উঠে কিনা উঠে
    ।।
    যাত্রা করে রামকান্ত ক্ষেত্র যাইবারে

    পথে যেতে দৈববাণী হইল তাহারে
    ।।
    ফিরে যাও রামকান্ত যাও নিজালয়

    অবশ্য যাইব রথে মোরা দুজনায়
    ।।
    আমি যাব আর তব বাসুদেব যাবে

    দুজনার রথযাত্রা দেখিবারে পাবে
    ।।
    শুনে শান্ত রামকান্ত এল আখড়ায়

    প্রেমে পুলকিত চিত নাচিয়া বেড়ায়
    ।।
    হাসে কাঁদে নাচে গায় হাতে দিয়া তালি

    ক্ষণে ক্ষণে লম্ফ দেয় দুই বাহু তুলি
    ।।
    ডেকে বলে ভক্তগণে আমি ত দুর্ভাগা

    তোমাদের ভক্তি-জোরে আসিবে সে জগা
    ।।
    উৎকলেতে থাকে জগা বড়ই দয়াল

    চলে না জগার রথ না গেলে কাঙ্গাল
    ।।
    কাঙ্গালের বন্ধু জগা কাঙ্গালের বন্ধু

    জগা বাসো এবার তরাবে ভবসিন্ধু
    ।।
    যাইতে ছিলাম ক্ষেত্রে জগারে আনিতে

    পথ মাঝে দৈববাণী হইল দেবেতে
    ।।
    জগা বাসো দুইজন উঠিবে সে রথে

    দেখিব যুগলরূপ বাসনা মনেতে
    ।।
    ব্রাহ্মণেরা শালগ্রাম উঠাঁইয়া রথে

    রথযাত্রা নির্ব্বাহ করিত বিধিমতে
    ।।
    অদ্য তারা বাসুদেবে রথে উঠাঁইয়া

    নির্ব্বাহ করিল সুখে রথযাত্রা ক্রিয়া
    ।।
    দ্বিজদের রথযাত্রা সকালে হইল

    বৈকালে কান্তের রথে বাজার মিলিল
    ।।
    বহুলোক সংঘটন হৈল সেই রথে

    এত লোক হইল ধরেনা বাজারেতে
    ।।
    খাদ্যবস্তু বাদ্যবস্তু শিল্প পুত্তলিকা

    ক্রয় করে যুবা বৃদ্ধ বালক বালিকা
    ।।
    কুম্ভকার মৃন্ময় পাত্র মৃন্ময় ছবি

    চিত্র ঘট চিত্র পট চিত্র দেব দেবী
    ।।
    কেনা বেচা হয় কত কে করে গণন

    স্থানে স্থানে হয় হরিনাম সংকীর্ত্তন
    ।।
    অপরাহ্ন হল দিবা যামেক থাকিতে

    ব্রাক্ষণেরা দেখে বাসুদেব নাই রথে
    ।।
    বৈরাগীর বংশরথে বাসুদেবোদয়

    সর্ব্ব লোকে তাহা দেখি মানিল বিস্ময়
    ।।
    তাহা দেখি রামকান্ত কেঁদে কেঁদে কয়

    বাসু এল বাশোঁ রথে জগা এলে হয়
    ।।
    দেখরে জগৎবাসী দেখ দাঁড়াইয়া

    বাসুদেব রথযাত্রা দেখরে চাহিয়া
    ।।
    মোর বাসু রথে সাজে নব জলধর

    বলিতে বলিতে স্বেদকম্প থর থর
    ।।
    রথের উপরে উঠি মনের হরিষে

    রামকান্ত বাসুদেবে কোলে করি বসে
    ।।
    হেন কালে এল কোলে প্রভু জগন্নাথ

    দুই প্রভু দুই কোলে চলে যায় রথ
    ।।
    কেহ বলে রথের হইল এক টান

    কেহ বলে কে টানিল চলে রথখান
    ।।
    মুহুর্ত্তেক চলি রথ হইল সুস্থির

    ভূমিতে নামিল কান্ত চক্ষে বহে নীর
    ।।
    প্রেমে গদ গদ হয়ে রামকান্ত কয়

    দেখরে নগরবাসী দিন বয়ে যায়
    ।।
    দেখ দেখ চেয়ে দেখ যত ভক্তগণ

    জগা বাসো এক রথে অপূর্ব্ব মিলন
    ।।
    প্রেমাবশে ধরায় দিতেছে গড়াগড়ি

    কি ধরে টানিব রথ রথে নাই দড়ি
    ।।
    জগা বাসো মিলন দেখিয়া সর্ব্বলোক

    এইতো বৈকুণ্ঠ মম এই তো গোলোক
    ।।
    জগা বাসো দুইজন একত্র মিলন

    এ মোর মথুরা পুরী এই বৃন্দাবন
    ।।
    জগা বাসো সম্মিলন, অপূর্ব্ব মাধুরী

    তারক রসনা ভরি বল হরি হরি
    ।।

    রামকান্ত বৈরাগীর মানবলীলা সম্বরণ
    পয়ার
    কত দূরে গিয়া রামকান্ত কয়

    টানিতে নারিব রথ তোরা চলে আয়
    ।।
    বলিতে বলিতে ঘড় ঘড় শব্দ হয়

    কেহ না টানিল রথ বেগে চলে যায়
    ।।
    আশ্চর্য্য মানিয়া সবে দৃঢ়ভক্তি হয়ে

    এক দৃষ্টে রথপানে সবে রৈল চেয়ে
    ।।
    লোকভিড় নিকটে না সবে যেতে পারে

    কেহ কেহ দূরে থেকে রথ দৃষ্টি করে
    ।।
    কোন কোন ভাগ্যবান করে দরশন

    জগন্নাথ বাসুদেব যুগল মিলন
    ।।
    ঘড় ঘড় শব্দে রথখানা চলে এল

    রামকান্ত পথ মাঝে বসিয়া রহিল
    ।।
    কেহ বলে উঠ উঠ উঠ হে বৈরাগী

    এখানে বসিলে কেন মরিবার লাগি
    ।।
    অষ্টাঙ্গ লোটায়ে সাধু করে দন্ডবৎ

    রামকান্ত উপরে উঠল গিয়া রথ
    ।।
    পৃষ্ঠোপরে রথখানা উঠিল যখন

    উঠে এক জ্যোতি প্রাতঃ সূর্য্যের মতন
    ।।
    দেখিয়া সকল লোকে লাগে চমৎকার

    রথ নীচ হতে যেন উঠে দিবাকর
    ।।
    বিদ্যুতের ন্যায় তেজ রথোপরে গেল

    জগন্নাথ বাসুদেবের অঙ্গেতে মিশিল
    ।।
    পূর্ব্ব মুখ রথখান হইল সুস্থির

    পথে পড়ে রইল রামকান্তের শরীর
    ।।
    সকলে দেখিল গেছে ব্রহ্মরন্ধ্র ফাটি

    রামকান্তের মৃতদেহে হল পুষ্পবৃষ্টি
    ।।
    রামকান্ত লীলা সাঙ্গ হরিবল ভাই

    শ্রবণে গোলোকে বাস কাল ভয় নাই
    ।।
    জগন্নাথ রথ হতে হল অর্ন্তধান

    বাসুদেবে লয়ে দ্বিজগণ গৃহে যান
    ।।
    ভূবন পবিত্র হেতু রামকান্ত এল

    এই রামকান্ত বরে হরি জনমিল
    ।।
    রামকান্ত ভক্ত সব একত্র হইল

    ঘৃতাগ্নি সংযুক্ত করি সৎকার করিল
    ।।
    রামকান্ত মহাসাধু রসিক সমাজ

    কান্তলীলা রচিল তারক রসরাজ
    ।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.