শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
হরি এলো কেন? (শ্রীমৎ বিনোদ গোস্বামী) - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    হরি এলো কেন? (শ্রীমৎ বিনোদ গোস্বামী)

    হরি এলো কেন? (শ্রীমৎ বিনোদ গোস্বামী)


    ভূমিকা
    শ্রী শ্রী হরিচাঁদের করুণায় এবং পরম পুরুষ পিতা কাশিনাথ গোস্বামীর আদেশে এই পুঁথিখানি রচিত হইল। ইহাতে হরিনাম উৎপত্তি ও বারুণীর ধরায় আগমন কাহিনী সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করা হইল।
    আমি ভক্তগণের শ্রীচরণে নিবেদন করি,আমার লেখনীর দোষ বহুলাংশে থাকিতে পারে । আপনারা রাজহংসবৎ দোষ বর্জ্জন করিয়া হরিনামের গুণ কীর্ত্তন করিলে আমি ধন্য হবো।


                             ইতি—
                   দীনের অদীন বিনোদ



            হরি এল কেন
                            মাতা পিতার বন্দনা
    পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম সর্ব শাস্ত্রে কয়।

    ভাবিয়া পিতার পদ রাখিনু মাথায়।।
    যাহার কৃপায় আমি এ জগতে আসি।
    তাহার শরণে পাপ খণ্ডে রাশি রাশি।।
    না বুঝিয়া কত পাপ করেছি চরণে।
    এ পাপের নাহি ক্ষমা সে চরণ বিনে।।
    কত কষ্টে পিতা মোর করেছে পালন।
    পিতৃ ঋণ শোধ দিতে পারে কোন জন।।
    পিতা যে পরম বস্তু সাধনের ধন।
    পূঁজিলিনা সে চরণ ওরে মূঢ় মন।।
    মায়াজালে হয়ে বন্দি সে সব ভুলিলি।
    ঘরেতে রাখিয়া ধর বাহিরে খুঁজিলি।।
    যখনে ছিলিরে মন পিতৃ-মণি পুরে।
    তথা হতে আইলিরে জননী জঠরে।।
    দশ মাস দশ দিন ছিলি মাতৃগর্ভে।
    মাতা মোর কত কষ্ট করে কত ভাবে।।
    অসহ্য যাতনা মাতা সহে হাস্য মুখে।
    আশাতে বাঁধিয়া বুক সদা থাকে সুখে।।
    দশ মাস দশ দিন যখনে হইল।
    প্রসব করিতে মাতা কত কষ্ট পেল।।
    তারপর কতভাবে করেছে পালন।
    স্তন দুগ্ধ দিয়ে মোরে বাঁচায় জীবন।।
    তবু মাতা দিন রাত প্রফুল্ল-অন্তরে।
    স্নেহভরে কোলে করে কত যত্ন করে।।
    নিজে না খাইয়া মাতা খাওয়ায়েছে মোরে।
    মলমূত্র ধোঁয়ায়েছে ঘৃণা নাহি করে।।
    এত কষ্ট করে মাতা তবু হাসি মুখে।
    মা শব্দের তুল্য দিতে আর কিছু নাই।
    ঐ চরণে গয়া গঙ্গা সব কিছু পাই।।
    এহেন মায়ের পদ ভাবিয়া অন্তরে।
    লিখিলাম এই পুথি মা বাপের বরে।।
    মাতা পিতার চরণে করিলাম স্তুতি।
    পাপ দেহে যেন মোর জাগয়ে ভকতি।।
    তাই বলি ওরে মন হরি হরি বল।
    কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা ডুবে  গেল।।

                   --------০--------
               শ্রীশ্রী হরিচাঁদ বন্দনা
    নম নম হরিচাঁন্দ পতিত পাবন।

    তব শ্রীচরণে মোর থাকে যেন মন।।
    সাধনা না জানি প্রভু ভজন না জানি।
    নিজ গুণে দাও তব চরণ দুখানি।।
    তুমি হরি গুণনিধি জগতের সার।
    এ ভব সাগর হতে কর মোরে পার।।
    তোমার গুণের সীমা বর্ণিতে কি পারি।
    গুণের অতীত তুমি দয়াল শ্রীহরি।।
    তোমার ইশারাতে এ জগত চলে।
    তোমার মায়াতে প্রভু এ জগত ভোলে।।
    সত্য যুগে ছিলে তুমি নাম রূপ ধরি।
    ত্রেতা যুগে রাম রূপে জন্মিলেন হরি।।
    দ্বাপর যুগেতে প্রভু কৃষ্ণ অবতার।
    কলিতে গৌরাঙ্গ রূপে হইল প্রচার।।
    তারপর ওড়াকান্দি হলে অবতার।
    ঐ চরণে কোটি কোটি করি নমস্কার।।
    নম নম শান্তি মাতা জগত জননী।
    হরিচাঁদ প্রাণপ্রিয়া লোচন নন্দিনী।।
    চরণ যুগলে মাগো করি নিবেদন।
    দয়া করে অধমেরে দিও শ্রীচরণ।।
    হরি নাম প্রচারিতে হইলে প্রকাশ।
    অধমেরে কর প্রভু শ্রী চরণে দাস।।
    নমঃ নমঃ যশোমন্ত ঠাকুরের পিতা।
    নমঃ নমঃ অন্নপূর্ণা ঠাকুরের মাতা।।
    নমঃ নমঃ কৃষ্ণদাস প্রভু জ্যেষ্ঠ ভাই।
    চরণেতে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।।
    নমঃ শ্রী বৈষ্ণব দাস অংশ অবতার।
    নমঃ নমঃ গৌরি দাস মহিমা অপার।।
    নমঃ শ্রী স্বরূপ দাস সবার কনিষ্ঠ।
    ঠাকুর চরণে যার ভক্তি একনিষ্ঠ।।
    নমঃ নমঃ শ্রীসুধন্য ধীর অবতার।
    নমঃ নমঃ শ্রীপতিচাঁদ তাহার কোঙর।।
    নমঃ নমঃ মঞ্জুলিকা মাতা ঠাকুরাণী।
    করপুটে বন্দি আমি চরণ দুখানি।।
    নমঃ শ্রী প্রমথচাঁদ তুমি গুণমণি।
    নমঃ নমঃ বীণাপাণি মাতা ঠাকুরাণী।।
    নমঃ নমঃ অংশুপতি নমঃ শচিপতি।
    নমঃ শ্রীহিমাংশুপতি পদে করি স্তুতি।।
    ঠাকুর হইতে এল ঠাকুরের অংশ।
    করজোড়ে বন্দি আমি ঠাকুরর বংশ।।
    অধম বিনোদ বলে দিতে নারি সীমা।
    কৃপা করে  অধমেরে করে দিও  ক্ষমা।।

              -----------০---------
                ভক্তগণ বন্দনা
    নমঃ নমঃ হীরামন ভক্ত চুড়ামনী।

    নিজগুণে দাও তব চরণ দুখানী।।
    নমঃ শ্রীগোলকচন্দ্র পাগল গোঁসাই।
    চরণেতে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
    নমঃ নমঃ শ্রীলোচন বড় দয়াময়।
    দয়া করে অধমেরে রাখ রাঙ্গা পায়।।
    নমঃ নমঃ মৃত্যুঞ্জয় সাধু শিরমণি।
    নমঃ নমঃ মহানন্দ প্রেম রসখনি।।
    নমঃ শ্রীতারক চন্দ্র কবি চূড়ামণি।
    দন্তে তৃণ ধরি বন্দী চরণ দুখানি।।
    তোমার কৃপাতে পাই অমূল্য রতন।
    লীলামৃত গ্রন্থখানি সুধার মতন।।
    নমঃ নমঃ দশরথ পদ্মবিলাবাসী।
    ঠাকুরের নামে প্রেমে হইল উদাসী।।
    নমঃ নমঃ শ্রী অশ্বিনী প্রেমের মুরতী।
    যাহার কৃপাতে পাই হরিচাঁদ গীতি।।
    নমঃ নমঃ হরিপাল মহিমা প্রচুর।
    গহন বাদার মধ্যে দেখিল ঠাকুর।।
    নমঃ শ্রীগোপাল সাধু কি মধু পাইয়া।
    দক্ষিণ দেশে মাতাল হরিনাম দিয়া।।
    নমঃ নাটু নমঃ ব্রজ নমঃ বিশ্বনাথ।
    দিবা নিশি থাকিতেন ঠাকুরের সাথ।।
    উদ্দেশ্য বন্দিনু আমি যত ভক্তগণে।
    অগণিত ভক্তবৃন্দ আছে যে খানে।।
    অধম বিনোদ বলে ভক্তগণে বলি।
    কৃপা করে অধমেরে   দিও    পদধূলি।

                 ---------০--------             
                হরিনাম উৎপত্তি
    অনাদীর আদি প্রভু নিত্য নিরঞ্জন।

    সৃষ্টির লাগিয়া প্রভু ভাবে মনে মন।।
    সত্ত্বঃ রজঃ তমঃ এই তিন গুণ দিয়া।
    পঞ্চ তত্ত্ব সৃজিলেন জীবের লাগিয়া।।
    আকাশের শব্দ গুণ হইল উদয়।
    আকাশ হইতে সৃষ্টি বাতাসের হয়।।
    বাতাসের দুই গুণ প্রকাশ পাইল।
    শব্দ আর স্পর্শ  এই   দুই গুণ   হল।

    বাতাস  হইতে  পরে   অগ্নির   সঞ্চার।
    আগুনেতে তিন গুণ হইল প্রচার।।

    শব্দ  স্পর্শ  রূপ  গুণ আগুনেতে   হয়।

    আগুন  হইতে  পরে  জলের    উদয়।
    জলেতে চারিটি গুণ বর্ত্তিল তথায়।

    শব্দ স্পর্শ রূপ রস এই চারি হয়।।
    জল হতে মাটি সৃষ্টি পঞ্চ গুণ পায়।
    শব্দ  স্পর্শ  রূপ  রস  গন্ধেতে বিলায়।

    এই রূপে কত খেলা খেলিলেন তিনি।

    আপনি করিয়া সৃষ্টি খেলায় আপনি।।
    তাহার সৃষ্টির কথা অপূর্ব্ব কথন।
    করিলেন  সৃষ্টি  প্রভু  দেব  তিন  জন।

    সত্ত্বঃ গুণে বিষ্ণু ব্রহ্ম রজঃ গুণে।

    তমঃ গুণে  সদা  শিব  জন্মিল তখনে।

    মহাপ্রভু বলিলেন তাহাদের ঠাঁই।

    আমার আদেশ বাণী পালহ সবাই।।
    ব্রহ্মা করিবেক সৃষ্টি যত জীবগণ।
    পালন করিবে বিষ্ণু শুন দিয়া মন।।
    সংহার করিবে শিব এইত আদেশ।
    যথা যথা কর্ম্মে সবে করহ নিবেশ।।
    যার যার  কর্ম্মে সবে  গেলেন   চলিয়া।

    তারপর  দেখে  প্রভু  মনেতে  ভাবিয়া।
    মোহ আর মায়া দ্বারা করিলেন সৃষ্টি।

    অপূর্ব্ব সে নারী মূর্ত্তি কিবা তার দৃষ্টি।।
    মহামায়া বলে প্রভু করি নিবেদন।
    আমাকে সৃজিলে প্রভু কিসের কারণ?
    মহাপ্রভু বলে দেবী শুনহ বচন।
    তোমাকে করিনু সৃষ্টি লীলার কারণ।।
    সর্ব্ব শক্তি রূপিণী তুমি মূলাধার।
    এ বিশ্ব মাঝারে তুমি হইবে প্রচার।।
    ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব এই দেব তিনজন।
    সৃজন করেছি আমি লীলার কারণ।।
    তুমি এর একজনে করিয়া সাধনা।
    পতিরূপে যত্ন করি পুরাও বাসনা।।
    মহামায়া বলে প্রভু যে আজ্ঞা তোমার।
    পালিব তোমার বাক্য প্রতিজ্ঞা আমার।।
    এ কথা শুনিয়া প্রভু সন্তুষ্ট হইল।
    আশীর্বাদ দিয়ে প্রভু অন্তর্হিত হল।।
    চিন্তান্বিত মহামায়া ভাবে মনে মন।
    কেমনে পাইব আমি বিষ্ণু দরশন।।
    কোথা তুমি বিষ্ণু দেব দেখা দাও মোরে।
    আমি বড় অভাগিনী ডাকিহে তোমারে।।
    সাধন না জানি প্রভু ভজন না জানি।
    কৃপা করে এ দাসীরে রাখহে পরাণী।।
    তোমা বিনা এজীবনে কিবা আছে সুখ।
    কেমনে হেরিব আমি তব চন্দ্র মুখ।।
    তোমার বিরহে আজি জীবন চঞ্চল।
    দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ তুমি মহাবল।।
    এই ভাবে কতদিন গত হয়ে গেল।
    অকস্মাৎ বিষ্ণুদেব এসে দেখা দিল।
    বিষ্ণুদেব বলে দেবী কিসের লাগিয়া।
    আমাকে ডেকেছ কেন কান্দিয়া কান্দিয়া।।
    কিবা তব অভিপ্রায় কহ আজি মোরে।
    করিব উপায় কব সাধ্য অনুসারে।।
    মহামায়া বলে প্রভু করি নিবদন।
    আমাকে করহ দয়া দিয়ে শ্রীচরণ।।
    তোমার চরণে মোর এই আকিঞ্চন।
    পত্নি রূপে আজি মোরে করহ গ্রহণ।।
    বিষ্ণু বলে শোন দেবী আমার বচন।
    আমা দ্বারা হবে নাকো এ কার্য সাধন।।
    তুমি হও মাতৃরূপে সর্ব্ব মূলাধার।
    এই  কথা  তুমি দেবী  কর  প্রত্যাহার।

    এই কথা বলে বিষ্ণু করিল গমন।

    মহামায়া হইলেন বিষন্ন বদন।।
    মহামায়া বলে আমি কি করি এখন।
    ব্রহ্মা  আরাধিতে  দেবী করিলেন  মন।

               ----------০--------
              দেবীর ব্রহ্মা আরাধনা
    বিষ্ণুর সাধনে দেবী হইলা নিষ্ফল।

    বিষন্ন বদনে দেবী আঁখি ছল ছল।।
    ব্রহ্মাদেবে ডাকিবারে মন উচাটন।
    বলে কোথা ব্রহ্মদেব দাও দরশন।।
    মনের বেদনা জেনে এস দয়াময়।
    আমাকে করহ দয়া আসিয়া হেথায়।।
    তুমি ব্রহ্মা গুণনিধি সৃষ্টি অধিকারী।
    দয়া করে দাও মোরে শ্রী চরণ তরী।।
    কি করিব কোথা যাব না দেখি উপায়।
    দেখা দিয়ে আজি মোরে রেখ রাঙ্গাপায়।।
    তোমার লাগিয়া আমি ভাসি আঁখি জলে।
    দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ অভাগিনী বলে।।
    বহুদিন গত হল ব্রহ্মার লাগিয়া।
    থাকিতে না পারে ব্রহ্মা এলেন ছুটিয়া।।
    ব্রহ্মা বলে মহামায়া কিসের লাগিয়া।
    আমাকে ডাকিলে কেন কহ বিস্তারিয়া।।
    এত কেন শোকাতুরা দেখি যে তোমায়।
    কিবা তব অভিপ্রায় বলহে আমায়।।
    দেবী বলে ওগো নাথ তোমাকে জানাই।
    ফেলিওনা ও চরণে এই ভিক্ষা চাই।।
    মনের বাসনা মম তব শ্রী চরণ।
    পত্নী রূপে কর দেব আমাকে গ্রহণ।।
    এত যদি বলে দেবী ব্রহ্মার সাক্ষাৎ।
    কহিতে লাগিল ব্রহ্মা যোড় করি হাত।।
    একি কথা কহ দেবী আমার গোচরে।
    মাতৃরূপে হও তুমি বিশ্ব চরাচরে।।
    সর্ব্বশক্তি স্বরূপিণী তুমি মূলাধার।
    শ্রীমুখের বাক্য তব কর প্রত্যাহার।।
    আমাকে করহ ক্ষমা ওগো মহামায়া।
    আমার মনের কথা বুঝাবো কি দিয়া।।
    এ কথা শুনিয়া দেবী মৌন হয়ে রয়।
    বাক্য নাহি সরে মুখে জ্ঞান হারা প্রায়।।
    এত বলি ব্রহ্মা দেব হ 'ল অন্তর্ধ্যান।
    একাকিনী মহামায়া ভাবে মনে মন।।
    মনে মনে ভাবে দেবী হইয়া চঞ্চল।
    দ্বিতীয় সাধনা মোর হইল নিস্ফল।।
    আর মাত্র আছে এক দেব ত্রিলোচন।
    আরবার করে দেখি তাহার সাধন।।
    এতবলি মহামায়া তপ আরম্ভিল।
    কান্দিয়া  বিনোদ  বলে হরি  হরি বল।

                 ----------০----------
                         দেবীর শিবের আরাধনা
    তুমি হর দিগম্বর           আদি দেব মহেশ্বর সংহার কারণ পঞ্চানন।

    তব শ্রীচরণ তরী            হৃদয় ধারন করি
        ডাকি তোমা ওহে ত্রিলোচন।।

    সংকটেতে কর ত্রাণ    তোমা বিনে যাবে প্রাণ

    দেখা দিয়ে রাখ এ জীবন।
    এসে দেখা দিয়ে মোরে    মন দুঃখ দাও দূরে
    চরণেতে এই নিবেদন।।
    মন দুঃখ কই কারে    তোমা বিনে এ সংসারে
      তোমা বিনা অন্য গতি নাই।
    তুমি অগতির গতি      না জানি তোমার স্তুতি
     নিজগুণে পদে দিও ঠাঁই।।
    প্রভুর আদেশ নিয়ে       কত কষ্টে আরাধিয়ে
    সাধনায় এল দুইজন।
    তারা করে নিষ্ঠুরতা         বুঝিলনা মন ব্যথা
      চলি গেল নিজ নিকেতন।।
    তুমি যদি না আসিবে      অভাগীর কিবা হবে
      তোমা বিনে কি হবে উপায়।
    দেখা যদি নাহি পাই      এ জীবনে কাজ নাই
    এ জীবন ত্যাজিব নিশ্চয়।।
    এইভাবে দিবারাতি        করে কত স্তব স্তুতি
    দিবা নিশি শয়নে স্বপনে।
    স্তব করে মহামায়া         নয়ন জলে ভাসিয়া
    সাধনা করিছে একাসনে।।
    এত যদি ডাকে দেবী     শিব তবে মনে ভাবি
    দেখা দিল আসিয়া ত্বরায়।
    শিব বলে ওগো সতী      কেন তুমি কর স্তুতি
    মন কথা কহত আমায়।।
    মহামায়া বলে বাণী         শুন ওহে শূলপাণি  শ্রীচরণে করি নিবেদন।
    ঘুচাইয়া মন ব্যাথা          চিত্ত কর পবিত্রতা
      পত্নী রূপে করিয়া গ্রহণ।।
    এ জীবনে পাব শান্তি     দূরে যাবে মন ভ্রান্তি
      মতি গতি তোমার চরণে।
    নিজগুণে কর দয়া         দিয়ে তব পদ ছায়া
    সুখী কর মধুর বচনে।।
    শিব বলে ওগো দেবী       তোমার চরণ ভাবি
      দিবানিশি আমি করি ধ্যান।
    সর্ব্ব শক্তি সরূপিনী         তুমি মম কুণ্ডলিনী
      তোমাকে করেছি মাতৃজ্ঞান।।
    কহিওনা আর মোরে       ধ্যান কর অন্যস্তরে
    আমা দ্বারা সম্ভব না হয়।
    মনেতে দিওনা ব্যাথা       ফিরাইয়া লহ কথা
      পত্নীরূপে মনেতে না চায়।।
    এত বলি সদানন্দ          মনে হয়ে নিরানন্দ
    চলি যায় সরোবর তীরে।
    তথা গিয়ে করে ধ্যান      হারাইয়া বাহ্য জ্ঞান
      মহামায়া ভাসে আঁখিনীরে।।

    মহামায়া কেন্দে বলে  কোথা তুমি কোথা গেলে

     দেখে যাও আমারে আসিয়া।
    এই ভাবে কান্দে কত     ঝরে আঁখি অবিরত
    মন দুঃখ মনেতে রাখিয়া।

             --------০-------
        মহামায়ার নিত্য নিরঞ্জনের ধ্যান
    কান্দিতে লাগিল দেবী ভাবিয়া না পায়।

    কোথা প্রভু কোথা তুমি কি করি উপায়।।
    তোমার আদেশে প্রভু করি আরাধনা।
    একে একে তিন জনে জানাই বাসনা।।
    তারা সবে এক সুরে এক কথা কয়।
    পত্নী রূপে করিলনা গ্রহণ আমায়।।
    অনাদির আদি প্রভু নিত্য নিরঞ্জন।
    তোমার আদেশ আমি করেছি পালন।।
    এবে তুমি দেখা দাও আসিয়া হেথায়।
    বিরহ বেদনায় আজি প্রাণ বাহিরায়।।
    হেনকালে নিরঞ্জন আসিয়া তথায়।
    বলে  দেবী  কান্দিও  না করিব উপায়।।

    শুন শুন ওগো দেবী আমার বচন।

    শিবের সঙ্গেতে তব হইবে মিলন।।
    শিব আছে সরোবর তীরেতে বসিয়া।
    তাহার নিকটে যাও জলেতে ভাসিয়া।।
    এত বলি নিরঞ্জন কহিতে লাগিল।
    মহাযোগ তত্ত্ব প্রভু দেবীকে জানাল।।
    রেচক কুম্ভক আদি শিখাল দেবীরে।
    আর কত শিক্ষা দিল থাকিয়া অন্তরে।।
    দেবীকে বলিল প্রভু কুম্ভক করিয়া।
    জলেতে ভাসিয়া যাও তথায় চলিয়া।।
    এত বলি মহা প্রভু হল অন্তর্ধ্যান।
    জলেতে ভাসিয়া দেবী হলো আগুয়ান।।
    জলস্রোতে ভেসে চলে দেবী মহামায়া।
    মরার মতন দেবী বেড়ায় ভাসিয়া।।
    ধ্যানেতে বসিয়া ছিল দেব পঞ্চানন।
    অকস্মাৎ সদানন্দ মেলিল নয়ন।।
    চাহিয়া দেখেন শিব স্বপনের প্রায়।
    জলের উপরে ভেসে কি যেন কি যায়।।
    টানিয়া তুলিল শিব সরোবর তীরে।
    খল খল মহামায়া হাসে উচ্চস্বরে।।
    মহামায়া বলে তুমি করিলে কি কর্ম্ম।
    ভাসিয়া চলেছি  আমি নাহি জানি  মর্ম্ম।।

    কেন তুমি হস্ত ধরি তুলিলে আমারে।

    সার কথা তবে আমি কহি যে তোমারে।।
    মম হস্ত ধরে তুমি তুলিলে যখন।
    পত্নীরূপে আজি মোরে করহে গ্রহণ।।
    নতুবা তোমারে আমি অভিশাপ দিব।
    তাহা না হইলে আমি জীবন ত্যাজিব।।
    শুনিয়া দেবীর বাণী চিন্তে শূলপাণি।
    কহিতে লাগিল শিব জুড়ি দুই পাণি।।
    এবে এক কার্য কর শোন দিয়া মন।
    দিয়াছে আমারে প্রভু রুদ্র হুতাশন।।
    আমি দিব অগ্নি জ্বালি তোমার লাগিয়া।
    পুড়িবে আগুনে তুমি শোন মন দিয়া।।
    যোগবলে দেহ তুমি করিবে ধারণ।
    আরবার জ্বালাইব রুদ্র হুতাশন।।
    এইভাবে পোড়াইব শত অষ্ট বার।
    পার যদি ওগো দেবী কর অঙ্গীকার।।
    তারপরে তুমি আমি হইব মিলন।
    পত্নীরূপে তোমাকেই করিব গ্রহণ।।
    এই কথা সদানন্দ যখন কহিল।
    আনন্দিত হয়ে দেবী কহিতে লাগিল।।
    জ্বাল’হ এখনি তব রুদ্র হুতাশন।
    পোড়াইব  এই  দেহ  এই  মোর  পণ।

    যোগ বলে দেহ পুনঃ করিব ধারণ।

    পোড়াইবে মম দেহ যত লয় মন।।
    একথা শুনিয়া শিব আনন্দিত হ’ল।
    বলিতে বলিতে শিব আগুন জ্বালিল।।
    জ্বলিল আকাশ ভেদি রুদ্র হুতাশন।
    আগুনের মধ্যে দেবী করিল শয়ন।।
    সোনার বরণ তনু আগুনেতে পোড়ে।
    কণ্ঠ হাড় কেটে রাখে গণনার তরে।।
    এই ভাবে দেবী দেহ করে ভষ্মময়।
    নাভিমূল পোড়ে না’ক জ্বলে ফেলে দেয়।।
    এই ভাবে পোড়ে দেবী অষ্টশত বার।
    অগ্নি নির্বাপিত করে দেব দিগম্বর।।
    নাভিমূল সরোবরে করে বিসর্জ্জন।
    শত অষ্ট নীল পদ্ম হইল সৃজন।।
    সেই হতে দেবীদহ সরোবর হয়।
    সে সব লিখিতে গেলে পুথি বেড়ে যায়।।

    শত অষ্ট কন্ঠ হাড় গ্রন্থন করিয়া।

    শিবের  গলায়  দেবী   দিল  পরাইয়া।।

    পত্নীরূপে    সদানন্দ    করিল   গ্রহণ। প্রেমানন্দে    দুইজনে   হইল   মিলন।।                                 
    মহামায়া   বলে   শুন   ওহে  প্রাণনাথ।
    তব শ্রীচরণে আমি করি প্রণিপাত।।

    আমাকে পোড়ালে তুমি শত অষ্ট বার।
    কোনও তত্ত্ব পেয়েছো কি ইহার ভিতর।

    শুনিয়া দেবীর বাণী কহে শূলপাণি।

    তার কিছু তত্ত্ব কথা বলিব এখনি।।
    যখনেতে জ্বালি আমি রুদ্র হুতাশন। 
    ‘হো’ ‘হো’ শব্দ উচ্চারিত হইল তখন।।
    রুদ্র অগ্নি যখনেতে নির্বাপিত হয়।
    ‘রি’ ‘রি’ শব্দ উচ্চারিত হইল তথায়।।
    দুই শব্দ মিলনেতে “ হরি ” নাম হয়।
    হরিনাম নিতে সাধ জাগিল হৃদয়।।
    দেবী বলে প্রাণনাথ কহিনু তোমারে।
    হরিনাম শুনিবারে বাসনা অন্তরে।।
    মধুমাখা হরিনাম কহ আরবার।
    হরিনামে প্রেমানন্দ হতেছে আমার।।
    বলিতে বলিতে দেবী হরিনাম করে।
    হরিনামে মাতোয়ারা প্রেম অশ্রু ঝরে।।
    মহামায়া নাম করে দেখি সদানন্দ।
    হরিনাম করিবারে বাড়িল আনন্দ।।
    হরিনামে মাতোয়ারা হলো দুই জন।
    প্রেমে গদ গদ চিত্ত ঝরে দুনয়ন।।
    উঠিল নামের ধ্বনি গগন মণ্ডলে।
    নাম আকর্ষণে প্রভু এসে দেখা দিলে।।
    কহিতে লাগিল প্রভু নিত্য নিরঞ্জন।
    হরিনাম   ক্ষান্ত  কর  ওহে  ত্রিলোচন।। শিব বলে ওগো প্রভু কি কথা কহিলে।
    হরিনাম নিতে কেন নিষেধ করিলে।।
    কহ কহ কহ প্রভু ধরি তব পায়।
    হেন নাম নিলে কিবা অপরাধ হয়।।
    প্রভু বলে নাম নিতে অপরাধ নাই।
    গোপনে থাকিবে নাম তোমাকে জানাই।।
    শিব বলে কেন প্রভু গোপন থাকিবে।
    ইহার বৃত্তান্ত কথা আমাকে কহিবে।।
    প্রভু বলে সদানন্দ শুন দিয়া মন।
    ইহার বৃত্তান্ত কথা কহিব এখন।।
    চারি যুগে চারি নাম হইবে প্রচার।
    তারক ব্রহ্ম নামেতে জীবের নিস্তার।।
    কলির মধ্যাহ্ন কালে হ’ব অবতার।
    হরিনাম সেই দিনে হইবে প্রচার।।
    হরিনামে জন্ম লব যশোমন্ত ঘরে।
    সে দিন তোমাকে আমি লব সঙ্গে করে।।
    পুত্ররূপে তোমা আমি করিব পালন।
    উচ্চস্বরে হরিনাম লবে সর্ব্বক্ষণ।।
    শিব বলে ওগো প্রভু কহিনু তোমারে।
    হেন সঙ্গ পাব আমি কত দিন পরে।।
    প্রভু বলে সদানন্দ শুন মন দিয়া।
    অষ্টাবিংশ মন্বন্তর তারপরে গিয়া।।
    চারি যুগে যত ভক্ত করি একত্তর।
    সঙ্গে সঙ্গে লয়ে আমি হব অবতার।।
    গোপী কোপি আর যত ভাবের আশ্রয়।
    বাকী না রাখিব আমি জানাব সবায়।।
    শাক্ত,শৈব্য,ন্যাসী,যোগী,সৌর গান পত্য।
    সবাকে জানাব আমি এ সকল তত্ত্ব।।
    গৃহস্থ প্রসস্থ ধর্ম্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
    অবতীর্ণ হব আমি গিয়া অবনীতে।।
    মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী শুভ লগ্ন পেয়ে।
    জনম লভিব আমি ধরাধামে গিয়ে।।
    এত যদি কহিলেন নিত্য নিরঞ্জন।
    দুই জনে করিলেন চরণ বন্দন।।
    সেই হতে হরিনাম গোপনেতে ছিল।
    এবে এসে ওড়াকান্দি প্রকাশ হইল।।
    তাই বলি ওরে মন হরি হরি বল।
    হরিনামে তরী করে ভবপারে চল।।
    কান্দিয়া বিনোদ বলে ওগো দয়াময়। 
    অন্তিম কালেতে মোরে ঠেলিও না পায়।

               -------০-------- 
            

                

            বারুণীর উৎপত্তি
    ভক্তগণ চরণেতে করি নিবেদন।

    বারুণীর জন্ম কথা করিব বর্ণন।।
    একদিন ব্রহ্মলোকে দুর্বাশা চলিল।
    যোগ বলে ব্রহ্মলোকে উপনীত হল।।
    তুষ্ট হল ব্রহ্মাদেব মুনিকে দেখিয়া।
    তুষিলেন পারিজাত পুষ্পমালা দিয়া।।
    বলিলেন এই মালা যার গলে দেবে।
    ............একটা লাইন নাই
    মালা লয়ে মুনিবর গেল স্বর্ণ পুরি।
    দেবরাজে দিল মালা উপহার করি।।
    মালা দিল দেবরাজ পরি রয় গলে।
    শুণ্ডেতে ছিড়িয়া মালা ভুমি তলে ফেলে।।
    মনে মনে দুর্বাশার হলো অপমান।
    ক্রোধেতে কম্পিত মুনি হারাইল জ্ঞান।।
    শাপ দিল ইন্দ্র দেবে ছন্ন হয়ে মতি।
    লক্ষ্মী ভ্রষ্ট হবে তব এ অমরাবতী।।
    অভিশপ্ত হয়ে লক্ষ্মী গেলেন ছাড়িয়া।
    সমুদ্র মাঝারে লক্ষ্মী লুকাইল গিয়া।।
    লক্ষ্মী ছাড়া হল যদি অমরা ভুবন।
    লক্ষ্মীর বিরহে তবে শোকাকুল মন।।
    অমঙ্গল দেখা দিল স্বর্গের মাঝারে।
    দেবগণ ক্ষুন্ন মন সদা আঁখি ঝরে।।
    কি করিব কোথা যাব না দেখি উপায়।
    ডাকিতে লাগিল তুমি কোথা দয়াময়।।
    দেবতার দুঃখ হেরী প্রভু নারায়ন।
    আসিয়া দিলেন দেখা শ্রী মধুসূদন।।
    প্রভু বলে শুন শুন যত দেবগণ।
    লক্ষ্মী  প্রিয়া  হারাইয়া  কান্দে মম মন।

    তোমাদের দুঃখ যাহা মম দুঃখ তাই।

    লক্ষ্মীর উদ্ধার কথা সবাকে জানাই।।
    লক্ষ্মী আছে লুকাইয়া সমুদ্র মাঝারে।
    মথিব সমুদ্র আজ কহিনু সবারে।।
    সমুদ্র মন্থন করি লক্ষ্মী ফিরে পাব।
    পুনঃরূপী লক্ষ্মী এনে স্বর্গেতে বসাব।।
    আর এক কার্য হবে সমুদ্র মন্থনে।
    কহিলাম সার কথা শুন সর্ব্বজনে।।
    অমৃতের ভাণ্ড আছে ক্ষীরোদের জলে।
    অমর হইবে সবে অমৃত খাইলে।।
    এত যদি কহিলেন প্রভু নারায়ন।
    সন্তুষ্ট হইয়া বলে যত দেবগণ।।
    তুমি প্রভু নারায়ন অখিলের পতি।
    তুমি বিনে আমাদের নাহি কোন গতি।।
    সমুদ্র মন্থন করি যদি পাই সুধা।
    জনমের তরে দূরে যাবে ভব ক্ষুধা।।
    কেমনে করিব মোরা সমুদ্র মন্থন।
    তাহার বৃত্তান্ত কথা কহ নারায়ন।।
    নারায়ন বলে শুন যত দেবগণ।
    সমুদ্র মন্থন কথা কহিব এখন।।
    মন্দন পর্ব্বত আছে পৃথিবী মাঝারে।
    আনিবে  পর্ব্বত  খানি  উত্তোলন করে।

    রাখিবে পর্ব্বত খানি সমুদ্র ভিতর।

    বাসুকিরে রজ্জু করি মথিবে সাগর।।
    তোমাদের শক্তি নাই পর্ব্বত আনিতে।
    অসুর গণেরে ডাকি লইবে সঙ্গেতে।।
    অসুরেরা শক্তিশালী পৃথিবী মাঝার।
    থাকিলে তাহারা সঙ্গে হইবে উদ্ধার।।
    দেবরাজ ইন্দ্র বলে শুন নারায়ন।
    দৈত্যগণ চিরশত্রু কি করি এখন?
    ইন্দ্রের শুনিয়া কথা কহে নারায়ন।
    মিত্রতা করিয়া কর কার্য সমাপণ।।
    তাহাদের বলিবেক সরল ভাষায়।
    অমৃতের ভাগ দিব হবে মৃত্যুঞ্জয়।।
    এত বলি দেবরাজ চলিল ত্বরায়।
    দৈত্যগণ নিকটেতে হইল উদয়।।
    অসুর গণেরে ইন্দ্র কহিতে লাগিল।
    সমুদ্র মন্থন কথা সকল জানাল।।
    শুনিয়া সুধার কথা দৈত্যগণ কয়।
    শুন শুন দেব গণ নাহি কোন ভয়।।
    তোমাদের সঙ্গে মোরা মথিব সাগর।
    অমৃত খাইয়া শেষে হইব অমর।।
    এত বলি দৈত্যগণ স্বীকার করিল।
    দেবাসূরে  এক  সঙ্গে  পর্ব্বত  আনিল।। পর্ব্বত আনিয়া জলে নিক্ষেপ করিল।
    ভীষণ পর্ব্বত খানি জলে ডুবে গেল।।
    ডুবিল পর্ব্বত যদি না দেখি উপায়।
    দেবাসূরে ডাকে প্রভু কোথা দয়াময়।।
    দেবতা কাতর দেখি এল নারায়ন।
    ভয় নাই আসিয়াছি কহিল তখন।।
    কূর্ম্মরূপে নারায়ন সমুদ্রে পসিল।
    দুর্জ্জয় পর্ব্বত খানি পৃষ্ঠেতে ধরিল।।
    বাসুকিরে রজ্জু করি পর্ব্বত বেড়িল।
    দুই পার্শ্বে দেবাসুরে টানিতে লাগিল।।
    পুচ্ছদেশ দেবতারা করিল ধারণ।
    মস্তক ধারণ করে যত দৈত্যগণ।।
    মন্থন করিছে তারা সবে মহাবল।
    মহাশব্দে উথলিল সমুদ্রের জল।।
    এইভাবে দেবাসুর করিছে মন্থন।
    বাসুকির মুখে হল বিষ উদগীরণ।
    বিষের তাপেতে সবে দুর্ব্বল হইল।
    কাতর দেখিয়া প্রভু শক্তি সঞ্চারিল।।
    শক্তি পেয়ে দেবাসূরে টানিতে লাগিল।
    অকস্মাৎ লক্ষ্মীদেবী ভাসিয়া উঠিল।।
    উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব উঠে ওঠে ঐরাবত।
    আর   যত   মহাবস্তু   উঠিয়াছে  কত।।

    সে সব লিখিতে গেলে পুঁথি বেড়ে যায়।

    সংক্ষেপে কহিনু আমি তত্ত্ব সমুদয়।।
    বারুণী উঠিল পরে নারী মূর্ত্তি ধরি।
    অপূর্ব্ব মূরতি খানি মধুর মাধুরী।।
    বারুণীকে দেখে সবে চমকিত হল।
    অসুরেরা সবে মিলে বলে ধরি নিল।।
    বারুণী বলিল আমি অসুরে না চাই।
    দেবতা ভজিব আমি অন্য গতি নাই।।
    অসুর ত্যাজিয়া এল দেবগণ ঠাঁই।
    দেবগণ বলে মোরা তোমাকে না চাই।।
    দৈত্যগণ বলে ধরি নিয়েছে তোমায়।
    কলঙ্কিত হও তুমি যাও অন্যথায়।।
    এত যদি বলিলেন যত দেবগণ।
    কান্দিতে লাগিল দেবী ঝরে দু’নয়ন।।
    কান্না দেখি আসিলেন প্রভু নারায়ন।
    কহিতে লাগিল প্রভু মধুর বচন।।
    জলেতে জন্মিলে তুমি জলে মিশে যাও।
    তীর্থরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হও।।
    বারুণী কহিল আমি ধরাধামে যাব।
    পাপীর পাপের ভার কেমনে সহিব।।
    সত্য,ত্রেতা,দ্বাপরেতে নাহি কোন ভয়।
    সত্য  নিষ্ঠ  শুদ্ধাচারী  স্পর্শিবে আমায়।

    কলির পাপের ভার সহিব কেমনে।

    কহ কহ কহ প্রভু ধরি শ্রীচরণে।।
    বারুণীর কথা শুনি বলে দয়াময়।
    তোমার লাগিয়া আমি জন্মিব ধরায়।।
    মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী যেই দিন হবে।
    ভক্তগণে স্নান করি বাঞ্ছা পুরাইবে।।
    কতবার কতরূপে হব অবতার।
    ভক্তগণ লাগি যাব ধরণী মাঝার।।
    মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী শুভ-লগ্ন পেয়ে।
    তোমাকে বাসিব ভাল জনম লভিয়ে।।
    বারুণী কহিল আমি জানিব কেমনে।
    কহ কহ কহ প্রভু ধরিগো চরণে।।
    প্রভু বলে ওগো দেবী শুন দিয়া মন।
    যেই ক্ষণে জন্ম লব সুতিকা ভবন।।
    আমি হরি আমি হরি কব তিনবার।
    সে দিন জানিবে তুমি থাকিয়া অন্তর।।
    সেই হতে বারুণীর সঙ্গে কথা ছিল।
    সে কারণে ওড়াকান্দি অবতীর্ণ হল।।
    বারুণীর জন্ম কথা শুনে যেই জন।
    অন্তিম কালেতে পাবে হরি দরশন।।
    তাই বলি ওরে মন হরি হরি বল।
    হরিনামে তরী করে ভব পারে চল।।
    কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা ডুবে গেল। 
    প্রেমানন্দে  বাহু  তুলে  হরি  হরি বল।।

          -----০-----
             সমাপ্ত
              কয়েকটি বাণী
                ( আমার কামনা )
      বিশ্ব যাক তরে , আমি থাকি পরে
                                     বিনোদ
      ( ধর্ম্ম কি ? )
           চন্দ্র বিন্দু স্থিতি করা , এইত ধর্ম্মের নিগুঢ়  ধারা
        বিনোদ
      ত্যাজ্য বাহ্য সকল কামনা ,কর বিরহ মন্দিরে প্রেমের সাধনা
                                       -বিনোদ
      আসল কাজে কেউ আসেনা ,স্বার্থের লাগি দেনা পাওনা
                                       -বিনোদ
     স্বভাবে অভাব আসে , বুদ্ধি নষ্ট সঙ্গ দোষে
                                       -বিনোদ

    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.