মধ্যখণ্ডঃ
তৃতীয় তরঙ্গ
মধ্যখণ্ড
তৃতীয় তরঙ্গ
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
গোস্বামী দশরথোপাখ্যান
পয়ার
দশরথ নামে সাধু
পদ্মবিলাবাসী।
তত্ত্বজ্ঞানী হরিনামে মত্ত
অহর্নিশি।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয় পুরুষ
রতন।
করে একাদশী ব্রত তুলসী
সেবন।।
তিন সন্ধ্যা মালা জপ তুলসী
ধারণ।
হরিনাম ছাপা অঙ্গে অতি
সুশোভন।।
নিত্য নিত্য প্রাতঃকৃত
স্নানাদি তর্পণ।
গুরু পূজা কৃষ্ণ পূজা
নৈবিদ্য অর্পণ।।
পক্ষে পক্ষে একাদশী শ্রীহরি
বাসর।
স্তব পাঠ নাম পাঠ নাহি
অবসর।।
চৈতন্য চরিতামৃত পঠে ভাগবত।
সাধুসেবা মহোৎসব করে অবিরত।।
দিবাহারী এক সন্ধ্যা নাহি
দ্বিভোজন।
আতপ তণ্ডুল অন্ন লাবড়া
ব্যঞ্জন।।
তৈল মৎসত্যাগী ভক্ষে দিনে
একবার।
রাত্রে কিছু ফলাহার কভু
অনাহার।।
হেন মতে সদা করে বিশুদ্ধ
ভজন।
হরিনাম সংকীর্তন সতত মগন।।
দৈবে ব্যধিযুক্ত হ’ল কার্ত্তিক মাসেতে।
জ্বর হ’য়ে ভুগিলেন কতদিন হ’তে।।
পালাজ্বর হ’ল তার দুইমাস পর।
একদিন হয় জ্বর এক দিনান্তর।।
মাঘমাস এই ভাবে গেল
গোস্বামীর।
জ্বরের জ্বালায় আর নাহি পান
স্থির।।
ফাল্গুন মাসেতে জ্বর বাড়িল
অধিক।
চৈত্র মাস শেষে জ্বর হইল
ত্রাহিক।।
আরক পাঁচন বটি কত খাইতেছে।
ক্রমশঃ জ্বরের বৃদ্ধি দুর্বল
হ’তেছে।।
ভাল বৈদ্য চিকিৎসক কতই আসিল।
বাছিয়া বাছিয়া কত ঔষধ খাইল।।
তবু রোগ শান্তি নাই হইল
কাতর।
শক্তি নাই যষ্ঠিমাত্র চলিতে
দোষর।।
প্রচলিত হইয়াছে হরিবলা মত।
কতলোকে ওঢ়াকাঁদি করে
যাতায়াত।।
ইহা শুনি দশরথ তবু নাহি যায়।
কি জানি কি ওঢ়াকাঁদি না হয়
প্রত্যয়।।
যারা যায় তারা কয় হরি
আবির্ভূত।
শ্রীকান্ত হয়েছে এবে যশোমন্ত
সুত।।
গেলে মাত্র রোগ সারে করিলে
প্রণতি।
কিংবা প্রভু আজ্ঞা দিলে হয়
রোগ মুক্তি।।
মুখের কথায় মাত্র রোগের
আরোগ্য।
বৈরাগ্য কেহবা পায় যদি থাকে
ভাগ্য।।
শুনে দশরথ কয় বিশ্বাস না হয়।
কোন হরি ওঢ়াকাঁদি হইল উদয়।।
না দেখিলে চক্ষু কর্ণ বিবাদ
না ঘুচে।
অবশ্য যাইব দেখিবার ইচ্ছা
আছে।।
কি ভাব সে ওঢ়াকাঁদি ভক্ত
কিংবা হরি।
হেরিব মহাপুরুষে যদি যেতে
পারি।।
কল্য প্রাতেঃ দরশন করিব
ঠাকুর।
অদ্য গিয়া নিশিতে থাকিব
লক্ষ্মীপুর।।
বুদ্ধিমন্ত বুদ্ধিমন্ত ইহা
আমি জানি।
হরিভক্ত জ্ঞানী চূড়ামণি
চূড়ামণি।।
শুনিয়াছি তারা যায় ঠাকুরের
বাড়ী।
তারা যদি বলে তবে মানিবারে
পারি।।
আদি অন্ত বৃত্তান্ত শুনিব
সেই স্থানে।
কেমন ঠাকুর তিনি তারা ইহা
জানে।।
এতবলি যান চলি লক্ষ্মীপুর
গ্রামে।
রহিলেন গিয়া বুদ্ধিমন্তের
আশ্রমে।।
ঠাকুরের কথা তথা সকল শুনিল।
শুনিয়া অন্তরে বড় ভক্তি জনমিল।।
প্রাতেঃ উঠি চলিলেন ওঢ়াকাঁদি
ধাম।
যষ্ঠিহাতে কষ্টেতে গমন
অবিশ্রাম।।
ধীরে ধীরে চলিলেন
বলবীর্যহীন।
চলে যায় মনে ভয় পালা
সেইদিন।।
জ্বর আসিবার ভয়ে হরি হরি
বলে।
হরিচাঁদ ব’লে ডাকে ভাসে অশ্রুজলে।।
হরি হরি বলি উতরিল ওঢ়াকাঁদি।
বস্ত্র গলে চক্ষু জলে
দাঁড়াইল কাঁদি।।
ঠাকুর বলেন বাছা কি নাম
তোমার।
দশরথ বলে আমি বড় দুরাচার।।
নাম মোর দশরথ পদ্মবিলা বাস।
প্রভু বলে তুমিত’ দশরথ বিশ্বাস।।
তুইত’ বিশ্বাস আমি বড় অবিশ্বাস।
তন্ত্রে মন্ত্রে শৌচাচারে না
হয় বিশ্বাস।।
কেন বা আসিলি বাছা আমার
নিকটে।
তুই শুদ্ধচারী মোর শৌচ নাই
মোটে।।
তিনবেলা সন্ধ্যা কর আর
স্নানাহ্নিক।
স্নান পূজা সন্ধ্যাহ্নিক মোর
নাই ঠিক।।
কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ
পেলে খাই।
বেদবিধি শৌচাচার নাহি মানি
তাই।।
মোর ঠাই এলি বাছা কিসের
কারণ।
কহ শুনি মনোকথা বুঝি তোর
মন।।
প্রকাশিয়া বল শুনি ওরে দশরথ।
শুদ্ধাচারী সাধু তোর কিবা
মনোরথ।।
কি জানি কি ওঢ়াকাঁদি না হয়
প্রত্যয়।
কোথাকার হরি এল ওঢ়াকাঁদি
গায়।।
নদীয়াতে গৌররূপে
গোলোক-বল্লভ।
ওঢ়াকাঁদি জন্ম তার কিসে
অসম্ভব।।
মীন হৈনু, কূর্ম হৈনু, বরাহ নৃসিংহ।
তা হ’তে কি হীন হৈনু ল’য়ে নরদেহ।।
মাতাকে কড়ার দিনু নদীয়া
ভুবনে।
করিব মা শেষ লীলা ঐশান্য
কোণে।।
এই সেই লীলা এই সেই অবতার।
ইহার উপরে পূর্ণ লীলা নাহি
আর।।
মন ঠিক কর বাছা চিন্তা নাই
আর।
পালিয়েছে পালা আর না হইবে
জ্বর।।
শ্রীগুরু চরণচিন্তে ভব
ব্যাধি নাশে।
ওঢ়াকাঁদি এলে তার জ্বর থাকে
কিসে।।
দশরথ বলে প্রভু বুঝিনু এখন।
নিজ দাস জানি প্রভু ছলা কি
কারণ।।
যুগে যুগে ভক্ত মন বুঝিয়া
বেড়াও।
জেনে মন বুঝে মন ছলনা করাও।।
কর্ণকে ছলিতে প্রভু বৃদ্ধ
বিপ্র বেশে।
পুত্র কেটে দিতে কও পারণা
দিবসে।।
খাইবে মনুষ্য মাংস বলিল
সেকালে।
ব্রাহ্মণে মানুষ খায় বুঝিতে
নারিলে।।
দান ধর্মে রত কর্ণ নির্মল
সুজন।
বুঝে না মনুষ্য মাংস খায় কি
ব্রাহ্মণ।।
বুঝিতে কর্ণের মন কিবা বাকী
ছিল।
স্বর্ণ দগ্ধ পুনঃ পুনঃ
ঔজ্জ্বল্য বাড়িল।।
সূর্যবংশে রঘুরায় বুঝি তার
মন।
হ’য়েছিলে দ্বিজ ব্যাঘ্র তোমরা দু’জন।।
তুমি হ’লে দ্বিজ, ব্যাঘ্র হ’ল
পঞ্চানন।
দ্বিজসুতে খেতে ব্যাঘ্র করে
আক্রমণ।।
দ্বিজ শিশু রূপে গেল রঘুরাজ
আগে।
বলেছিল রক্ষা কর মোরে খায়
বাঘে।।
রঘু বলে ওরে বাঘ বলিরে
তোমাকে।
ছাড় ছাড় খেওনারে ব্রাহ্মণ
বালকে।।
ব্যাঘ্র বলে যদি আমি রাজ
মাংস পাই।
তাহ’লে দ্বিজের সুতে ছেড়ে দিয়ে যাই।।
রাজা বলে আমার অঙ্গের মাংস
খাও।
শরণাগত বালকে ছেড়ে দিয়ে যাও।।
তাহা শুনি স্বীকার করিল
ব্যাঘ্রবর।
রাজা দেন গাত্রমাংস ব্যাঘ্রে
খাইবার।।
খাইল সকল মাংস অস্থিমাত্র
সার।
হেনকালে পরিচয় দিল দিগম্বর।।
চেয়ে দেখ আমি ব্যাঘ্র নহে, পঞ্চানন।
মন বুঝিবারে দ্বিজশিশু
নারায়ণ।।
বর দিয়া রঘুরাজে গেলে দুইজন।
অন্তর্যামী হ’য়ে কি বুঝিতে হয় মন।।
শ্রীরাম রাঘব নাম নাশিতে
রাবণ।
রঘুনাথ হ’তে তার মঙ্গলাচরণ।।
বিশেষতঃ ভক্তগণে জানাইতে
ভক্তি।
জগতের শিক্ষাহেতু এই সব
যুক্তি।।
এই আমি মনে মনে ভাবি
অনুক্ষণ।
গোপীদের মন বুঝা কোন
প্রয়োজন।।
যে দিন করিলে হরি বসন হরণ।
জানা মন কি জানিয়ে হরিলে বসন।।
শ্লোক
লজ্জা ঘৃণা তথা ভয় চ্যুতি
জুগুস্পা পঞ্চম।
শোকং সুখং তথা জানি অষ্টপাশ
প্রকীর্ত্তিত।।
পয়ার
লজ্জা ঘৃণা ভয় ভ্রষ্টা
গ্লানি দুঃখ সুখ।
সপ্ত গেছে লজ্জাপাশে পরীক্ষা
কৌতুক।।
পতি ত্যজে বনে এসে করে প্রেম
সজ্জা।
পরীক্ষিলে গোপীদের আছে কিনা
লজ্জা।।
কৃষ্ণ সুখে সুখিনী শ্রীকৃষ্ণ
প্রতি আর্তি।
শয়নে স্বপনে জাগরণে কৃষ্ণ
স্ফূর্তি।।
যারা যাচে দাসী পদ আপন গরজে।
রাধা বাস হরি’ হরি নিলে কি বুঝে।।
বোঝা মন বুঝিবারে কিবা
প্রয়োজন।
সেও বুঝি জগতের শিক্ষার
কারণ।।
প্রভু বলে শেষ লীলা বড়
চমৎকার।
লীলাকারী যেই তার নিজে বোঝা
ভার।।
শুনি দশরথ পড়ে পদে লোটাইয়ে।
কাঁদিতে কাঁদিতে কহে চরণ
ধরিয়ে।।
সারে বা না সারে রোগ তাতে
নাহি দায়।
দয়া করি হরি মোরে রাখ রাঙ্গা
পায়।।
প্রভু কহে এত তোর সাধন ভজন।
শুদ্ধাচারী বৈরাগীর ব্যাধি
কি কারণ।।
প্রভু কহে দশরথ তোমারে
জানাই।
শৌচাচার ক’রে তোর হ’ল শুচিবাই।।
স্নান না করিয়া কিছু খাওনা
কখন।
স্নান না করিয়ে অদ্য করগে
ভোজন।।
কল্য ভাত রাঁধিয়া রেখেছে জল
দিয়া।
কাঁচা ঝাল দিয়া সেই ভাত খাও
গিয়া।।
শুনি অন্তঃপুরে যায় লক্ষ্মীর
নিকটে।
মা! মা! বলিয়া সাধু ডাকে
করপুটে।।
সাধুর মুখের ঐকান্তিক ডাক
শুনি।
দশরথে দেখা দিল জগৎ জননী।।
দশরথ বলে মা দেহি প্রসাদী
ভাত।
খেতে আজ্ঞা দিয়াছেন প্রভু
জগন্নাথ।।
সাধু ভক্তগণ সব যায়
উড়িষ্যায়।
সে আনন্দ বাজারে প্রসাদ মেগে
খায়।।
কল্য রাঁধিয়াছ ভাত তাতে দিলে
জল।
সেই মাতা লক্ষ্মী তুমি এই সে
উৎকল।।
আনন্দ বাজার এই মেগেছি
প্রসাদ।
পদ্ম হস্তে দেহ খেয়ে পুরাইব
সাধ।।
তব হস্ত রাঁধা অন্ন জগন্নাথ
ভোগ।
দেহ অন্ন খাইয়া সারিব ভব
রোগ।।
বাহির্দ্দেশে থাকিয়া বলেছে
জগন্নাথ।
দশরথে দেহ কাঁচা লঙ্কা
পান্তাভাত।।
জগন্মাতা দিল অন্ন আর কাঁচা
লঙ্কা।
দশরথ বলে মম গেল মৃত্যু
শঙ্কা।।
কি ছাড় ত্র্যাহিক জ্বর ভব
রোগ গেল।
অন্নপাত্র ধরি সাধু মস্তকে
রাখিল।।
বহুদিন অরুচি না পারে কিছু
খেতে।
অদ্য এত রুচি নাহি পারে
ধৈর্য হ’তে।।
বড়ই বেড়েছে রুচি বড়ই
সুস্বাদ।
সাধু কহে আর বার দেহ মা
প্রসাদ।।
ভিড়দিয়া ডাক ছেড়ে কহে দশরথ।
কাঁহা লাবড়া ব্যঞ্জন কাঁহা
জগন্নাথ।।
মহাপ্রভু বলে দশরথ এবে আয়।
পাইবি লাবড়া অন্ন মধ্যাহ্ন
সময়।।
কিনা কি এ ওঢ়াকাঁদি না পা’লি ভাবিয়ে।
আয় দেখি ক্ষণকাল বসি তোরে
লয়ে।।
উপজিল প্রেমভক্তি সেরে গেল
জ্বর।
কবি চূড়ামণি কহে হরিনাম
সার।।
অথ দশরথ সঙ্গে ঠাকুরের ভাবালাপ
পয়ার
ঠাকুর বসিল গিয়া চটকা তলায়।
দশরথ গিয়া শীঘ্র প্রণমিল
পায়।।
ঠাকুর জিজ্ঞাসা করে পরেছ
কৌপীন।
কৌপীনের মহিমা না জেনে
এতদিন।।
তিন বেলা স্নান করি কে হয়
বৈরাগী।
স্নান করে পানকৌড়ি সেও কি
বৈরাগী।।
বিবেক বৈরাগ্য তাকি বাহ্য
শৌচে হয়।
বনে বনে থাকিলে কি কৃষ্ণ
পাওয়া যায়।।
স্নান বল কারে শুধু উপরেতে
ধোয়া।
আত্মা শুদ্ধ না হ’লে কি যায় তারে পাওয়া।।
দশরথ বলে এতদিন কি ক’রেছি।
ইতি তত্ত্ব না জানিয়া ডুবিয়ে
ম’রেছি।।
অঙ্গ ধৌত বস্ত্র ধৌত ছাপা
জপমালা।
বহিরঙ্গ বাহ্যক্রিয়া সব ধূলা
খেলা।।
যত দিন নাহি ঘুচে চিত্ত
অন্ধকার।
ততদিন শৌচাচার ডুবাডুবি সার।।
ব্যাধিযুক্ত দোষে রসনাতে
রুচি নাই।
জল ঢালাঢালি হ’য়েছিল শুচিবাই।।
যত করিয়াছি প্রভু সব
শুচিবাই।
তব কৃপাদোক বিনে চিত্তধৌত নাই।।
শ্যাম জলধর বলে চাতক যে হয়।
জলে ডুবে সে কি কভু শুদ্ধ হ’তে চায়।।
স্নান করিয়াছি অন্ন খেতে
পারি নাই।
বিনা স্নানে ব্যাধি গেল
চতুর্গুণ খাই।।
প্রভু বলে তবে বাপ আর কিবা
চাই।
আজ হ’তে আর তোর স্নান পূজা নাই।।
প্রয়োজন নাই তোর ডুবাইতে জলে।
ডঙ্কা মেরে বেড়া গিয়ে হরি
হরি বলে।।
হরিনাম ধ্বনি দিয়া মাতা গিয়া
দেশ।
শোন বাছা দেই তোরে এক
উপদেশ।।
মালাবতী নামে লক্ষ্মীকান্তের
ভগিনী।
তারে বিয়া কর গিয়া সে তোর
গৃহিণী।।
লক্ষ্মীকান্ত নিকটে বলিলে
বিয়া হ’বে।
আমিও বলিয়া দিব ভগিনী সে
দিবে।।
তৈলকুপী আখড়ায় চলে যেও তুমি।
তথা আছে লোকনাথ নামেতে
গোস্বামী।।
যে ধর্ম জানায় তুমি করিবে সে
ধর্ম।
সেই সে পরম ধর্ম তিন প্রভু
মর্ম।।
মালাবতী সঙ্গে ধর্ম করিও
যাজন।
যারে বলে ব্রজ সাধ্য গোপীর
ভজন।।
হেন মতে হইতেছে কথোপকথন।
হইল অধিক লোক প্রভুর সদন।।
যার যে মনন কথা কহিয়া বলিয়া।
স্বীয় স্বীয় স্থানে সব গেলেন
চলিয়া।।
মধ্যাহ্ন সময় হ’ল কথোপকথনে।
প্রভু বলে দশরথ যাবি
কোনখানে।।
খেতে স্বাদ আছে তোর লাবড়া
ব্যাঞ্জন।
চল বাছা খাই গিয়ে হ’য়েছে রন্ধন।।
সেবায় বসিল গিয়া প্রভু
হরিচাঁদ।
দশরথ পাতে হাত লইতে প্রসাদ।।
দিলেন প্রসাদ দশরথ খায় সুখে।
হস্ত মুছে মস্তকে কপালে
চক্ষে মুখে।।
রেঁধেছিল লাবড়া ঠাকুর ডেকে
কয়।
দশরথে দেহ লক্ষ্মী যত খেতে
চায়।।
মহাপ্রভু বলে খাও উদর
পুরিয়া।
পাইয়াছে মুখে রুচি লহরে
খাইয়া।।
জগৎ জননী লক্ষ্মী দিলেন
পায়স।
সানন্দে ভোজন করে অন্তরে
সন্তোষ।।
স্বহস্তে মা শান্তিদেবী দেন
দশরথে।
উদর পুরিয়া সাধু খায়
ভালমতে।।
সেবা অন্তে ক্ষণকাল রহিল
বসিয়া।
দিলেন ঠাকুর তারে বিদায় করিয়া।।
যাত্রা করে দশরথ যষ্ঠি ল’য়ে হাতে।
প্রভু বলে যষ্ঠি আর হ’বে না ধরিতে।।
ধরিয়া ত্রিশূল শিঙ্গা রক্ষা
কর শীল।
যৈছে বোর ধান্য হয় যৈছে হয়
তিল।।
কোন মন্ত্র লাগিবে না শুধু
হরিনাম।
বাসা কর গিয়া বাছা পাতলার
গ্রাম।।
তাহাতে ধান্য তিল পাইবা বৎসর।
সংসার খরচ কার্য চলিবেক
তোর।।
প্রভুকে প্রণামী সাধু চলিল
হাঁটিয়া।
পুষ্করিণী জলে যষ্ঠি দিলেন
ফেলিয়া।।
নিজ বাটী আসিয়া কহিল
ভ্রাতাগণে।
বিবাহ হইল শেষে মালাবতী
সনে।।
ঠাকুর কহিল লক্ষ্মীকান্ত
টীকাদারে।
লক্ষ্মীকান্ত ভগ্নী দিল
আজ্ঞা অনুসারে।।
দশরথ বিবরণ মধুমাখা কথা।
কবি কহে হরি বল দিন গেল
বৃথা।।
অথ দশরথের বাটী নায়েবের
অত্যাচার
পয়ার
কিছুদিন পরে সাধু তৈলকুপি
যায়।
গোস্বামীর নিকটেতে ধর্ম
শিক্ষা লয়।।
মালাবতী সঙ্গে তাহা করিল
যাজন।
অকামনা প্রেমভক্তি ব্রজের
ভজন।।
মালাবতী দশরথ মিলে দুইজনে।
মাঝে মাঝে আসে যায় ঠাকুরের
স্থানে।।
কোন কোন সময় আসেন একা একি।
ঠাকুরের সঙ্গে এসে করে
দেখাদেখি।।
কভু দশরথ ঠাকুরকে ল’য়ে যান।
তিন চারি দিন তথা থাকেন
ভগবান।।
কৃষ্ণ গোষ্ঠ নাম পদ সংকীর্তন
হয়।
নদীয়াতে যেন শ্রীবাসের
আঙ্গিনায়।।
মাতিল অনেক লোক প্রেমে
উতরোল।
ঘাটে পথে যেতে খেতে শুতে
হরিবোল।।
গ্রামের পাষণ্ডী যারা বাধ্য
নাহি তায়।
কাছারিতে নায়েবের কাছে গিয়া
কয়।।
কি মত এ গ্রামে আনিয়াছে
দশরথ।
গ্রাম্য লোক নষ্ট হ’বে থাকিলে এ মত।।
মেয়ে পুরুষেতে বসি একপাতে
খায়।
মেয়েদের এঁটে খায় পদধূলা
লয়।।
পুরুষ ঢলিয়া পড়ে মেয়েদের
গায়।
মেয়েরা ঢলিয়া পড়ে পুরুষের
গায়।।
দিবানিশি হরিনামে পেয়েছে কি
মধু।
রাত্রি ঘুম পড়া নাই এ কেমন
সাধু।।
ওঢ়াকাঁদি হ’তে হরি ঠাকুরকে আনে।
সে ঠাকুর যেন কোন মোহিনী
মন্ত্র জানে।।
বুঝিয়াছি ইহারা নিশ্চয় জানে
যাদু।
হরি ব’লে যায় চ’লে সতী কুলবধূ।।
এ গ্রামেতে লেগেছে বাবু বড়
হুলস্থূল।
গ্রাম্য নমঃশূদ্রদের গেল
জাতি কুল।।
কশ্যপ মুনির বংশ গোত্রজ
কাশ্যপ।
দশরথ হ’তে সেই মান্য হয় লোপ।।
ইহার বিচার কর আনিয়া কাছারি।
এই কাণ্ড আপনাকে দেখাইতে
পারি।।
ঠাকুর আছেন দশরথের ভবনে।
সকল প্রত্যয় হবে দেখিলে
নয়নে।।
রাত্রিকালে হুড়াহুড়ি শুনা
যায় শব্দ।
ছয় সাত দিন মোরা হ’য়ে আছি স্তব্ধ।।
নায়েব বলিছে এবে যাওগে সকলে।
আমাকে লইয়া যেও কীর্তনের
কালে।।
সূর্যদেব ডুবে গেল
সন্ধ্যাকাল এল।
নাম গান কীর্তনেতে সকলে
মাতিল।।
পুরুষ যতেক বসা পিড়ির উপরে।
মহাপ্রভু বসেছেন গৃহের
ভিতরে।।
দরজার নিকটে খোল করতাল বাজে।
ঠাকুর আছেন বসি কীর্তনের
মাঝে।।
রামাগণ অনেক ব’সেছে গৃহভরা।
মাঝে মাঝে হুলুধ্বনি দিতেছে
তাহারা।।
কেহ বা প্রভুর অঙ্গে দিতেছে
বাতাস।
ঠাকুরের ঠাই বসি পরম
উল্লাস।।
নাম গানে যবে প্রেমবন্যা বয়ে
যায়।
রামাগণে বামাস্বরে হুলুধ্বনি
দেয়।।
গৃহে বসিয়াছে রামাগণ সারি
সারি।
প্রভুপার্শ্বে বসিয়াছে
মালাবতী নারী।।
কোন নারী ঠাকুরের চরণে
লোটায়।
কোন নারী পদ ধরি গড়াগড়ি
যায়।।
কোন নারী কেঁদেছে হা হরি
জগন্নাথ।
শ্রীপদ ধোয়ায় কেহ ধরি
অশ্রুপাত।।
হেনকালে গ্রামীরা নায়েবে ল’য়ে যায়।
বাড়ীর উপরে নিয়া তাহাকে বসায়।।
দুইভাগ করিয়া পীড়ার লোক সবে।
চৌকি পাতি সমাদরে বসায়
নায়েবে।।
যে স্থান হইতে ঠাকুরকে দেখা
যায়।
এমন স্থানেতে নিয়া নায়েবে
বসায়।।
রামাগণ বাহ্যজ্ঞান হারা সবে
ঘরে।
নায়েবে বসিয়া সেই ভাব দৃষ্টি
করে।।
অজ্ঞান হইয়া কেহ প্রেমে
গদগদ।
হা নাথ বলিয়া কেহ শিরে ধরে
পদ।।
চতুর্দিকে নারী মালা মালাবতী
বামে।
মৃদুস্বরে হরি বলে মত্ত হ’য়ে প্রেমে।।
মালাবতী ভেসেছেন নয়নের জলে।
স্কন্ধে হাত দিয়া হরি কেঁদোনা
মা বলে।।
বদনে তাম্বুল চাবা চর্বণ যা
ছিল।
কাশীসহ সেই চাবা ঠাকুর
ফেলিল।।
মালাবতী হস্তপাতি ধরিল
চর্বণ।
মস্তকে পরশ করি করিল ভক্ষণ।।
ভক্ত পদ রজ ভক্ত পদ ধৌত জল।
ভক্ত ভুক্ত শেষে এই তিন
মহাবল।।
জগন্নাথ প্রসাদ কুক্কুর মুখ
ভ্রষ্ট।
লভিতে বিরিঞ্চি বিষ্ণু শিবের
অভীষ্ট।।
স্বয়ং ভগবান মুখ চর্বিত
চর্বণ।
মালাবতী সতী তাহা করিল
ভক্ষণ।।
শীলা যথা শত কুম্ভ জলে সিক্ত
নয়।
প্রেমে দ্রবীভূত নয় পাষণ্ড
হৃদয়।।
বিশেষ গ্রামী লোকের ছিল
অনুরোধ।
তাহা দেখি নায়েবের উপজিল
ক্রোধ।।
ডেকে বলে দশরথ ওরে বনগরু।
মজাইবি দেশ শুদ্ধ ক’রে নিলি শুরু।।
ওরে বেটা ভণ্ড তুই আয় দেখি
শুনি।
কি বুঝিয়া ছেড়ে দিলি ঘরের
রমণী।।
এত মেয়েলোক কেন দেখি তোর
ঘরে।
ঠাকুরে লইয়া কেন এত প্রেম
করে।।
ভাল ভাল অই যদি ঠাকুর হইবে।
মেয়েদের সঙ্গে কেন এ রঙ্গ
করিবে।।
দশরথ বলে বাবু মোর দোষ কিসে।
যার যার নারী সেই সেই ল’য়ে আসে।।
জেনে শুনে বল বাবু কেবা করে
দোষ।
প্রভুকে আনিনু আমি হইয়া
সন্তোষ।।
ঠাকুর আছেন মত্ত হরিনাম
গানে।
পাষাণ গলিত হয় এ নামের
গুণে।।
মেয়েরা এসেছে সব নাম
আকর্ষণে।
অগ্নি দেখে পতঙ্গিনী থাকিবে
কেমনে।।
নায়েব কহিছে কেন হুলুধ্বনি
দেয়।
দশরথ বলে হ’য়ে আনন্দ হৃদয়।।
নায়েব কহিছে কেন পদধরি পড়ে।
দশরথ বলে শুধু গাঢ় ভক্তি
করে।।
নায়েব কহিছে তোর নারী কোন
প্রমে।
ঠাকুরের কাছে বৈসে মেতে কোন
নামে।।
দশরথ কহে ইহা কভু নহে মন্দ।
এ আমার বহু ভাগ্য পরম
আনন্দ।।
নায়েব কহিছে ওরে ভণ্ড
তপস্বী।
যাহা শুনিয়াছি তাহা দেখিলাম
আসি।।
এ হেন কুকর্ম কেবা দেখেছে
কোথায়।
ঠাকুরের ত্যজ্য চাবা তোর
নারী খায়।।
নারী লোক সঙ্গে করে হরিনাম
গান।
শীঘ্র ভণ্ড তপস্বীরে
বাহিরেতে আন।।
কোন প্রেম করে নারী লোক
সমিভ্যরে।
নিয়া আয় আমি তাই জিজ্ঞাসি
ঠাকুরে।।
দশরথ বলে বাবু স্থির কর মন।
আমি সব বলিতেছি ক্রোধ কি
কারণ।।
সাধু মুখামৃত খাবে শাস্ত্রে
ইহা আছে।
গৌরাঙ্গ লীলায় ইহার প্রমাণ
রয়েছে।।
বৈষ্ণব বন্দনা মধ্যে মধুর
আখ্যান।
গৌরাঙ্গের নিস্টীবন নারী
লোকে খান।।
বন্দিব বৈষ্ণবী শ্রীমাধবী
ঠাকুরানী।
প্রভু যারে আলবাটী বলেন
আপনি।।
গৌরাঙ্গ যখন নিস্টীবন
ফেলাইত।
বদন ব্যাদান করি মাধবী
খাইত।।
থু থু করি যখন ফেলিত
নিস্টীবন।
মুখে মুখে মাধবী তা করিত
গ্রহণ।।
কাকী যে আধার আনি বাছারে
খাওয়ায়।
তেমনি মাধবী দেবী খাইত
সদায়।।
বিশেষতঃ ভগবান মুখ নিস্টীবন।
মম নারী খেলে তার সফল জীবন।।
নায়েব কহিছে বেটা ভাঙ্গিব
ভণ্ডতা।
করেছিস এতদিন আজ যাবি কোথা।।
আন অই ঠাকুরকে কাছারী লইব।
আ’জ অই ঠাকুরের মর্ম কি শুনিব।।
দশরথ বলে আমি প্রাণে যদি
মরি।
সেও ভাল প্রভু কেন যাবেন
কাছারী।।
করি মানা ঘরে নাহি যেও কোন
জন।
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর
পতন।।
মালাবতী ঘর থেকে শুনিলেন তাই।
ডেকে বলে এখানে আসিলে রক্ষা
নাই।।
দশরথ মস্তকেতে ছিল এক টিকি।
নায়েব ধরিয়া তাই দিল এক
ঝাঁকি।।
চর্মের পাদুকা ছিল নায়েবের
পায়।
গোঁড়া বাঁধা লোহাতে কঠিন
অতিশয়।।
সেই জুতা খুলে মারে ক্রোধে
পরিপূর্ণ।
দশরথ বলে নাহি ভাবি তার
জন্য।।
দশরথ মৃত্তিকায় শুইয়া পড়িল।
নায়েবের পদধরি পিঠ পেতে দিল।।
দশজুতা মারিব তোরে রে দশরথ।
যাহাতে না যা’স আর ঠাকুরের সাথ।।
এতবলি পৃষ্ঠে মারে দশজুতা
বাড়ী।
জরিমানা ডেকে দশরথে দিল
ছাড়ি।।
জরিমানা করিলাম তোরে দশটাকা।
শীঘ্র ফেলা টাকা নৈলে আরো মা’র খাবি।
টাকা যদি নাহি দিস কাছারী
যাইবি।।
প্রভু বলে মালাবতী শীঘ্র ঘরে
যাও।
দশ টাকা চাহে ওরে কুড়ি টাকা
দেও।।
তাহা শুনি মালাবতী কুড়ি টাকা
এনে।
নায়েব নিকটে টাকা দিলেন
তখনে।।
ঘর হ’তে ঠাকুর কহেন নায়েবেরে।
আর দশ টাকা আমি দিলাম
তোমারে।।
কত নিবে কত খাবে প্রজা বেঁচে
রৈলে।
ধনে বংশে মজাইলে যে মা’র মারিলে।।
বারে বারে ইচ্ছা কর মোরে
মারিবারে।
এই মা’র আমা ছাড়া মারিয়াছ কারে।।
জরিমানা দিলাম যে দশ টাকা
বেশি।
এখন নায়েব বাবু হ’য়েছ কি খুশী।।
এমন মধুর নামে পাষণ্ডী হইও
না।
এজন্য দিলাম আমি বেশি
জরিমানা।।
এখন আমরা গান করিতে কি পারি।
পরকাল যা’তে রহে বলে হরি হরি।।
নায়েব কহিছে এবে আর কার ভয়।
দিবা নিশি হরি হরি বলহ
সদায়।।
অমনি বলিয়া সবে প্রভু
হরিচাঁদ।
উচ্চৈঃস্বরে সবে করে নাম গান
পদ।।
নামে প্রেমে দিশেহারা মাতিয়া
উঠিল।
বিষাদে হরিষ হ’য়ে সুখেতে ভাসিল।।
কারু মনে দুঃখ দশরথরে
মেরেছে।
তাহা মনে করি হরি বলে
কাঁদিতেছে।।
নায়েবের প্রতি কেহ ক্রোধ করি
পড়ে।
সে ভাবেও হরি বলে দম্ভ
কড়মড়ে।।
কোন মেয়ে বলে হরি আর ভয় নাই।
আনন্দে বলিল হরি আর কিবা
চাই।।
কি করিবে কোন বেটা বলে কোন
মেয়ে।
নায়েব দিয়েছে আজ্ঞা জরিমানা
নিয়ে।।
কোন মেয়ে বলে সব মঙ্গল কারণ।
কি দিয়ে কি করে হরি বুঝে কোন
জন।।
একাকী বিশ্বাস মহাশয় মা’র খেল।
নির্বিঘ্ন হইল দেশ ভয় দূরে
গেল।।
হরিনাম লইতে নির্বিঘ্ন যদি
হয়।
বিশ জুতা বাড়ী খেলে তাতে
কিবা ভয়।।
কোন মেয়ে বলে কেন মোরে মারিল
না।
চল্লিশ জুতাতে মোর কিছুই হ’ত না।।
কেহ বলে আমারে মারিলে ভাল হ’ত।
কেন মারিল না মোরে পঞ্চাশৎ
জুত।।
শ্রীহরি নামের গুণ বাড়ে যে
প্রহারে।
তাহাতে কি ব্যাথা হ’ত আমার অন্তরে।।
ধন্য দশরথ ধন্য নায়েব
প্রহার।
হরিনাম বিঘ্ন নাশ করে খেয়ে
মা’র।।
হরিচাঁদ হরিচাঁদ হরিচাঁদ বল।
কি করিতে পারে আর পাষণ্ডীর
দল।।
পাষণ্ডীর গণ সব এল ত্বরা
করি।
দাস হ’য়ে হরি বলে দন্তে তৃণ ধরি।।
তাহা দেখি সবে বলে জয় হরি
জয়।
জয় মহাপ্রভু হরিচাঁদ জয় জয়।।
কেহ বলে প্রেমানন্দে হরি হরি
বল।
এইভাবে মহাভাবে সবে মেতে
গেল।।
লম্ফ ঝম্ফ ভূমিকম্প পুলকিত
অঙ্গ।
কেহ বা বেহুঁশ আর নহে প্রেম
ভঙ্গ।।
বিপক্ষেরা বলে গিয়ে নায়েবের
ঠাই।
বলে বাবু দেখ গিয়া আর রক্ষা
নাই।।
নায়েব কহিছে খুব কীর্তন হউক।
প্রেমে মেতে যাহা ইচ্ছা
তাহাই করুক।।
তোদের কথায় আমি মিছা করি
রোষ।
ঘরে দ্বীপ বহুলোক কিবা করে
দোষ।।
পতিব্রতা সতী নারী পতি আছে
সাথে।
দোষ যদি করে তাহা করে
গোপনেতে।।
এখন তাদের প্রতি নাহিক
জুলুম।
নাম গান করিবারে দিয়াছি
হুকুম।।
মারিয়াছি দশরথে ভাগ্যে কিবা
হয়।
এ ঠাকুর সামান্য ঠাকুর যেন
নয়।।
আজানুলম্বিত ভুজ আকর্ণ- নয়ন।
মানুষেতে নাহি মিলে এমন
লক্ষণ।।
দশটাকা জরিমানা বিশ টাকা
দিছে।
কি জানি ঠাকুর যেন মোরে কি ক’রেছে।।
স্বপ্নে দেখিয়াছি অই ঠাকুর
আসিয়া।
হস্তের আঙ্গুলি মোর নিল
খসাইয়া।।
আরো দেখিলাম যেন আসিয়াছে
পত্র।
গৃহদাহ হইয়াছে ঘর নাহি
মাত্র।।
ইতি উতি কত যে কি দেখিনু
স্বপনে।
নৃত্য করে বাম অঙ্গ শান্তি
নাই মনে।।
ফিরে গেল পাষণ্ডীরা অতি মৌন
হয়ে।
এ দিকেতে সংকীর্তন উঠিল
মাতিয়ে।।
যামিনী হইল ভোর নাম
সংকীর্তনে।
সবে প্রেমে মত্ত, ক্ষুধা তৃষ্ণা নাই মনে।।
সংকীর্তন হইতেছে কার নাহি
হুঁশ।
ভেদাভেদ জ্ঞান নাই নারী কি
পুরুষ।।
বৃংহত বৃংহতি রবে হস্তী
হস্তী যুঝে।
হেন রব হইতেছে কীর্তনের
মাঝে।।
কীর্তনের রব যেন মত্ত সিংহ
রব।
শৃগালের মত ভীত পাষণ্ডীরা
সব।।
হেনজ্ঞান হইতেছে সময় সময়।
প্রবল ঝঞ্ঝাটে যেন গ্রাম উড়ে
যায়।।
ভেক প্রায় ভীরু হ’য়ে হ’য়ে র’য়েছে
পাষণ্ড।
এইরূপে বেলা হ’ল পাঁচ ছয় দণ্ড।।
নিশি ভোর পূর্বাকাশে শূন্যে
স্থিতি রবি।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত গীত গায়
কবি।।
মহিলা কাছারী এবং বিচার ও
হুকুম
পয়ার
মালাদেবী হুঁশ হ’য়ে সংকীর্তন ভীতে।
বিনয় চরণে ধরি কহে দশরথে।।
নিশি ভোর পূর্বাকাশে উদয়
তপন।
ক’রে দেন প্রভুর সেবার আয়োজন।।
আপনার প্রতি কল্য দেখে
অত্যাচার।
গত নিশি সকলে রয়েছে অনাহার।।
দশরথ দশাভঙ্গ ভকতের সঙ্গ।
স্থির হ’ল প্রেমনিধি থামিল তরঙ্গ।।
প্রভু কহে মালাবতী পাক কর
গিয়া।
কাছারী করিব অদ্য আহার
করিয়া।।
মাতাগণ যাও সবে নিজ নিজ ঘরে।
সকালে বিকালে এসে দেখে যেও
মোরে।।
মালাদেবী স্নান করি করিল
রন্ধন।
আমন্য তণ্ডুল অন্ন ষোড়শ
ব্যঞ্জন।।
ডা’ল ডাল্লা শাক শুক্তা ভাজা বড়া বড়ি।
চালিতা অম্বল আমসির চড়চড়ি।।
মহাপ্রভু সেবা করে হ’য়ে হৃষ্টমতি।
দশরথ গান করে ভোজন আরতি।।
ভোজনান্তে মহাপ্রভু শয়ন
করিছে।
মেয়েরা আসিয়া কেহ বাতাস
দিতেছে।।
পার্শ্ব লগ্ন শয্যার উপরে
পৃষ্ঠদেশ।
ক্ষণকাল হইয়াছে নিদ্রার
আবেশ।।
এক মেয়ে বলে দিদি পাখা কর
ত্যাগ।
ঠাকুরের পৃষ্ঠদেশে দেখ একি দাগ।।
থাগ্ থাগ্ দাগ হেন কভু দেখি
নাই।
জমিয়া রয়েছে রক্ত চেয়ে দেখ
ভাই।।
নিদ্রা ভঙ্গে গাত্রোত্থান
করিল গোঁসাই।
মেয়ে গণে জিজ্ঞাসিল ঠাকুরের
ঠাই।।
একি দাগ দেখি প্রভু তব
পৃষ্ঠোপরে।
ঠাকুর কহিছে কল্য মেরেছে
আমারে।।
দশরথ পৃষ্ঠে জুতা মারিল
নায়েব।
আমার পৃষ্ঠেতে রাখিয়াছে
গুরুদেব।।
নারীগণে তাহা শুনে কাঁদিয়া
উঠিল।
চক্ষুজলে সকলের বসন তিতিল।।
যে অঙ্গ নির্জনে বসি গড়িয়াছে
বিধি।
সে অঙ্গে জুতার বাড়ি চেয়ে
দেখ দিদি।।
আহারে দারুণ বিধি এই ছিল
মনে।
চাঁদেতে কলঙ্ক দিলি বিচার
করলিনে।।
তাহা দেখি দশরথ পড়ে ভূমিতলে।
সর্বাঙ্গ তিতিল তার নয়নের
জলে।।
জটিলাকে বেত্রাঘাত করে তার
গুরু।
সেই দাগ পৃষ্ঠে ধরে বাঞ্ছা
কল্পতরু।।
সে মতে আমাকে রক্ষা কৈল
ভগবান।
হায় হায় কেন নাহি গেল মোর
প্রাণ।।
এই জন্য আমি কোন বেদনা না
পাই।
নায়েবে মেরেছে মোরে মনে ভাবি
তাই।।
মালা দেবী লুটে পড়ে ঠাকুরের
পায়।
ইহার বিচার প্রভু হইবে কোথায়।।
প্রভু বলে তবে তোরা আয় সব
নারী।
মিলাইব হাইকোর্ট মহিলা
কাছারী।।
ভাল ভাল বস্ত্র দিল চারিদিকে
ঘিরে।
চৌকি সিংহাসন করি পাতি দিল
ঘরে।।
বেড়ায় সংলগ্ন করি দিলেন
পাতিয়া।
তিনটি বালিশ দিল তার পর
নিয়া।।
ছাপ এক চাদর পাতিয়া দিল পরে।
নানা পুষ্পমাল্য মালা দিল
থরে থরে।।
তারপর বসাইয়া দিল এক মেয়ে।
কুসুম মুকুট তার মস্তকেতে
দিয়ে।।
পদ্মপুষ্প মালা গাঁথি গলে
দিল তার।
ঝুলাইয়া দিল মালা বক্ষের
উপর।।
উকিল মোক্তার হ’ল মেয়েরা সবায়।
হুজুর সেলাম বলি সম্মুখে
দাঁড়ায়।।
যেই নারী মহারাণী সেজে
বসেছিল।
রাজ-শ্রী রাজ-মুকুট শোভা তার
হ’ল।।
মহাপ্রভু হ’য়ে বাদী করি যোড় হস্ত।
জবানবন্দী করিল নালিশী
দরখাস্ত।।
দশরথে মেরেছে নায়েব মহাশয়।
সেই প্রহারের দাগ মম পৃষ্ঠে
রয়।।
সত্য মিথ্যা স্বচক্ষে দেখুন
একবার।
সুবিচার করুণ হে ধর্ম অবতার।।
যে মেয়ে হইল রাণী সেই মেয়ে
কয়।
প্রমাণ করহ শীঘ্র বিলম্ব না
সয়।।
প্রভু বলে আমি হইয়াছি
ফরিয়াদি।
ধর্মতঃ শপথ সত্য মম
জবানবন্দী।।
আমার রাজ্যেতে মিথ্যা নাহি
কহে কেহ।
আমার প্রমাণ ধর্ম বিচার
করহ।।
মেয়েরা বলেছে এই ধর্মের
কাছারী।
আমরা দেখিয়াছি গায় মারে দশ
বাড়ী।।
রাণী কহে নায়েব সে বড়
অত্যাচারী।
মোকর্দ্দমা জয় তব দিলাম এ
ডিক্রি।।
এই শাস্তি হ’বে তার বংশের নির্মূল।
কুষ্ঠব্যাধি খসিবেক হস্তের
আঙ্গুল।।
গৃহদাহ হইবে নায়েবী কার্য যা’বে।
কল্য কাছারীতে বসি সংবাদ
পাইবে।।
এ সব সংবাদ পেয়ে করিবে রোদন।
পরশু করিবে বেটা গৃহেতে
গমন।।
সবে বলে হয় শ্রীহরিচাঁদের
জয়।
নাম গানে মাতিল কাছারী ভঙ্গ
হয়।।
পরদিন বাটী হ’তে পৌছিল পত্র।
গৃহদাহ হইয়াছে ঘর নাহি
মাত্র।।
দৈবাৎ মরেছে তার সুযোগ্য
নন্দন।
শিরে করাঘাত করি করিছে
রোদন।।
লোক সহ পত্র এল রাজ বাটী হ’তে।
বরখাস্ত হ’লে তুমি নায়েবী হইতে।।
কুষ্ঠ ব্যাধি হ’ল গায় চাকা চাকা দাগ।
বাড়ী চলে গেল করে নায়েবতী
ত্যাগ।।
হইল গলিত কুষ্ঠ খসিল আঙ্গুল।
স্বধনে সবংশে দুষ্ট হইল
নির্মূল।।
সাধু হিংস্র নায়েবের হ’ল সর্বনাশ।
গ্রামবাসী পাষণ্ডের লাগিল
তারাস।।
সেই ভাবে সকলে রহিল
মনোল্লাসে।
নাম গানে নিশি ভোর হ’ল ভাবাবেশে।।
কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।
সাধুদ্বেষী যেই তার মুণ্ডে
হেন বাজ।।
মহাপ্রভুর জোনাসুর কুঠী যাত্রা
দীর্ঘ ত্রিপদী
হাকিম হুকুম যাহা
প্রতক্ষ্যে ফলিল তাহা
নায়েব চলিয়া গেল বাড়ী।
গৃহদাহ বার্তা এল
কার্যেতে জবাব হ’ল
ভয় প্রাণ কাঁপে থরহরি।।
বিপক্ষ গ্রামীরা যত
রাগে হ’ল জ্ঞান হ’ত
বলে এত জুতা মারি পিঠি।
এত দিল জরিমানা
তবু কীর্তন ছাড়ে না
লাফালাফি ক’রে ভাঙ্গে মাটি।।
যত সব জাতিনাশা
নাহিক অন্য ব্যবসা
কিসে চলে খায় ব’সে ব’সে।
কেহ অন্ন বস্ত্রহীন
বালক যুবা প্রবীণ
কি কৌশলে সবে এসে মিশে।।
নায়েব দিল লাঞ্ছনা
বিশ টাকা জরিমানা
কার্য গেল চলে গেল বাটী।
যত সব দুষ্ট খল
জুটিয়া পাষণ্ড দল
শেষে যায় জোনাসুর কুঠি।।
নজর দিয়া সবাই
ডিক সাহেবের ঠাই
করে এক কেতা দরখাস্ত।
সাহেবের কাছে গিয়ে
একে একে দাঁড়াইয়ে
বাচনিক বলিল সমস্ত।।
পাষণ্ডী মুখ নিঃসৃত
যত আ’সে কহে তত
ভাল মন্দ নাহি যে বিচার।
যতসব ভাল ক্রিয়ে
সেই সকল ত্যজিয়ে
কহে যত কুৎসিত আচার।।
সাহেব শ্রবণ করে
বলে তাদের গোচরে
যেই নারী কীর্তনেতে নাচে।
কীর্তনের প্রেমাবেশে
যেই নারী মিশে এসে
তাহাদের কেহ কি জেনেছে।।
কহে পাষণ্ডীগণ
তাহাদের আত্মজন
অই কার্য বড় ভালবাসে।
সাহেব কহিছে হারে
তাহারা যে কার্য করে
মোর মনে মন্দ নাহি আসে।।
সাহেব কহিছে বল
না কহিস মিথ্যা ছল
কুকার্য কি করে কোন জনে।
নাচে গায় নিরবধি
তার মধ্যে কাঁদে যদি
কুপ্রবৃত্তি জন্মিবে কেমনে।।
সাহেব কহিছে আমি
দেখিব কেমন আদমি
যাহ হাম পেয়াদা পাঠাই।
পাষণ্ডীরা গৃহে গেল
সাহেব লোক পাঠা’ল
উপনীত দশরথ ঠাই।।
পদ্মবিলা গ্রামে বাস
শ্রীরামতনু বিশ্বাস
বুদ্ধিমান অতি বিচক্ষণ।
কাছারী কুঠি মোকামে
রাজদ্বারে কিংবা গ্রামে
পরগণে মানে সর্বজন।।
নায়েব যেদিন মারে
রামতনু অগোচরে
গোপনেতে করে যত খল।
শেষে সকল শুনিল
ক্রোধে পরিপূর্ণ হ’ল
বলে এর দিব প্রতিফল।।
মানিব না উপরোধ
দিব এর প্রতিশোধ
ভিটা বাড়ী করিব উচ্ছন্ন।
ঠাকুর বারণ করে
বাছাধন বলি তোরে
তুমি কিছু কর না এ জন্য।।
তাহাতে বারণ হ’ল কুঠির
পেয়াদা এল
রামতনু জানিবারে পায়।
দশরথ নিকটেতে
কহে গিয়ে যোড়হাতে
এতে গুরু নাহি কিছু ভয়।।
রামতনু বাল্যকালে
সাধু দশরথ স্থলে
পাঠশালে লেখাপড়া শিখে।
রামতনু সেইজন্য
দশরথে করে মান্য
চিরদিন গুরু বলে ডাকে।।
তিনি ক’ন পেয়াদারে কেন আ’লি মরিবারে
বল গিয়া সাহেবের কাছে।
মূলমর্ম নাহি জেনে
পেয়াদা পাঠা’লে কেনে
অত্যাচারে নায়েব ম’রেছে।।
রামতনু কুঠি গিয়ে
নিরপেক্ষ ভাব ল’য়ে
সত্য জানাইল সাহেবেরে।
সাহেব কহে বিশ্বাস
আর নাহি অবিশ্বাস
ঠাকুরে কি দোষ কার্য করে।।
বল শুনি রামতনু
আমার জীবন তনু
ঠাকুরে কেন দেখিতে চায়।
শীঘ্র গিয়া কহ তুমি
ঠাকুর দেখিব আমি
আসুন আমার কামরায়।।
সাহেবে কড়ার দিয়ে
রামতনু গৃহে গিয়ে
গুরুদেব নিকটেতে কয়।
দশরথ পদ ধরে
জানাইল ঠাকুরেরে
সাহেবেরে দেখা দিতে হয়।।
মহাপ্রভু শুনি তাই
বলে যাব তার ঠাই
করিবারে রাজ দরশন।
যে দেখিতে চায় মোরে
আমিও দেখিব তারে
মন চাহে তার সম্মিলন।।
ঠাকুর করিল দিন
বল গিয়া আমি দীন
কুঠি যাব তিন দীন পরে।
রামতনু এইকালে
বলে দশরথ স্থলে
এবে দণ্ড দিব পাষণ্ডীরে।।
সে কথা ঠাকুর শুনে
কহে দশরথ স্থানে
মানা কর তোমার শিষ্যরে।
পাষণ্ডীর কিবা ভয়
যারা মম কিছু নয়
তারা মম কি করিতে পারে।।
ঠাকুর কুঠিতে যাবে
দিন ধার্য করি তবে
যে স্থানে যে ভক্তগণ ছিল।
প্রধান প্রধান ভক্ত
নামগানে অনুরক্ত
আসিতে সবারে আজ্ঞা দিল।।
ঠাকুর সে দিন মত
লইয়া ভকত কত
দশরথ ভবনে আসিল।
প্রেমিক প্রবীণ যত
নাম বা লইব কত
এসে সবে একত্রিত হ’ল।।
রাউৎখামার বাসী
অনেক মিশিল আসি
রামচাঁদ হীরামন বালা।
আইল বদনচন্দ্র
কুবের আদি গোবিন্দ
নারিকেল বাড়ীর পাগলা।।
লক্ষ্মীপুর বাসী ভক্ত
চূড়ামণি বুদ্ধিমন্ত
আসিলেন তারা দু’টি ভাই।
এল নাটুয়া পাগল
ব্রজ নাটুয়া পাগল
হরিবোল বিনে বোল নাই।।
বিশ্বনাথ দরবেশ
আসিল পাগলবেশ
নেচে নেচে ধায় আগে আগে।
যতেক ভকতগণ
হরিনামেতে মগন
সিংহের প্রতাপে ধায় বেগে।।
গেল দশরথ ঘর
সবে হ’ল একতর
ভয়ে ভীত হ’ল দশরথ।
ঠাকুরের সাঙ্গোপাঙ্গো
দেখিয়ে হ’ল আতংক
লোক হ’ল দুই তিন শত।।
দশরথ পদ ধরে
বলে প্রভুর গোচরে
এত ভক্ত কৈল আগমন।
দৈবে লোক বহুজন
করাতে স্নান ভোজন
মম সাধ্য না হবে কখন।।
ঠাকুর কহিছে বাছা
কেন তুমি ভাব মিছা
এল যত সাধু মহাজন।
যে করে হরির চিন্তে
হরি করে তার চিন্তে
খেতে দিবে যাঁহার সৃজন।।
তুমি কি করিবে ভেবে
যার কার্য সে করিবে
স্নান করাইয়া সবে আন।
যাইতে হইবে কুঠি
মাথায় লইব মাটি
কেশ মুক্ত বেশই প্রধান।।
বিশ্বনাথ দরবেশে
বলে স্নান কর এসে
কেশ ধৌত কর ল’য়ে মাটি।
তুই ফকির মানুষ
হ’য়ে দেওনা পুরুষ
চুল ছেড়ে যেতে হ’বে কুঠি।।
মহাপ্রভু স্নান ছলে
যান পুষ্করিণী জলে
এ দিকেতে যত নারীগণ।
কলসী লইয়া কাঁখে
কেহ জল আনে সুখে
কেহ করে মস্তক মার্জন।।
কেহ বা গাত্র মার্জন
কেহ পদ প্রক্ষালন
শ্রীঅঙ্গ মোছায় কোন নারী।
যেখানে যে কার্য করে
সবে হরিষ অন্তরে
দলে দলে বলে হরি হরি।।
এদিকে মেয়েরা যত
সবে হ’য়ে হরষিত
এসেছেন বিশ্বাসের বাটী।
কোন কোন নারীগণে
আশ্চর্য মেনেছে মনে
শুনেছে ঠাকুর যাবে কুঠি।।
শুনেছে বাটী হইতে
দশরথের বাটীতে
আসিয়াছে মতুয়া সকল।
কেহ এনেছে চাউল
কেহ এনেছে ডাউল
কেহ আনে দধি দুগ্ধ ঘোল।।
কুষ্মাণ্ড কদলী আদি
তরকারী নানা বিধি
থোড় মোচা শাক শিম মূল।
আলু কচুক আলাবু
কেহ কেহ আনে লেবু
কেহ আনে পদ্মবীজ মূল।।
ব্যঞ্জন লাবড়া পাক
সরিষা বাটা শুক্ত শাক
মেয়েরা রন্ধন করে ঘরে।
দৈবে এক মেয়ে এল
সেই ঘরে প্রবেশিল
কোন মেয়ে নাহি চিনে তারে।।
তণ্ডুল ঠিক দু’মন পাক হইল যখন
এমন সময় দয়াময়।
গিয়া সেই রসই ঘরে
নিষেধিল মেয়েদেরে
পাক ক্ষান্ত কর এ সময়।।
এই অন্নে হ’য়ে যা’বে বসাইয়া দেহ সবে
ক্ষুধার সময় বয়ে যায়।
ঠাকুর বাহিরে এসে
বলিলেন হেসে হেসে
খেতে বৈস সাধুরা সবায়।।
যত সব ভক্তগণ
ক্ষান্ত করি সংকীর্তন
মহাপ্রভু নামে ভীড় দিল।
করিতে অন্ন ভোজন
করি পদ্ম পত্রাসন
তারপরে সকলি বসিল।।
ঠাকুরের প্রিয় দাস
দেওড়া গ্রামেতে বাস
নামেতে প্রহ্লাদচন্দ্র ঘোষ।
ল’য়ে ছয় হাঁড়ি দধি গিয়াছিল ওঢ়াকাঁদি
উপনীত হইয়া সন্তোষ।।
কহিছেন হরিচাঁদ
কি ক’রেছ রে! প্রহ্লাদ
ক্ষীর কি মাখন আন নাই।
সাধু সেবা হ’বে হেথা শুনিয়াছ এই
কথা
তোর দধি বড় ভাল খাই।।
ঘোষ কহে হ’য়ে নত মেয়েরা এনেছে
ঘৃত
সেই ঘৃত এবে হবে ব্যয়।
এই সেবা হোক শেষ
ক্ষীর মাখন পায়স
আমি দিব বৈকালী সেবায়।।
ছয় হাঁড়ি দধি ছিল
দুই হাঁড়ি মথি নিল
মাখন তুলিল সে সময়।
কতকাংশ জ্বাল দিয়া
সদ্য ঘৃত বানাইয়া
উঠাইয়ে রাখিল শিকায়।।
মেয়েদের দেয় দুগ্ধ
জ্বালাইয়া করি স্নিগ্ধ
ক্ষীর বানাইল কতকাংশে।
দিয়া মালাবতী স্থলে
বলে লহ, মা! বৈকালে
দিও ঠাকুরের সেবা রসে।।
হইল পরিবেশন
যত সব সাধুগণ
প্রভু প্রতি হরিধ্বনি দিয়া।
উত্তম ভোজন করি
সবে বলে হরি হরি
আচমন করিল উঠিয়া।।
যে যে দ্রব্য এনেছিল
সিকি মাত্র ব্যয় হ’ল
আর সব রহিল পড়িয়া।
প্রভু ক’ন মালাদেবী তুমি
পরমা বৈষ্ণবী
এই সব দ্রব্য রাখ নিয়া।।
যতনে না কর ত্রুটি
আমরা যাইব কুঠি
সাধু ভক্তগণ এই সব।
সব ল’য়ে সমিভ্যরে রাত্রি
এসে তব ঘরে
পুনশ্চ করিব মহোৎসব।।
সাধ্বীগণ একতরে
সবে বসি এই ঘরে
চিন্তা কর মঙ্গল আমার।
ঠাকুরের কুঠি যাত্রা
শেষ লীলা শুভবার্তা
কহে দীন রায় সরকার।।
কুঠিতে নাম সংকীর্তন
পয়ার
ভক্তবৃন্দ সঙ্গে ল’য়ে দয়াল ঠাকুর।
চলিলেন সাহেবের কুঠি জোনাসুর।।
মৃদ্ধৌত-মার্জিত কেশ বেঁধে
রেখেছিল।
অর্ধ পথে গিয়া সবে চুল ছেড়ে
দিল।।
উড়িছে চিকুর যেন ঠিক
ব্যোমকেশ।
চলিল কবরী ছাড়ি বিশে দরবেশ।।
আগে যায় বিশ্বনাথ নাচিয়া
নাচিয়া।
তার পিছে নেচে যায় গোবিন্দ
মতুয়া।।
মাঝে মাঝে গোবিন্দ মতুয়া দেয়
লম্ফ।
জ্ঞান হয় তাহাতে হ’তেছে ভূমিকম্প।।
পাগলের দল যায় তার আগে আগে।
হীরামন যায় ঠাকুরের
অগ্রভাগে।।
ঠাকুরের পিছে পিছে যায় দশরথ।
পিছেতে মতুয়া জুড়ে ঘাট মাঠ
পথ।।
দশরথ গান করে নিজকৃত পদ।
সবে গায় তাহা প্রেমে হয়ে
গদগদ।।
মহাপ্রভু পিছে যত ভক্তগণ
ধায়।
ঠাকুরের সম্মুখেতে কেহ নাহি
যায়।।
আগ্নেয় মেঘেতে যেন উল্কার
পতন।
সবাকার কণ্ঠস্বর হ’তেছে তেমন।।
আগে পাছে ঠাকুরের বহুলোক
ধায়।
জড়াজড়ি ধরাধরি ধরাতে লোটায়।।
রক্তজবা সম চক্ষু কাল মণি
ঘেরা।
তার মধ্যে জ্যোতি যেন আকাশের
তারা।।
ঠাকুরের আগে আগে হীরামন ধায়।
ঠিক যেন বীরভদ্র যায়
দক্ষালয়।।
ঠাকুরের পিছে চারিখানা খোল
বাজে।
অষ্টজোড়া করতাল বাজে তার
মাঝে।।
পশ্চিম দিকেতে প্রভু করেছে
গমন।
মুখপদ্ম ঝলসিছে সূর্যের
কিরণ।।
রক্তবর্ণ চক্ষু কালফণী মণি
ঘেরা।
ভুরুধনু মণি র’ক্ষে দিতেছে পাহারা।।
ভালে কোটা শশীছটা হ’য়েছে সংযোগ।
তাহাতে ঘটেছে যেন পুষ্পবন্ত
যোগ।।
দূর হতে সাহেব ক’রেছে দরশন।
রামতনু অগ্রে গেল সাহেব
সদন।।
সাহেব জিজ্ঞাসা করে রামতনু
ঠাই।
ঘোর শব্দ ভীম মূর্তি কি
দেখিতে পাই।।
বাজে খোল করতাল হুংকারের
রোল।
এতলোক কোথা হতে আসিল সকল।।
রামতনু বিশ্বাস কহিছে
সাহেবেরে।
ইচ্ছা করিলেন যে ঠাকুর দেখিবারে।।
সেই প্রভু এসেছেন ল’য়ে ভক্তগণ।
মহাসংকীর্তন যেন ভীষণ
গর্জন।।
সাহেব কহিছে তনু এত ভক্ত
যার।
সামান্য মানুষ নহে বুঝিলাম
সার।।
রাজা রামরত্ন রায় আমি
কর্মচারী।
এত লোক একত্রিত করিতে না
পারি।।
যদি একত্রিত হয় রাজদণ্ড ভয়।
হেতু বিনা এত লোক ভীর কেন হয়।।
ভক্তবৃন্দ সঙ্গে দেখি চা’র পাঁচ শত।
হেলে দুলে নাচে গায় যেন মদ
মত্ত।।
লোকে অসম্ভব এই অলৌকিক
কার্য।
ক্ষণ জন্মা লোক ইনি করিলাম
ধার্য।।
সাহেবের মাতা ছিল খট্টায়
শয়ন।
ডিক কহে মাদার করহ দরশন।।
দেখ মা ঠাকুর এল কামরা
বাহিরে।
মতুয়রা উপস্থিত কুঠির উপরে।।
বিশ্বনাথ দরবেশ প্রেমে মত্ত
হ’য়ে।
ধরণী পতিত হয় নাচিয়ে
নাচিয়ে।।
দাঁড়াইয়া কামরার দরজা
সম্মুখে।
সাহেবেরা মাতা পুত্রে ম’তোদিগে দেখে।।
সাহেবের মাতা যবে করিয়া
দরশন।
এমন সময় ক্ষান্ত করিল
কীর্তন।।
একে একে সাহেব করিয়া দরশন।
বলে তনু কহত’ ঠাকুর কোন জন।।
সাহেবের মাতা কহে শুন বাছা
ডিক।
ঠাকুরে দেখিয়া কি করিতে নার
ঠিক।।
আজানুলম্বিত ভুজ চৌরাশ কপাল।
উর্দ্ধরেখা করে চক্ষু
কর্ণায়ত লাল।।
চুল ছেড়ে দাঁড়িয়েছে ঠাকুর ঐ
জন।
স্বভাবত রূপ যেন ভুবন মোহন।।
ভালমত ঠাকুরকে দেখ হ’য়ে স্থির।
দেখেছ কাঙ্গালী মাকে এই তার
পীর।।
মনুষ্যের শরীরে কি এত হয়
জ্যোতি।
পবিত্র চরিত্র যেন ঈশ্বর
মূরতি।।
আমাদের অধিকারে হেন লোক আছে।
এ ঠাকুর দেখিলে মনের দুঃখ
ঘুচে।।
সাহেব কহিছে তনু ঠাকুরকে আন।
নিকটে আসুন উনি দূরে র’ন কেন।।
মাদার চিনেছে ভাব ভঙ্গিতে
নিশ্চিতে।
আমিও ঠাকুর চিনে লই ভালমতে।।
ঠাকুর বুঝিয়া সাহেবের
অভিপ্রায়।
আগু হ’য়ে সাহেবের নিকটে দাঁড়ায়।।
সাহেবের মাতা দেখে হ’য়ে অনিমিখ।
সাহাবেরে বলে তোম দেখ দেখ
ডিক।।
হিন্দু বলে শ্রীহরি যবনে বলে
আল্লা।
দরবেশ ফকিরে যারে বলে
হেলেল্লা।।
বৌদ্ধ যারে বুদ্ধ কহে
খ্রিষ্টে বলে যিশু।
এই তিন নবরূপে উদ্ধারিতে
বসু।।
সাহেব আনিয়া দিল চেয়ার
পাতিয়া।
ঠাকুরকে বলিলেন বৈঠহ আসিয়া।।
ঠাকুর কহেন একি কহ অসম্ভব।
চেয়ারে কি বৈসে কভু ঠাকুর
বৈষ্ণব।।
সাহেব কহে ঠাকুর যে ইচ্ছা
তোমার।
যথা ইচ্ছা তথা বৈঠ হাম
পরিহার।।
গান ক্ষান্ত দেহ কেন গাও গাও
গাও।
নাচিয়া গাহিয়া সবে মেরা পাছ
আও।।
কামরার বাহিরেতে সকলে বসিয়া।
পদ ধরি কেহ কেহ উঠিছে
নাচিয়া।।
নাচিয়া নাচিয়া করে হরি
সংকীর্তন।
কেহ কেহ শিব নেত্র ধরায়
পতন।।
নাচে গায় দশরথ দিতেছে
চিৎকার।
সিঙ্গাস্বরে বারে বারে করে
হুহুঙ্কার।।
লোমকূপ কুণ্ডুলোম কণ্টক
আকার।
মস্তকে চৈতন্য শিখা উর্দ্ধ
হয় তার।।
ক্ষণে ক্ষণে ধরাতলে পড়ে দশা
হ’য়ে।
গোবিন্দ মতুয়া উঠে ফিকিয়ে
ফিকিয়ে।।
শয়নে স্বপনে কিংবা মলমূত্র
ত্যাগে।
উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম যার মুখে
জাগে।।
সে বদন হরি হরি হরি বলে
মুখে।
বিকারের রোগী যেন উঠে
কালহিক্কে।।
কাঁদে আর নাচে মাথা স্কন্ধে
ঘুরাইয়া।
ফিরিয়া ঘুরিয়া নাচে বিমুখ
হইয়া।।
উলটিয়ে মাথা নিয়ে পায়ের
নিকটে।
সেইভাবে হরি বলি পালটীয়ে
উঠে।।
নাচিতে নাচিতে যায় কামরা
ভিতর।
শতধারে চক্ষে বারি সাহেবের
মার।।
কুবের বৈরাগী নাচে মুখ
ফুলাইয়া।
অলাবুর পাত্র দেয় পেটে
ঠেকাইয়া।।
গোপীযন্ত্র পরে অম্নি মারিয়া
থাপড়।
নাচিতে নাচিতে যায় কামরা
ভিতর।।
গোঁসাই গোলোক যেন বাণ
বেড়পাক।
ফিরে ঘুরে নাচে যেন
কুম্ভাকার চাক।।
দরবেশ বিশ্বনাথ চুল ছেড়ে
দিয়ে।
উগ্রচণ্ডা নাচে যেন হাতে
খাণ্ডা ল’য়ে।।
নাচিতে নাচিতে যায় পুলকে
পূর্ণিত।
অনিমিষ রক্ত চক্ষু করয়
ঘূর্ণিত।।
নেচে নেচে যায় সাহেবের মার
ঠাই।
ফিরে ঘুরে নাচে যেন দিল্লীর
সুবাঈ।।
নেচে নেচে লেংটি খ’সে হইল উলঙ্গ।
মেম আছে কাছে তাতে নাহি
ভুরুভঙ্গ।।
অশ্রুপূর্ণ নেত্র সাহেবের মা
দেখিয়া।
সাহেবের স্কন্ধ পরে বাহুখানি
দিয়া।।
বাম হস্তে সাহেবের গলায়
গ্রন্থিক।
ডান হাতে তুলে বলে চেয়ে দেখ
ডিক।।
ইহারা নাচিছে সবে হ’য়ে জ্ঞান শূন্য।
বাহ্যজ্ঞান নাহি এরা রহিত
চৈতন্য।।
একে রাজবংশ তুমি তাতে
জমিদার।
রাজা প্রজা এই ভয় থাকেত’ প্রজার।।
আরো আমি বামালোক আছি
সম্মুখেতে।
উলঙ্গ হইতে নারে বিকার
থাকিতে।।
নির্বিকার দেহ ঈশ্বরেতে
প্রাণ দান।
লজ্জা ঘৃণা মরা বাঁচা একই
সমান।।
বেলা অপরাহ্ণ হ’ল যেতে কহ দেশে।
এইসব সাধুদিগে পাষণ্ডীরা
দোষে।।
অধীনস্থ মধ্যাগাতি তুমি হও
রাজা।
পাষণ্ডী প্রজাকে এনে তুমি
দেও সাজা।।
অগ্রভাগে ডেকে এনে করহ বারণ।
আর যেন সাধু হিংসা না করে
কখন।।
সাহেবের মাতা বলে ওরে ডিক
আয়।
সেলাম করহ সবে ঠাকুরের পায়।।
সেলাম করিল যদি সাহেবের
মাতা।
পরিবারসহ ডিক নোয়াইল মাথা।।
ঠাকুরের সম্মুখেতে সাহেব
দাঁড়ায়।
সেলাম করিয়া সবে করিল বিদায়।।
সাহেবের মাতা কহে শুনহ
ঠাকুর।
সুখে যেন থাকে ডিক কুঠি
জোনাসুর।।
কুঠি হ’তে ম’তো সব হইল বিদায়।
চতুর্গুণ স্ফূর্তি হ’ল হরি গুণ গায়।।
নাচে গায় সব সাধু হীরামন
হাসে।
সবে সম সম ভাব একই উল্লাসে।।
হীরামনে দেখি ডিক সাহেবের
মায়।
বলে ডিক এই লোক সামান্য ত’ নয়।।
ঠাকুরে দেখিয়ে মম জীবন
প্রফুল্ল।
ইহাকেও দেখা যায় ঠাকুরের
তুল্য।।
যারে দেখে সেই যেন ভাবের
পাগল।
নাচে গায় ঢ’লে পড়ে প্রেমেতে বিভোল।।
এক বস্ত্র পরিধান নহে ধৌত
কাঁচা।
অর্দ্ধবাস গলে বেড়া নাহি দেয়
কোচা।।
পিছু হ’তে বোধ হয় বাঙ্গালী প্রকৃতি।
সম্মুখে দেখায় যেন পুরুষ
আকৃতি।।
ক্ষণে নারী ক্ষণে নর বলে বোধ
হয়।
গভীর চরিত্র যেন চেনা নাহি
যায়।।
দয়াল শ্রীহরি সাহেবেরে দিল
চিনা।
হরিগুণ গাও সদা তারক রসনা।।
শেষ লীলা লীলার প্রধান
সর্বসার।
হরি হরি বল কহে কবি সরকার।।
মহাপ্রভুর কুঠি হইতে
প্রত্যাবর্তন
দীর্ঘ ত্রিপদী
নাচিতে নাচিতে চলে
মতুয়ার গণ মিলে
বাহু তুলে বলে হরিবল।
কেহ আগে কেহ পিছে
গেল সে নিয়ম ঘুচে
চলিল যেন চৌদ্দ মাদল।।
কেহ করে গাল বাদ্য
কেহ করে কক্ষ বাদ্য
কেহ কেহ বক্ষ চাপড়ায়।
বাহুতে মারিয়া থাবা
কেহ বলে কই বাবা
কেহ এক চরণে লাফায়।।
কেহ বলে জয় জয়
জয় হরিচাঁদ জয়
কেহ বলে জয় হীরামন।
বিশে দরবেশ জয়
গোলোক চাঁদের জয়
কেহ বলে জয় ভক্তগণ।।
জয় দশরথ জয়
জয় রামতনু জয়
জয় ত্রিভুবন জন।
ডিক সাহেবের জয়
জয় তার মাতৃ জয়
পালাইল দুরন্ত শমন।।
কেহ বলে বল ওকি
শমন পা’লাবে সেকি
পালাবে কই শমন আসুক।
এই কীর্তনের মাঝে
কাঙ্গাল বেহাল সেজে
যম এসে সঙ্গেতে নাচুক।।
সুমধুর উচ্চৈঃস্বরে
দৈববাণী শূন্যোপরে
বলে আমি এসেছি শমন।
আছি কীর্তন উৎসবে
তোমরা মহৎ সবে
আমারে তাড়াও কি কারণ।।
এই মত ভাবাবেশে
দশরথ বাড়ী এসে
হরি বলে নাচে আর গায়।
সবে সমভাব ধরে
কে কারে বারণ করে
অর্ধ বিভাবরী গত হয়।।
মাধ্যাহ্নিক দ্রব্য যত
উদ্ধৃত আছিল কত
তাহা সব হ’য়েছে রন্ধন।
ঠাকুরের আজ্ঞা পেয়ে
সংকীর্তন ক্ষান্ত দিয়ে
বসিলেন করিতে ভোজন।।
সদ্য ঘৃত মাখনাদি
ভোজ শেষে ক্ষীর দধি
দিলেন প্রহ্লাদ চন্দ্র ঘোষ।
সূপদ্রব্য আর যত
দিতেছেন দশরথ
সবে খায় হইয়া সন্তোষ।।
সবার ভোজন হ’লে প্রভু
হরিচাঁদ বলে
ঠাই নাই শয়ন দিবার।
যেটুকু আছে শর্বরী
বল সবে হরি হরি
প্রভাতে যাইও নিজ ঘর।।
শীঘ্র আচমন করি
সবে বলে হরি হরি
প্রেমাবেশে রজনী পোহায়।
মহাভাবাবেশ রঙ্গে
ভক্তগণ ল’য়ে সঙ্গে
মহাপ্রভু যান নিজালয়।।
হরিচাঁদ সুধা লীলা
পদ্মমধু পদ্মবিলা
যত কিছু শুনিয়াছ তার।
যে কিছু শুনি শ্রবণে
ধ্যানে জ্ঞানে দৈবে জেনে
রচিল বাসনা রসনার।।
No comments:
Post a Comment