শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
৫ আদিখণ্ডঃ সপ্তম তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ৫ আদিখণ্ডঃ সপ্তম তরঙ্গ


                             আদিখণ্ডঃ সপ্তম তরঙ্গ

    আদি খণ্ড
    সপ্তম তরঙ্গ
    বন্দনা
    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস

    জয় শ্রীবৈষ্ণব দাস জয় গৌরী-দাস
    ।।
    জয় শ্রীস্বরূপদাস পঞ্চ সহোদর

    পতিতপাবন হেতু হৈলা অবতার
    ।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন

    জয় শ্রীগোলোকচন্দ্র জয় শ্রীলোচন
    ।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়

    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময়
    ।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ

    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ
    ।।

    প্রভুর আনারস ভক্ষণ
    পয়ার
    রাউৎখামার গ্রামে বংশী মহাভাগ
    ঠাকুরের প্রতি তার দৃঢ় অনুরাগ।।
    একদিন হাটে গিয়া সে বংশীবদন
    আনারস দেখে হইল প্রভুর স্মরণ।।
    সুমধুর আনারস গোটা দশ কিনে
    সুপক্কটি সেরে রাখে যতনে গোপনে।।
    ধান্যের ডোলের  মধ্যে কেহ নাহি জানে
    অন্তর্যামী প্রভু তাহা  জানিলেন মনে।।
    বংশীর বাটীতে প্রভু উপস্থিত হ
    একে একে ভক্তগণ আসিয়া মিলিল।।
    আনন্দে বলেছে বংশী প্রভু এল ঘরে
    প্রভুর সঙ্গেতে গিয়ে নামপদ করে।।
    প্রভু বলে ওরে বংশী আমারে আনিলি
    এতক্ষণ মধ্যে মোরে খেতে নাহি দিলি।।
    ব্যস্ত হয়ে বংশী তার রমণীরে কয়
    কি দিবা কি দিবা বল প্রভুর সেবায়।।
    বংশীর স্বভাব ছিল দেখিলে গোঁসাই
    বাহ্য স্মৃতি হারাইত আজ হল তাই।।
    বংশীর রমণী যায় পাকশালা ঘরে
    আয়োজন করিল রন্ধন করিবারে।।
    প্রভু বলে ওরে বংশী আসা যে আশাতে
    বড় ইচ্ছা হৈল মম আনারস খেতে।।
    আনারস গৃহেতে বংশীর মনে নাই
    প্রভু বলে আনারস আন, রস খাই।।
    শুনি বংশী রমণীকে ডেকে আনে ঘরে
    বলে আনারস খেতে দাও শ্রীপ্রভুরে।।
    আনারস বানাইল মনে করি সাধ
    প্রভুর বাসনা যেটা সেটা রল বাদ।।
    প্রভু বলে এইগুলি পরিপক্ক কম
    এই আনারসে সেবা না হবে উত্তম।।
    বংশীর রমণী কহে হয়ে করপুট
    এই আনারসে তবে হোক হরিলুঠ।।
    যেইমাত্র বংশীর রমণী করে ব্যক্ত
    কাড়াকাড়ি করিয়া খাইল সব ভক্ত।।
    প্রভু বলে এই লুঠে আমি তৃপ্ত নই
    আমার লুঠের যেটা সেটা দিলে কই।।
    ইহা বলি মহাপ্রভু বলে আন আন
    আনা আছে দিস নাই না দেয়াটা আন।।
    এতবলি অন্তর্যামী উঠিল সত্বর
    লম্ফ দিয়া উঠিলেন ডোলের উপর।।
    আনারস হাতে করি দিল আর লম্ফ
    ভূমিতে পড়িল যেন যায় ভূমিকম্প।।
    বংশীরে বলেন প্রভু শোন তোরে বলি
    নিজে খাইবার জন্য ভালটা রাখিলি।।
    এতবলি প্রভু সেই আনারস ধরে
    কামড়ায়ে সে ফলের রসপান করে।।
    চুষিয়া চুষিয়া খায় মুখ ঊর্ধ্ব করি
    প্রেমানন্দে ভক্তগণে বলে হরি হরি।।
    বংশীর নয়ন জল অবিরত ঝরে
    দাঁড়াইয়া দৃষ্টি করে বাক্য নাহি সরে।।
    রামচাঁদ বলে প্রভু নিবেদি চরণে
    কল্য ভোগ নিতে হবে আমার ভবনে।।
    হরিষে বলেন প্রভু হৈল নিমন্ত্রণ
    প্রাতেঃ উঠি চলিলেন লয়ে ভক্তগণ।।
    দুই তিন বাটী প্রভু ভোজন করিল
    এমন সময় বেলা প্রহরেক হ।।
    পরে লইলেন ভক্ত শ্রীরামলোচন
    কবি কহে হরি হরি বল সর্বজন।।

    রামলোচনের বাটী মহোৎসব ও চৈতন্য বালার দর্প চূর্ণ
    পয়ার
    রামলোচনের বাটী স্বজাতি ভোজন
    গ্রামবাসী সবে আসি করে আয়োজন।।
    বামাগণে আসে সবে পাক করিবারে
    চৈতন্য প্রধান জ্ঞানী গ্রামের উপরে।।
    সকলে রাখিল ভার তাহার উপর
    যাহাতে হইবে এই কার্য্যের সুসার।।
    রামচাঁদ আর রামলোচন বিশ্বাস
    শ্রীনবদ্বীপেতে যেন রামাই শ্রীবাস।।
    ভাই ভাই ঠিক যেন তেমতি মিলন
    সেই দিন সেই বাটী প্রভু আগমন।।
    মহা সমারোহে হবে স্বজাতি ভোজন
    পাকশালে পাক করে যত বামাগণ।।
    এমন সময় প্রভু ভক্তগণ সঙ্গে
    রামলোচনের বাটী উত্তরিল রঙ্গে।।
    শ্রীরামলোচন হয় কার্য্যকরণালা
    কার্য্যদক্ষ কর্তৃপক্ষ শ্রীচৈতন্য বালা।।
    হুকুম করিছে কার্য্য করিবার তরে
    যাকে যাহা বলিছেন সেই তাহা করে।।
    প্রাণপণে খাটিতেছে নাহিক বিরাম
    বাটীর ভিতর হইতেছে ধুমধাম।।
    কোন নারী কক্ষে কুম্ভ আনিতেছে বারি
    কেহ ঝাল বাটে কেহ কাটে তরকারি।।
    কেহ ভারে ভারে ধৌত করিছে তণ্ডুল
    কেহ দেয় কেহ লয় ধুতেছে ডাউল।।
    ঠাকুর আসিল জয় হরিবোল বলে
    ভক্তগণ সংকীর্তন করে কুতূহলে।।
    বাটীতে কাজের লোক যেখানে যে ছিল
    চতুর্দিকে হরি হরি বলিতে লাগিল।।
    সিংহনাদে ভক্তগণ বলে হরি হরি
    চতুর্দিকে ঘাটে পথে হরি হরি হরি।।
    অগনণা বামাগণে দিল হুলুধ্বনি
    স্বর্গ মর্ত ভেদ করি ওঠে জয়ধ্বনি।।
    ঠাকুর গেলেন রামলোচনের ঘরে
    নাম গান পদ হয় গৃহে বহির্দ্বারে।।
    মেয়েরা যতেক সবে ছিল পাকশালে
    শুনে ধ্বনি সব ধনী ভাসে অশ্রুজলে।।
    কিসের রান্নাবান্না কিসের হলুদ্বাটা
    নয়নজলে ভাসে হলুদবাটা পাটা।।
    কুলবধু ধাইতেছে হইয়া আকুল
    বাল্য বৃদ্ধ ধাইতেছে সব সমতুল।।
    ঠাকুরে দেখিব বলে সকলের মন
    পাকশালে মেয়ে লোক নাহি একজন।।
    সকলে বলেছে গিয়ে চৈতন্য বালায়
    অদ্য বুঝি জাতি কুল না থাকে বজায়।।
    নিমন্ত্রিত লোক যত সব এল এল
    পাকশালে লোক নাই উপায় কই বল।।
    তাহা শুনি ক্রোধ করি বালা মহাশয়
    তর্জন গর্জন করি মেয়েদের কয়।।
    ঠাকুরে দেখিয়া কারু নাহি স্মৃতি বাক
    পাকশালে লোক নাই কে করিবে পাক।।
    বালাজী করেন রাগ কেহ নাহি মানে
    তর্জন গর্জন করে শুনেও না শুনে।।
    কেহ বলে শুন বলি বালা মহাশয়
    জাতি গেল মান গেল কই হবে উপায়।।
    সামাজিক লোক সব হয়ে একত্তর
    সভা করি বসিলেন বাটীর ভিতর।।
    তার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ বালা মহাশয়
    সবে মিলে পরামিশে করিলেন সায়।।
    ঠাকুরের কাছে গিয়া করহ বারণ
    চুপ করে থাক, কেন করে সংকীর্তন।।
    কিসের বা হরিধ্বনি কিসের কীর্তন
    চুপ করে না থাকেত তাড়াও এখন।।
    সবে বলে কে বলিবে ঠাকুরের ঠাঁই
    নিজে যান বালাজী অন্যের সাধ্য নাই।।
    ঠাকুরের নিকটেতে যায় বলিবারে
    বলিব বলিব ভাবে বলিতে না পারে।।
    এক এক বার যায় ক্রোধ করি মনে
    এবার তাড়াব গিয়া হরিবোলাগণে।।
    ধেয়ে ধেয়ে যায় বালা অতি ক্রোধ ভরে
    যেই ঠাকুরের মুখচন্দ্র দৃষ্টি করে।।
    আর নাহি থাকে ক্রোধ হয় মহাশান্ত
    মৌণ হয়ে বসে যেন নৈষ্ঠিক মোহান্ত।।
    সভাসৎ লোক যত দেখিয়া বিস্ময়
    বলে একি হল বল বালা মহাশয়।।
    বড় ক্রোধ করি যাও তাড়াবার তরে
    চুপ করে ফিরে এস বাক্য নাহি সরে।।
    দুই তিন বার গেলে হয়ে ক্রোধমন
    বলিতে না পার কিছু কিসের কারণ।।
    বাণীসুত তুল্য বক্তা বাকযুদ্ধে জয়
    কেন নাহি বাক্য আস্ফলন বা কোথায়।।
    বালা মহাশয় বলে তাই ভাবি মনে
    বলা কথা কেন যেন বলিতে পারিনে।।
    আমাকে ভুলায় হেন নাহিক ভুবনে
    নিশ্চয় ঠাকুর কি মোহিনী মন্ত্র জানে।।
    তাহা শুনি সব লোকে হাসিয়া উঠিল
    কেহ বলে মাতুব্বরের মাতুব্বরি গেল।।
    যে মত শ্রীকৃষ্ণ যায় হিত বুঝাইতে
    দুর্য্যোধনে বলে যুধিষ্ঠিরে ভাগ দিতে।।
    দুর্য্যোধন নাহি মানে কৃষ্ণ ফিরে যায়
    তার বাড়ী পঞ্চাশ ব্যঞ্জন নাহি খায়।।
    একত্রিত শত ভাই দুষ্ট দুর্য্যোধন
    রজ্জু পাকাইল কৃষ্ণে করিতে বন্ধন।।
    ভগবান বিশ্বরূপ ধারণ করিল
    কে করে বন্ধন সবে মোহপ্রাপ্ত হ।।
    পরে কৃষ্ণ চলিলেন বিদুরের ঘরে
    বিদুরের পুরাতন ক্ষুদ সেবা করে।।
    চৈতন্য পাইয়া বলে রাজা দুর্য্যোধন
    কি মোহিনী মন্ত্র জানে দেবকী নন্দন।।
    সেই দিন অপমান হল শত ভাই
    কেহ বলে বালাজীর কি হইয়াছে তাই।।
    কেহ বলে বালাজী হইয়াছে পাগল
    কেহ বলে বালাজীকে দুর্য্যোধনই বল।।
    রামচাঁদ উপনীত ঠাকুরের ঠাঁই
    দণ্ডবৎ করি বলে কি হবে গোঁসাই।।
    যত বামা দেখে তোমা না হইল রান্না
    ঠাকুর বলেন পাকঘরে অন্নপূর্ণা।।
    ঘর ছাড়ি মহাপ্রভু এসে বাহিরেতে
    মেয়েদের বলিলেন পাকঘরে যেতে।।
    দয়ার নিধান হরি প্রাঙ্গণে আসিল
    ভক্তগণ লয়ে সভা করিয়া বসিল।।
    সভায় বসিয়া হরি ডাকদিয়া কয়
    কোনজন শ্রীচৈতন্য বালা মহাশয়।।
    এ গ্রামেতে এতদিন আমি আসি যাই
    এগ্রামের কে কর্তা ব্যক্তি চেনা শুনা নাই।।
    সবে বলে অই বসে শ্রীচৈতন্য বালা
    প্রভু বলে আবশ্যক দুটা কথা বলা।।
    সবে দেখাইয়া দিল বসিয়া সভায়
    অই সেই শ্রীচৈতন্য বালা মহাশয়।।
    প্রভু বলে মহাশয় কহ দেখি শুনি
    বলিয়াছ আমি কি মোহিনী মন্ত্র  জানি।।
    তুমি হও বড় জ্ঞানী সুধাই তোমারে
    শুনেছ মোহিনী মন্ত্র মন্ত্র বলে কারে।।
    শুনিয়া কহিছে বাণী বালা মহাশয়
    মুখেতে সরল ভাষা ক্রোধিত হৃদয়।।
    আমি এই পরগণে সবে যাহা বলি
    মোর কাছে সবে থাকে হয়ে কৃতাঞ্জলি।।
    আমি যাই ক্রোধভরে তাড়াইয়া দিতে
    শ্রীমুখ দেখিয়া কিছু না পারি বলিতে।।
    সভামধ্যে কথা বলি লক্ষজন মাঝে
    রাজ দরবারে কিংবা স্বজাতি সমাজে।।
    কাহার নিকট কিছু শঙ্কা নাহি করি
    আপনার কাছে কিছু বলিতে না পারি।।
    তাহাতে এমন আমি মনে অনুমানি
    আপনার যেন জানা আছে কি মোহিনী।।
    বাণীনাথ কহে বাণী মৃদু মৃদু হাসি
    মোহিনী হইতে চাহে বৈষ্ণবের দাসী।।
    হরিবোলা সাধুদের ভক্তি অকামনা
    তন্ত্র মন্ত্র নাহি জানে ব্রজ উপাসনা।।
    বিশুদ্ধ চরিত্র প্রেমে হরি হরি বলে
    অন্য তন্ত্র মন্ত্র এরা বাম পদে ঠেলে।।
    শুদ্ধাচার কৃষ্ণমন্ত্র ভক্তে জপ করে
    অন্য মন্ত্র জপ, তপ, পাপ গণ্য করে।।
    মোহিনী গণিকা কামবিলাসী পৈশাচী
    তার মন্ত্র হরিভক্তে স্পর্শিলে অশুচি।।
    হিংসাবুদ্ধি যারা তারা মিথ্যাভাষী সবে
    সব সভা, জিনে এই মন্ত্রের প্রভাবে।।
    পরগণা মধ্যে তুমি বালা মহাশয়
    কোটি জনে কথা মানে তুমি একা জয়।।
    ভক্তিশূন্য রসশূন্য ভাষ অপভাষ
    তথাপি সভার মধ্যে পাও বড় যশ।।
    অপকথা কও তবু লোকে মানে কেন
    নিশ্চয় মোহিনী মন্ত্র তোমরাই জান।।
    ক্রোধ ভরে তুমি কিছু বলিতে নারিলে
    বলিতে পারিবে কেন বলিতে না দিলে।।
    দূর হতে কতলোক করে আস্ফালন
    আসিলে তোমার ঠাঁই না স্ফুরে বচন।।
    তা হলে মোহিনী মন্ত্রে তুমি কিসে কম
    আমি জানি মোহিনী এ তব মতিভ্রম।।
    সমুদ্র মন্থনকালে যে হল মোহিনী
    দেব দৈত্য ভুলাইল ভুলে শূলপাণি।।
    তার মন যে ভুলায় গাঢ় অনুরাগে
    তার ঠাঁই তোমার এ মোহিনী কি লাগে।।
    অন্ধকারে জোনাকির আলো হয় বনে
    সে জ্যোতি থাকিবে কেন সুধাংশু কিরণে।।
    নিশাকর করে কর তারাগণ ঘিরে
    সবাকার অন্ধকার দিবাকর হরে।।
    সেই দিবাকর যার নখরে উদয়
    সেই পাদপদ্ম সদা যাহার হৃদয়।।
    দিবাকর নিশাকর এসে তার ঠাঁই
    করজোড়ে স্তব করে বলিয়া গোঁসাই।।
    তার সাক্ষী হনুমান রামভক্তি জোরে
    রামকার্য্যে সূর্যদেবে রাখে কর্ণে ভরে।।
    ছাড় সব ধাঁধাঁ বাজী কাজে কাজী হও
    হরিপদ ভাবি কাল সুখেতে কাটাও।।
    কি দোষ করেছি আমি মেতে হরিপ্রেমে
    বল তব কি ক্ষতি হয়েছে হরিনামে।।
    মেয়েরা করে না পাক ক্ষতি কি তাহাতে
    বসাইয়া দেও লোক পায় কি না খেতে।।
    এই অবকাশে লক্ষ্মীকান্ত কৃপাযোগে
    এদিকেতে রান্না হইয়াছে দশ ভাগে।।
    বালা বলে সবলোক বসাইয়া দিব
    অন্নে না কুলালে ঠাকুরালী দেখাইব।।
    অল্প অন্ন অল্প অল্প ডাল তরকারী
    কেহ বাদ না থাকিও বৈস সারি সারি।।
    শীঘ্র শীঘ্র ডেকে সব লোক বসাইল
    অবলীলাক্রমে পরিবেষণ হইল।।
    খেয়ে সব লোকে বলে অদ্য কিবা রান্না
    জ্ঞান হয় রেঁধেছে কমলা অন্নপূর্ণা।।
    অল্প অন্ন বহুলোক হবে নাকি জানি
    ত্রিলোক ফুরাতে নারে এবে ইহা মানি।।
    জ্ঞানশূন্য শ্রীচৈতন্য বালা মহাশয়
    মজুত অযুত লোক মানিল বিস্ময়।।
    বালা মহাশয় কিংবা যত ছিল আর
    মহাপ্রভু পদে সবে করে পরিহার।।
    কেহ বলে হরিরূপে হরি অবতীর্ণ
    কেহ বলে নমঃশূদ্র বংশ হল ধন্য।।
    শ্রীহরি চরিত্র সুধা যেই করে পান
    কর্মক্ষুধা পাপে তাপে সেই পরিত্রাণ।।
    আকাশ ভেদিয়া উঠে হরিনাম ধ্বনি
    হরি হরি ময় ময় আর নাহি শুনি।।
    পিও সাধু নাম মধু রসনা আশয়
    দিনান্তে যাবে দুরন্ত কৃতান্ত ভয়।।
    তারক রসনা কহে হরিচাঁদ লীলে
    হরিচাঁদ প্রীতে ডাক হরি হরি বলে।।

    শ্রী শ্রী হরিচাঁদের চতুর্ভুজ রূপ ধারণ ও গোস্বামী গোলোকচাঁদের বংশাখ্যান
    পয়ার
    যে ভাবেতে উদাসীন হইল গোলোক
    গোলোক চরিত্র কিছু শুন সর্বলোক।।
    সাহাপুর পরগণা তাহার অধীনে
    নারিকেলবাড়ী গ্রাম জানে সর্বজনে।।
    এই বংশে যত জন সবে মহোদয়
    বংশ অনুরাগ হরিভক্ত অতিশয়।।
    মহৎ পুরুষ ছিল কেনাই মণ্ডল
    কৃষ্ণভক্ত চূড়ামণি প্রেমেতে বিহ্বল।।
    কেনাইর চারিপুত্র সবে গুণাকর
    প্রথম অযোধ্যা রাম প্রেমের সাগর।।
    দ্বিতীয় নন্দন হল হরেকৃষ্ণ নাম
    তৃতীয়তঃ সৃষ্টিধর সাধু অনুপম।।
    নয়ন মণ্ডল সর্বানুজ হন তিনি
    করিতেন হরিনাম দিবস রজনী।।
    সকলেই কৃষ্ণভক্ত সাধুসেবা মতি
    নয়নের অতি ভক্তি অতিথির প্রতি।।
    মধ্যম হরেকৃষ্ণের দুইটি নন্দন
    রামনিধি জ্যেষ্ঠ হয় কনিষ্ঠ বদন।।
    জ্যেষ্ঠ অযোধ্যারামের তিনটি নন্দন
    ঠাকুর দাস জ্যেষ্ঠ হয় অতি সুলক্ষণ।।
    মধ্যম শ্রীজয়কৃষ্ণ নামে প্রেমে মত্ত
    হরিপ্রেমে মত্ত হয়ে করিতেন নৃত্য।।
    সবার কনিষ্ঠ হয় চন্দ্রকান্ত নাম
    তিন ভাই হরিভক্ত বলে জয় রাম।।
    ঠাকুর দাসের তিন পুত্র গুণাকর
    জ্যেষ্ঠ রাম কুমার মধ্যম বংশীধর।।
    কনিষ্ঠ গোলোকচন্দ্র ভক্ত চূড়ামণি
    যার ঘোর হুহুঙ্কারে কম্পিতা মেদিনী।।
    শ্রীরামকুমার সংসারের মধ্যে কর্তা
    সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয় মিষ্টভাষী বক্তা।।
    গায় কৃষ্ণ বলে কৃষ্ণ করে মহাজনী
    বাণিজ্য করেন আর নৌকার  চালানী।।
    বংশীধর বংশধর অতি শিষ্টাচারী
    সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয় ধর্ম অধিকারী।।
    কভু নাই অনাচার সংসারে সংসারী
    সবে মানে রাজাস্থানে সত্য দরবারী।।
    সদা পরহিতে রত গৃহকার্য করে
    রাজা ডাকে রাত্রে যান রাজ দরবারে।।
    কনিষ্ঠ গোলোকচন্দ্র হইল গোঁসাই
    গৃহকার্যে রত ছিল এই তিন ভাই।।
    গোলোক উন্মত্ত চিত্তে ঠাকুর ভাবিয়া
    উপাধি হইল শেষে পাগল বলিয়া।।
    কৃষিকার্য করিতেন গোস্বামী গোলোক
    ধান্যক্ষেত্রে কার্যে ছিল বড়ই পারক।।
    হলধর দিয়া চাষে আইলে বসিয়া
    নির্জনে বসিয়া জমি দেখিত চাহিয়া।।
    জমিমধ্যে কোন স্থান নিম্ন যদি রয়
    উচ্চস্থান মাটি এনে সে নিম্ন পুরায়।।
    উঁচু নিচু না রাখিত জমির মাঝেতে
    সমতল ধান্যক্ষেত্র করিত স্বহস্তে।।
    যে জমির ধান্য কাটে আঠার কিষাণে
    তিনি তাই কাটিতেন একা একদিনে।।
    বিষয় কার্যেতে ছিল এমত নিযুক্ত
    এবে শুন যেভাবে হইল প্রভুভক্ত।।
    কণ্ঠদেশ ফুলিয়া ক্রমশঃ হল ভারি
    শয্যাগত রহিলেন হয়ে অনাহারী।।
    নাসারন্ধ্রে ঘনশ্বাস বাক্য নাহি সরে
    দুগ্ধ পান আদি বন্ধ হল একেবারে।।
    রাউৎখামার রামচাঁদ মহাশয়
    ভক্তশ্রেষ্ঠ ঠাকুর নিকটে আসে যায়।।
    রোগযুক্ত রোগী যত রামচাঁদে ধরে
    ঠাকুরের নামেতে রাখিয়া রোগ সারে।।
    গোলোকের জ্যেষ্ঠ রামকুমার বিশ্বাস
    দশরথ নিকটেতে করিল প্রকাশ।।
    গোস্বামীর খুল্লতাত জয়কৃষ্ণ নাম
    তার পুত্র সহস্রলোচন গুণধাম।।
    সাধুসঙ্গ সদামতি হৃদয় আনন্দ
    তাহার কুমার দশরথ মহানন্দ।।
    শ্রীরামকুমার কহে দশরথ ঠাঁই
    চল বাপ রামচাঁদে আনিবারে যাই।।
    গোলকে দেখিয়া আর স্থির নহে মন
    ঠিক যেন গোলোকের নিকট মরণ।।
    শুনেছি রামচাঁদের অপার মহিমে
    রোগ সারে হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে।।
    বড় বড় রোগে রোগী তার কাছে যায়
    আসা মাত্র রোগমুক্ত যদি দয়া হয়।।
    দশরথ দিল মত চল তবে যাই
    খুল্লতাত রোগ সারে এই ভিক্ষা চাই।।
    ত্বরা যায় রামচাঁদ ঠাকুরে আনিতে
    উপনীত ত্বরান্বিত রাউৎখামারেতে।।
    বালাবাড়ী গেলে মাত্র সর্বজনে কয়
    হেথা বৈস সে ঠাকুর আসিবে হেথায়।।
    গিরিধর বালা আছে জ্বরে অচেতন
    রামচাঁদে আনিবারে যাইব এখন।।
    পরিশ্রম করি কেন তোমরা যাইবা
    আমরা আনিলে হেথা বসিয়া পাইবা।।
    বলিতে বলিতে লোক আনিবারে গেল
    রামচাঁদ ঠাকুরকে সত্বরে আনিল।।
    রামচাঁদ ঠাঁই রামকুমার বলেছে
    ভাই মোর গোলোক সে আছে কি না আছে।।
    বড় দায় ঠেকে আসিয়াছি দৌড়াদৌড়ি
    দয়া করি যেতে হবে নারিকেলবাড়ী।।
    তাহা শুনি রামচাঁদ না করিল বাক্
    বাবা হরিচাঁদ বলে ছেড়ে দিল ডাক।।
    হরিচাঁদ হরিচাঁদ বলে ডাক ছাড়ে
    হুঙ্কারিয়ে দুই হাতে গিরিধরে ঝাড়ে।।
    ডাকে বাবা হরিচাঁদ করি করজোড়
    সজোরে গিরির পৃষ্ঠে মারিল চাপড়।।
    মুহূর্তেক মধ্যে ব্যাধি আরোগ্য হইল
    রোগমুক্ত গিরিবালা উঠিয়া বসিল।।
    রোগমুক্ত হল যদি গিরিধর বালা
    ঝাড়িতে লাগিল রামকুমারের গলা।।
    বাবা হরিচাঁদ বলে ঘন ডাক ছাড়ে
    রামকুমারের গলা রামচাঁদ ঝাড়ে।।
    দোহাই ওঢ়াকাঁদির বাবা হরিচাঁদ
    গলা ঝাড়ে ডাক ছাড়ে যেন সিংহনাদ।।
    দণ্ডমাত্র রামকুমারের গলা  ঝাড়ি
    বলে আমি যাইব না নারিকেলবাড়ী।।
    তোমরা গৃহেতে যাও আমি গৃহে যাই
    দেখ গিয়ে গোলোকের গলা ফুলা নাই।।
    রামচাঁদ যাহা যাহা বলে দিয়াছিল
    বাটীতে আসিয়া সত্য তাহাই দেখিল।।
    সেই সব প্রকাশিল বাটীতে আসিয়া
    গোলোক উন্মত্ত হল সে কথা শুনিয়া।।
    প্রভুকে দেখিবো বলে ওঢ়াকাঁদি যায়
    লোটাইয়া পড়ে গিয়ে ঠাকুরের  পায়।।
    প্রভু বলে এতদিন কেন নাহি আলি
    ব্যাধিযুক্ত হয়ে কেন এতকষ্ট পালি।।
    এতদিন পরে যদি এলি মম ঠাঁই
    যাও বাপ গৃহে যাও আর ভয় নাই।।
    শুনিয়া গোলোক প্রেমে কম্পিত হইল
    অনিমিষ নেত্রে রূপ দেখিতে লাগিল।।
    শঙ্খ চক্র গদাপদ্ম চতুর্ভুজধারী
    পরিধান পীতাম্বর মুকুন্দমরারী।।
    রূপ দেখি ঝোরে আঁখি ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস
    বলে আমি আর না করিব গৃহবাস।।
    গোলোক বলেন আমি কার বাড়ী যা
    চরণে নফর হয়ে পড়িয়া রহিব।।
    প্রভু বলে ঘরে যাও ওরে বাছাধন
    চিরদিন মোরে বলে থাকে যেন মন।।
    গোলকে বলেন হরি চিনেছি তোমায়
    চিরদাস বিক্রিত হইনু তব পায়।।
    প্রভু বলে বিকাইলি পাইলাম তোরে
    কর গিয়া গৃহকার্য যাব তোর ঘরে।।
    গোলোক চলিল ঘরে প্রভুর কথায়
    সময় সময় ওঢ়াকাঁদি আসে যায়।।
    মাসান্তর পক্ষান্তর সপ্তাহ অন্তরে
    মাঝে মাঝে যাইত প্রভুকে দেখিবারে।।
    দশরথ মহানন্দ মাতিল তাহাতে
    গ্রাম্য লোক প্রমত্ত হইল সেই মতে।।
    হরিচাঁদ গোলোকের ভাব প্রেমবশে
    যাতায়াত করে প্রভু গোলোকের বাসে।।
    এইভাবে হরিবোলা হইল গোলোক
    হরি হরি বল সাধু কহিছে তারক।।

    বদন গোস্বামীর উপাখ্যান
    পয়ার
    গোলোক পাগল হল ঠাকুরের ভক্ত
    ভক্তিভাবে আত্মহারা সদাই উন্মত্ত।।
    গাঢ় অনুরাগ অষ্ট সাত্ত্বিক বিকার
    নাহি মানে বেদবিধি বীর অবতার।।
    বীরেতে বীরত্ব যেন তুল্য হনুমান
    ধীর রসে শ্রীঅদ্বৈত শক্তি অধিষ্ঠান।।
    উন্মত্ত স্বভাব সদা নাহি ছুটে কভু
    শয়নে স্বপনে ভাবে হরিচাঁদ বিভু।।
    অনুক্ষণে আসে প্রভু গোলোকের ঠাঁই
    ক্রমে প্রেমে ভাবাবিষ্ট বদন গোঁসাই।।
    গোলোকের খুল্লতাতগোঁসাইবদন
    সেই যে বদন হরেকৃষ্ণের নন্দন।।
    হইল অসাধ্য ব্যাধি উদরে বেদনা
    অহরহ বেদনায় বিষম যাতনা।।
    আয়ুর্বেদ নিদান মতের চিকিৎসা
    খন্ডজ্ঞানী মুষ্টিযোগী সুমন্ত্র পারক।।
    অনেকে দেখিল রোগ আরোগ্য না হয়
    অবশেষে দেখিলেন এক মহাশয়।।
    তিনি এসে বলিলেন বেদনা সারিব
    উদরেতে ফোঁটা দিয়ে ঘা বানয়ে দিব।।
    গাছড়ার রসদ্বারা দিল ষোল ফোঁটা
    চর্ম ঠোসা পড়ে শেষে ঘা হল ষোলোটা।।
    মাসেক পর্যন্ত সেই করে মুষ্টিযোগ
    নিদারুণ জ্বালা হল নাহি সারে রোগ।।
    একেতঘায়ের ব্যথা ব্যথা পুরাতন
    উভয় ব্যথার জ্বালা নাহি নিবারণ।।
    ক্রমে বৃদ্ধি বেদনাতে অস্থিচর্মসার
    অদ্য কিংবা কল্য মৃত্যু এরূপ আকার।।
    কেহ বলে চিকিৎসার নাহি প্রয়োজন
    কেহ বলে বৈদ্যনাথ প্রতি দেহ মন।।
    কেহ বলে আর কিছু নাহি হরি বল
    কেহ বলে বাঁচ যদি ওঢ়াকাঁদি চল।।
    জগত জীবন তিনি জগতের কর্তা
    মরিলে বাঁচাতে পারে সবে কহে বার্তা।।
    আত্ম স্বার্থ সমর্পণ করহ তাহায়
    চল যাই ওঢ়াকাঁদি ঠাকুর কি কয়।।
    শুনিয়া বদন বড় হরষিত হ
    বলে সবে মোরে লয়ে ওঢ়াকাঁদি চল।।
    দশরথ বলে আমি লইয়া যাইব
    ব্যাধিমুক্ত হলে মোরা তার দাস হ।।
    শয্যাগত মৃতবৎ ওষ্ঠাগত প্রাণ
    ক্ষণে ক্ষণে অচেতন ক্ষণেক অজ্ঞান।।
    উত্থান শকতি নাই থাকেন শয্যায়
    তরণী সাজিয়া চলে দুই মহাশয়।।
    দুই জন তরী বাহে ত্বরান্বিত হয়ে
    বদন রহিল সেই নৌকাপরে শুয়ে।।
    দুই জন তরী বাহে হরিগুণ গায়
    অশ্রুজলে বদনের বক্ষ ভেসে যায়।।
    মনে ভাবে যদি কিছু সময় পেতাম
    মনোসাধ মিটায়ে নিতাম হরিনাম।।
    ভাবিতে ভাবিতে কিছু উপশম পায়
    সকাতরে ধীরে ধীরে হরিনাম লয়।।
    ঠাকুরের ঘাটে নৌকা চাপিল যখন
    প্রভু করিলেন অন্তঃপুরে পলায়ন।।
    বাহির বাটীতে এসে পড়িল বদন
    ধরায় শয়ন করি করেছে রোদন।।
    বদন রোদন করে হইয়া পতন
    দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ শ্রীমধুসূধন।।
    ক্ষণেক থাকিয়া প্রভু আসিল বাহিরে
    তর্জন গর্জন করে বদনের পরে।।
    গালাগালি দিয়া বলে ওঠ বেটা দুষ্ট
    বল দেখি তোর কেন হল এত কষ্ট।।
    বেয়েছ বাঁচাড়ি নৌকা পাছা নাচাইয়া
    আড়ঙ্গ করেছ জয় বাহিছ খেলায়া।।
    দেহ খাটাইয়া লোক ধন উপার্জয়
    সে ধন কাকেরে বকেরে কে খাওয়ায়।।
    এখন সে সোর শব্দ রহিল কোথায়
    একা আসা একা যাওয়া সাথী কেবা হয়।।
    বদন বলিছে প্রভু মরিয়াছি আমি
    ভগ্ন তরী ডুবে মরি কর্ণধার তুমি।।
    ঠাকুর বলেন চিনে সে কান্ডারী ধর
    মরিলি যদ্যপি বেটা ভালো করে মর।।
    বদন বলেন মম ডুবু ডুবু তরী
    আর কি চিনিতে যাব চিনেছি কান্ডারী।।
    বদন বলেন তরী সবে যায় বেয়ে
    ডুবাতরী যেই বাহে তারে বলি নেয়ে।।
    বদন বলেন হরি পদতরী দেও
    ছাড়িলাম দেহতরী বাও বা না বাও।।
    হরি হরি হরি বলি উঠিল বদন
    ধরণী লোটায়ে ধরে প্রভুর চরণ।।
    সঙ্গে আসিয়াছে যারা রহে যোড় করে
    ঠাকুর বলে তোরা ফিরে যারে ঘরে।।
    বাটী গিয়া বল সবে মরেছে বদন
    যে দারুণ পেট ব্যাথা না রবে জীবন।।
    কেহ যদি থাকে সে করুক শ্রাদ্ধ আদি
    বল গিয়া বদন মরেছে ওঢ়াকাঁদি।।
    মৃতদেহ এনে তোরা রাখিলি এখানে
    এখানে মরিবে ওরে কে ফেলাবে টেনে।।
    ইহা বলি তা সবারে পাঠাইল ঘরে
    পদ দিল বদনের পেটের উপরে।।
    জীয়ন্তে কাহার পেটে কে করয় ছিদ্র
    পেটের ঘায়ের পর দিল পাদ পদ্ম।।
    অমনি পেটের ঘা শুকাইয়া গেল
    হরি হরি হরি বলি বদন উঠিল।।
    ঠাকুর বলেন তোর পেটে ছিল যেই
    দেখ বাছা তোর পেটে আছে কি না সেই।।
    বদন বলেন মোর পেটে যেই ছিল
    শ্রীপদ পরশে সেই মুক্তি হয়ে গেল।।
    হরি ভিন্ন বদনে বলে না অন্য বোল
    নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে হরি বলেছে কেবল।।
    বায়ু যবে পশে তার হৃদয় মাঝেতে
    শত হরিনাম করে প্রতি নিঃশ্বাসেতে।।
    বায়ু যবে বের হয় তাহার সঙ্গেতে
    পঞ্চাশৎ হরিনাম করে সে কালেতে।।
    কেহ যদি কাছে এসে জিজ্ঞাসা করয়
    নাম সঙ্গে কথা কয় নামে করে লয়।।
    কোনকালে নাম করা ক্ষান্ত নাহি হয়
    হাতে মুখে চোখে ঈষৎ ইঙ্গিত দেখায়।।
    কেহ যদি বলে কিছু খাওরে বদন
    বলে হরি দেও হরি করিব ভোজন।।
    ঠাকুর বলেন যদি বাড়ী যেতে বোল
    বলে হরি হে হরি যাবনা হরিবোল।।
    ঠাকুর বলেন তবে মম সঙ্গে আয়
    হরি হরি হরি বলি পিছে পিছে ধায়।।
    বাসস্থান পূর্বদিকে ধান্যভূমি ছিল
    তার মধ্যে উচ্চ এক স্থান আছে ভাল।।
    সেই স্থানে আছে এক হিজলের গাছ
    পূর্ব মুখ বসিলেন গাছ করি পাছ।।
    ঠাকুর বলেন তোর ক্ষুধা লাগে নাই
    বলে হরি বল হরি চল হরি খাই।।
    সেখানে দেখিল প্রভু একটি সুড়ঙ্গ
    সুড়ঙ্গ হইতে বের হইল ভুজঙ্গ।।
    ঠাকুর বলেন তোর হরিনাম শুনে
    ভুজঙ্গ বাহির হয়ে চলে গেল বনে।।
    ভুজঙ্গের মুখে লাল দেখ দৃষ্টি করি
    অবশ্য ভুজঙ্গ কোন ধন অধিকারী।।
    হরি বল হরি বল কহিছে বদন
    বল হরি গর্তে হরি আছে হরিধন।।
    ঠাকুর বলেন তবে কররে খনন
    হরি হরি বলি মাটি কাটিল বদন।।
    দুই চাপ মাটি ফেলে তাহার তলায়
    পাইল ধনের ঘড়া কালুব্যাধ প্রায়।।
    ঠাকুর বলেন ধন আনরে বদন
    এই ধন লয়ে গৃহে করহ গমন।।
    বহুদিন বেদনায় ভুগিলি বদন
    করিতে নারিলি বাছা ধন উপার্জন।।
    সংসারের কার্য কিছু করিতে না পার
    এই ধন লয়ে সংসারের কার্য কর।।
    তোর হরি নামেতে প্রহরী তুষ্ট হ
    নিশ্চয় বুঝিনু ধন তোরে দিয়া গেল।।
    বদন বলেন হরি হরি বল মুখে
    আমি কি করেছি ধন দিবে সে আমাকে।।
    কেন হরি মোরে হরি দেহ এই ধন
    তুচ্ছ হরি ধন হরি দিয়া বুঝ মন।।
    ওরে হরি ধনে হরি নাহি প্রয়োজন
    তুচ্ছ হরি ধনে হরি নাহি লয় মন।।
    হরি লক্ষ্মী হরিণাক্ষী দৃষ্টি করে যারে
    হরি বল হরি ধন থাকে তার ঘরে।।
    হরি বল বিমলা কমলা যার দাসী
    হরি বল যে পদ সেবিকা দিবানিশি।।
    হরি বল যেই ধন বিরিঞ্চি বাঞ্চিত
    হরি বল সেই ধনে করনা বঞ্চিত।।
    হরি বল সেই ধন করহ অর্পণ
    হরি বল সেই ধন তব শ্রীচরণ।।
    হরি বল কত আমি দেখেছি খাটিয়া
    হরি বল দেখিয়াছি ধন উপার্জিয়া।।
    হরি বল হেন ঘড়া পূর্ণ ছিল ঘরে
    হরি বল সেই ধন কেবা রক্ষা করে।।
    হরি বল কোথা ধন আমি বা কোথায়
    হরি বল খাই নাই মরি বেদনায়।।
    হরি বল ক্ষিতি অর্থলোভে কতলোক
    হরি বল খুন করি খাটিছে ফাটক।।
    হরি বল হরিবিনে শান্তি নাহি মনে
    হরি বল কিবা হয় ধনে আর জনে।।
    হরি বল এ ধনে আমার কার্য নাই
    হরি বল ধন হরি চল হরি যাই
    হরি বলে অর্থ যদি অনর্থ কেবল
    হরি ধন হরি লবে চল হরি বল।।
    হরিকে ডাকেন হরি আর অজগর
    হরিধন হরিব না মোরা যাই ঘর।।
    শুনি অজগর তবে বাহুড়ি আসিল
    ঠাকুরে প্রণাম করি সুড়ঙ্গে পশিল।।
    প্রভু সঙ্গে বদন  থাকেন একতর
    কভু ঠাকুরের বাড়ী কভু ভক্তঘর।।
    কোন কোন লোক যদি হয় ব্যাধিযুক্ত
    ঠাকুরের কাছে আসে হতে ব্যাধিমুক্ত।।
    কারু কারু আজ্ঞা দেন মুষ্টি যোগ করে
    কারু বলে লয়ে যাও বদন ঠাকুরে।।
    ঠাকুর বলেন তবে বদন ঠাকুরে
    যেই তুমি সেই আমি একই শরীরে।।
    মনুষ্য জীবন মৃত্যু একই সমান
    তুইরে বদন মম ধন মন প্রাণ।।
    তোর দেহ নিলাম আমার ইচ্ছামতে
    তোর ইচ্ছা যাহা হয় মোর ইচ্ছা তাতে।।
    ঠাকুরের আজ্ঞা শুনি বদন উঠিল
    ঘুরে ফিরে নাচে যেন মত্ত মাতোয়াল।।
    চরণ চঞ্চল চিত্ত স্থির নাহি রয়
    হরি হরি হরি বলে দৌড়িয়া বেড়ায়।।
    হরি বলি যায় চলি নামে করি ভর
    মুখ ফিরে যায় বাম স্কন্ধের উপর।।
    মহাবেগে চলে যান সিংহের সমান
    হরিনাম ক্ষান্ত নাই আড়ল পয়ান।।
    ক্ষণেক বিপথে যান ক্ষণে পথে আসে
    ভুজঙ্গ গমন যেন বক্রভাবে বিষে।।
    অলসেতে চলি প্রভু করিত শয়ন
    ঈষৎ আবেশে নিদ্রা চৈতন্য জীবন।।
    ঈষন্নিদ্রাপূর্ণ চৈতন্য করিত বিশ্রাম
    তার মধ্যে হরিনাম নাহিক বিরাম।।
    হরি হরি বলে যবে করিত ভোজন
    মন্ত্র ভুলে হরি বলে আত্ম নিবেদন।।
    হরি জল খাব বলে দেও বলে ডাকে
    ভুলে ভোজনের দ্রব্য তুলে দেয় মুখে।।
    নামের সহিত দ্রব্য দুই হাতে তুলি
    বদন বদনে দিত হরি হরি বলি।।
    এইভাবে উদাসীন হইল বদন
    এইভাবে ঠাকুরের সঙ্গেতে মিলন।।
    অবিরাম হরিনাম করে অনুক্ষণ
    ইচ্ছামত করিতেন গমনাগমন।।
    কক্ষবাদ্য করতালি কখন কখন
    কভু ওঢ়াকাঁদি কভু গৃহেতে গমন।।
    কখন বা রাস্তা দিয়া করিতে পয়ান
    কভু পথ বা বিপথ না থাকিত জ্ঞান।।
    হরি বলে কখন চলিত বেগভরে
    খান নাল লম্ফ দিয়া যাইতেন পারে।।
    জঙ্গল কণ্টক কিংবা জলমগ্ন স্থান
    আড়ভাবে হরি বলি করিত পয়ান।।
    ঘোরাফিরা নাহি ছিল দৌড়াদৌড়ি সোজা
    এমন মহৎভাব নাহি যেত বুঝা।।
    মলমূত্র ত্যাগে হরি নাহিক বিশ্রাম
    নাহি ক্ষান্ত অবিশ্রান্ত করে হরিনাম।।
    ব্যাধিযুক্ত কেহ যদি হয় নিরুপায়
    কাঁদিয়া ধরিত গিয়া বদনের পায়।।
    হরিচাঁদ বলিয়া দিতেন আজ্ঞা করে
    অমনি সারিত ব্যাধি আজ্ঞা অনুসারে।।
    বদনের শুভাখ্যান শুনে যেই লোক
    শ্রবণেতে মহাসুখ বিজয়ী ত্রিলোক।।
    ওঢ়াকাঁদি শেষ লীলা অলৌকিক কাজ
    ভণে শ্রীতারকচন্দ্র করি রসরাজ।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.