শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
৬ মধ্যখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ৬ মধ্যখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ


                            মধ্যখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ

    মধ্যখণ্ড
    প্রথম তরঙ্গ
    বন্দনা

    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

    অথ মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান।
    পয়ার

    মল্লকাঁদি গ্রামে মৃত্যুঞ্জয় মহাভাগ।
    যে ভাবে ঠাকুর প্রতি বাড়ে অনুরাগ।।
    নিত্যানন্দ মহাসাধু দানধর্মে রত।
    কৃষ্ণ ভক্তি সাধুসেবা করে অবিরত।।
    তাহার নন্দন হল নাম মৃত্যুঞ্জয়।
    সুভদ্রা নামিনী মাতা পতিব্রতা হয়।।
    সেই রত্নগর্ভজাত হল মৃত্যুঞ্জয়।
    পরম বৈষ্ণবী দেবী সুভদ্রা সে হয়।।
    নিত্যানন্দ পরলোকে করিলে গমন।
    পতিশোকে সুভদ্রার সতত রোদন।।
    পতি ধর্মাশ্রয় করি শিখার মুণ্ডন।
    শুদ্ধমতি এক সন্ধ্যা করিত ভোজন।।
    শিক্ষা কৈল হরিদাস বাবাজীর ঠাই।
    সদা মনে কৃষ্ণ চিন্তা অন্য চিন্তা নাই।।
    অঙ্গে ছাপা জপমালা তুলসী সেবন।
    তুলসীর বেদী নিত্য করিত লেপন।।
    নিশাকালে অল্প নিদ্রা তেমতি বিশ্রাম।
    ঘুমেতে থাকিয়া করিতেন হরিনাম।।
    ব্রহ্ম মুহূর্তের কালে করি গাত্রোত্থান।
    প্রেমভরে ডাকিতেন গৌরাঙ্গরে প্রাণ।।
    কোথারে নিতাই মোর কোথা ওরে গৌর।
    দাসীকে করহ দয়া দয়াল ঠাকুর।।
    বাপরে চৈতন্য মোর বাপরে নিতাই।
    দাসীকে করহ দয়া এস দুটি ভাই।

    হরি বলি রোমাঞ্চিত প্রেমেতে পুলক।
    প্রাতঃকৃত স্নান করি পরিত তিলক।

    হরিনাম পদছাপা সর্বঅঙ্গে পরি

    নিতাই বলিতে চক্ষে ঝরে অশ্রুবারি।।
    তৈল মৎস বিনে নিজ হাতে করি পাক।
    নিতাই চৈতন্য বলে ছাড়িতেন ডাক।।
    সেই রত্নগর্ভজাত সাধু মৃত্যুঞ্জয়।
    শাস্ত্র শ্লোক বক্তা ছিল ধীর অতিশয়।।
    শাস্ত্র আলাপনে অতি ছিলেন সমর্থ।
    করিতেন শাস্ত্রের মাঝেতে নিগুঢ়ার্থ।।
    সাধু সঙ্গে ইষ্ট গোষ্ঠ করে নিরবধি

    দৈবেতে হইল তার রসপিত্ত ব্যাধি।।
    ভাবিলেন আমি হেন লোকের সন্তান।
    আমার এব্যাধি হল না রাখিব প্রাণ।।
    কোন মুখে এই মুখ লোকেরে দেখাব।
    ভাবিলেন বিষ খেয়ে জীবন ত্যাজিব।।
    ওঢ়াকাঁদি হল হরি ঠাকুর প্রচার।
    আশা যাওয়া করে প্রভু রাউৎখামার।।
    এ দেশ এ গ্রাম সব ধন্য হইয়াছে।
    আমিও যাইব সেই ঠাকুরের কাছে।।
    গোলোক মাতিল আর মাতিল বদন।
    নারিকেলবাড়ী ধন্য তাদের কারণ।।
    ঠাকুর পাইয়া হল জগতে আনন্দ।
    মাতিয়াছে দশরথ আর মহানন্দ।।
    ইহা দেখি দ্রবীভূত নহে মম মন।
    যেমন মানুষ আমি হয়েছে তেমন।।
    জ্ঞান হয় ওঢ়াকাঁদি স্বয়ং অবতার।
    তিনি বিনে পতিতের বন্ধু নাহি আর।।
    রাউৎখামার হল প্রেমের বাজার।
    প্রেমের পাথারে সবে দিয়েছে সাঁতার।।
    ওঢ়াকাঁদি হতে প্রেমবন্যা উথলিল।
    আমি বিনে জগতের সকলে ডুবিল।।
    মরিলে ঠাকুর দেখে পরকাল পাব।
    শেষে বিষ খেয়ে আমি আত্মঘাতী হব।।
    বিষ কিনে লইলেন কাপড়ে বাঁধিয়া।
    এ বিষ খাইব ঠাকুরের কাছে গিয়া।।
    বিষ লয়ে ওঢ়াকাঁদি উপনীত হল।
    প্রভুর নিকটে গিয়া কাতরে বসিল।।
    প্রভু বলে মৃত্যুঞ্জয় এলি ওঢ়াকাঁদি।
    পরিধান কাপড়েতে কি আনিলি বাঁধি।।
    অমনি বিস্ময়াম্বিত হল মৃত্যুঞ্জয়।
    মুখপানে চেয়ে রল কথা নাহি কয়।।
    বসন টানিয়া প্রভু বিষ খসাইল।
    বাহির করিয়া নিজে বিষ পান কৈল।।
    এলি এই বিষ খেয়ে মরিবার তরে।
    ওঢ়াকাঁদি এলে কিরে বিষে লোক মরে।।
    এই বিষ খেয়ে বাছা মরিতে কি তুমি।
    এইতবিষ খেলাম মরিতনা আমি।।
    মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
    ফাঁকি দিয়ে বেণে বেটা বিষ নাহি দিল।।
    বিষ না দিয়ে বণিক দিয়েছে সে কুড়।
    বিষ নহে এতে কেন মরিবে ঠাকুর।।
    পুনঃভাবে এই বিষে ঠাকুর মরিলে।
    প্রহ্লাদ মল না কেন অগ্নি বিষানলে।।
    বিষপানে মরিল না ভোলা বিশ্বনাথ।
    কালীয় শ্রীকৃষ্ণ অঙ্গে কৈল দন্তাঘাত।।
    হইলে সামান্য লোক হইত নিপাত।
    নিশ্চয় বুঝিনু ইনি প্রভু জগন্নাথ।।
    বিষপানে মরিতেন মানব হইলে।
    আমার মনের কথা কেমনে জানিলে।।
    আমি যে এনেছি বিষ গোপন করিয়া।
    কেহ নাহি জানে আনি কাপড়ে বাঁধিয়া।।
    গোপনে রেখেছি কিসে পাইল সন্ধান।
    অন্তর্যামী ইনিত স্বয়ং ভগবান।।
    প্রভু কয় মৃত্যুঞ্জয় শুনরে বচন।
    বিষ খেয়ে মরে যে সে মানুষ কেমন।।
    নিজ দেহ প্রতি যার দয়ামায়া নাই।
    সে ভালো বাসিবে পরে বিশ্বাস না পাই।।
    মৃত্যুঞ্জয় কহে প্রভু তোমার সাক্ষাতে।
    মরিব বিষের বিষে ভয় কি তাহাতে।।
    প্রভু বলে যদি তোর মরিবার ইচ্ছে।
    মরিলি তভাল করে মর মোর কাছে।।
    পড়ে পদে মনোখেদে বলে মৃত্যুঞ্জয়।
    দোষ ক্ষমা করি প্রভু রেখ রাঙ্গা পায়।।
    দীন দয়াময় দয়া কর একবার।
    আমিও তোমার প্রভু এ দেহ তোমার।।
    প্রভু বলে যদি মোরে দেহ দিলি ধরি।
    ব্যাধিমুক্ত হলি তুই বল হরি হরি।।
    শ্রীনাথ শ্রীমুখ বাক্য যখন বলিল।
    ব্যাধিমুক্ত মৃত্যুঞ্জয় নাচিতে লাগিল।।
    মৃত্যুঞ্জয় ধরি হরি চরণ যুগল।
    বলে হরি বল হরি বল হরি বল।।
    মৃত্যুঞ্জয় পাইল প্রভুর শ্রীচরণ।
    কহিছে তারক হরি বল সর্বজন।।

    শ্রীহীরামন পাগলের উপাখ্যান।
    পয়ার
    মৃত্যুঞ্জয় হরিবোলা হল ভাগ্যক্রমে।
    যাতায়াত করে প্রভু মল্লকাঁদি গ্রামে।।
    মৃত্যুঞ্জয় ভবনে আসেন হরিচাঁদ।
    সস্ত্রীক সেবেন হরিচাঁদের শ্রীপদ।।
    দুই চারি দিন বাটী থাকেন নির্জনে।
    হরিচাঁদ গুণ গায় শয়নে স্বপনে।।
    হরিচাঁদে না দেখিলে প্রাণ উঠে কাঁদি।
    ঠাকুরে দেখিতে যেত ক্ষেত্র ওঢ়াকাঁদি।।
    ঠাকুরের পাদপদ্ম দরশন করে।
    কভু মল্লকাঁদি গ্রামে আনে নিজ ঘরে।।
    মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী কাশীশ্বরী নাম।
    সাধ্বী সতী পতিব্রতা জপে হরিনাম।।
    ঠাকুর আসিলে তাকে ডাকে মা বলিয়া।
    ঠাকুর সেবায় থাকে নিযুক্ত হইয়া।।
    একটি পুত্র কামনা হইল অন্তরে
    মুখে না বলিয়া বৈসে ঠাকুর গোচরে।।
    অন্তরে জানিয়া তাহা প্রভু অন্তর্যামী।
    কাশীশ্বরী মাকে বলে পুত্র তোর আমি।।
    মম ভক্ত ভাগবত যত যত হবে।
    তাহারা সকলে তোরে মা বলে ডাকিবে।।
    বহু পুত্র হবে তার মধ্যে একজন।
    সেই হতে পুত্র কার্য্য হবে সমাপন।।
    এতেক শুনিয়া দেবী আনন্দিত মনে।
    বাৎসল্য মমতা কভু পিতা তুল্য মানে।।
    কভু পুত্রভাবে, ভাবে মর্মান্তিক মর্ম।
    কভু পুত্রভাবে, ভাবে কভু ভাবে ব্রহ্ম।।
    কখন যশোদা ভাব মনেতে আসিয়া।
    সস্নেহে ধরেন মাতা বাহু প্রসারিয়া।।
    ঠাকুর আসিলে ঘরে খাদ্য দ্রব্য এনে।
    নিজ হাতে তুলে দেন শ্রীচন্দ্র-বদনে।।
    নিজ হাতে তৈল মাখি দেন শ্রীঅঙ্গেতে।
    বসাইয়া ঠাকুরে উত্তম আসনেতে।।
    আপনি আনিয়া বারি স্নানাদি করয়।
    অঙ্গ ধৌত পাদ ধৌত পাদোদক খায়।।
    একদিন প্রভু যান মল্লকাঁদি গায়।
    সুগন্ধি অনেক পুষ্প আনে মৃত্যুঞ্জয়।।
    পদ্মবন হতে আনে শতদল পদ্ম।
    পুজিতে শ্রীপাদ শ্রীনাথের পাদপদ্ম।।
    দুটি শতদল দিল দুটি কর্ণপরে।
    এক কোকনদ পদ্ম দিল শিরোপরে।।
    রাউৎখামার বাসী হীরামন নামে।
    প্রভু প্রিয় ভক্ত বড় অপার মহিমে।।
    কৃষকেরা কৃষিকার্য করিবারে যায়।
    সেই সঙ্গে ধান্য জমি আবাদ ইচ্ছায়।।
    চলেছেন একগোটা বাঁশ কাঁধে করি।
    কৃষাণের সঙ্গে রঙ্গে যায় সারি সারি।।
    পাঁচ সাত জন কিংবা দশ বারো জন।
    দলে দলে সারি সারি চলে সর্বজন।।
    একদলে সাত জন চলে একতরে।
    হীরামন সেই সঙ্গে চলে গাতা ধরে।।
    মৃত্যুঞ্জয় ফুলসাজে সাজায়ে ঠাকুরে।
    বসায়েছে উত্তর গৃহের পিড়ি পরে।।
    বাটীর দক্ষিণ দিয়া পশ্চিমাভিমুখে।
    লে যায় হীরামন পরম কৌতুকে।।
    এমন সময় হীরামন ফিরে চায়।
    ঠাকুরের অই সজ্জা দেখিবারে পায়।।
    সকল কৃষকে ডেকে বলে হীরামন।
    চল সবে করি গিয়া ঠাকুর দরশন।।
    নহে তোরা অগ্রেতে যা পরে আমি যাব।
    নহে তোরা সবে চল ঠাকুর দেখিব।।
    এতবলি অগ্রে চলে বালা হীরামন।
    বাটীর উপরে গিয়া উঠিল তখন।।
    ঠাকুরের মনোহার ফুলসাজ দেখি।
    একদৃষ্টে চেয়ে রহে ঠাকুর নিরখি।।
    ঠাকুর চাহিয়া বলে হীরামন পানে।
    রামাবতারের বীর ছিল কোনখানে।।
    আমাকে দেখিবে বলে প্রাঙ্গণে দাঁড়ায়।
    রামাবতারের বীর দেখ মৃত্যুঞ্জয়।।
    কথা শুনে হীরামন পূর্বস্মৃতি হল।
    একদৃষ্টে প্রভু পানে চাহিয়া রহিল।।
    মহাপ্রভু ডেকে বলে সেই হীরামনে।
    রামাবতারের কথা পড়ে তোর মনে।।
    লংকাদগ্ধ বনভঙ্গ সাগর লঙ্ঘন।
    রাজপুত্র বনবাসী নারীর কারণ।।
    ভেবে দেখ মনে তাহা হয় কিনা হয়।
    যে সকল কার্য্য বাছা করিলি ত্রেতায়।।
    প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিরূপাক্ষ সমুদ্ভব।
    দ্বিতীয় মহান রুদ্র অযোনী সম্ভব।।
    তৃতীয়ে শ্রীহনুমান রামনাম অঙ্গে।
    চতুর্থে মুরালীগুপ্ত শচীসুত সঙ্গে।।
    পঞ্চমে তুলসীদাস ষষ্ঠে হীরামন।
    আদি হি, অন্ত ন, মধ্যে রাম নারায়ণ।।
    হনুমান দ্বীনকার এ কোন কারণ।
    হীন হয়ে হীন মধ্যে শ্রীরাম স্থাপন।
    উমার উকার পঞ্চ জন্ম সঙ্গ করি।
    লীলার প্রধান সঙ্গ শক্তিরূপ ধরি।।
    যুগে যুগে মহাপ্রভু অপূর্ব মিলন।
    বলে কবি গেল রবি হরি বল মন।।

    মহাপ্রভুর শ্রীরাম মূর্তি ধারণ
    পয়ার
    অদ্যোপান্ত বৃত্তান্ত শুনিয়া হীরামন।
    অবারিত অশ্রুধারে ভেসেছে বয়ন।।
    হীরামন হীরামন আর বাক্য নাই।
    শিথিল সবল দেহ ঘন ছাড়ে হাই।।
    অনিমিষ নেত্র রূপ দেখে হীরামন।
    যশোমন্ত রূপ হরি লুকাল তখন।
    অভিনব রূপ নব দূর্বাদল শ্যাম।
    দেখিতে দেখিতে হল দাশরথি রাম।।
    আর যত লোক ঠাকুরের ঠাই ছিল।
    সবে দেখে প্রভু হরিচাঁদ দাঁড়াইল।।
    হীরামন দেখিল সাক্ষাৎ সেই রাম।
    শিরে জটা বাকলাটা সুন্দর সুঠাম।।
    একা হীরামন দেখে রাম দয়াময়।
    সে রূপের আভা মাত্র দেখে মৃত্যুঞ্জয়।।
    বামপার্শ্বে কুক্ষিমধ্যে দেখে ধনুর্গুণ।
    কটিতে বাকল শিরে জটা কক্ষে তুণ।।
    বনবাসে যেই বেশে যান ঋষ্যমুখে।
    তেম্নি অপরূপ রূপ হীরামন দেখে।।
    রামরূপে ক্ষণকাল দাঁড়াইয়া ছিল।
    হীরামন পানে চাহি অমনি বসিল।।
    হীরামন পানে প্রভু একদৃষ্টে চায়।
    নিরিখ ধরিয়া হীরামন চেয়ে রয়।।
    হীরামন স্কন্ধে ছিল বাঁশ একখণ্ড।
    থোড়াবাঁশ ধান্য তৃণ আকর্ষণী দণ্ড।।
    স্পন্দহীন বাক্যরোধ ভুজে নাহি বল।
    পড়ে গেল থোড়াবাঁশ চক্ষে বহে জল।।
    লোমকূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ফোটন আকার।
    স্বেদ বহে শরীরে চমকে বার বার।।
    অবশ হইল অঙ্গ পড়িল ধরায়।
    প্রভু বলে ওরে ধর ধর মৃত্যুঞ্জয়।।
    মৃত্যুঞ্জয় ব্যস্ত হয়ে ধরে তার হাতে।
    বসাইল আনিয়া প্রভুর সম্মুখেতে।।
    দ্বিমুহূর্ত মূর্ছাপ্রাপ্ত ছিল হীরামন।
    রাম রাম বলে পরে মেলিল লোচন।।
    আত্মহারা হীরামন বাক্য নাহি মুখে।
    থেকে থেকে ক্ষণে উঠে চমকে চমকে।।
    প্রহরেক জড় প্রায় রহিল বসিয়া।
    থেকে থেকে মাঝে মাঝে উঠে শিহরিয়া।।
    নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ক্রমে হয়ে এল বন্ধ।
    মুখে না নিঃস্বরে বাণী কণ্ঠ হল রুদ্ধ।।
    এমন সময় মহাপ্রভু ডেকে কয়।
    ফিরে পল হীরে ওরে ধর মৃত্যুঞ্জয়।।
    মৃত্যুঞ্জয় গিয়া হীরামনে স্পর্শ করে।
    অস্থিরতা ঘুচে সাধু শান্ত হইল পরে।।
    মৃত্যুঞ্জয় কর্ণেতে শুনায় হরিনাম।
    হীরামন বলে কোথা পূর্ণব্রহ্ম রাম।।
    হীরামন বলে প্রভু মোরে দেখা দাও
    আরবার রামরূপ আমারে দেখাও।।
    প্রভু কহে কহি তোরে ওরে হীরামন।
    যদি কেহ কারু কিছু করে দরশন।।
    অস্মভব দেখে জ্ঞানী প্রকাশ না করে।
    শুনিলে সন্দেহ হয় লোকের অন্তরে।।
    শৈল মাঝে অগ্নি থাকে জানে সর্বলোক
    ঠক্নি লোহঘাতে জ্বলে উঠে সে পাবক।।
    তেমনি পাথর মাঝে রহিয়াছে অগ্নি।
    দেখিতে পাইবা পুনঃ যদি থাকে ঠুক্নি।।
    কিন্তু সে আগুন যদি জ্বালাইয়া লয়।
    শীলাকাষ্ঠ পুড়ে যায় কিছু নাহি রয়।।
    তুমি আছ আমি আছি তাতে কিবা ভয়।
    মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে যাও নিজালয়।।
    প্রভু বাক্যে হীরামন গৃহেতে চলিল।
    তারক কহিছে সাধু হরি হরি বল।।

    হীরামনের জ্বর ও জ্ঞাতি কর্তৃক ত্যাগ ও পুনর্জীবন।
    পয়ার
    রাম রূপ হেরি হল জীবন চঞ্চল।
    সে হইতে সংসারের কার্য ছাড়ি দিল।।
    কৃষাণী কার্যেতে ছিল পারক অত্যন্ত।
    কার্যেতে প্রবর্ত হলে নাহি দিত ক্ষান্ত।।
    স্বাভাবিক যাহারা করেন কৃষিকার্য।
    তাহা হতে দশগুণ, না ছিল অধৈর্য।।
    এই মত কার্য করিতেন মহাভাগ।
    এবে সংসারের কার্য করিলেন ত্যাগ।।
    জ্ঞাতি বন্ধু সব লোকে ভাবে মনে মনে।
    এ বেটা সংসার কার্য তেয়াগিল কেনে।।
    কেহ বলে যে দিন ঠাকুর দেখতে যায়।
    সেই দিন পাগল করেছে মৃত্যুঞ্জয়।।
    মৃত্যুঞ্জয় বাড়ীতে ঠাকুর এসেছিল।
    মৃত্যুঞ্জয় গৃহিণী ঠাকুরে সাজাইল।।
    মৃত্যুঞ্জয় এনেছিল শতদল পদ্ম।
    সেই ফুলে পূজে ঠাকুরের পাদপদ্ম।।
    পরমা বৈষ্ণবী সেই মৃত্যুঞ্জয় মাতা।
    ঠাকুরে পূজিয়াছিল শুনিয়াছি কথা।।
    সে ঠাকুরে দেখিবারে গিয়েছিল হীরে।
    মূর্ছা হয়ে পড়েছিল দেখে সে ঠাকুরে।।
    মৃত্যুঞ্জয় ওর কর্ণে দিয়েছিল হরিবোল
    সেই হতে হীরামন হয়েছে পাগল।।
    রাউৎখামার গ্রামে মেতেছে সকল।
    তারা সবে প্রেমে মেতে বলে হরিবোল।।
    কেহ বলে দুর্লভ মধুর হরিবোল।
    তবে কেন হীরামন হয়েছে পাগল।।
    সবে মিলি দেখিয়াছি ঠাকুরের রূপ।
    আমরা জানি যে তিনি স্বয়ং স্বরূপ।।
    সব হরিবোলা করে সংসারের কার্য।
    হীরামন কি জন্য করিল কার্য ত্যাজ্য।।
    কেহ ভাল কেহ মন্দ করে কানাকানি।
    যাহার যেমন মন সে কহে তেমনি।।
    কেহ বলে ও দেখেছে প্রভু হরিচাঁদ।
    স্বয়ং দর্শনে হল কৃষ্ণ প্রেমোন্মাদ।।
    হীরামন কার্য ত্যাগী দেখিয়া বিশেষ।
    ঠাকুরের প্রতি কারু জন্মিল বিদ্বেষ।।
    শ্রীচৈতন্য বালা হীরামনের সে খুড়া।
    ঠাকুরের প্রতি দ্বেষ করে সেই বুড়া।।
    শ্রীঅক্রুরচন্দ্র বালা শ্রীগুরুচরণ।
    কনিষ্ঠ শ্রীকোটিশ্বর অতি সুলক্ষণ।।
    ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত তিন সহোদর।
    তাহারা বলেন প্রভু স্বয়ং অবতার।।
    প্রভুর সঙ্গেতে তারা ভ্রমে সর্বক্ষণ।
    প্রভুর সঙ্গেতে করেন নাম সংকীর্তন।।
    ভক্তি বাধ্য মহাপ্রভু সেই বাড়ী যান।
    তাহারা বলেন ইনি স্বয়ং ভগবান।।
    মনে নাহি কোন দ্বেষ হীরামন বলে।
    তারা বলে বংশের ভাজন এই ছেলে।।
    রত্নগর্ভে জন্মিয়াছে মহারাজ পুত্র।
    এ হইতে বালাবংশ হইবে পবিত্র।।
    কার্যত্যাগী হীরামন করে হরিনাম।
    কতদিনে দৈবযোগে হইল ব্যারাম।।
    জ্বর হয়ে ছমাস পর্যন্ত হল ভোগ।
    উদরে হইল প্লীহা যকৃতাদি রোগ।।
    অদ্য মরে কল্য মরে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
    এই রোগে ক্রমে ক্রমে হল মৃতবত।।
    একদিন ডেকে বলে শ্রীচৈতন্য বালা।
    পাগলারে লয়ে তোরা ওঢ়াকাঁদি ফেলা।।
    রোগে মরে তবু বেটা ঔষধ না খায়।
    আমাদের কথা নাহি শুনে দুরাশয়।।
    আমাদের সংসারে কার্য নাহি করে।
    আমরা কেহতনয় ও কার বাড়ী মরে।।
    অসার সংসার বলে কেহ কারু নয়।
    যত বেটা মতুয়ারা এই কথা কয়।।
    মতুয়া হইল এরা কি ধন পাইয়া।
    বেদবিধি না মানে ফিরিছে লাফাইয়া।।
    কেবা কার, কেবা কার, কার জন্য কাঁদে।
    আত্ম স্বার্থ সমর্পণ বাবা হরিচাঁদে।।
    হরি বলে দিন রাতি করে সোরা সোরি।
    বাবা যদি হরিচাঁদ যাক সেই বাড়ী।
    খুড়া জেঠা ভাই বন্ধু কেহ কারু নয়।
    দেখি ওর কোন বাবা এখানে কুলায়।।
    হয় নেও ওঢ়াকাঁদি নয় মল্লকাঁদি।
    ও মরুক মতোরা করুক কাঁদাকাঁদি।।
    হরিচাঁদ মৃত্যুঞ্জয় দোহে নাকি ব্রহ্ম।
    এ মরা বাঁচাতে পারে তবে জানি মর্ম।।
    মরা গরু বাঁচাইয়া জহুরি প্রকাশ।
    এই মরা বাঁচায়ে লউক হরিদাস।।
    শুনিয়া এতেক বাণী কেহ কেহ কয়।
    ভাল কথা বলেছ হে বালা মহাশয়।।
    উহার কারণে মায়া করা নিরর্থক।
    গতপ্রাণী জন্যে আর করিও না শোক।।
    ডুবু তরী যদি হরিচাঁদ করে রক্ষা।
    কেমন ঠাকুর তবে বুঝিব পরীক্ষা।।
    তিলক মণ্ডল ভৃত্য সেই ডেকে বলে।
    পাগলারে ওঢ়াকাঁদি আমি আসি ফেলে।।
    এতবলি তিলক সে সাজাইল তরী।
    হীরামনে লয়ে গেল ওঢ়াকাঁদি বাড়ী।।
    প্রভুর নিকটে গিয়া উপনীত হল।
    তাহা দেখি প্রভু গিয়া গৃহে লুকাইল।।
    সেইখানে তিলক সে কাহারে না দেখে।
    হীরামনে তুলে এক গাছতলা রাখে।।
    ভজন পোদ্দার বলে বাড়ী তোর কোথা।
    মরা শব ফেলাইয়া যাস কেন হেথা।।
    তিলক মণ্ডল শুনি উঠিল নৌকায়
    ত্বরা করি খুলে তরী পালাইল ভয়।।
    ভজন বলেছে কোথা যাস কুলাঙ্গার।
    সবে কয় কোথা যায় শীঘ্র ওরে ধর।।
    বড় কর্তা কৃষ্ণদাস অগ্রজ প্রভুর।
    বলে ওরে ধরে আন যায় কতদূর।।
    এত বলি বড়কর্তা ধাবমান হয়।
    মহাপ্রভু এসে তথা অগ্রজে শান্তায়।।
    প্রভু বলে দেখ দাদা হয়ে আগুয়ান।
    একেবারে মরেছে কি? আছে ওর প্রাণ।।
    বড়কর্তা দেখে গিয়া নাকে শ্বাস নাই।
    কণ্ঠদেশে বামপার্শ্বে লড়ে দেখে তাই।।
    মহাপ্রভু এসে চটকার গাছতলা।
    দেখে বলে এ দেখি সে হীরামন বালা।।
    বসিলেন হীরামনে রাখিয়া সম্মুখে।
    রহিলেন মহাপ্রভু উত্তরাভিমুখে।।
    প্রভু কহে দেখে হে পোদ্দার মহাশয়
    প্রাণ আছে একেবারে মরা শব নয়।।
    বড়কর্তা বলে হরি ব্রজা মরে গেছে।
    মরা যে বাঁচাতে সে তনাই বেঁচে।।
    মরা গরু বাঁচাইল তোর সঙ্গী ব্রজা।
    পার যদি হও মরা বাঁচাবার ওঝা।।
    রাউৎখামারের লোক মরা ফেলে যায়।
    বালা গুষ্ঠি এত বৃদ্ধি পেয়েছে কোথায়।।
    প্রভু হরিচাঁদ তবে কহেন অগ্রজে।
    এরা যেন মরা ফেলে গেছে কি গরজে।।
    একরাত্রে নির্জনেতে বলি হরি হরি।
    এ রোগী চিকিৎসা আমি করিবারে পারি।।
    কৃষ্ণদাস বলে কর পার যদি ভাই।
    রাউৎখামার লোকের কোন দোষ নাই।।
    যাও তথা, খাও তথা, তথা কর লভ্য।
    তাহারা তোমার বাটী আনে কত দ্রব্য।।
    সেই গ্রামে হরিবোলা মতুয়ার দল।
    ভকত বাঁচাও ভাই ভক্তবৎসল।।
    কিন্তু যদি এ মরা বাঁচাতে নার ভাই।
    বালার বালাহী যাবে আর রক্ষা নাই।।
    মাতুব্বর চতে বালার এত কি আস্পর্ধা।
    কৃষ্ণদাস নাম বুঝি শোনে নাই গাধা।।
    কার মরা এনে ফেলাইল কার বাড়ী।
    বাঁচাতে পারত যশ হবে দেশ ভরি।।
    যদি বাঁচাতে না পার বলে হরি হরি।
    বালাদের নামে আমি করব ফৌজদারি।।
    প্রভু কহে বড়কর্তা দেখ বিদ্যমান।
    একেবারে মরে নাই দেহে আছে প্রাণ।।
    নাসাগ্রে ঈষৎমাত্র বহিতেছে শ্বাস।
    বাঁচিলে বাঁচিতে পারে হতেছে বিশ্বাস।।
    কথোপকথনে হল দিবা অবসান।
    হেনকালে লক্ষ্মীমাতা এল সেই স্থান।।
    মাতা বলে তবে কেন করেছ বিলম্ব
    নিশ্চয় চৈতন্য বালা করেছে এ কর্ম।।
    আপনার ঠাকুরালী তথায় বেড়েছে।
    পরীক্ষা করার জন্য ইহা করে গেছে।।
    প্রভু বলে যাহা হউক সবে যাহ ঘরে।
    আমি দেখি চেষ্টা করি ঈশ্বর কি করে।।
    সবে গেল প্রভু মাত্র রহিল একেলা।
    মরা হীরামন লয়ে সেই গাছতলা।।
    যামিনীর শেষ যামে সঞ্চারিল প্রাণ
    নীরোগ শরীর হল পূর্ণ শক্তিমান।।
    উঠিয়া চরণ ধরি বলে ওহে নাথ।
    এ অধমে কৃপা করি কর আত্মসাৎ।।
    যেদিন তোমার দেখা পাই মল্লকাঁদি।
    পিঞ্জিরা রাউৎখামার পাখি ওঢ়াকাঁদি।।
    ঠাকুর বলেন, আমি জানি তা সকল।
    সে কথায় কাজ নাই হরি হরি বল।।
    এমত আমার কর্ম রোগ ভোগ দিয়ে।
    সংসার হইতে তোরে নিলাম উঠায়ে।।
    তোর প্রতি আর কারু থাকিল না দাবি।
    মায়াতীত হলি, এবে হরিগুণ গাবি।।
    হেথা হতে লুকাইয়া যারে বেদভিটে।
    তথা হতে যাস কল্য অন্য নায় উঠে।।
    এখানে থাকিলে তুই জনরব হবে।
    প্রতিষ্ঠা বাড়িলে মোরে কেহ না ছাড়িবে।।
    যুগে যুগে বাঁধা আছি আমি তোর ঠাই।
    তোমা আমা একদেহ ভিন্ন ভেদ নাই।।
    সংসারের মাঝে তুই কারু দায়ী নাই।
    একমাত্র দায়ী রৈলি রমণীর ঠাই।।
    যাও বাছা দিন কত করগে সংসার।
    শোধ দিয়া এস গিয়া রমণীর ধার।।
    জন্মিলে একটি পুত্র তাহার গর্ভেতে।
    রমণীর ধার তবে পার শোধ হতে।।
    গোলোক নাথের বাক্য শুনে শান্ত হল।
    হীরামন প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
    সভক্তি অন্তরে যেবা করেন শ্রবণ।
    ধনে বংশে বৃদ্ধি অন্তে গোলোকে গমন।।
    হীরামন দেহে পুনর্জীবন সঞ্চার।
    হরি বল কহিছে তারক সরকার।।

    হীরামনের স্তব ও পুনঃ রামরূপ দর্শন।
    পয়ার
    পুনর্বার লুটাইয়া শ্রীনাথ চরণে।
    স্তব করে অশ্রুধারা বহে দ্বিনয়নে।।
    যে রূপে আমার মন করিলে হরণ।
    আর বার সেই রূপ করহ ধারণ।।

    লঘু ত্রিপদী
    তব তত্ত্ব                    জানে মাত্র       দেব শূলপাণি।
    আমি অজ্ঞ        অসৌভাগ্য      কিছুই না জানি।।
    তুমি হর্তা         তুমি কর্তা        সৃষ্টি অধিকারী।
    তুমি আদি        গুণনিধি                    ক্ষীরোদবিহারী।।
    ক্ষীরোদেতে      যে কালেতে      ছিলেহে শয়নে।
    দেবগণ           উচাটন         তোমার কারণে।।
    দেব সব          করে স্তব          রাবণের ভয়।
    লঙ্কানাথ         শঙ্কাতাত        করহ অভয়।।
    অবনীতে         অযোধ্যাতে      রামরূপ ধরে।
    জনমিলে         ক্ষত্রকুলে         দশরথ ঘরে।।
    সূর্যবংশে         চারি অংশে      শ্যামল সুন্দর।
    দূর্বাদল           নীলোৎপল       নব জলধর।।
    চারুপদ           কোকনদ         জিনি শতদল।
    মীন অক্ষ         রোম সূক্ষ্ম        ভ্রুযুগ শ্যামল।।
    দেহগতি          সীতাপতি         ভকত বৎসল।
    ত্যজিবাস         পীতবাস          পিন্ধহে বল্কল।।
    রক্তকর           ধনুঃশর                   শোভাকরে করে।
    রিপু বংশ         কর ধ্বংস       গিয়া লঙ্কাপুরে।।
    নাম বলে         ভাসে শিলে      সাগর ভিতর।
    তব গুণে          বাধ্য বনে         ভল্লুক বানর।।
    পশুগণ            অনুক্ষণ           রামগুণ গায়।
    কি গুণেতে       সাথে সাথে      কাঁদিয়া বেড়ায়।।
    কিমাশ্চার্য্য       দয়া ধৈর্য         দেখালে সকলে।
    মিতা বলে        গিয়াছিলে      চণ্ডালের কোলে।।
    লে মিত্র        সুপবিত্র           সুগ্রীবে করিলে।
    ঋষ্যমুখে         এ দাসকে       প্রেমভক্তি দিলে।।
    যে রূপেতে       প্রথমেতে         ভুলাইলে মন।
    সেই রূপে         মন সঁপে         পবন নন্দন।।
    বায়ু ছেলে        জিজ্ঞাসিলে       কিবা তব নাম।
    তার স্থলে        বলেছিলে         মম নাম রাম।।
    বীজ বর্ণ          শুনি কর্ণ          সদ্য কর্ণ দিয়ে
    রামনাম          গুণধাম          দিলে শুনাইয়ে।।
    পুনঃছলে         জিজ্ঞাসিলে     কি নাম তোমার।
    গুণধাম           সেই নাম         বল আরবার।।
    পুনর্বার           সেই নাম         বাম কর্ণ মূলে।
    যত্ন করি          রাবণারি        উচ্চৈঃস্বরে বলে।।
    যেই রূপ          নামরূপ          শুনালে দাসেরে।
    সে রূপেতে       মনোরথে         উর দয়া করে।।
    তুমি রাম         ভৃগুরাম           বামনাবতার।
    দ্বাপরেতে         মথুরাতে          জনম তোমার।।
    নিশিকালে        গোপকুলে         গেলে নন্দ ঘরে।
    বাল্য খেলা       গোষ্ঠলীলা        ব্রজরাজ পুরে।।
    মথুরায়           দ্বারকায়           লীলা চমৎকার।
    ব্রহ্মদেশে         হলে শেষে       বুদ্ধ অবতার।।
    কলিকালে        জনমিলে         শচীগর্ভমাঝে।
    জীব দায়         এ ধরায়         ভক্তভাব সেজে।।
    সার্বভৌম         মনোরম          দেখে ষড়ভুজ।
    রামরূপ           সুধাকূপ                  দেখিলে সে দ্বিজ।।
    শ্রীমুরারী          বিশ্বহরি                    রামরূপ দেখে।
    সেই রূপ          সে স্বরূপ       দেখালে দাসেকে।।
    এবে লীলে       প্রকাশিলে        বড়ই অদ্ভুত।
    শান্ত দান্ত         কৃপাবন্ত                    যশোমন্ত সুত।।
    আমি অতি       মুঢ়মতি                    মরিয়াছিলাম।
    ভগবান           প্রাণদান                    এবে পাইলাম।।
    কোথা যাব       কার হ        আর কেহ নাই
    এ বিপদে         ও শ্রীপদে        দাসে দেহ ঠাই।।
    রোগযুক্ত         লে মুক্ত       পাশ মুক্ত কর।
    বিশ্বরূপ           অপরূপ           রামরূপ ধর।।
    যে রূপেতে       প্রথমেতে        মোহিলে আমায়।
    মল্লকাঁদি          কাঁদি কাঁদি      দেখিনু তোমায়।।
    স্তব শুনে          ততক্ষণে         রামরূপ হল।
    ধনু ধরি’          জটাধারী          অমনি দাঁড়াল।
    সৌম তনু         রম্যজানু          করি দরশন।
    স্থির নেত্র         বায়ু পুত্র          হইল তখন।।
    নবঘন            রূপঘন            নিরীক্ষণ করে।
    চাতকিনী         কুতুকিনী         যথা ঘন হেরে।।
    রাম হয়ে        দেখা দিয়ে       পুনঃ লুকাইলে।
    বতাহত                    বৃক্ষবৎ            মূর্ছিত হইল।।
    দয়া করি         করে ধরি        হীরামনে তোলে।
    বলে হীরে        কেন ফিরে       ভাস অশ্রুজলে।।
    আমি তোর       তুই মোর         কিছু নাহি আন।
    তবে কেন        লি হেন        তুই মোর প্রাণ।।
    সঙ্গোপনে        হীরামনে         প্রভু কন বাণী।
    বাছাধন                    যা এখন        থাকিতে যামিনী।।
    এ তারক         অপারক          পীতে এই সুধা।
    ভক্তলোকে       পিয় সুখে        যাবে ভব ক্ষুধা।।

    হীরামনের নিজালয়ে গমন।
    দীর্ঘ ত্রিপদী
    ঠাকুরের বাণী শুনি        নৈষ্ঠিকের শিরোমণি
    বীররাগে করি বীরদাপ।
    রাম রাম রাম বলে        ভেসেছে নয়ন জলে
    অগাধ সলিলে দিল ঝাঁপ।।
    যবে পদ দিল জলে       মৃত্তিকা ঠেকিল তলে
    পদতরী হল ভাসমান।
    বিমানে উড়িতে পারে     ডুবেনা অগাধ নীরে
    পূর্বরূপ হইল শক্তিমান।।
    পূর্বে বেদভিটা যেটা       নামজাদে আম ভিটা
    তারাচাঁদ মালু দুটি ভাই।
    প্রভুদের নিজ জ্ঞাতি       সেখানে করে বসতি
    ভাই ভাই সম্পর্ক সবাই।।
    জলে হল ভাসমান       মনে করে অনুমান
    জাহিরীতে নাহি প্রয়োজন।
    জপ জপ শব্দ করে        চলেছে অগাধ নীরে
    লোক এলে করে সন্তরণ।।
    কভু পদতল জল                    কভু হয় কটি জল
    কখন বা হয় জানু জল।
    জলে চলে মহাভাগ       বুকে ছিল জলদাগ
    জন্মদেশে বিখ্যাত সকল।।
    হরে রাম হরে রাম        জয় রাম সীতা রাম
    অবিরাম গায় নাম গীত।
    আমভিটা সেই বাটী       প্রভু জ্ঞাতি ভাই দুটি
    সে বাটীতে হল উপনীত।।
    ব্রাহ্ম মুহূর্ত সময়                    তারাচাঁদ বের হয়
    দাদা বলি মালুকে ডাকিল।
    জপ জপ করি নীরে       হরিনাম জপ করে
    বাড়ীপরে কে যেন উঠিল।।
    হীরামনে গিয়া ধরে       দুভাই সুধায় তারে
    বলে কেরে তুই মহাবল।
    বল দেখি মন খুলে        আজ এই রাত্রিকালে
    কি কারণে আলি তাহা বল।।
    হীরামনে কহে কথা       কি কব মম বারতা
    শুন খুল্লতাত তারাচাঁদ।
    অঞ্জনা আমার মাতা       বানর কিশোরী পিতা
    প্রাণদাতা বাবা হরিচাঁদ।।
    রামদাস বায়ু পুত্র          মহারাজ বালা ক্ষেত্র
    অনুচর সুগ্রীব রাজার।
    হিয়া নাহি হয় ধৈর্য        জ্ঞান নাহি অন্তর্বাহ্য
    ত্যাজ্য আর্য্য চৈতন্য বালার।।
    কি বলিতে কিবা বলি     বুঝিতে নারি সকলি
    না জানি জলে কি স্থলে যাই।
    হরিচাঁদ রূপরসে দেহ      তরী ডুবে ভাসে
    ভাটী খেলি আবার উজাই।।
    হরিচাঁদ ইচ্ছাময়           সকলি তাঁর ইচ্ছায়
    না জানি কি ইচ্ছা তাঁর মনে।
    সেই ভ্রমাইলে ভ্রমি        দেখিতে জনম ভূমি
    স্ব-নৌকায় চলেছি দক্ষিণে।।
    ঘাসকাটা নায় চড়ি        যাব বালাদের বাড়ী
    দিন কত আসা যাওয়া সার।
    ইচ্ছিল শ্রীহরিচাঁদ          করিতে পতিত আবাদ
    বালাবাড়ী, বাড়ীও খামার।।
    তারাচাঁদ মালুরাম         বলে বাছা চিনিলাম
    তোরে লয়ে হল হুড়াহুড়ি।
    তুই ছিলি মরা শব        জুটিয়া বালারা সব
    তোরে ফেলে যায় অই বাড়ী।।
    শব ছিলি এই রাত্রে        প্রাণপ্রাপ্ত এইমাত্রে
    এ মাহাত্ম্য সে মেজ দাদার।
    প্রতিষ্ঠা বাড়িবে বলে      তোরে ভাসায়েছে জলে
    মনে তোর রাম অবতার।
    হরিচাঁদ রূপনীরে                    বাছাধন সে পাথারে
    একেবারে দিয়াছিল ঝাঁপ।
    যাহা কহ তাহা ঠিক       শুনিতে যেন বিদিক
    রামলীলা ভাবের প্রলাপ।।
    দন্ডেক নিশি থাকিতে     হীরামন তথা হতে
    গৃহে যায় এক নায় উঠে।
    মল্লকাঁদি গ্রামে এসে       খালকূলে নেমে শেষে
    রাউৎখামার যায় হেটে।।
    হীরামনে দরশনে          সকলে আশ্চর্যগণে
    হইল হৃদয় প্রফুল্লিত।
    রামাগণে বামাস্বরে        হুলুধ্বনি সবে করে
    জ্ঞাতি বন্ধু সবে পুলকিত।।
    হীরামন প্রাণ পান         ব্যাধিমুক্ত দেশে যান
    শ্রীহরি চরিত্র সুধাধার।
    এ দুস্তার ভবার্ণবে          হরি-তরী কর সবে
    কহে দীন রায় সরকার।।

    হীরামনের দেশাগমনে সকলের শ্রীহরির প্রতি ঐশিভাব প্রকাশ ও হীরামনের পুত্রের জন্ম ও মৃত্যু।
    পয়ার
    হীরামন দরশনে শ্রীচৈতন্য বালা।
    কহে হরি ঠাকুরের কি আশ্চর্য লীলা।।
    এ কভু সামান্য নহে পুরুষ প্রধান
    এখনে আমার যে হতেছে ব্রহ্মজ্ঞান।।
    নলিয়া জামালপুরে হয়েছিল বার।
    সেই হরি ওঢ়াকাঁদী হল অবতার।।
    নলিয়া, যখন বার হইল বিখ্যাত।
    মুখের কথায় কত ব্যাধি সেরে যেত।।
    তদধিক রূপে এই হরি বর্তমান।
    মরা গরু বাঁচে মরা দেহে পায় প্রাণ।।
    ইতিপূর্বে বার হল সফলাডাঙ্গায়।
    সফলাডাঙ্গার বার হরিচাঁদ পায়।।
    হরি এসে হরিচাঁদে আবির্ভূত হল।
    মরা হীরামনে হরি তাই সে বাঁচাল।।
    নলিয়া যে বার মোর মনে হেন লয়।
    সেই বার এসেছিল সফলাডাঙ্গায়।।
    তারপর সেই বার হরিচাঁদ পায়।
    বেশী দিন থাকে হেন বিশ্বাস না হয়।।
    মৃদুভাষে হেসে হেসে হীরামন বলে।
    চিনেও চিনিতে নারে দূরদৃষ্টি হলে।।
    দেশে এসে হীরামন গৃহকর্ম করে।
    এক ছেলে হল তার কিছুদিন পরে।।
    প্রভু আজ্ঞা নারী ঋণ শোধ হলে পরে।
    ত্যাজিয়া সকল কার্য হরিনাম করে।।
    সবে বলে এ কেন বাঁচিয়া এল দেশে।
    মরিলেই ভাল হত এই সর্বনেশে।।
    দিবসেতে ঘরে থাকে দ্বার বন্ধ করি।
    ঝুঁকি ঝুঁকি গায় গুণ বলে হরি হরি।।
    নিশাভাগে থাকে যোগে গিয়া সে শ্মশানে।
    কখনে কি করে তাহা কেহ নাহি জানে।।
    হিরার রমণী যত মেয়েদিকে কয়।
    তোমরা না জান উনি রাত্রে কোথা রয়।।
    কোথা যায় নিশিতে না থাকে মোর কাছে।
    কার সঙ্গে যেন ওর গুপ্ত প্রেম আছে।।
    সব নারী বলে হীরামনের নারীকে।
    তুই কেন দেখিস না কোথা গিয়া থাকে।।
    যখন উঠিয়া যায় টের যদি পাস।
    অলক্ষিতে তুই ওর সাথে সাথে যাস।।
    তাই শুনি সেই ধনি জাগরীতা রয়।
    যখনে সে হীরামন শ্মশানেতে যায়।।
    লুকাইয়া পিছে পিছে সঙ্গে সঙ্গে গেল।
    দেখিলেন পতি গিয়া শ্মশানে বসিল।।
    গৃহে এসে সেই নারী সকলে বলেছে।
    শ্মশানেতে থাকে ওরে ভূতে পাইয়াছে।।
    শেষ রাত্রে হীরা এসে ডাকে ঘনে ঘনে।
    তার নারী জাগরীতা ডাক নাহি শুনে।।
    ঘুচাইতে দ্বারে হীরামন মারে লাথি।
    তবু দ্বার ছাড়িল না সেই দুষ্টামতি।।
    হীরামন শান্ত মন রল বাহিরিতে।
    সে ধনির ছিল এক বালক কোলেতে।।
    সকালে হইল ব্যাধি দিন গত হয়।
    শ্বাসবদ্ধ মৃত্যু হল সন্ধ্যার সময়।।
    সবে বলে হীরামনে পাগলামি কর।
    মরিয়াছে পুত্র তব পার যদি সার।।
    নহে এই ছেলে লয়ে ওঢ়াকাঁদী যাও।
    যে মতে বাঁচিলে তুমি সে মতে বাঁচাও।।
    সে কথা শুনিয়া হীরামন গৃহে গেল।
    গৃহদ্বার বন্ধ করি যোগেতে বসিল।।
    কেমনে সারিব পুত্র মনেতে ভেবেছে।
    যোগবলে প্রাণ দিব বাঁচে কিনা বাঁচে।।
    এত বলি হরি বলি প্রহরেক পরে।
    ছেলের জীবন দিতে মাথা চেপে ধরে।।
    হীরামনের রমণী কহিছে তাহারে
    মরা ছেলে রাখ কেন ফেলে এস ওরে।।
    মুখ কাছে মুখ দিয়া দেহে দিবে প্রাণ।
    বালকের মুখ যবে করিছে ব্যাদন।।
    তাহা দেখি সেই ধনি করিছে চিৎকার।
    মরা খায় মরা খায় একি ব্যবহার।।
    আমাদের উহারে যে পাইয়াছে ভূতে।
    মরা ছেলে হা করিয়া লেগেছিল খেতে।
    এতেক শুনিয়া সাধুর ক্রোধ উপজিল।
    বালক ত্যাজিয়া তবে বাহিরে আসিল।।
    বালকে লইয়া সবে ফেলাইয়া দিল।
    ক্রোধেতে চৈতন্যবালা কহিতে লাগিল।।
    আমরা ভেবেছি সবে বেঁচে এল হীরে।
    হরিচাঁদ বাঁচায়েছে হরিনাম জোরে।।
    তাহা কভু নহে ওরে ভূতে পাইয়াছে।
    নিশা কিংবা ব্রহ্মদৈত্য জীবন দিয়াছে।
    নাহি করে গৃহকার্য মানুষ এ নয়।
    মানুষ হইলে গৃহকার্যে মন লয়।।
    হীরার যে রীতিনীতি সব গেল বোঝা।
    ভূত ছাড়াইতে আন খণ্ডজ্ঞানী ওঝা।।
    হরিপ্রেম বিকারেতে হীরামন রোগী।
    কবি কহে ভব ব্যস্ত এ রোগের লাগি।

    গোস্বামী হীরামনের প্রতি কালাচাঁদ ফকিরের অত্যাচারের বিবরণ।
    পয়ার
    সাহাপুর মধ্যেতে আঁধারকোটা গ্রাম।
    সেখানে ফকির আছে কালাচাঁদ নাম।।
    সে ফকির পরিচয় কহিব এখন।
    নাম কালাচাঁদ নমঃশূদ্রের নন্দন।।
    বাওয়াল করিত গিয়া বাওয়ালীর সনে।
    শিক্ষা তার মুসলমান ফকিরের স্থানে।।
    লক্ষ্মীকালা ফকির সে ব্রাহ্মণের ছেলে।
    বাদায় থাকিত সেও ফকিরামী নিয়ে।।
    তাহার নিকটে শিক্ষা করে কালাচাঁদ।
    ফকিরামী শিখে বাদা করেন আবাদ।।
    আদি যে ফকির সেও মুসলমান ছিল।
    সে ফকির হইতে ইহারা শিক্ষা নিল।।
    চকে গিয়া দিত গাজী কালুর দোহাই।
    চকে চকে বনে বনে নামিত সবাই।।
    কালীর দোহাই দিত মনসা পূজিত।
    বরকোত বিবি, লক্ষ্মীকালাকে ডাকিত।।
    মাদার মুরসিদ বলি ছাড়িত জিগীর
    খোদার ফকির মুই আল্লাহ ফকির।।
    আল্লা আলী হজরত আর লক্ষ্মীকালা।
    হিন্দু ছেলে দিত গলে তছমীর মালা।।
    হেলেল্লা হেলেল্লা বলে হইত আকুল।
    হাতে ছিল লক্ষ্মীকালা দত্ত এক রুল।।
    চকে গিয়া লোকে সুন্দরী কাঠ কাটিত।
    রুল দিয়া গাছে এক আঘাত করিত।।
    সেই আঘাতের শব্দ যতদূরে যেত।
    তাহার মধ্যেতে সব সুন্দরী ছেদিত।।
    দূরে গিয়া একজনে শব্দ শুনিত। (একেকজনে)
    চারিদিকে চারি জন দাঁড়ায়ে রহিত।।
    যতদূর শব্দ করি উঠিত সে রুল।
    তাহার মধ্যেতে নাহি থাকিত শার্দূল।।
    এই ধর্ম ছিল তার লোকমুখে শুনি।
    হিন্দুধর্ম কিয়দংশ সকল যাবনি।।
    শুকর কচ্ছপ নাহি করিত ভোজন।
    মেষ অজা পেজ রসুন কুকুড়া ভক্ষণ।।
    কচ্ছপ বরাহ মাংস বলিত হারাম।
    রুলের আঘাতে করে রোগের আরাম।।
    জ্ঞাতিগণে ডেকে বলে শ্রীচৈতন্য বালা।
    এই ফকিরকে এনে সার এ পাগলা।।
    লোক পাঠাইয়া সেই ফকির আনিল।
    লোক সঙ্গে করিয়া সে ফকির আসিল।।
    বাটীর উপরে যবে উঠিল ফকির
    হক আল্লা বলিয়া সে ছাড়িল জিগীর।।
    যথা ছিল হীরামন সেইখানে যায়।
    রুলখানা ধরি হীরামনকে দেখায়।।
    এক এক বার রুল ঊর্ধ্বেতে ফেলায়।
    ফেলাইয়া শূন্য হতে পুনঃ ধরি লয়।।
    লোফা লোফী করে রুল হীরামন আগে।
    দর্প করি হীরামনে কহে রাগে রাগে।।
    হারে রে পাগলা কেন কর পাগলাই।
    তোরে সারিবারে এল লক্ষ্মীকালা সাঁই।
    রুলাঘাতে করিব যে পাগলাই দূর।
    দেখিব কেমন তুই পাইলি ঠাকুর।।
    মম বাক্য না রাখিস করিস বাড়াবাড়ি।
    পাগলামি করিলে মারিব রুলের বাড়ী।।
    সারিবি কি না সারিবি বলরে এখন।
    শুনিবি কি না শুনিবি আমার বচন।।
    দৃকপাত তাতে নাহি করে হীরামন।
    ঝুঁকে ঝুঁকে করে হরিনাম সংকীর্তন।।
    প্রেমোন্মত্ত হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।
    ফকিরের পানে হীরে ফিরে ফিরে চায়।।
    ফকির কহিছে তুই আয় হীরামন।
    বাহিরে আসিয়া বাছা লওরে আসন।।
    তাহা শুনি হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।
    আসন পাতিয়া এসে বসিল তথায়।।
    ফকির তখন রুল হস্তেতে করিয়া।
    মাটিতে আঘাত করে হক আল্লা বলিয়া।।
    পুনঃ পুনঃ করে রুল মাটিতে আঘাত।
    হীরামন তাতে নাহি করে দৃষ্টিপাত।।
    ফকির বলেন তুই এসেছিস কেরে।
    হকের বাজারে মোরে পরিচয় দেরে।।
    কথা শুনি হীরামন চাহে একদৃষ্টে।
    ফকির রুলের বাড়ী মারে তার পৃষ্ঠে।।
    তাহাতেও হীরামন কিছুই না বলে।
    পুনশ্চঃ আঘাত করে বাহুসন্ধি স্থলে।
    তাহাতেও হীরামন মৃদু মৃদু হাসে।
    স্থির হয়ে থাকে সাধু আসনেতে বসে।।
    ফকির সে হীরামনে ওঠ ওঠ কয়।
    অমনি সে হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।।
    ফকির যখনে বলে বয় বয় বয়।
    হীরামন আসনে বসেন সে সময়।।
    ফকির বলেন তবে সবারে ডাকিয়া।
    দেখ সবে গেছে এর পাগল সারিয়া।।
    যাহা কহি তাহা করে ব্যাধিমুক্ত হ
    বিদায় করহ মোরে বিপদ ঘুচিল।।
    তা শুনি চৈতন্য বালা ফকিরকে কয়।
    অদ্য থাক কল্য মোরা করিব বিদায়।।
    সংসারে কার্য হীরে করিবে যখন।
    তোমাকে বিদায় মোরা করিব তখন।।
    ফকির বলিল হীরে দণ্ডবৎ কর।
    আসন ছাড়িয়া বাছা উঠে যারে ঘরে।।
    পরদিন ফকিরকে বলে সব বালা।
    পাগল সেরেছে নাকি দেখ লক্ষ্মীকালা।।
    হীরামনে ডাক দিয়া আনহ প্রত্যক্ষে।
    আরোগ্য হয়েছে কিনা দেখহ পরীক্ষে।।
    হীরামনে ডাক দিয়া তখনে আনিল।
    আসন উপরে হীরামন বার দিল।।
    ফকির বলেছে বাছা কহ শুনি কথা।
    হেট মুণ্ডে রহে সাধু নাহি তুলে মাথা।।
    মাথা নাহি তুলে সাধু শ্বাস ছাড়ে দীর্ঘ।
    সবে বলে কই হল রোগের আরোগ্য।।
    রুষিয়া উঠিল তবে ফকির বর্বর।
    বড়শী পোড়ায়ে ধরে গ্রীবার উপর।।
    সারিয়া না সারিস করিস অপযশ।
    এরূপে যাতনা দেয় সপ্তম দিবস।।
    ফকিরকে কহে সবে যদি নাহি পার।
    তবে আর কেন মিছে পরিশ্রম কর।।
    ফকির একথা শুনি দড়ি পাকাইল।
    পিটমোড়া দিয়ে হীরামনকে বাঁধিল।।
    দল কাটা বেকী অস্ত্র পোড়ায়ে আগুনে
    গ্রীবার উপরে অম্নি ধরিল তখনে।।
    কিছু নাহি কহে হীরামন মৃদু হাসে।
    ফকির কহিছে ইহা সহে কই মানুষে।।
    ইহাকে সারিতে আমি হইলাম ত্যাক্ত।
    সারা বড় কষ্ট হল দৃষ্টি বড় শক্ত।।
    ইহাকে যে ধরেছে করিব তারে ধ্বংস।
    খাওয়াইতে হবে কাঁচা কচ্ছপের মাংস।।
    চেষ্টা করি কাঠা আন আর আন ঢালো।
    তারে খাওয়াইব এবে যে এসে ধরিল।।
    আনিয়া কচ্ছপ মাংস তাহাকে খাওয়ায়।
    হাত পেতে এনে মাংস গ্রাসে গ্রাসে খায়।।
    তবু হীরামন নাহি হয়েন সদ্ভাব।
    ফকির বলেছে এযে বড় অসম্ভব।।
    পুনঃ পৃষ্ঠমোড়া দিয়া দুবাহু বাঁধিল
    হস্তদ্বয় বাঁধি তার একত্র করিল।।
    সূক্ষ্ম তন্তু দিয়া তার বাঁধিল যে কর।
    দুই দুই আঙ্গুল করিয়া একতর।।
    ওঝা বলে ছেড়ে যাবি কিনা যাবি বোঝ।
    এত বলি আঙ্গুলির মধ্যে মারে গোঁজ।।
    খর্জূর কন্তক তবে চারিটি আনিয়া।
    নখতলে মাংস মধ্যে দিল বিঁধাইয়া।।
    ভাল রজ্জু দিয়া দিল পিঠ মোড়া বাঁধা।
    নাহি তাতে হা হা হুঁ হুঁ নাহি তাতে কাঁদা।।
    কেহ যদি বলে কেন এত কষ্ট কর।
    ওঝা বলে তোমরা তা বুঝিবারে নার।।
    হা হা হুঁ হুঁ নাহি করে পাও নাহি দিশে।
    যার দৃষ্টি তার কষ্ট ওর কষ্ট কিসে।।
    হীরাতে কি হীরা আছে সে হীরা এ নয়।
    তা হলে কি হারামের কাঁচা মাংস খায়।
    পুনর্বার বেকী অস্ত্র আগুনে পোড়ায়।
    পোড়া ঘা উপরে যবে ধরিবারে যায়।।
    এমন সময় উঠি হুঙ্কার করিয়া
    গাত্রমোড়া দিয়া দড়া ফেলিল ছিঁড়িয়া।।
    হাত ঝাড়া দিলে কাঁটা খসিয়া পড়িল।
    আঙ্গুল বন্ধন হাত মোড়ায়ে ছিঁড়িল।।
    স্বাভাবিক ভাবে যে শরীর তার ছিল।
    ভয়ঙ্কর দেহ তার দিগুণ বাড়িল।।
    বেকী অস্ত্র কাড়িয়া লইল অতি কোপে।
    আরক্তলোচন ক্রোধে ওষ্ঠাধর কাঁপে।।
    দাঁড়াইল হীরামন অপরূপ দেহ।
    যে দেখিল সে হইল জ্ঞান হারা মোহ।।
    ভূমিকম্প প্রায় বাড়ী লড়িয়া উঠিল।
    স্ত্রী পুরুষ নাহি হুশ ঢলিয়া পড়িল।।
    ছিল সে চৈতন্য বালা পীড়ির উপরে।
    তার দিকে ধেয়ে যায় বেকী অস্ত্র ধরে।।
    কতদিনে শাস্তিভোগী মনে বড় কোপ।
    ক্রোধভরে চৈতন্যরে মারে এক কোপ।।
    সে কোপ লাগিল গিয়া চালের উপরে
    চাল কাটি খাম্বা কাটি লাগে তার শিরে।।
    চেঁচায়ে চৈতন্য বলে রক্ষা করে কেবা।
    রাখরে রাখরে ওরে কালাচাঁদ বাবা।।
    কিয়দংশ কোপ লাগে চৈতন্যরে শিরে।
    রক্ত বয় মোহ যায় বাক্য নাহি সরে।।
    মোহপ্রাপ্ত ফকির সে চৈতন্য পাইল।
    বাবারে চাচারে বলে চেঁচায়ে দৌড়িল।।
    ফকিরের প্রতি পরে হইল ধাবমান।
    ফেলিয়া মারিল সেই বেকী অস্ত্র খান।।
    পাও কাটে ফকিরের বেকী অস্ত্র পশি।
    দৌড়িয়া ফকির গেল চারি পাঁচ রসি।।
    রুধিরের ধারা বহে পাও গেল কাটি।
    অজ্ঞান হইয়া ভূমে করে ছটফটি।।
    এল এল বলে ওঝা ওঠে আর পড়ে।
    কৃষকেরা বলে শালা দূর পাতি নেড়ে।।
    দলে দলে কৃষাণ রয়েছে মাঠ জুড়ে
    বসে বলে দূর দূর শালা পাতি নেড়ে।।
    ফকির তাড়ায়ে পড়ে গৃহেতে প্রস্থান।
    হীরামনে দেখে সবে ভয়ে কম্পমান।।
    সবে চিত ভয়ে ভিত ভূতবৎ রয়।
    সবে ভাবে যেন কবে প্রমাদ ঘটায়।।
    সাধুজনে বলে এযে কৃষ্ণ প্রেমোন্মাদ।
    এ জনার মন রহিয়াছে হরিচাঁদ।।
    অক্রুর গুরুচরণ আর কোটিশ্বর।
    তারা বলে এ মানুষ রুদ্র অবতার।।
    মন মানুষেতে মন হয়েছে ইহার।
    সামান্য মানুষ নহে উগ্র কলেবর।।
    যে ভাবে ঘটেছে সেই ভাবেতে থাকুক।
    কেহ কিছু না বলিও যা ইচ্ছা করুক।।
    বিনয় চৈতন্য বলে শুন ওরে বাপ।
    অপরাধী তোর ঠাই করিয়াছি পাপ।
    শুনি কথা হীরামন মৃদুভাষে বলে
    লাফিয়া প্রস্রাব কর কমলের দলে।।
    হারে কটা ভেক বেটা কর কট্ কট্।
    ষট্ পদে সুধাস্বাদে তুমি কর হট্।।
    এইভাবে কিছুদিন নিজালয় থেকে।
    চলিলেন হীরামন উত্তরাভিমুখে।।
    হরি হরি হরি হরি হরি হরি বল।
    হরি বলি রসনা শ্রীহরিধামে চল।।

    গোস্বামীর শ্রীধামে গমন।
    পয়ার
    সোজা সুজি চলিলেন উত্তার নয়নে।
    পথ কি বিপথ তাহা কিছুই না জানে।।
    বাড়ীর উত্তর পার্শ্বে থেকে কিছুক্ষণ।
    ঝুঁকে ঝুঁকে করে হরিনাম উচ্চারণ।।
    পরিধান বস্ত্র ফেলে কিঞ্চিৎ ছিঁড়িয়া।
    চলিলেন মাত্র এক লেংটি পরিয়া।।
    সম্মুখে বাঁধিল অগ্রে বিল খাগাইল।
    মল্লবিল হাটঝাড়া, তালতলা বিল।।
    বেথুড়িয়া ঘৃতকাঁদি বিল খাল যত।
    কতক হাঁটিয়া পার সাঁতরেতে কত।।
    জপিতে গাইতে হরে কৃষ্ণ রাম নাম।
    উপনীত ওঢ়াকাঁদি প্রভুর শ্রীধাম।।
    বীররসে রাগাত্মিকা ভাবের উদয়।
    দেখি প্রভু হীরামনে ক্রোড়েতে বসায়।
    হীরামনে পুকুরের ঘাটে লয়ে পরে।
    শ্রীকরেতে শ্রীনাথ শ্রীঅঙ্গ ধৌত করে।।
    কর্দম শৈবাল অঙ্গে লেগে রহিয়াছে।
    কমল-কণ্টক অঙ্গ ক্ষত করিয়াছে।।
    ধৌত করি হস্ত ধরি গৃহেতে লইল।
    কর্পূর মিশ্রিত তৈল অঙ্গে মাখাইল।।
    ঠাকুর জিজ্ঞাসা করে ওরে হীরামন।
    কেমনে করিলি সহ্য যবন পীড়ন।।
    এতকষ্ট দিল দুষ্ট পাপিষ্ঠ যবন।
    এত মান্য নেড়েরে করিলি কি কারণ।।
    ঘৃণা কি হল না কিছু ওরে বাছাধন।
    কচ্ছপের কাঁচা মাংস করিতে ভোজন।।
    হীরামন বলে মন সকলইত জান।
    জেনে শুনে তবে আর জিজ্ঞাসিলে কেন।।
    সকলে কেবল কহে ফকির ফকির।
    হক আল্লা বলে নেড়ে ছাড়িল জিগির।।
    আমি ভাবি হক আল্লা বলিল মুখেতে।
    হক ছাড়া না হক সে করিবে কি মতে।।
    পোড়াইয়া দিল অঙ্গ তাহা করি সহ্য।
    তবু ভাবি এই বুঝি করে হক কার্য।।
    পোড়া অস্ত্র ধরে গ্রীবা মেরুদণ্ড পর।
    তবু আমি ভাবি এত আল্লার নফর।।
    আল্লার ফকির বলে আগে মানিলাম।
    ঠক মানিলাম শুনে হক আল্লা নাম।।
    আল্লা রূপা রাধা আল্লা কৃষ্ণ আহ্লাদিনী।
    প্রণয় বিকৃতি রাধা কৃষ্ণ প্রণয়নী।
    কামবীজ কৃষ্ণ’ ‘কাম গায়ত্রী রাধিকা
    কৃষ্ণমন্ত্রবীজ রাধা প্রধানা নায়িকা।।
    কৃষ্ণ বীজ কলিম রহিম বীজ শক্তি।
    কারে কার কার চন্দ্রবিন্দু যুক্তি।।
    ’ ‘’ ‘বিন্দু আর বিসর্গ অনুস্বার।
    কারে অনুস্বার ইহা কৈলে একতর।।
    তাতে হয় কৃষ্ণবীজ বীজরূপা রাধা।
    কলিম শক্তির বীজ শ্রীকৃষ্ণ আরাধা।।

    শ্লোক
    রাধাকৃষ্ণ প্রণয়বিকৃতিহলাদিনী শক্তিহ্রস্ব-
    দেকাত্মানাবপি ভুবি পুরা দেহভেদৌ গতৌ
    তৌ, চৈতন্যাখ্যং প্রকটমধুনা,
    রাধাভাব দ্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্।

    পয়ার
    সেইত হলাদিনী শক্তি সবাকার হক।
    সেই হক তুমি হরি সবার জনক।।
    যার মনে যেই মত সেই পথে ধায়।
    যেভাবে যেভাবে ডাকে, ডাকে হে তোমায়।।
    তাহাতেই মানিলাম তুমি আল্লা হক।
    তোমাকে ডাকিল ভাবি তোমার সেবক।।
    তাই ভাবি মানিয়া অমান্য কিসে করি।
    যাহা কহে তাহা করি থাকি ধৈর্য ধরি।।
    এ বুঝি হকের কার্য হয় ফকিরের
    তাই ভেবে কাঁচা মাংস খাই কচ্ছপের।।
    প্রভু কহে তবে কেন মারিলিরে বাপ।
    মানিয়া না মানিলে তহতে পারে পাপ।।
    হীরামন বলে পাপ পুণ্য নাহি জানি।
    আমি জানি তুমি হর্তা কর্তা রঘুমণি।।
    সে বলে যে পাগলারে খাওয়ারে হারাম।
    তার বাক্য শুনে মনে জাগে সীতারাম।।
    হারাম শুনিয়া রসনায় বাড়ে ক্ষুদা।
    দিল মাংস খাইলাম সুধাধিক সুধা।
    পিটমোড়া দিয়া টেনে বাঁধে দুই কর।
    বাঁধিয়া মারিল গোঁজা নখের ভিতর।।
    এই মত শাস্তি দিল যবনের বেটা।
    নখতলে বিঁধাইল খেজুরের কাঁটা।।
    তথাপি ভাবিনু যেই বলে আল্লা হক।
    সে মেরেছে এতে নয় খসে যাবে নখ।।
    বেকী দা পোড়ায়ে যবে আনে পুনর্বার।
    এ দেহে তখনে সহ্য না হইল আর।।
    এ সময় তোমাকে দেখিনু গদাধর।
    গদা ধরি দাঁড়াইলা মস্তক উপর।
    ক্রোধে কাঁপে ওষ্ঠাধর আজ্ঞা দিলে মোরে।
    মার ফকিরেরে মার চৈতন্য বালারে।।
    তব শ্রীমুখের আজ্ঞা যদি পায় হীরে
    ব্রহ্মাণ্ড ডুবাতে পারে গোষ্পদের নীরে।।
    ত্রেতাযুগে তব শ্রীমুখের আজ্ঞা পাই।
    আঠার বর্ষের পথ এক লম্ফে যাই।
    আনিনু গন্ধমাদন তব কৃপাগুণে।
    কপি তনু ধরি হনু ভানুকে শ্রবণে।।
    ব্রাহ্মণ অগস্ত্য মুনি তব কৃপালেশে।
    সপ্ত সমুদ্রের জল খাইল গণ্ডূষে।।
    চন্দ্র সূর্য শূন্যে চলে অচল সচল।
    বাসুকিরে দিলে শিরে ধরা ধরা বল।।
    মম শিরে দাঁড়াইয়া আজ্ঞা দিলে তাই।
    যবনে মানিস কেন ওতে কিছু নাই।।
    তব পাদপদ্ম দৃষ্টি করি দয়াময়।
    ঝাঁকি দিলে কণ্টক বন্ধন খসে যায়।।
    কোপ দৃষ্টে কটা ভেক পানেতে চাহিয়া।
    কোপ দিলে ভেক বেটা পড়িল শুইয়া।।
    ঈষৎ আঘাত মাত্র লাগিল মাথায়।
    লাগিল সামান্য কোপ ফকিরের পায়।।
    মারিতে দিলেনা প্রভু তুমি কৈলে মানা।
    মারিতে আমার মনে হল বড় ঘৃণা।।
    সকল তোমার খেলা কি খেলা খেলাও।
    করিয়া করাও রঙ্গ মারিয়া মারাও।।
    মহাপ্রভু বলে আর কহিতে হবে না।
    জানি সব তবু ইচ্ছা তোর মুখে শুনা।।
    বাছা তোর অঙ্গ ধৌত করেছি যখন।
    বাহু নখ ব্যাথা মম ঘুচেছে তখন।।
    পোড়া অস্ত্রে অঙ্গ পুড়ে করে কৃষ্ণবর্ণ।
    চেয়ে দেখ মম অঙ্গে সেই সব চিহ্ন।।
    তাহা দেখি হীরামন কেঁদে ছাড়ে হাই।
    এই জন্য আমি কোন কষ্ট পাই নাই।।
    হীরামন বলে আজ্ঞা কর শ্রীনিবাস।
    যবনেরে সবংশেতে করিব বিনাশ।।
    প্রভু বলে তোর কিছু হবে না করিতে।
    স্বকর্মে হইবে ধ্বংস আপন পাপেতে।।
    মম প্রাণাধিক তুই উত্তম পুরুষ।
    পরাধীন নহ বাছা খাসের মানুষ।।
    যথা তথা আছ বাছা তথা আমি আছি।
    তোর কাছে বাছা আমি বিক্রিত হয়েছি।।
    ত্রেতাযুগে বিভীষণে বলে ভগবান।
    সাধুর জীবন মৃত্যু উভয় সমান।।
    অমনি বাহির হল বিবর্ত পাগল।
    অনুক্ষণ মহাভাবে থাকেন বিহ্বল।।
    অদ্ভুত করুণ হাস্য রসেতে বিভোলা
    কভু থাকে গৃহেতে কখন বৃক্ষতলা।।
    কভু থাকে শ্মশানে কখন থাকে জলে।
    কভু থাকে বনে কভু ধান্য ভূমি আলে।।
    কখন বসিয়ে থাকে কখন শুইয়ে।
    অবিরাম করে নাম ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে।।
    যেচে দিলে কিছু খায় নৈলে অনাহার।
    অন্ন ব্রহ্ম জ্ঞান নাহি জাতির বিচার।।
    প্রখর রৌদ্র বর্ষণে নাহি ছায়া ছত্র।
    শীতে গ্রীষ্মে সমভাব নাহি পাখা বস্ত্র।।
    কখন উলঙ্গ কভু পরে মাত্র লেংটি।
    বিল খাল নদ নদী পার হয় হাঁটী।।
    ভাদ্রমাসে মধুমতি বানস্রোত বয়।
    হিল্লোল কল্লোল করে দেখে লাগে ভয়।।
    সেই জলে হীরামন হেটে পার হয়।
    তরঙ্গ উঠিলে মাত্র জানু ডুবে যায়।।
    কভু বিল মধ্যে দিয়া হেটে পার হয়।
    কভু বক্ষ ডুবে কভু সাতারিয়া যায়।।
    জলে ভাসে হীরামন হংসের আকার।
    কেহ বলে গোঁসাই উঠহে নৌকাপর।।
    ধরিতে পারেনা কেহ বলেন গোঁসাই।
    কার নৌকা বাহিব নিজের খানা বাই।।
    এইভাবে গোস্বামীর বিহার বিরাজ।
    কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

    ফকিরের শেষ বিবরণ।
    পয়ার
    ফকির বাওয়ালে গিয়া রুল বাজাইত।
    রুল শব্দে ব্যাঘ্র স্তব্দ বাওয়াল করিত।।
    হীরামনে শাস্তি দিয়া গেল বায়ালেতে।
    পারিল না চক মধ্যে লোক নামাইতে।।
    গাছেতে আঘাত করে ধরে সেই রুল।
    শব্দ নাহি হয় ক্রোধে হুংকারে শার্দূল।।
    কাঠ কাটিবারে নারে আইল ফিরিয়ে।
    দেশে এসে রহিল সে ব্যাধিযুক্ত হয়ে।।
    দেখিলে সে ফকিরেরে নাহি মানে লোকে।
    রোগ না সারিতে পারে কেহ নাহি ডাকে।।
    হীরামনে মেরে হইয়াছে মহাপাপী।
    রোগে ভোগে ক্রমে ক্রমে জনমিল হাপী।।
    প্লীহা হয়ে ক্রমে হল প্লীহা আমরেখী।
    গণ্ডস্থল খসে পল জিহ্বা লকলকি।।
    রস পৈত্তিকের রোগে হাতে ঘা হইয়ে।
    আঙ্গুলি খসিয়া পড়ে গেল সে মরিয়ে।
    একেবারে ফকিরের হইল নির্বংশ।
    বাতি দিতে না রহিল পরিবার ধ্বংস।।
    কেহ কেহ বলে ভাই দেখরে সকল
    হীরামনে হিংসা করে ধরেছে কি ফল।।
    কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।
    সাধু হিংসা যে করে তাহার মুণ্ডে বাজ।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.