শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ-১ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ-১

    মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ-১  


         শ্রী শ্রী হরিচাঁদ কল্পতরু আগমনের দু-শোটি বছর পার করে এসেছি। এবার আত্ম  সমীক্ষা দীর্ঘ মতুয়া জীবনচক্রে ত্রুটি বিচ্যুতির চুলচেরা অঙ্ক কষে পাশ ফেলের ফলাফল জেনে নেবার সময় এসেছে । আলোচনা পর্বটি বিচক্ষণ দৃষ্টি দিয়ে হরি-গুরুচাঁদীয় বিপ্লবী শিক্ষা সামাজিক চরিত্রায়নে আমরা নিজেদেরকে কতটুকু সংগঠিত করতে পেরেছি তারই বিচার্য বিষয় ।
         শ্রী শ্রী হরিচাঁদ অভেদাত্মা রাজর্ষি গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তিত মতুয়া ধর্ম দর্শন সমাজের সর্বস্তরের বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বৃহৎ সংখ্যক মানুষের অগ্রগতির দিক ও দিশা তাতে কোন সন্দেহ নেই । মুষ্টিমেয় এক শ্রেনীর ধুরন্ধর স্বার্থান্বেষী মানুষের কুটকৌশলী দেবদোহায়ী  বর্ণবাদদুষ্ট সামাজিক চাপ-শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতনে পদপিষ্ট হয়ে কাতারে কাতারে বঙ্গের মানুষ যেমন ধর্মান্তরিত হয়েছে তেমনই উদেশ্য প্রণোদিত হীনমন্য প্রবর্তকহীন হিন্দুধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে অগ্রগতির দিক ও দিশা তাতে কোন সন্দেহ নেই ।  মুষ্টিমেয় এক শ্রেণীর ধুরন্ধর স্বার্থান্বেষী মানুষের কূটকৌশলী দেবদোহায়ী বর্ণবাদদুষ্ট সামাজিক চাপ-শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতনে পদপিষ্ট হয়ে কাতারে কাতারে বঙ্গের মানুষ যেমন ধর্মান্তরিত হয়েছে তেমনই উদেশ্য প্রণোদিত হীনমন্য প্রবর্তকহীন হিন্দুধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে শিক্ষা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে হাজার যোজন দূরে সরিয়ে রেখেছে ।
         এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষণে পতিত পাবন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব(১৮১২-১৮৭৮) । শিক্ষা-জ্ঞান জীবে প্রেমকর্ম-সাম্য এবং স্বাধীন আধ্যাত্মিক তত্ব ও দর্শন সংম্পৃত্ত "মতুয়া ধর্ম" উপহার দিলেন মৃতপ্রায় পতিত জাতিকে । ভেঙ্গে দিলেন ব্রাহ্মণ্য  ষড়যান্ত্রিক মানুষ দলনীতি বিধি বিধান । যুগ পুরুষ হরিচাঁদ ভারতের নবীনতম ঐতিহাসিক ধর্ম ও কর্মের স্রষ্টা ও দ্রষ্টা । ঘৃণক আর দোলকদের ফতোয়াকে অগ্রাহ্য করে শুরু করলেন বহুজন মুক্তির আপোষহীন সংগ্রাম ।
         তাঁর প্রবর্তিত প্রেমভক্তির পূর্ণ মায়া মমতা ভরা মত ও পথ 'মতুয়া ধর্মেরছায়াছত্রতলে  লক্ষ কোটি মানুষ পেল মুক্তি মোক্ষজীবনের বিকাশ-শক্তিতে চেতনা । মন্ত্র দিলেন নিজ নাম, 'হরিবোল
         ভক্তি ভাবের পশরা সাজিয়ে ভক্ত আর ভগবানের কথা লিখেছেন মহানন্দ হালদার এবং রসরাজ তারকচন্দ্র ।
                   "নাহি চেনে কোন দেবীঘট পট বিম্বা ছবি ।
                    জানেমনে প্রাণে শুধু হরিচাদে ।।'
                    দীক্ষা নেই করিবে না তীর্থ পর্যটন ।
                    মুক্তি স্পৃহাশূন্য নেই সাধন ভজন ।
                     যাগ-যজ্ঞ তন্ত্র মন্ত্র দীক্ষা
                     কোন কিছুর নাহি প্রয়োজন ।
                     'হরিনাম মহামন্ত্র জান সর্বজন ।।"
         ঠাকুরের বাণীর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমার জীবনের দিক নির্ণয়ের নিশানা এবং ঠিকানা । যাঁর কৃপা ও করুণায় আমি শিক্ষাঅর্থনৈতিক ও সামাজিন প্রতিষ্ঠা পেয়েছি -সেই করুণার সাগর পরিত্রাতা হরিচাঁদ ভিন্ন আমার জীবনে অন্য কোন দেব দেবী ঘট পট পূজা নেইথাকতে পারে না । দীক্ষা নেইতীর্থ পর্যটন নেইযাগ-যজ্ঞতন্ত্র-মন্ত্র কিছুই নেই । একমাত্র হরিচাঁদই আমার উপাস্য ।
         দীক্ষা-শিক্ষা মন্ত্রের অসারতার কথাও তিনি জোরের সঙ্গে ঘোষণা করলেন-
                         "দীক্ষা মন্ত্র দেয় গুরু কর্ণে মুখ রাখি ।
                          হরিনাম মন্ত্র বিনাসব মন্ত্র ফাঁকি ।।"
    তা সত্ত্বেও মতুয়াদের মধ্যে দীক্ষা মন্ত্রের প্রচলন সর্বত্র দেখতে পাই । হরিচাঁদ  দৃঢ়তার সঙ্গে ভক্তদের সাবধান করলেন এবং অভয় দিয়ে বললেন-
                          "হরিনাম  মন্ত্র বিনাসব মন্ত্র ফাঁকি।"
         -অর্থাৎ হরিনাম-ই একমাত্র মহৌষধ-এর উপরে কোন ঔষধ নেই ।
         তিনি পূর্ণ ভরসা দিয়ে বললেন-"আমার নাম অর্থাৎ 'হরিনামউচ্চারণে জীবনীয় শক্তি ও মুক্তি পাবেআর কিছুর প্রয়োজন নাই । তা সত্ত্বেও অধিকাংশ মতুয়া পরিবারে বেশ ঘটা করে বিভিন্ন দেব-দেবী পূজার প্রচলন বিদ্যমান। পাশাপাশি কৃষ্ণনাম যজ্ঞ সহ অন্যান্য অনেক(ব্রাহ্মণ্যবাদী) গুরু পূজাও বিদ্যমান । কাউকে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়আমার প্রশ্ন "বিশ্বাসের" । আমার'বিশ্বাসযদি বহুমুখি হয় সে ক্ষেত্রে আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা-পূজা সবই বহুমুখি হবে এবং জনে জনে বিভক্ত হতে থাকবে । ফলে হরি পূজা পূর্ণতা লাভ করবে না । আমার 'বিশ্বাসও একমাত্র 'হরি'কেন্দ্রীক হবে নাআমার উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ একজনের উপরে আমি বিশ্বাস রাখতে পারছি নাভুলে গেছি তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা । বর্তমান প্রতিষ্টা তিনিই আমাকে দিয়েছেন । লক্ষী,সরস্বতী ,কালীদুর্গারামকৃষ্ণ, অনুকুল,   নিগমানন্দজগদানন্দ এঁনারা আমার উদ্ধারকর্তা নন । অতএব মতুয়াদের ভাবতে হবেদ্বি-চারিতা হচ্ছে না তো যেখানে হরিঠাকুর নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে বলেন-
                            "পূর্ণ আমি হরিচাঁদ অপূর্ণের পিতা
                            সাধনা আমার কন্যাআমি জন্মদাতা ।"
    এতবড় প্রমাণ আর ভরসা থাকা সত্তেও মতুয়াদের বহুমুখি হওয়া  মানেই তো হরিচাঁদে  বিশ্বাসের অভাব । পক্ষান্তরে মনগড়া ব্যবসা বিত্তিক দেব-দেবী ও মূর্তি পূজায় অগাধ বিশ্বাসএর অর্থ ব্রাহ্মণ্য নীতি -বিধি বিধানে আমার বেশী বিশ্বাস । অথচ এই বিধানের বি রুদ্ধাচারণ করে শ্রীহরি বললেন-
                            "তিন বেলা সন্ধ্যা কর আর সন্ধাহ্নিক ।
                            স্নান পূজা সন্ধাহ্নিক মোর নাহি ঠিক ।।
                            কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই ।
                            বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই ।"
    প্রশ্ন থেকে যায়-
                আমি কি মতুয়া হতে পেরেছি আমি কি মতুয়া বিধি বিধান মেনে চলছি আমি কি একমাত্র শ্রীহরিতে বিশ্বাস রাখতে পেরেছি আমি কি পরিবারে হরি-গুরুচাদের ধর্ম-দর্শন প্রতিষ্টা করতে পেরেছি আমি কি হীনমন্য হিন্দু ধর্মের প্রতিবাদী 'মতুয়াধর্মাবলম্বী হতে পেরেছি আমি কি ভেদাভেদহীন "স্বয়ং সম্পুর্ণ মতুয়া ধর্মকে" জনমানসে প্রতিষ্ঠা কল্পে প্রচারে ও প্রসারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে পেরেছি ?
           
          যদি না পেরে থাকি তবে আর সময় নষ্ট না করে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে যথার্থ মতুয়া হওয়ার লক্ষ্যে । এটা করতে পারলেই মুক্তি ও প্রাপ্তি । মহাশক্তি ও স্বস্তির পথ সুগম হবেই হবে ।

    (২)   (মতুয়া ধর্মে নারীর মর্যাদা ও অধিকার)
           নারী মাত্রই মাতৃসমা । শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালবাসা বা স্নেহের পাত্রী । মতুয়া ধর্মে ব্রাহ্মণ্য নীতি  বিধি অনুযায়ী নারী জাতিকে মর্যাদাশীল পরনির্ভরশীল 'নরকের দ্বারকরে রাখা হয় নাই । নারী ও পুরুষের সমান অধিকারএকথা মতুয়াধিপতি হরি গুরুচাঁদ ধর্মীয় ও মানবীয় ব্যাখ্যায় প্রথম জাতিকে প্রকাশ্যে দিবালোকের অক্সিজেন যোগান দিয়ে হরি-গুরুচাঁদ গড়লেন এক নয়া ইতিহাস । মায়েদের হাতে ধুপ-দ্বীপ-শঙ্খ দিয়েদিলেন পূজার অধিকারধর্মের অধিকার । নারী শিক্ষা বিদ্যালয় গড়েদিলেন শিক্ষার অধিকার । ঘটল মাতৃত্বের পূর্ণ বিকাশ । হরি-গুরুচাঁদ কল্পবৃক্ষে সোনার মানুষসাধু -সাধকশিক্ষিত যুবক-যুবতীর ফসল ফলল । নারী জাতিকে মতুয়া কি নজরে দেখবেন তাও বলে দিলেন প্রাণারাম-
                       "পর নারী মাতৃজ্ঞানে দূরেতে থাকিবে ।
                       পরিহাস বাচালতা কভু না করিবে ।।
                       মেয়ে পুরুষেতে বসি একপাতে খায় ।
                      মেয়েদের এঁটো খায় পদধুলা লয় ।।
                       ----------------------------
                      পুরুষ ঢলিয়া পড়ে মেয়েদের পায় ।
                      এক নারী ব্রহ্মচারী সৎচরিত্র রবে ।
                      ------------------------------
                      নিজ নারী ভিন্ন অন্য নারীতে গমন ।
                      মহাপাপী ব্যভিচারী সেই একজন ।।
    প্রশ্ন থেকে যায়,-
          আমরা নারী জাতিকে মাতৃজ্ঞানে সম্মান করি তো আমি নিজ নারী সহ ব্রহ্মচারীর ন্যায়
    সৎ চরিত্র বহন করছি তো আমি হরিনামামৃত পান করে দেহের ইন্দ্রিয় নিজের করায়াত্বে এনেছি তো আমি নারী মাত্রই 'মাসম্বোধন করি তো মায়েদের সুখ-দুঃখের সমান  ভাগীদার হই তো?
          যদি না করে থাকি তবে আমার মতুয়া জীবন বৃথা মনে রাখবেনহরি-গুরুচাঁদ প্রবর্তিত  ধর্ম-দর্শন অতি উচ্চমার্গের । একে জীবনদায়ী ঔষধ মেনে গ্রহন করতে পারলে আমি নিশ্চিত করে বলছিআপনার উন্নয়নের জন্য আপনাকে ভাবতে হবে না ।
                       "সর্বধর্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থূল ।
                       শুদ্ধ মানুষেতে আর্তি এই হয় মূল ।।"

                          (প্রেমবন্ধনের দৃঢ়তা কেন এত ঠুনকো ?)
         শ্রীহরি বাসরে সরল অনাড়ম্বর জীবন সঞ্জাত 'হরিবোলনামে ভাবোন্মোত্ত মতুয়াদের মমত্ত্বের ও সমত্বের প্রেমপ্রক্ষালনি অশ্রুসজল বাহু বেষ্টিত ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে দৃশ্যায়নআকর্ষণীয় প্রেমভক্তি ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলছিএই ভাব ও সম্পর্ক স্ব-স্ব এলাকায় দেখা যায় না । সেখানে সগোত্রীয় হয়েও মেলামেশায় বহুলাংশে ফারাক । হিংসা-দ্বেষ,  দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হাম বড়াই ভাবের অবাধ বিচরণ । চোখা চোখা বিশেষণ (গালাগালি) প্রয়োগে পারদর্শিতা যথেষ্ট । বাহু যুদ্ধেও পিছিয়ে নাই । মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে প্রতিশোধ স্পৃহা ঘুম কেড়ে নেয় । পড়শিদের ভীতি প্রদর্শনে ভীত নয় । অথচ এরাই হরিবাসরে হরিনামের অমৃত ভাব ও প্রেমের বন্যা বইয়ে দেয় । পদধুলি সংগ্রহে কাড়াকাড়ি হয় । কোলাকুলি অশ্রুবন্যায় হরিবাসর প্রেমের সাগর হয়ে ওঠে । ভাবি এই বন্ধন চিরস্থায়ী নয় কেন এই প্রেম সর্বত্র সর্বদা সমানভাবে সংঘবদ্ধ হয় না কেন ?যেখানে দয়াধীশ ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছেন-
                      "সর্বজাতি সমন্বয় হবে তাঁর মতে ।
                      ভাই ভাই হয়ে সব চলিবে সে পথে ।।"

                                     (গুরুগিরি)
                     অনেকে গুরুগিরি করেন । গুরুগিরি ব্যবসা করেনসংসার চালানদীক্ষা দেনশিষ্য তৈরীতে পারদর্শিতা দেখান । যে সাধন- ভজন অধ্যাবসায় দক্ষতা থাকা দরকার-ইদানিং গুরুদের মধ্যে তেমন উপযুক্ত একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না । গোপাল সাধুতারক  গোঁসাইলোচন,অশ্বিনীনাটুব্রজনাথ ডাঃ তারিনী বলের মতো সাধক পুরুষ আছে কি এঁনারা জীবন দিয়ে জাতির উন্নতির জন্য গুরুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে গেছেন । বর্তমান গুরুকূল পরিবার পোষা গুরুগিরি ছেড়ে "হাতে কাম মুখে নাম" করলে উভয়ের মঙ্গল । নচেৎ মহান মতুয়া ধর্ম অদূর ভবিষ্যতে বহুধা বিভক্ত হবে সন্দেহ নেই । নিছক ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র জাতির কল্যাণ চিন্তা করাই শ্রেষ্ঠ পথ ।

                       "জাতির উন্নতি লাগিহও সবে স্বার্থত্যাগি,
                       জাতি ধর্ম জাতি মানজাতি মোর ভগবান,
                              জাতি ছাড়া অন্য চিন্তা নাই ।"
    বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে গুরুচাঁদ ঠাকুরের এই আত্মসচেতনী উদার আহ্বান বাণী । তিনি ছত্রিশটি  বিচ্ছিন্ন জাতিকে একত্রিত করে যে পথ ও পাথেয় দিয়ে মতুয়া ধর্মকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছেন,নিছক ব্যক্তি স্বার্থে এই মহান ধর্মের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না । ঠাকুরের আসনে ঠাকুরকেই বসান । গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হৃদয় মন্দির হরি গুরুকে প্রতিষ্ঠা করুন।  তাঁর নাম মনন করুন তাতে নিজের দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে তো হবেই । গুরুর আসনে ভুল করে গরুকে বসাবেন না । গুরু-গুরুই হয় আর গরু-গরুই হয় । গরু কখনো গুরু হতে পারে না ।
                    "মতুয়ার এক গুরু ভিন্ন গুরু নাই ।
                    ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ করো না গোসাঁই ।।"
    পাগল দলপতিদের যত্র-তত্র ছুতো-নাতায় আস্ফালন করা বা ক্রোধ প্রদর্শন শোভনীয় নয় । 'বিজ্ঞতা'প্রদর্শন অপেক্ষা 'বিজ্ঞহয়ে ওঠা শ্রেষ্ঠ পথ । আমার কি করা উচিৎ, ঠান্ডা মাথায়  চিন্তা করে শুভ বিবেকী সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে ।


    (৩)(মতুয়া পদ্ধতিতে (শ্রাদ্ধ নয়) শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানবিবাহ ও ঠাকুর পূজার প্রচলন করা ।)
       বৈশ্যসাহা কন্যার সঙ্গে মুসলমান যুবক তিনকড়ি মিঞাঁর বিয়ে দিয়ে সেদিন গুরুচাঁদ ঠাকুর যে সেতু বন্ধন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণ্যবাদকে পদদলিত করে বিজয় নিশান উড়িয়ে আমাদের বোঝালেন, "তোমরাও মতুয়া ধর্ম-দর্শন মেনে নিজেদের ক্রিয়াকাজ নিজেরাই সম্পন্ন কর"। অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুর্বোধ্য পদ্ধতি বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধ সহজ বাংলা ভাষায় রচিত (শ্রাদ্ধ নয়) শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানবিবাহ ও ঠাকুর পূজা ইত্যাদি ক্রিয়াকাজ প্রতি ঘরে ঘরে তোমরা চালু কর ।

    অথচ এই কাজটিও আমরা সঠিক ভাবে সর্বত্র চালু করতে পারিনি বরং এখনও অধিকাংশ মতুয়া পরিবার ব্রাহ্মণ্য নীতিতেই বিশ্বাসী । আমরা অনেক গল্পভরা কথা বলি কিন্তু স্বীকার করতে হবে,গুরুচাঁদ ঠাকুরের যাবতীয় নির্দেশের মধ্যে একটি নির্দেশও আজ পর্যন্ত আমরা সঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি ।

    (ঠাকুর নির্দেশিত মত-পথ ও আদর্শকে কিভাবে পালন করতে হবে । )
         প্রসঙ্গক্রমে গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটি নির্দেশ বাণী
    যেমন-
                      "সবাকারে বলি আমি যদি মানো মোরে ।
                       অবিদ্বান পুত্র যেন নাহি থাকে ঘরে ।।"
    প্রশ্ন থেকে যায়-
         আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরকে মান্য করতে পেরেছি আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অন্তর দৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছি আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশ মত চলছি আমরা কি তাঁর দেওয়া রাজনীতিসমাজনীতিশিক্ষানীতি সংস্কার নীতি অর্থনীতি রূপায়ণ করার জন্য নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পেরেছি ?
         যদি গুরুচাঁদের গুরুভার বহন না করে থাকি তবে আমি মতুয়া হলাম কি করে  একটাই সমাধানআসুন আমরা প্রথমে মতুয়া হইতার পর মেতে উঠি হরি-গুরুচাঁদের প্রদর্শিত এবং নির্দেশিত কর্মকান্ড পরিপূরণে ও রূপায়ণে ।
         পরিচ্ছন্নতা মতুয়া ধর্মের একটি বিশেষ অঙ্গ । বাহ্য ও অন্তরঙ্গ শারীরিক পরিচ্ছন্নতা সহ পরিপাটি বসন ভূষণ ব্যবহার পবিত্রতার পরিচায়ক । দেহশ্রীকারক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বেশভূষা পরিধান করা মতুয়াধিরাজ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশ । এই নির্দেশ পালনের মধ্যে মনে প্রাণে শুদ্ধ নিঃষ্কলুষ শ্রী মন্ডিত ভক্তের ভক্তিযুক্ত আত্মনিবেদন আত্মপ্রসাদ লাভ করে সন্দেহ নাই । বহুক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতার অভাব আছে । গৃহাদি দেবতার মন্দির ভেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ 
                  "ধন চাই বসন ভূষণ চাইহতে চাই জজ ম্যাজিস্ট্রেট ।
                     ----------------------------------------
                    সবখানে থাকা চাইতা ভিন্ন উপায় নাই ।
                    রাজ বেশে সাজ রাজ সাজে ।।
                    ------------------
                   গৃহে কিংবা শ্রীহরি কীর্তনে ।
                    পরিচ্ছন্ন বেশ -ভূষা পর যতনে ।।
                   আপন গৃহকে কর শ্রীলক্ষ্মী আগার ।
                   ধর্ম-কর্ম মিলেমিশে ভব পারাবার ।।"
                হরিকীর্তন আসরে আমরা নির্দিধায় পান-তামাক-বিড়ি সেবন করি । সম্মুখে শ্রীহরির প্রতিকৃতি বা ছবি থাকে । বিড়ির ধুম্ররাশি ঘুরপাক খেতে খেতে শ্রীহরির অঙ্গে মিশে যায় । আমার হুঁশ নাই । এটা কি ঠিক শ্রীহরি-গুরুচাঁদ যদি আমার জীবন দেবতা হন তবে তাঁদের সামনে ধুম পান করা লজ্জাস্কর এবং নিন্দনীয় নয় কি ঠাকুরকে যদি ছবি বানিয়ে ফেলি বা ছবি ভাবি তবে আমার কিছু বলার নেই । তবে তিনি অজর অমর অক্ষয় যুগপ্রহরীআমার চতুর্দিকে বিরাজ করছেন-এমনটি ভাবলে তিনি আমার কাছে জীবন্ত প্রতিমূর্তি হয়ে আমাকে সর্বদা রক্ষা করবেন সন্দেহ নাই । তদুপরি ধুমপানে আসরের পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং অ-ধুমপায়ীদের অসহ্য কষ্ট হয় । তাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন । অতএব নেশা পরিত্যাগ করাই বিধেয় ।
           

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.