আদিখণ্ডঃ
পঞ্চম তরঙ্গ
আদিখণ্ড
পঞ্চম তরঙ্গ
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রীবৈষ্ণব দাস জয় গৌরী-দাস।।
জয় শ্রীস্বরূপদাস পঞ্চ সহোদর।
পতিতপাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রীগোলোকচন্দ্র জয় শ্রীলোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রীবৈষ্ণব দাস জয় গৌরী-দাস।।
জয় শ্রীস্বরূপদাস পঞ্চ সহোদর।
পতিতপাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রীগোলোকচন্দ্র জয় শ্রীলোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
মহাপ্রভু কর্ত্তৃক
কৃষিকর্ম
পয়ার
বর্ণনা অতীত ঠাকুরের লীলা যত ।
আর দিন হইলেন কৃষিকার্য্যে রত।।
সফলানগরী প্রভু যবে কৈল বাস।
ক্রমে ক্রমে ঈশ্বরত্ব হইল প্রকাশ।।
একদিন শুভদিন রজনী প্রভাত।
তিন ডাক ছাড়ে প্রভু কোথা বিশ্বনাথ।।
মুহূর্ত্তেক পরে বিশ্বনাথ উপস্থিত।
বলে প্রভু ডাক কেন কহ মনোনীত।।
সকলে বিস্ময় মানি আশ্চর্য্য গণিল।
কোথা হ’তে ডাকিল বা কোথা হ’তে এল।।
বহুদিন বিশ্বনাথ হ’ল দেশান্তরী।
শুনিয়াছি বৃন্দাবনে হ’য়েছে ভিখারী।।
বিশ্বনাথ নিকটে কহেন হরিচাঁদ।
ওরে বিশে আমার হ’য়েছে এক সাধ।।
বসিয়া বসিয়া বৃথা গত হল কাল।
আয় মোরা একদিন চাষ করি হাল।।
সর্ব্বকার্য্য হ’তে শ্রেষ্ঠ কৃষিকার্য্য হয়।
এ কার্য্য না করা আমাদের ভাল নয়।।
একদিন হাল ধরি আর না ধরিব।
বলরাম ভক্ত মোরা আজ হ’তে হ’ব।।
বিশ্বনাথ বলে প্রভু যে ইচ্ছা তোমার।
হ’ল ধর হ’য়ে অদ্য শোধিব কড়ার।।
হালুয়ারা হাল ধারে হাসি কয় কথা।
ভাল হ’ল অদ্য পা’ব লাঙ্গলের গাতা।।
প্রভু বলে পা’ব হাল মোরা গিয়ে লই।
আ’জ মোরা সবে গিয়া হলধর হই।।
একবার হ’য়েছিনু তৈলের দোকানী।
হাল ধরা চাষ করা মোরা নহে জানি।।
সর্ব্ব কর্ম করা ভাল গৃহীজন পক্ষে।
গৃহস্থের করা ভাল সর্ব্ব কার্য্য শিক্ষে।।
মোরা যে যোগাল দেই তোরা নিস হাল।
মোরা আজ হাল ধরি তোরা দে যোগাল।।
এত বলি মহাপ্রভু নিজে হাল নিল।
বিশ্বনাথ এক হাল স্কন্ধেতে করিল।।
গোগৃহের গরু যত বাহির করিয়া।
ধেনু বৎস্য বলদ লইল চালাইয়া।।
একবন্দ জমি দুই বিঘা পরিমাণ।
বহুদিন সে জমিতে নাহি হয় ধান।।
সব জমি মধ্য হ’তে লোণা উথলিয়া।
বুনাইলে ধান্য যায় করা’টে হইয়া।।
চারিবর্ষ সে জমিতে হাল চাষে নাই।
সেই জমি চাষ কর্ত্তে লাগিল গোঁসাই।।
লোকে বলে এ জমিতে ধান্য নাহি ফলে।
বৃথা পরিশ্রম প্রভু কর বা কি বলে।।
এত শুনি হাসি মুখে কহেন গোঁসাই।
অফলা জমিতে আমি সুফল ফলাই।।
যশোমন্ত পুত্র আমি নাম হরিচাঁদ।
এবার করিব যত পতিত আবাদ।।
এদেশে আবাদী তোরা চিনিলি না কেহ।
মাটী যে অফলা থাকে এ বড় সন্দেহ।।
পতিত আবাদ জন্য আশা এ দেশেতে।
কি ফল ফলিবে টের পাবি ভবিষ্যতে।।
খাটি মাটি হ’লে ফল নাহয় বিফল।
ভক্তি করে ডাকে তারে দেই প্রেমফল।।
যে ফল চাহিবি তোরা সে ফল পাইবি।
কল্প-বৃক্ষমূলে যদি প্রার্থনা করিবি।।
সফলা নগরী রই যে চাহে যে ফল।
বিফল না হয় ফল সে পায় সে ফল।।
বীজ আন বুনি ধান ফল পাবি শেষে।
ধান্যসতী তার পতি আছে এই দেশে।।
যেদিন করিল চাষ সেদিন বুনিল।
বুনাইয়া পুন চাষ আরম্ভ করিল।।
এমন সময় হ’ল মেঘের লক্ষণ।
ঘন ঘন ঘন করে ভীষণ গর্জ্জন।।
উত্তরে যাইয়া মেঘ বেগ বহে বাতে।
ঘোর অন্ধকার নিশি হইল দিবাতে।।
চিকি চিকি তড়িৎ তাহাতে আলোময়।
বিদ্যুৎজ্যোতি ঠাকুরের অঙ্গে লীন হয়।।
প্রভুর অঙ্গেতে জ্যোতি এক একবার।
মাঝে মাঝে ঝলসিছে বিদ্যুৎ আকার।
বরষণ ঘন ঘন হয় বহু বহু।
শীলাপাত বজ্রাঘাত হয় মূহুর্মূহু।।
চতুর্দ্দিকে হয় বৃষ্টি ঠাকুর যে ভূমে।
একবিন্দু পাত নাহি হয় কোন ক্রমে।।
ভাদ্রমাসে স্রোত যেন মহাবেগে ধায়।
তেমনি বৃষ্টির ধারা পতিত ধরায়।।
চতুর্দ্দিকে বৃষ্টিজলে স্রোত বহি যায়।
প্রভু যে জমিতে জল নাহি প্রবেশয়।।
সে ভূমি হইতে উচ্চ বিঘত প্রমাণ।
বহে জল ঠাকুরের ভুমিতে না জান।।
হাল উঠাইয়া যবে চাষ হ’ল সারা।
তখন জমিতে বহে বিন্দু বিন্দু ধারা।।
বীজ বপনের হ’ল সুযোগ তাহাতে।
ধান্যাঙ্কুর উপজিল সপ্তম দিনেতে।।
এমেত হইল সব চারার পত্তন।
রহে পরিষ্কার ভূমি না হইল বন।।
আউস হইল আর হইল আমান্য।
দুই বিঘা জমিতে দ্বিগুণ হৈল ধান্য।।
প্রশস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
হরিচাঁদ অবতীর্ণ হ’ল অবনীতে।।
প্রথমে গার্হস্থ্য ধর্ম তৈলের দোকান।
বাণিজ্য প্রণালী শিক্ষা সবে কৈল দান।।
হাতে করে কাম মনে মুখে করে নাম।
রসরাজ করে তার চরণে প্রণাম।।
পয়ার
বর্ণনা অতীত ঠাকুরের লীলা যত ।
আর দিন হইলেন কৃষিকার্য্যে রত।।
সফলানগরী প্রভু যবে কৈল বাস।
ক্রমে ক্রমে ঈশ্বরত্ব হইল প্রকাশ।।
একদিন শুভদিন রজনী প্রভাত।
তিন ডাক ছাড়ে প্রভু কোথা বিশ্বনাথ।।
মুহূর্ত্তেক পরে বিশ্বনাথ উপস্থিত।
বলে প্রভু ডাক কেন কহ মনোনীত।।
সকলে বিস্ময় মানি আশ্চর্য্য গণিল।
কোথা হ’তে ডাকিল বা কোথা হ’তে এল।।
বহুদিন বিশ্বনাথ হ’ল দেশান্তরী।
শুনিয়াছি বৃন্দাবনে হ’য়েছে ভিখারী।।
বিশ্বনাথ নিকটে কহেন হরিচাঁদ।
ওরে বিশে আমার হ’য়েছে এক সাধ।।
বসিয়া বসিয়া বৃথা গত হল কাল।
আয় মোরা একদিন চাষ করি হাল।।
সর্ব্বকার্য্য হ’তে শ্রেষ্ঠ কৃষিকার্য্য হয়।
এ কার্য্য না করা আমাদের ভাল নয়।।
একদিন হাল ধরি আর না ধরিব।
বলরাম ভক্ত মোরা আজ হ’তে হ’ব।।
বিশ্বনাথ বলে প্রভু যে ইচ্ছা তোমার।
হ’ল ধর হ’য়ে অদ্য শোধিব কড়ার।।
হালুয়ারা হাল ধারে হাসি কয় কথা।
ভাল হ’ল অদ্য পা’ব লাঙ্গলের গাতা।।
প্রভু বলে পা’ব হাল মোরা গিয়ে লই।
আ’জ মোরা সবে গিয়া হলধর হই।।
একবার হ’য়েছিনু তৈলের দোকানী।
হাল ধরা চাষ করা মোরা নহে জানি।।
সর্ব্ব কর্ম করা ভাল গৃহীজন পক্ষে।
গৃহস্থের করা ভাল সর্ব্ব কার্য্য শিক্ষে।।
মোরা যে যোগাল দেই তোরা নিস হাল।
মোরা আজ হাল ধরি তোরা দে যোগাল।।
এত বলি মহাপ্রভু নিজে হাল নিল।
বিশ্বনাথ এক হাল স্কন্ধেতে করিল।।
গোগৃহের গরু যত বাহির করিয়া।
ধেনু বৎস্য বলদ লইল চালাইয়া।।
একবন্দ জমি দুই বিঘা পরিমাণ।
বহুদিন সে জমিতে নাহি হয় ধান।।
সব জমি মধ্য হ’তে লোণা উথলিয়া।
বুনাইলে ধান্য যায় করা’টে হইয়া।।
চারিবর্ষ সে জমিতে হাল চাষে নাই।
সেই জমি চাষ কর্ত্তে লাগিল গোঁসাই।।
লোকে বলে এ জমিতে ধান্য নাহি ফলে।
বৃথা পরিশ্রম প্রভু কর বা কি বলে।।
এত শুনি হাসি মুখে কহেন গোঁসাই।
অফলা জমিতে আমি সুফল ফলাই।।
যশোমন্ত পুত্র আমি নাম হরিচাঁদ।
এবার করিব যত পতিত আবাদ।।
এদেশে আবাদী তোরা চিনিলি না কেহ।
মাটী যে অফলা থাকে এ বড় সন্দেহ।।
পতিত আবাদ জন্য আশা এ দেশেতে।
কি ফল ফলিবে টের পাবি ভবিষ্যতে।।
খাটি মাটি হ’লে ফল নাহয় বিফল।
ভক্তি করে ডাকে তারে দেই প্রেমফল।।
যে ফল চাহিবি তোরা সে ফল পাইবি।
কল্প-বৃক্ষমূলে যদি প্রার্থনা করিবি।।
সফলা নগরী রই যে চাহে যে ফল।
বিফল না হয় ফল সে পায় সে ফল।।
বীজ আন বুনি ধান ফল পাবি শেষে।
ধান্যসতী তার পতি আছে এই দেশে।।
যেদিন করিল চাষ সেদিন বুনিল।
বুনাইয়া পুন চাষ আরম্ভ করিল।।
এমন সময় হ’ল মেঘের লক্ষণ।
ঘন ঘন ঘন করে ভীষণ গর্জ্জন।।
উত্তরে যাইয়া মেঘ বেগ বহে বাতে।
ঘোর অন্ধকার নিশি হইল দিবাতে।।
চিকি চিকি তড়িৎ তাহাতে আলোময়।
বিদ্যুৎজ্যোতি ঠাকুরের অঙ্গে লীন হয়।।
প্রভুর অঙ্গেতে জ্যোতি এক একবার।
মাঝে মাঝে ঝলসিছে বিদ্যুৎ আকার।
বরষণ ঘন ঘন হয় বহু বহু।
শীলাপাত বজ্রাঘাত হয় মূহুর্মূহু।।
চতুর্দ্দিকে হয় বৃষ্টি ঠাকুর যে ভূমে।
একবিন্দু পাত নাহি হয় কোন ক্রমে।।
ভাদ্রমাসে স্রোত যেন মহাবেগে ধায়।
তেমনি বৃষ্টির ধারা পতিত ধরায়।।
চতুর্দ্দিকে বৃষ্টিজলে স্রোত বহি যায়।
প্রভু যে জমিতে জল নাহি প্রবেশয়।।
সে ভূমি হইতে উচ্চ বিঘত প্রমাণ।
বহে জল ঠাকুরের ভুমিতে না জান।।
হাল উঠাইয়া যবে চাষ হ’ল সারা।
তখন জমিতে বহে বিন্দু বিন্দু ধারা।।
বীজ বপনের হ’ল সুযোগ তাহাতে।
ধান্যাঙ্কুর উপজিল সপ্তম দিনেতে।।
এমেত হইল সব চারার পত্তন।
রহে পরিষ্কার ভূমি না হইল বন।।
আউস হইল আর হইল আমান্য।
দুই বিঘা জমিতে দ্বিগুণ হৈল ধান্য।।
প্রশস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
হরিচাঁদ অবতীর্ণ হ’ল অবনীতে।।
প্রথমে গার্হস্থ্য ধর্ম তৈলের দোকান।
বাণিজ্য প্রণালী শিক্ষা সবে কৈল দান।।
হাতে করে কাম মনে মুখে করে নাম।
রসরাজ করে তার চরণে প্রণাম।।
নিষ্কাম বা আত্ম সমর্পণ
পয়ার
এইমত ঠাকুরের হইল প্রকাশ।
পরে এসে ওঢ়াকাঁদি করিলেন বাস।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রভুর যে শ্রীগুরুচরণ।
তাহার অনুজ নাম শ্রীউমাচরণ।।
বাস কৈল ওঢ়াকাঁদি আমভিটা খ্যাত।
পুরাতন ভিটা ছিল না ছিল বসত।।
ঠাকুরের পুত্র কন্যা কিছু না জন্মিতে।
অলৌকিক লীলা সব করেন ক্রমেতে।।
আমভিটা ঘর করি মহাপ্রভু কয়।
দেখি কার্য্য না করে কি খেতে পাওয়া যায়।।
দিবারাত্রি খাটি কেহ না পারে আটাতে।
অন্নহীন যায় দিন ভ্রমে পথে পথে।।
কর্ম ক্ষেত্রে কর্ম করে আশা হয় হানি।
দোকান পাতিয়া লভ্য না পায় দোকানী।।
অর্থ লোভে কার্য্যক্ষেত্রে জীবন কাটায়।
আত্মস্বার্থ খাটাইয়া লভ্য কই পায়।।
কেহ না করিয়া কার্য্য রাজ্যপ্রাপ্ত হয়।
কোটি লোকে দাস হ’য়ে পড়ে তার পায়।।
সুখদুঃখ সংসারের যত বাহ্য কার্য্য।
যে করায় তারে কেহ নাহি করে গ্রাহ্য।।
যখন গৌরাঙ্গ প্রভু লীলা প্রকাশিল।
কি কার্য্য করিল সবে কেবা খেতে দিল।।
মুনি ঋষি যোগী ন্যাসী তপস্যা করিত।
কহ দেখি কে কোথায় না খেয়ে মরিত।।
বহু জীব মীন পাখী কীট পতঙ্গম।
আত্মস্বার্থ কর্মত্যাগী নিষ্কাম নিয়ম।।
আজ হতে কাজ কর্ম সব ত্যাজিলাম।
পবিত্র চরিত্র নামে রুচি রাখিলাম।।
যদ্যপি আমরা নহে সে কাজের কাজি।
পাই কিনা পাই খেতে ব’সে থেকে বুঝি।।
এত বলি মহাপ্রভু নামধ্বনি দিল।
ভক্তগণে হরি বলি নাচিতে লাগিল।।
এ ভবসংসারে প্রভু বৃথা দিন যায়।
রসনা-বাসনা পাদ-পদ্ম মধু পায়।।
পয়ার
এইমত ঠাকুরের হইল প্রকাশ।
পরে এসে ওঢ়াকাঁদি করিলেন বাস।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রভুর যে শ্রীগুরুচরণ।
তাহার অনুজ নাম শ্রীউমাচরণ।।
বাস কৈল ওঢ়াকাঁদি আমভিটা খ্যাত।
পুরাতন ভিটা ছিল না ছিল বসত।।
ঠাকুরের পুত্র কন্যা কিছু না জন্মিতে।
অলৌকিক লীলা সব করেন ক্রমেতে।।
আমভিটা ঘর করি মহাপ্রভু কয়।
দেখি কার্য্য না করে কি খেতে পাওয়া যায়।।
দিবারাত্রি খাটি কেহ না পারে আটাতে।
অন্নহীন যায় দিন ভ্রমে পথে পথে।।
কর্ম ক্ষেত্রে কর্ম করে আশা হয় হানি।
দোকান পাতিয়া লভ্য না পায় দোকানী।।
অর্থ লোভে কার্য্যক্ষেত্রে জীবন কাটায়।
আত্মস্বার্থ খাটাইয়া লভ্য কই পায়।।
কেহ না করিয়া কার্য্য রাজ্যপ্রাপ্ত হয়।
কোটি লোকে দাস হ’য়ে পড়ে তার পায়।।
সুখদুঃখ সংসারের যত বাহ্য কার্য্য।
যে করায় তারে কেহ নাহি করে গ্রাহ্য।।
যখন গৌরাঙ্গ প্রভু লীলা প্রকাশিল।
কি কার্য্য করিল সবে কেবা খেতে দিল।।
মুনি ঋষি যোগী ন্যাসী তপস্যা করিত।
কহ দেখি কে কোথায় না খেয়ে মরিত।।
বহু জীব মীন পাখী কীট পতঙ্গম।
আত্মস্বার্থ কর্মত্যাগী নিষ্কাম নিয়ম।।
আজ হতে কাজ কর্ম সব ত্যাজিলাম।
পবিত্র চরিত্র নামে রুচি রাখিলাম।।
যদ্যপি আমরা নহে সে কাজের কাজি।
পাই কিনা পাই খেতে ব’সে থেকে বুঝি।।
এত বলি মহাপ্রভু নামধ্বনি দিল।
ভক্তগণে হরি বলি নাচিতে লাগিল।।
এ ভবসংসারে প্রভু বৃথা দিন যায়।
রসনা-বাসনা পাদ-পদ্ম মধু পায়।।
বৈশ্য দস্যুর প্রস্তাব
পয়ার
নবরূপে লীলা জীবশিক্ষার কারণ।
শিখাইল জীবগণে আত্মসমর্পণ।।
বসিতেন মহাপ্রভু ভক্তগণ ল’য়ে।
কেহ এসে নিয়া যেত নিমন্ত্রণ দিয়ে।।
পথে যেতে ভক্তগণ নামগান করে।
কত লোক কাঁদিতেন প্রভুপদ ধরে।।
কেহ বা দাঁড়া’ত পথে হস্ত প্রসারিয়া।
বাঞ্ছা পুরাইত তার গৃহেতে যাইয়া।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত অন্ন পায়স পিষ্টক।
ভক্তমনোনীত দ্রব্য যত আবশ্যক।।
কোন দিন মহাপ্রভু ভক্তগণ সঙ্গে।
থাকিতেন সুধাময় কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।
নাম গান প্রেম কথা সর্ব্বদা আনন্দ।
ডাকিয়া হাকিয়া বলে বল রে গোবিন্দ।।
একদিন হরিচাঁদ বসিয়া বিরলে।
নিষ্কাম প্রবন্ধে পুরাতন কথা বলে।।
শুন শুন ভক্তগণ কথা পুরাতন।
রাঢ় দেশে ছিল এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ।।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে বড়ই দুঃখিত।
ব্রাহ্মণ সে দস্যু, জ্ঞান নাহি হিতাহিত।।
বনমধ্যে গিয়া চুরি ডাকাইতি করে।
ধন সব লুটে লয় লোকে মরে ডরে।।
রাজা টের পেল দুরিত ব্রাহ্মণ।
দস্যুবৃত্তি করি করে ধন উপার্জ্জন।।
মহারাজ একদিন মহাক্রোধ করি।
লোক দিয়া লুঠিল সে ব্রাহ্মণের বাড়ী।।
নিযুক্ত করিল গ্রামে চারিটি সিপাই।
কোন খানে ব্রাহ্মণে যেতে সাধ্য নাই।।
ভিখারী হইয়া ভিক্ষা করিবারে যায়।
দস্যু বলি কেহ তারে ভিক্ষা নাহি দেয়।।
এখানে তাহাকে কেহ ভয় নাহি করে।
নির্ভয় হইল সবে দস্যু মরে ডরে।।
ব্রাহ্মণের ঘরে আর নাহি মিলে অন্ন।
দূর দূর করে সবে গেলে ভিক্ষা জন্য।।
উপায় নাহিক আর অন্ন নাহি পায়।
অন্ন বিনে দৈন্য দশা জীর্ণ শীর্ণ কায়।।
ব্রাহ্মনী কহিছে এবে উপায় কি করি।
অন্নকষ্টে ইচ্ছা হয় ফাঁসী ল’য়ে মরি।।
ব্রাহ্মণ কহিছে তবে ব্রাহ্মণীর ঠাই।
তিষ্ঠ তিষ্ঠ অদ্য আমি ভিক্ষা লাগি যাই।।
যদি ভিক্ষা নাই পাই মরিব পরাণে।
শেষে তুমি প্রাণ ত্যাজ মম মৃত্যু শুনে।।
এত বলি দস্যু কাননেতে চলে গেল।
গলে ফাঁস ল’য়ে দ্বিজ ঝুলিতে লাগিল।।
তাহা দেখি রাজদূত ফিরাইয়া আনে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে দিল রাজা স্থানে।।
হুকুম হইল এরা সাত দিন তরে।
বন্ধিভাবে থাকিবেক রাজ কারাগারে।।
আর সাতদিন এরা বাটিতে থাকিবে।
রাজদূত সঙ্গে করি ভিক্ষা মেগে খাবে।।
এই ভাবে কষ্ট করে কালের হরণ।
জীয়ন্তে মরণ সম না হয় মরণ।।
কাঞ্চিগ্রামে এক বিপ্র বৈষ্ণব সুজন।
লীলাজী বলিয়া নাম প্রেম মহাজন।।
সেই গ্রামে বৈশ্য সাধু এক সদাগর।
সাধু বৈষ্ণবের সেবা করে নিরন্তর।।
বৈশ্য সাধু বাড়ী সাধু আসে আর যায়।
অন্য ঠাই ভ্রমি আসে সাধুর আলয়।।
সাধু বৈশ্য বৈষ্ণব সেবায় মন কৈল।
শত শিষ্য সঙ্গে করি লীলাজী চলিল।।
দস্যু দুষ্ট বৃদ্ধ দ্বিজ ভেবেছেন মনে।
এ সব লোকেরে সাধু খেতে দেয় কেনে।।
পায়স পিষ্টক ঘৃত দুগ্ধাদি শাল্যণ্য।
লুচি পুরী ছানা দধি জল পান জন্য।
মালা ল’য়ে সাধু হ’য়ে অঙ্গে করে ফোঁটা।
কি বুঝিয়া খেতে দেয় সদাগর বেটা।।
এবে আমি সাধু হয়ে ভুলাইব লোক।
ভিক্ষা করি খেতে পা’ব পরিয়া তিলক।।
লীলাজী যাইতে পথে দস্যু ধরে পায়।
বলে প্রভু এক ছড়া মালা দেও আমায়।।
লীলাজী বলেন তোর মালাতে কি কাজ।
দস্যু বলে সাধু হ’ব ল’ব সাধু সাজ।।
হাসিয়া দিলেন সাধু এক খন্ড মালা।
ব্রাহ্মণ বলেন মোর গেল ভব জ্বালা।।
মালাটি লইয়া গলে লইলেন ফোঁটা।
চুল ফিরাইয়া মাথে বাঁধে উভ ঝুটা।।
হরি হরি বলি ছাড়ে ঘন ঘন ডাক।
সদাগর ভবনেতে দিল গিয়া হাক।।
সদাগর ভাবিলেন দস্যু এ ব্রাহ্মণ।
এর যদি হ’য়ে থাকে হরিনামে মন।।
বেশী করি সমাদর করিবে উহারে।
তাতে যদি দস্যুবৃত্তি হ’তে মন ফিরে।।
সেবা শুশ্রূষাদি বহু মতে তারে কৈল।
তাহাতে দস্যুর আরো গাঢ় ভক্তি হৈল।।
ভাবে মনে বহু দিন করি দস্যুবৃত্তি।
এই মত খেতে দিয়া কেবা করে ভক্তি।।
অন্নাভাবে দুটা ভাত খাইবার লাগি।
ভাব ধরে হইয়াছি কপট বৈরাগী।।
তাহাতে না খেতে মেলে কহন না যায়।
প্রকৃত বৈরাগী হ’লে আরো কিবা হয়।।
অন্বেষী কাঁচের পাত্র প্রাপ্ত হৈনু সোনা।
সাধুপদরজ বাঞ্ছে তারক রসনা।।
পয়ার
নবরূপে লীলা জীবশিক্ষার কারণ।
শিখাইল জীবগণে আত্মসমর্পণ।।
বসিতেন মহাপ্রভু ভক্তগণ ল’য়ে।
কেহ এসে নিয়া যেত নিমন্ত্রণ দিয়ে।।
পথে যেতে ভক্তগণ নামগান করে।
কত লোক কাঁদিতেন প্রভুপদ ধরে।।
কেহ বা দাঁড়া’ত পথে হস্ত প্রসারিয়া।
বাঞ্ছা পুরাইত তার গৃহেতে যাইয়া।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত অন্ন পায়স পিষ্টক।
ভক্তমনোনীত দ্রব্য যত আবশ্যক।।
কোন দিন মহাপ্রভু ভক্তগণ সঙ্গে।
থাকিতেন সুধাময় কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।
নাম গান প্রেম কথা সর্ব্বদা আনন্দ।
ডাকিয়া হাকিয়া বলে বল রে গোবিন্দ।।
একদিন হরিচাঁদ বসিয়া বিরলে।
নিষ্কাম প্রবন্ধে পুরাতন কথা বলে।।
শুন শুন ভক্তগণ কথা পুরাতন।
রাঢ় দেশে ছিল এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ।।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে বড়ই দুঃখিত।
ব্রাহ্মণ সে দস্যু, জ্ঞান নাহি হিতাহিত।।
বনমধ্যে গিয়া চুরি ডাকাইতি করে।
ধন সব লুটে লয় লোকে মরে ডরে।।
রাজা টের পেল দুরিত ব্রাহ্মণ।
দস্যুবৃত্তি করি করে ধন উপার্জ্জন।।
মহারাজ একদিন মহাক্রোধ করি।
লোক দিয়া লুঠিল সে ব্রাহ্মণের বাড়ী।।
নিযুক্ত করিল গ্রামে চারিটি সিপাই।
কোন খানে ব্রাহ্মণে যেতে সাধ্য নাই।।
ভিখারী হইয়া ভিক্ষা করিবারে যায়।
দস্যু বলি কেহ তারে ভিক্ষা নাহি দেয়।।
এখানে তাহাকে কেহ ভয় নাহি করে।
নির্ভয় হইল সবে দস্যু মরে ডরে।।
ব্রাহ্মণের ঘরে আর নাহি মিলে অন্ন।
দূর দূর করে সবে গেলে ভিক্ষা জন্য।।
উপায় নাহিক আর অন্ন নাহি পায়।
অন্ন বিনে দৈন্য দশা জীর্ণ শীর্ণ কায়।।
ব্রাহ্মনী কহিছে এবে উপায় কি করি।
অন্নকষ্টে ইচ্ছা হয় ফাঁসী ল’য়ে মরি।।
ব্রাহ্মণ কহিছে তবে ব্রাহ্মণীর ঠাই।
তিষ্ঠ তিষ্ঠ অদ্য আমি ভিক্ষা লাগি যাই।।
যদি ভিক্ষা নাই পাই মরিব পরাণে।
শেষে তুমি প্রাণ ত্যাজ মম মৃত্যু শুনে।।
এত বলি দস্যু কাননেতে চলে গেল।
গলে ফাঁস ল’য়ে দ্বিজ ঝুলিতে লাগিল।।
তাহা দেখি রাজদূত ফিরাইয়া আনে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে দিল রাজা স্থানে।।
হুকুম হইল এরা সাত দিন তরে।
বন্ধিভাবে থাকিবেক রাজ কারাগারে।।
আর সাতদিন এরা বাটিতে থাকিবে।
রাজদূত সঙ্গে করি ভিক্ষা মেগে খাবে।।
এই ভাবে কষ্ট করে কালের হরণ।
জীয়ন্তে মরণ সম না হয় মরণ।।
কাঞ্চিগ্রামে এক বিপ্র বৈষ্ণব সুজন।
লীলাজী বলিয়া নাম প্রেম মহাজন।।
সেই গ্রামে বৈশ্য সাধু এক সদাগর।
সাধু বৈষ্ণবের সেবা করে নিরন্তর।।
বৈশ্য সাধু বাড়ী সাধু আসে আর যায়।
অন্য ঠাই ভ্রমি আসে সাধুর আলয়।।
সাধু বৈশ্য বৈষ্ণব সেবায় মন কৈল।
শত শিষ্য সঙ্গে করি লীলাজী চলিল।।
দস্যু দুষ্ট বৃদ্ধ দ্বিজ ভেবেছেন মনে।
এ সব লোকেরে সাধু খেতে দেয় কেনে।।
পায়স পিষ্টক ঘৃত দুগ্ধাদি শাল্যণ্য।
লুচি পুরী ছানা দধি জল পান জন্য।
মালা ল’য়ে সাধু হ’য়ে অঙ্গে করে ফোঁটা।
কি বুঝিয়া খেতে দেয় সদাগর বেটা।।
এবে আমি সাধু হয়ে ভুলাইব লোক।
ভিক্ষা করি খেতে পা’ব পরিয়া তিলক।।
লীলাজী যাইতে পথে দস্যু ধরে পায়।
বলে প্রভু এক ছড়া মালা দেও আমায়।।
লীলাজী বলেন তোর মালাতে কি কাজ।
দস্যু বলে সাধু হ’ব ল’ব সাধু সাজ।।
হাসিয়া দিলেন সাধু এক খন্ড মালা।
ব্রাহ্মণ বলেন মোর গেল ভব জ্বালা।।
মালাটি লইয়া গলে লইলেন ফোঁটা।
চুল ফিরাইয়া মাথে বাঁধে উভ ঝুটা।।
হরি হরি বলি ছাড়ে ঘন ঘন ডাক।
সদাগর ভবনেতে দিল গিয়া হাক।।
সদাগর ভাবিলেন দস্যু এ ব্রাহ্মণ।
এর যদি হ’য়ে থাকে হরিনামে মন।।
বেশী করি সমাদর করিবে উহারে।
তাতে যদি দস্যুবৃত্তি হ’তে মন ফিরে।।
সেবা শুশ্রূষাদি বহু মতে তারে কৈল।
তাহাতে দস্যুর আরো গাঢ় ভক্তি হৈল।।
ভাবে মনে বহু দিন করি দস্যুবৃত্তি।
এই মত খেতে দিয়া কেবা করে ভক্তি।।
অন্নাভাবে দুটা ভাত খাইবার লাগি।
ভাব ধরে হইয়াছি কপট বৈরাগী।।
তাহাতে না খেতে মেলে কহন না যায়।
প্রকৃত বৈরাগী হ’লে আরো কিবা হয়।।
অন্বেষী কাঁচের পাত্র প্রাপ্ত হৈনু সোনা।
সাধুপদরজ বাঞ্ছে তারক রসনা।।
দস্যুর দীক্ষা গ্রহণ
পয়ার
লীলাজীর কাছে গিয়া কেঁদে কেঁদে কয়।
প্রভু মোরে শিষ্য করি দেহ পদাশ্রয়।।
লীলাজী তাহাকে দিল কৃষ্ণ মন্ত্র দীক্ষে।
বলে আমি হরি বলে মেগে খাব ভিক্ষে।।
সদাগর ভবনেতে ছিল যে বৈষ্ণব।
হরি হরি বলে উঠে নৃত্য করে সব।।
সবে বলে চেয়ে দেখ বৈষ্ণবের গণ।
বৈষ্ণব হইয়া গেল এ দস্যু ব্রাহ্মণ।।
সদাগর ভাবে ডাকাইত এ ব্রাহ্মণ।
দায় ঠেকে হরি বলে পাইতে ভোজন।।
অধিকাংশ ধন দিলে বলিবেক হরি।
খেতে পেলে আর নাহি করিবেক চুরি।।
এত ভাবি সদাগর তারে দিল ধন।
রজত সহস্রমুদ্রা করিল অর্পণ।।
আশাতীত ধন পেয়ে আনন্দ বাড়িল।
দৃঢ় করে ব্রাহ্মণ বলিছে হরি বল।।
ধন লয়ে ভক্ত হ’য়ে দ্বিজ গেল বাড়ী।
ব্রাহ্মনীকে কহে পূর্ব্ব বুদ্ধি দিনু ছাড়ি।।
হরি বলে ধন পাই আরো পাই খেতে।
ইচ্ছা নাই আর যাই ডাকাতি করিতে।।
ব্রাহ্মণ বৃত্তান্ত তারে কহিল সকল।
ব্রাহ্মণব্রাহ্মনী মিলে বলে হরিবল।।
রাজ দূত তাহা শুনি রাজাকে জানায়।
শুনিয়া রাজার মন হরষিত হয়।।
রাজা বলে প্রজা যদি হইল বৈরাগী।
রাজভেট উপহার লও তার লাগি।।
দুই রাজদূত দুই রাজভেট ল’য়ে।
স্তব করে ব্রাহ্মণেরে রাজভেট দিয়ে।।
দ্বিজ ভাবে বৈষ্ণবের সাজের কি গুণ।
বেশ দেখে বৈশ্য মোর সেবায় নিপুণ।।
আরো যবে কৃষ্ণমন্ত্র করিনু গ্রহণ।
তাহা দেখি সদাগর মোরে দিল ধন।।
পরম বৈষ্ণব ধর্ম ধন্য ধন্য মানি।
রাজা দিল ভেট দূতে কহে স্তুতি বাণী।।
বিশুদ্ধ বৈরাগী আমি যখনে হইব।
নাহি জানি তখনে কি হ’ব কিনা হ’ব।।
এ হেন বৈরাগ্য আমি কবে বা পাইব।
কবে ব্রজে যাব আমি কবে দীন হ’ব।।
এ হেন বৈষ্ণব ধর্ম আমাকে ছাড়িয়া।
কোথা ছিল হরিনাম আমাকে বঞ্চিয়া।।
যখন হইল মম দস্যুবৃত্তি মন।
কোথায় বৈষ্ণব ধর্ম ছিলরে তখন।।
যে নামে জগৎ ভুলে প্রেমে মত্ত হ’য়ে।
সেই নাম মোরে ত্যাজে ছিল লুকাইয়ে।।
পেয়েছি তোমাকে যদি আর কি ছাড়িব।
যে দেশে তোমাকে পাব সেই দেশে যাব।।
আর না করিব আমি কর্ম দুরাচার।
অভেদ নাম-নামীন বুঝিলাম সার।।
দস্যুবৃত্তি করি নিত্য ভুঞ্জিয়াছি দুঃখ।
এক দিন বৈরাগী হইয়া কত সুখ।।
কল্য যারা আমাকে ক’রেছে দূর দূর।
তাহারা আদরে বলে বৈষ্ণব ঠাকুর।।
রাজ দূত দন্ড দিত আমাকে ধরিয়া।
রাজা মোরে দন্ড দিছে কারাগারে নিয়া।।
সেই রাজা সেই দূতে ব’য়ে দেয় ভেট।
বোধ হয় যমরাজা মাথা করে হেট।।
কিবা মন্ত্র লীলাজী দিলেন শিখাইয়া।
জগৎ বৈষ্ণব হো’ক আমাকে দেখিয়া।।
কিবা বৈষ্ণবের গুণ কহা নাহি যায়।
বেশ ধরিলেই মাত্র চোর সাধু হয়।।
একদিন মাত্র আমি সাধু সাজ পরি।
আর ফিরে মোর মনে না আইসে চুরি।।
একবার নাম নিলে যত পাপ হরে।
পাপীর কি শক্তি আছে তত পাপ করে।।
এই জন্যে নামে হ’ল ব্রহ্মাদেব দীক্ষে।
অভেদ নাম নামীন পাইনু পরীক্ষে।।
এই জন্যে নামে হৈল বৈষ্ণবী পার্বতী।
এই জন্য রত্নাকর ছাড়ে দস্যুবৃত্তি।।
নারায়ণ অংশে রত্নাকর জন্ম ধরে।
নামের নাহাত্ম্য জানাইতে পাপ করে।।
যার নাম সেই এই মাহাত্ম্য জানা’ল।
আর এক কথা মোর মনেতে হইল।।
জেনে তত্ত্ব নামে মত্ত শঙ্কর গোঁসাই।
যার নাম তার অঙ্গ তারাই তারাই।।
পাপী করে পাপ তাপ সাধুসঙ্গ লয়।
একবার নাম নিলে সর্ব্ব পাপ ক্ষয়।।
অন্ন কষ্ট ছলা করে বেশ ধরিলাম।
অনিচ্ছাতে নাম ল’য়ে বৈষ্ণব হৈলাম।।
আমি যে বৈষ্ণব হই আমি কেন কই।
ইহাতে কি আমি বড় অপরাধী হই।।
আমি যে বৈষ্ণব আমি যদি নাহি কই।
তাহা না বলিলে নামে গুণ থাকে কই।।
লীলাজী গুরু যে মম তার গুণ কই।
পরশ পরশে আমি বৈষ্ণব যে হই।।
পরশ পরশে যেন লৌহ হয় সোনা।
বৈষ্ণব পরশে কেন বৈষ্ণব হ’ব না।।
হাতে তালি দিয়া বলিল যে সাধু সব।
চোর ছিল দিজসুত হইল বৈষ্ণব।।
বৈষ্ণবের মুখপদ্ম বাক্য অখন্ডিত।
অই বলে আমি সাধু হইনু নিশ্চিত।।
খেতে সুতে বসিতে আমার চিন্তা নাই।
ভুক্তি দাসী লক্ষ্মীমাতা কুবের সেবাই।।
জীব সৃষ্টি করে সে কি আহার দিবে না।
নিরবধি কৃষ্ণপ্রেম করহ ভাবনা।।
যে কিছু দেখহ ভাই কৃষ্ণের সকল।
আর সব ধাঁ ধাঁ বাজী বল হরিবল।।
একদিন লীলাজীউ মহোৎসবে যেতে।
সদাগর বাটী যায় বহু শিষ্য সাথে।।
লীলাজীর মন হ’ল দস্যু ব্রাহ্মণেরে।
দিয়াছিনু মন্ত্র দেখে যাই সে কি করে।।
এতেক ভাবিয়া সাধু বাহুড়ী চলিল।
দস্যু শিষ্য বাটী এসে উপনীত হ’ল।।
দূরে থেকে লীলাজীকে করি দরশন।
উর্দ্ধবাহু করি নৃত্য করে’ছে ব্রাহ্মণ।।
ক্ষণে কক্ষবাদ্য ক্ষণে করে দন্ডবৎ।
লীলাজী চরণে নত হ’ল দন্ডবৎ।।
লীলাজীকে স্কন্ধে করি নাচিতে নাচিতে।
হরি হরি বলি ল’য়ে চলিল বাটিতে।।
রাজ ভেট সামগ্রী যতেক ছিল ঘরে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী তাতে গুরু সেবা করে।।
গ্রাম্য লোকে করে সুখে জয় জয় ধ্বনি।
খাও খাও লও লও এই মাত্র শুনি।।
ব্রাহ্মণের প্রেম দেখি বৈষ্ণব সকল।
গ্রাম্য লোক সঙ্গে মিশে বলে হরিবল।।
নগরবাসিনী রামাগণে বলে হরি।
সাধুসেবা জন্য আনে চা’ল তরকারী।।
সাধুসেবা মহোৎসব তাহাতে হইল।
দ্রব্যাদি উদ্বৃর্ত্ত আরো কতোই রহিল।।
সদাগরদত্ত সহস্রেক মুদ্রা ছিল।
লীলাজী চরণে দস্যু সব এনে দিল।।
লীলাজী বলিল সব দিলে যে আমায়।
খাইতে পরিতে বাপু তোর কি উপায়।।
বিপ্র বলে এতদিন দেখেছি খাইয়া।
খাইয়া ফুরাতে নারি আপনার দয়া।।
যে ধন আমারে প্রভু করেছেন দান।
ত্রিভুবনে ধন নাই তাহার সমান।।
সত্যভামা ব্রতকালে দান নিল মুনি।
উদ্ধব লিখিয়া দিল নাম চিন্তামণি।।
সে ধনমিশ্রিত রস যে বা করে পান।
সুস্বাদ নাহিক আর সে সুধা সমান।।
দয়া করি সেই সুধা খেতে দিলে মোরে।
পেট ভরে খেলে সুধা আরো ক্ষুধা বাড়ে।।
হেন যদি জ্ঞান করি আমি বড় দীন।
উচ্চ শৃঙ্গে টেনে তুলে তোমার কপিন।।
ভবগৃহে তব ভাবশয্যায় শয়ন।
নিদ্রা দেবী চৌকি দেন থাকিয়া চেতন।।
তব আশীর্ব্বাদে মোর বাস বহির্ব্বাস।
বাসে বাসে দেশে দেশে গৌরদেশে বাস।
রাজদূতে দণ্ড দিত ঘোর চোর জেনে।
দূত রাজাভেট দেয় রাজলক্ষ্মী সনে।।
তোমার মহিমা প্রভু জানিল সকলে।
কল্য চোর অদ্য সাধু তব কৃপা বলে।।
তব মন্ত্র বল এবে হইল প্রকাশ।
ব্রহ্মপদ হ’তে উচ্চপদ কৃষ্ণদাস।।
এ সব বৈভব দেখে মনে হয় হাসি।
ভক্তি সহ মুক্তি দেবী হইয়াছে দাসী।।
এত শুনি লীলাজীউ ধরি দিল কোল।
প্রেমানন্দে সাধুগণে বলে হরিবোল।।
গুরু কহে এবে কর তীর্থ পর্য্যটন।
দ্বিজ কহে তীর্থ-রাজ তব শ্রীচরণ।।
গুরু কহে সব লোকে করে গিয়া তীর্থ।
গয়া ধামে পিণ্ড দিলে ত্রিকুল পবিত্র।।
শিষ্য বলে কর্ণে মন্ত্র দিয়াছে যে মাত্র।
তদবধি কোটি কুল স্বর্গে করে নৃত্য।।
পতিতপাবন যত বৈষ্ণবসমাজ।
গেল দিন কহে দীন কবি-রসরাজ।।
পয়ার
লীলাজীর কাছে গিয়া কেঁদে কেঁদে কয়।
প্রভু মোরে শিষ্য করি দেহ পদাশ্রয়।।
লীলাজী তাহাকে দিল কৃষ্ণ মন্ত্র দীক্ষে।
বলে আমি হরি বলে মেগে খাব ভিক্ষে।।
সদাগর ভবনেতে ছিল যে বৈষ্ণব।
হরি হরি বলে উঠে নৃত্য করে সব।।
সবে বলে চেয়ে দেখ বৈষ্ণবের গণ।
বৈষ্ণব হইয়া গেল এ দস্যু ব্রাহ্মণ।।
সদাগর ভাবে ডাকাইত এ ব্রাহ্মণ।
দায় ঠেকে হরি বলে পাইতে ভোজন।।
অধিকাংশ ধন দিলে বলিবেক হরি।
খেতে পেলে আর নাহি করিবেক চুরি।।
এত ভাবি সদাগর তারে দিল ধন।
রজত সহস্রমুদ্রা করিল অর্পণ।।
আশাতীত ধন পেয়ে আনন্দ বাড়িল।
দৃঢ় করে ব্রাহ্মণ বলিছে হরি বল।।
ধন লয়ে ভক্ত হ’য়ে দ্বিজ গেল বাড়ী।
ব্রাহ্মনীকে কহে পূর্ব্ব বুদ্ধি দিনু ছাড়ি।।
হরি বলে ধন পাই আরো পাই খেতে।
ইচ্ছা নাই আর যাই ডাকাতি করিতে।।
ব্রাহ্মণ বৃত্তান্ত তারে কহিল সকল।
ব্রাহ্মণব্রাহ্মনী মিলে বলে হরিবল।।
রাজ দূত তাহা শুনি রাজাকে জানায়।
শুনিয়া রাজার মন হরষিত হয়।।
রাজা বলে প্রজা যদি হইল বৈরাগী।
রাজভেট উপহার লও তার লাগি।।
দুই রাজদূত দুই রাজভেট ল’য়ে।
স্তব করে ব্রাহ্মণেরে রাজভেট দিয়ে।।
দ্বিজ ভাবে বৈষ্ণবের সাজের কি গুণ।
বেশ দেখে বৈশ্য মোর সেবায় নিপুণ।।
আরো যবে কৃষ্ণমন্ত্র করিনু গ্রহণ।
তাহা দেখি সদাগর মোরে দিল ধন।।
পরম বৈষ্ণব ধর্ম ধন্য ধন্য মানি।
রাজা দিল ভেট দূতে কহে স্তুতি বাণী।।
বিশুদ্ধ বৈরাগী আমি যখনে হইব।
নাহি জানি তখনে কি হ’ব কিনা হ’ব।।
এ হেন বৈরাগ্য আমি কবে বা পাইব।
কবে ব্রজে যাব আমি কবে দীন হ’ব।।
এ হেন বৈষ্ণব ধর্ম আমাকে ছাড়িয়া।
কোথা ছিল হরিনাম আমাকে বঞ্চিয়া।।
যখন হইল মম দস্যুবৃত্তি মন।
কোথায় বৈষ্ণব ধর্ম ছিলরে তখন।।
যে নামে জগৎ ভুলে প্রেমে মত্ত হ’য়ে।
সেই নাম মোরে ত্যাজে ছিল লুকাইয়ে।।
পেয়েছি তোমাকে যদি আর কি ছাড়িব।
যে দেশে তোমাকে পাব সেই দেশে যাব।।
আর না করিব আমি কর্ম দুরাচার।
অভেদ নাম-নামীন বুঝিলাম সার।।
দস্যুবৃত্তি করি নিত্য ভুঞ্জিয়াছি দুঃখ।
এক দিন বৈরাগী হইয়া কত সুখ।।
কল্য যারা আমাকে ক’রেছে দূর দূর।
তাহারা আদরে বলে বৈষ্ণব ঠাকুর।।
রাজ দূত দন্ড দিত আমাকে ধরিয়া।
রাজা মোরে দন্ড দিছে কারাগারে নিয়া।।
সেই রাজা সেই দূতে ব’য়ে দেয় ভেট।
বোধ হয় যমরাজা মাথা করে হেট।।
কিবা মন্ত্র লীলাজী দিলেন শিখাইয়া।
জগৎ বৈষ্ণব হো’ক আমাকে দেখিয়া।।
কিবা বৈষ্ণবের গুণ কহা নাহি যায়।
বেশ ধরিলেই মাত্র চোর সাধু হয়।।
একদিন মাত্র আমি সাধু সাজ পরি।
আর ফিরে মোর মনে না আইসে চুরি।।
একবার নাম নিলে যত পাপ হরে।
পাপীর কি শক্তি আছে তত পাপ করে।।
এই জন্যে নামে হ’ল ব্রহ্মাদেব দীক্ষে।
অভেদ নাম নামীন পাইনু পরীক্ষে।।
এই জন্যে নামে হৈল বৈষ্ণবী পার্বতী।
এই জন্য রত্নাকর ছাড়ে দস্যুবৃত্তি।।
নারায়ণ অংশে রত্নাকর জন্ম ধরে।
নামের নাহাত্ম্য জানাইতে পাপ করে।।
যার নাম সেই এই মাহাত্ম্য জানা’ল।
আর এক কথা মোর মনেতে হইল।।
জেনে তত্ত্ব নামে মত্ত শঙ্কর গোঁসাই।
যার নাম তার অঙ্গ তারাই তারাই।।
পাপী করে পাপ তাপ সাধুসঙ্গ লয়।
একবার নাম নিলে সর্ব্ব পাপ ক্ষয়।।
অন্ন কষ্ট ছলা করে বেশ ধরিলাম।
অনিচ্ছাতে নাম ল’য়ে বৈষ্ণব হৈলাম।।
আমি যে বৈষ্ণব হই আমি কেন কই।
ইহাতে কি আমি বড় অপরাধী হই।।
আমি যে বৈষ্ণব আমি যদি নাহি কই।
তাহা না বলিলে নামে গুণ থাকে কই।।
লীলাজী গুরু যে মম তার গুণ কই।
পরশ পরশে আমি বৈষ্ণব যে হই।।
পরশ পরশে যেন লৌহ হয় সোনা।
বৈষ্ণব পরশে কেন বৈষ্ণব হ’ব না।।
হাতে তালি দিয়া বলিল যে সাধু সব।
চোর ছিল দিজসুত হইল বৈষ্ণব।।
বৈষ্ণবের মুখপদ্ম বাক্য অখন্ডিত।
অই বলে আমি সাধু হইনু নিশ্চিত।।
খেতে সুতে বসিতে আমার চিন্তা নাই।
ভুক্তি দাসী লক্ষ্মীমাতা কুবের সেবাই।।
জীব সৃষ্টি করে সে কি আহার দিবে না।
নিরবধি কৃষ্ণপ্রেম করহ ভাবনা।।
যে কিছু দেখহ ভাই কৃষ্ণের সকল।
আর সব ধাঁ ধাঁ বাজী বল হরিবল।।
একদিন লীলাজীউ মহোৎসবে যেতে।
সদাগর বাটী যায় বহু শিষ্য সাথে।।
লীলাজীর মন হ’ল দস্যু ব্রাহ্মণেরে।
দিয়াছিনু মন্ত্র দেখে যাই সে কি করে।।
এতেক ভাবিয়া সাধু বাহুড়ী চলিল।
দস্যু শিষ্য বাটী এসে উপনীত হ’ল।।
দূরে থেকে লীলাজীকে করি দরশন।
উর্দ্ধবাহু করি নৃত্য করে’ছে ব্রাহ্মণ।।
ক্ষণে কক্ষবাদ্য ক্ষণে করে দন্ডবৎ।
লীলাজী চরণে নত হ’ল দন্ডবৎ।।
লীলাজীকে স্কন্ধে করি নাচিতে নাচিতে।
হরি হরি বলি ল’য়ে চলিল বাটিতে।।
রাজ ভেট সামগ্রী যতেক ছিল ঘরে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী তাতে গুরু সেবা করে।।
গ্রাম্য লোকে করে সুখে জয় জয় ধ্বনি।
খাও খাও লও লও এই মাত্র শুনি।।
ব্রাহ্মণের প্রেম দেখি বৈষ্ণব সকল।
গ্রাম্য লোক সঙ্গে মিশে বলে হরিবল।।
নগরবাসিনী রামাগণে বলে হরি।
সাধুসেবা জন্য আনে চা’ল তরকারী।।
সাধুসেবা মহোৎসব তাহাতে হইল।
দ্রব্যাদি উদ্বৃর্ত্ত আরো কতোই রহিল।।
সদাগরদত্ত সহস্রেক মুদ্রা ছিল।
লীলাজী চরণে দস্যু সব এনে দিল।।
লীলাজী বলিল সব দিলে যে আমায়।
খাইতে পরিতে বাপু তোর কি উপায়।।
বিপ্র বলে এতদিন দেখেছি খাইয়া।
খাইয়া ফুরাতে নারি আপনার দয়া।।
যে ধন আমারে প্রভু করেছেন দান।
ত্রিভুবনে ধন নাই তাহার সমান।।
সত্যভামা ব্রতকালে দান নিল মুনি।
উদ্ধব লিখিয়া দিল নাম চিন্তামণি।।
সে ধনমিশ্রিত রস যে বা করে পান।
সুস্বাদ নাহিক আর সে সুধা সমান।।
দয়া করি সেই সুধা খেতে দিলে মোরে।
পেট ভরে খেলে সুধা আরো ক্ষুধা বাড়ে।।
হেন যদি জ্ঞান করি আমি বড় দীন।
উচ্চ শৃঙ্গে টেনে তুলে তোমার কপিন।।
ভবগৃহে তব ভাবশয্যায় শয়ন।
নিদ্রা দেবী চৌকি দেন থাকিয়া চেতন।।
তব আশীর্ব্বাদে মোর বাস বহির্ব্বাস।
বাসে বাসে দেশে দেশে গৌরদেশে বাস।
রাজদূতে দণ্ড দিত ঘোর চোর জেনে।
দূত রাজাভেট দেয় রাজলক্ষ্মী সনে।।
তোমার মহিমা প্রভু জানিল সকলে।
কল্য চোর অদ্য সাধু তব কৃপা বলে।।
তব মন্ত্র বল এবে হইল প্রকাশ।
ব্রহ্মপদ হ’তে উচ্চপদ কৃষ্ণদাস।।
এ সব বৈভব দেখে মনে হয় হাসি।
ভক্তি সহ মুক্তি দেবী হইয়াছে দাসী।।
এত শুনি লীলাজীউ ধরি দিল কোল।
প্রেমানন্দে সাধুগণে বলে হরিবোল।।
গুরু কহে এবে কর তীর্থ পর্য্যটন।
দ্বিজ কহে তীর্থ-রাজ তব শ্রীচরণ।।
গুরু কহে সব লোকে করে গিয়া তীর্থ।
গয়া ধামে পিণ্ড দিলে ত্রিকুল পবিত্র।।
শিষ্য বলে কর্ণে মন্ত্র দিয়াছে যে মাত্র।
তদবধি কোটি কুল স্বর্গে করে নৃত্য।।
পতিতপাবন যত বৈষ্ণবসমাজ।
গেল দিন কহে দীন কবি-রসরাজ।।
শাপভ্রষ্টা ব্রাহ্মণীর
টিকটিকি রূপ ধারণ ও মোক্ষণ।
পয়ার।
গুরু সঙ্গে শিষ্য কহে মধুর বচন।
হেনকালে শুন এক আশ্চর্য ঘটন।।
দৈবে চাল হ’তে এক
টিকটিকি পড়ি।
গর্ভিণী অবস্থা গেল পেট ফেটে মরি।।
টিকটিকি মরে গুরু সাক্ষাতে পড়িয়া।
দ্বিজ কৃষ্ণদাস কাঁদে গড়াগড়ি দিয়া।।
গুরুর সম্মুখে কেন জীব হত্যা হ’ল।
পেট ফেটে গড়াগড়ি কত কষ্টে ম’ল।।
তাহাতে এতেক কষ্ট টিকটিকি পেল।
কি হ’ল কি হ’ল বলে কাঁদিতে লাগিল।।
এত কষ্টে গুরু হে জ্যোষ্ঠির মৃত্যু হয়।
দেখে দুঃখে বুক ফাটে প্রাণ বাহিরায়।।
হরি হরি বলি দ্বিজ কাঁদিতে লাগিল।
ভগ্ন ডিম্ব হ’তে
ছানা বাহির হইল।।
গুরু কহে ছানা বাঁচে আর কাঁদ বৃথা।
বিপ্র বলে কষ্ট পেল এই মম ব্যথা।।
লীলাজী বলেন বাছা আর কাঁদ মিছে।
কষ্ট নহে জ্যেষ্ঠি মরে কৃষ্ণ পাইয়াছে।।
সাধু সঙ্গে মধুমাখা কৃষ্ণ আলাপন।
হেন মরা ভবে বল মরে কোন জন।।
বিপ্র বলে তবে ওর সার্থক জীবন।
মৃতদেহ সৎকার করহ এখন।।
গুরু বলে মৃতদেহ দেহ গঙ্গাজলে।
বিপ্র দিল সাধু পদ ধৌত জলে ফেলে।।
অমনি জ্যেষ্ঠির দেহ হ’য়ে
গেল লয়।
মৃতদেহ না দেখিয়া সকলে বিস্ময়।।
কেহ বলে মৃতদেহ কি হ’ল কি
হ’ল।
কেহ বলে পাদোদকে প্লাবিত হইল।।
বলিতে বলিতে জল শুকাইয়া যায়।
মৃতদেহ না দেখিয়া সকলে বিস্ময়।।
বৈষ্ণবেরা বলে দেহ মিশে গেল নীরে।
হরি বলে প্রেমানন্দে সবে নৃত্য করে।।
এমন সময় শূন্যে হ’ল
দৈববাণী।
আমি জ্যেষ্ঠি পূর্ব জন্মে ছিলাম ব্রাহ্মণী।।
স্বামী নাম ছিল রাম কেবল ব্রাহ্মণ।
সর্বদা করিত সাধু বৈষ্ণব সেবন।।
বড় রূপবতী আমি তখনে ছিলাম।
রূপের গৌরবে স্বামী নাহি মানিতাম।।
বৈষ্ণব সেবায় আমি ছিলাম কপট।
সর্বদা স্বামীর সঙ্গে করিতাম হট।।
একদিন মাধ্যাহ্নিক ভোজনান্ত কালে।
এক সাধু গৃহে এসে উপনীত হ’লে।।
স্বামী গিয়া বৈষ্ণবের পূজিল চরণ।
আমাকে বলিল শীঘ্র করগে রন্ধন।।
আমি বলি এই আমি করিনু রন্ধন।
অগ্নিতাপ আর মম না সহে এখন।।
স্বামী সঙ্গে ক্রোধভরে কথোপকথন।
বৈষ্ণব সহিতে করি স্বামীকে ভর্ৎসন।।
স্বামী কহে সাধুসেবা জন্যে টকটকি।
জন্মান্তরে নিশ্চয় হইবি টিকটিকি।।
কতদিন পরে মম হইল মরণ।
এবে জ্যেষ্ঠিরূপে মোর জনম ধারণ।।
নানা ঠাই ভ্রমিয়া আইনু এই ঘরে।
দেখি এই বিপ্র সাধু সাধুসেবা করে।।
সাধু সঙ্গে নাম সংকীর্তন যবে হয়।
সেই প্রেম নাম এসে লাগে মোর গায়।।
শরীর দ্রবিল মম বলে হরি হরি।
ইচ্ছা হ’ল এই প্রেমমধ্যে পড়ে মরি।।
নামমন্ত্র বীজ রস ঢোকে ঢোকে খাই।
ইচ্ছাতে হইল ডিম্ব সঙ্গ করি নাই।।
ইচ্ছা হ’ল সংকীর্তনে পরমাণু থাক।
উদর হইতে মম ডিম্ব পড়ে যাক।।
আছাড়িয়া অঙ্গ ছাড়ি পড়িনু প্রত্যক্ষে।
সে ফল পাইনু সাধুসঙ্গ কল্প বৃক্ষে।।
এই আমি সেই মুনি পত্নী যে ছিলাম।
নিজ মনসিজ বীজ কীর্তনে গেলাম।।
উদকে পড়িয়া দেহ উদকে মিশিল।
ধনঞ্জয় বায়ু মোরে উর্দ্ধে আকর্ষিল।।
এবে আমি দিব্য দেহ করিয়া ধারণ।
পুষ্পরথে চড়ি করি বৈকুণ্ঠে গমন।।
এই কথা প্রভুর মুখে করিয়া শ্রবণ।
নৃত্য করে প্রভুর যতেক ভক্তগণ।।
প্রভুর ভকত এক নামেতে মঙ্গল।
কক্ষবাদ্য করি বলে জয় হরিবল।।
রামচাঁদ আর রামকুমার ভকত।
ধরণী লু’টায়ে কাঁদে শুনি কথামৃত।।
গোবিন্দ মতুয়া করে বাহু আস্ফোটন।
নৃত্য করে হরি বলে করেন রোদন।।
প্রেম সম্বরণ করি বাটীর নিম্নেতে।
নিভৃতে বসিল পরে গম্ভীর ভাবেতে।।
উথলিল ভক্তদের চিন্তা তরঙ্গিণী।
কবি কহে সাধু মুখে মধু রস বাণী।।
প্রভুর ধর্ম কন্যার
বিবরণ।
পয়ার।
ওলপুর ছিল এক দাসী দুশ্চারিণী।
চৌধুরী বাটীতে সেই ছিল চাকরাণী।।
বাড়ীর কর্তার সঙ্গে বিবাদ করিয়া।
বের হ’ল মোটা মালা তিলক পরিয়া।।
কক্ষে এক ভিক্ষাঝুলি করিয়া ধারণ।
ভিক্ষা করি সেই নারী করয় ভ্রমণ।।
বৈষ্ণবী বেশ ধরি হ’য়ে
পরিপাটি।
উপনীত হ’ল গিয়া ঠাকুরের বাটী।।
দণ্ডবৎ করে গিয়া লক্ষ্মীমার পায়।
বলে মাগো কিছুদিন থাকিব হেথায়।।
একা একা কর মাগো সংসারের কার্য।
আমাকে করগো দাসী কর না ত্যজ্য।।
তোমার নিকটে থাকি ঘুচাইব তাপ।
তুমি মম জননী ঠাকুর মম বাপ।।
শুনি লক্ষ্মীমাতা বলে ঠাকুরের ঠাই।
এসেছে মেয়েটি এরে রাখিবারে চাই।।
ঠাকুর বলেন প্রিয়ে! যে ইচ্ছা তোমার।
থাকে থাক যায় যাক যে ইচ্ছা উহার।।
দাসী বলে এসেছিত অবশ্যই থাকিব।
হেন মাতা পিতা আর কোথা গিয়া পা’ব।।
আমার বলিতে আর নাহিক জগতে।
ঠাকুরাণী মাতা মম তুমি মোর পিতে।।
মহাপ্রভু বলে তবে শান্তি দেবী ঠাই।
তোমার ইচ্ছে যেমন মম ইচ্ছা তাই।।
মেয়ে ছেলে আমি তার নাহি ধারি ধার।
রাখ বা না রাখ এরে যে ইচ্ছা তোমার।।
ঠাকুরাণী বলে পিতা বলেছে তোমায়।
আমাকে বলিয়া মাতা লোটাইল পায়।।
তাতে এত বেশী লোক নাহি তব ঘরে।
অবশ্য রাখিতে হয় শরণাগতরে।।
ঠাকুরাণী বলে বাছা তুমি মম মেয়ে।
গৃহে যাও খাও লও কাজ কর গিয়ে।।
অমনি উঠিয়া দাসী গৃহে প্রবেশিল।
কাজ করে খায় পরে কত দিন গেল।।
আপন ভাবিয়া দাসী করে প্রাণপণ।
গৃহকার্য করে যেন আপন আপন।।
এইভাবে দাসী থাকে কিছুদিন যায়।
দাসীর নিকটে মাতা নানা কথা কয়।।
শরীক বিভাগকালে যে টাকা পাইল।
ধর্ম মেয়ে কাছে মাতা সকল বলিল।।
বাহির করিল মাতা মেয়ের সাক্ষাতে।
টাকা তিনশত রাখে পুরিয়া থলিতে।।
বড় এক হাঁড়ি মাঝে টাকা রাখে সেরে।
তাহার মধ্যেতে রাখে ধান্য পূর্ণ করে।।
নীচের হাঁড়িতে টাকা তাতে ধান্য পূর্ণ পুরে।
আর দুই ভাণ্ড রাখে তাহার উপরে।।
কাজ কর্ম করে মাতা কহে নানা কথা।
কন্যার প্রতি মাতার বাড়িল মমতা।।
যে খানেতে তিনশত টাকা সেরে রাখে।
সময় সময় গিয়ে মায় ঝিয়ে দেখে।।
এইভাবে কন্যাকে রাখেন সমাদরে।
নিজের কন্যার মত মা ভাবেন তারে।।
আড়াই প্রহরকালে ভোজন করিয়ে।
বসিলেন প্রভু যত ভক্তবৃন্দ ল’য়ে।।
নামপদ গানে হৃষ্ট ইষ্ট গোষ্ঠ করে।
কন্যা গৃহে রাখি মাতা যান কার্যান্তরে।।
বেলা প্রহরেক আছে এমন সময়।
ধর্মকন্যা দাসী ছিল একা সে আলয়।।
যে হাঁড়িতে ধান্য ছিল তাহা ভূমে ঢালি।
দাসী কন্যা টাকা ঝা’ল লয়ে
গেল চলি।।
ঝা’ল কোমরেতে বাঁধে এমন সময়।
লক্ষ্মীমাতা গৃহদ্বারে হ’লেন
উদয়।।
মাতা ব’লে ধান্য ঢালি কি করিস ঘরে।
বলিতে বলিতে দাসী চলিল বাহিরে।।
বাহিরিতে গিয়া দাসী দ্রুত গতি ধায়।
দৌড় দিয়া পড়িল সে বাড়ীর নীচায়।।
বৃক্ষ আদি নাহি আর নাহি তৃণ বন।
বসতি বাটীর নীচে ধান্য উপার্জন।।
পালাইতে নাহি পারে বেগে চলি যায়।
দু’চারি পা যায় আর ফিরে ফিরে
চায়।।
লক্ষ্মীমাতা বলে এত করিয়া মমতা।
মোরে থুয়ে টাকা ল’য়ে
তুই যাস কোথা।।
আরো বেগে ধায় দাসী উত্তর না দেয়।
ঠাকুরাণী গিয়া তাহা ঠাকুরে জানায়।।
আপনি আছেন হেথা দাসী ছিল ঘরে।
আমি গিয়াছিনু মেয়ে রেখে কার্যান্তরে।।
শূন্য ঘর পেয়ে গেল টাকা ল’য়ে
চলি।
ধান্যভাণ্ডে টাকা ছিল ধান্য ফেলি ঢালি।।
অই যায় চোরা কন্যা টাকা ল’য়ে
যায়।
দ্রুতগতি যায় আর ফিরে ফিরে চায়।।
এই জন্য বুঝি মাতা পিতা ব’লেছিল।
তিনশত টাকা ল’য়ে অই
যে চলিল।।
কেহ বলে টাকা নিল চোর ধরে আনি।
ঠাকুর বলেন নাহি বল হেন বাণী।।
পিতার থাকিলে ধন পুত্র কন্যা পায়।
ধন ধান্যে ইহা বই আর কিবা হয়।।
ছিল ধন নিল কন্যা তাতে কিবা ক্ষতি।
দেখি ধন বিনা মোর কিবা হয় গতি।।
নিজ কন্যা হ’তে
আরো ধর্মকন্যা ভারি।
কন্যা নিল পিতৃধন কেবা কয় চুরি।।
ধর্ম কন্যা ধর্মে দিল ধর্মে নিল ধন।
ধর্মের নিকটে নাহি অধর্ম কখন।।
ধর্ম করিয়াছে কর্ম অধর্ম এ নয়।
কন্যাকে বলিলে চোর অধর্ম সঞ্চয়।।
আগে কন্যা বলি যারে করিলা বিশ্বাস।
এবে চোরা বলিলে বিশ্বাস ধর্ম নাশ।।
লক্ষ্মীদেবী থাকে সদা ধর্মের আশ্রয়।
ধর্মের সহিত লক্ষ্মী অর্থ সে যোগায়।।
এই ধন ছিল সেই লক্ষ্মীর গোচরে।
সেই লক্ষ্মী এই ধন দেখাইল তারে।।
সর্বান্তর্যামিনী লক্ষ্মী সব জানতে পারে।
যেনে সেই লক্ষ্মী কেন যান স্থানান্তরে।।
যবে টাকা ল’য়ে
যায় লক্ষ্মী দৃষ্টি করে।
দেখে কেন সে লক্ষ্মী ধরিল না তারে।।
ধর্ম মাতা পিতা যার লক্ষ্মী নারায়ণ।
সে কেন পাবে না বল এ সামান্য ধন।।
কন্যা নিল টাকা তাত’ পরে
লয় নাই।
তব মনে যাহা প্রিয়ে মম মনে তাই।।
ধন উপার্জন করে বসিয়া খাইতে।
দেখি মোরা ধন বিনে পাই কিনা খেতে।।
খেতে কি দেবে না কৃষ্ণ সৃষ্টি করে জীব।
এই ধন বিনা মোরা হব কি গরীব।।
কোথা হতে আসে ধন কোথা চলে যায়।
কেবা দেয় কেবা লয় কে চিনে তাহায়।।
এই ধন ফিরিতেছে সব ঘরে ঘরে।
কোথাকার ধন ইহা কেবা রক্ষা করে।।
ধনেশ কুবের ছিল কনক লঙ্কায়।
ধনচ্যুত করি তাকে রাবণ তাড়ায়।।
রাবণের গৃহে লক্ষ্মী করিত রন্ধন।
ইন্দ্র মালাকার অশ্ব রক্ষক শমন।।
বিষ্ণু অবতার রাম রাজার কুমার।
ভার্যাসহ বনবাসী চৌদ্দ বৎসর।।
কার লঙ্কা কার হ’ল
কেবা নিল ধন।
কোথা সে ত্রিলোকজয়ী লঙ্কেশ রাবণ।।
রাজপুত্রবধূ রাজকন্যা সেই সীতা।
বৈকুণ্ঠ-ঈশ্বরী দেবী শ্রীরাম বণিতা।।
কোথা র’ল রাজ্য ধন কোথা র’ল পতি।
আজন্ম বনবাসিনী কতই দুর্গতি।।
যদি বলি ঈশ্বরের লীলা এ সকল।
সত্য কিন্তু কর্ম অনুসারে ফলে ফল।।
একই মানুষ সব একই শহরে।
একই ব্যবসা করে একই বাজারে।।
কেহ দুঃখী কেহ সুখী কেহ পরাধীন।
কেহ লক্ষপতি হয়, কার
হয় ঋণ।।
অর্থে কিংবা স্বার্থ শুধু অনর্থের গোল।
কৃষ্ণপদ স্বার্থ ভেবে বল হরি বল।।
একদিন লক্ষ্মীমাতা বাক্যের প্রসঙ্গে।
মধুমাখা বাক্যে ঠাকুরকে বলে রঙ্গে।।
লক্ষ্মীমাতা বলে প্রভু নাহি কর কার্য।
পুত্র কন্যা জন্মিয়াছে নাহি কর গ্রাহ্য।।
ঠাকুরালী কর সদা ল’য়ে
ভক্তগণ।
কেমনে চলিবে এদের ভরণ পোষণ।।
ইহাদের কি হইবে নাহি ভাব মনে।
আমি একা কি করিব তব দয়া বিনে।।
ঠাকুর বলেন আমি কি কার্য করিব।
যাহা করে জগবন্ধু গৃহে ব’সে
রব।।
জমি ভূমি কৃষিকার্য কিছুই না মানি।
জনমে জনমে মাত্র গরুরাখা জানি।।
জমি জমা চাষ কার্য কিছু না করিব।
এইমত ঠাকুরালী করিয়া ফিরিব।।
দেখি ঈশ্বরের দয়া হয় কিনা হয়।
দেখি প্রভু মোরে খেতে, দেয়
কিনা দেয়।।
ইহা বলি মহাপ্রভু ফিরিয়া ঘুরিয়া।
দুই তিন দিন ওঢ়াকাঁদিতে রহিয়া।।
নিজবাটী না আইসে রহে অন্য ঘর।
চারিদিন পরে গেল রাউৎখামার।।
রাউৎখামার রামচাঁদ বাড়ী যান।
রামচাঁদ প্রভুকে করেন হরিজ্ঞান।।
রাউৎখামার প্রভুর বিহার বিরাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
রাউৎখামার গ্রামে
প্রভুত্ব প্রকাশ ও ভক্তসঙ্গে নিজালয় গমন।
পয়ার
আত্মা সমর্পিয়া ভক্তি করে রামচাঁদ।
ভক্তিতে হ’লেন বাধ্য প্রভু হরিচাঁদ।।
শ্রীবংশীবদন আর শ্রীরাম সুন্দর।
বাঁশীরাম কাশীরাম শ্রীরাম কিশোর।।
বালাদের বাড়ী দিন দুদিন থাকিল।
বালারা সগণসহ মাতিয়া উঠিল।। (স্বজনসহ)
ভক্তগণ সঙ্গে করি হরিপ্রেম রসে।
নাম গান ভাবে মত্ত মনের উল্লাসে।।
দেশ ভরি শব্দ হ’ল
মধুর মধুর।
যশোমন্ত ছেলে হরি হ’য়েছে
ঠাকুর।।
রোগযুক্ত লোক যত প্রভুর স্থানে যায়।
কীর্তনের ধুলা অঙ্গে মাখিবারে কয়।।
অমনি সারিয়া ব্যাধি করে সংকীর্তন।
কেহ বা লোটায়ে ধ’রে
প্রভুর চরণ।।
কেহ কেহ মনে মনে করেন মানসা।
ব্যাধিমুক্ত হোক মোর পূর্ণ হোক আশা।।
হরিলুঠ দেব এনে শ্রীহরির স্থানে।
কেহ কেহ মুদ্রা দিব মনে মনে মানে।।
কীর্তনে আসিয়া কেহ গায়ে মাখে ধুলি।
রোগমুক্ত হ’য়ে নাচে
দুই বাহু তুলি।।
কখন কখন প্রভু নিজ ভক্ত সঙ্গে।
হাসে কাঁদে নাচে গায় কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।
কখন কখন প্রভু নিশ্চিন্ত থাকয়।
কোন ব্যাধিযুক্ত লোক এমন সময়।।
রোগীরা মানসা সব করিত হরিষে।
আরোগ্য হইলে ব্যাধি দাস হ’ব
এসে।।
কেহ বা কহিত দাস হইনু এখনে।
মনঃপ্রাণ দেহ সপিলাম শ্রীচরণে।।
দেহের এ রোগ মম হউক আরোগ্য।
অর্থ কিছু তাম্রমুদ্রা দিয়া যাব শীঘ্র।।
কেহ বা কহিত দিব সোয়া পাঁচ আনা।
কেহ বা কহিত আমি দিব সোয়া আনা।।
কেহ বা কহিত আমি দিব পাঁচসিকা।
কেহ বা কহিত দিব সোয়া পাঁচসিকা।।
কেহ বা যাইত মনে মানসা করিয়া।
আরোগ্য হইলে ব্যাধি দিতেন আনিয়া।।
প্রভুর মুখের বাক্যে রোগমুক্ত হয়।
এইমত রোগী কত আসে আর যায়।।
পাঁচ সাত গ্রামে ক্রমে শব্দ হ’ল
ভারি।
কত লোক আসিত দেখিব বলে হরি।।
যেখানে থাকিত প্রভু ল’য়ে
ভক্তগণ।
চাউল মজুদ হত দুই তিন মণ।। (হ’ল)
টাকাগুলি যত সব রোগীরা আনিত।
কতক হইত ব্যয় কতক থাকিত।।
প্রভুর সম্মুখে এনে হাজির করিত।
ঠাকুর তাহার কিছু হাতে না ধরিত।।
ভক্তগণ রাখিতেন আর আর স্থানে।
হরিলুঠ কতজনে দিত সংকীর্তনে।।
এইভাবে প্রভু রহিলেন তিনমাস।
একদিন ভক্তগণে বসি প্রভু পাশ।।
প্রভুর নিকটে কহে করজোড় করি।
যাইব আমরা সবে আপনার বাড়ী।।
প্রভু বলে কেবা আত্ম কেবা কার পর।
আমি কার কে আমার মায়া বাড়ী ঘর।।
ভক্তগণে বলে প্রভু! দয়া হয় যদি।
ল’য়ে চল সকলে শ্রীধাম
ওঢ়াকাঁদি।।
শুনিয়া হাসিয়া কয় প্রভু ইচ্ছাময়।
কর ইচ্ছা যাহা তোমাদের ইচ্ছা হয়।।
হ’য়ে তুষ্ট মহাহৃষ্ট পরস্পর কয়।
হ’য়ে তুষ্ট মহাহৃষ্ট পরস্পর কয়।
শ্রীধামে কে যাবি তোরা আয় আয় আয়।।
এত বলি সবে মিলি সাজাল তরণী।
যার বাড়ী যাহা ছিল দ্রব্য দিল আনি।।
তাম্রমুদ্রা রৌপ্যমুদ্রা কেহ দিল ধান্য।
কেহ দধি কেহ ঘৃত পাত্র পরিপূর্ণ।।
কেহ দিল তরকারি কুষ্মাণ্ড কদলী।
পক্ক রম্ভা থোড় মোচা পদমূল কলি।।
ছোলা বুট মুগ মাস মটর ডাউল।
বস্তা দশ পরিপূর্ণ নূতন চাউল।।
ছানা দধি সন্দেশাদি গুড় দশখান।
আতপ তণ্ডুল দশমণ পরিমাণ।।
দুইশত নারিকেল হাজার সুপারী।
পাঁচ হাত মুখে এক সাজাইল তরী।।
তরী পরিপূর্ণ করি ঠাকুরে উঠায়।
হরি বলে তরী খুলে ওঢ়াকাঁদি যায়।।
ওঢ়াকাঁদি ঘাটে তরী লাগাইল এসে।
ভক্তগণে দ্রব্য আনে ঠাকুরের বাসে।।
প্রভু যায় আগু আগু পিছে ভক্তগণ।
যাইতে আসিতে পথে করে সংকীর্তন।।
ঠাকুর আসিয়া বসিলেন নিজ ঘরে।
ভক্তগণ দ্রব্য এনে রাখে ভারে ভারে।।
টাকা সিকি আধুলী তাম্রের মুদ্রা যত।
সব সুদ্ধ পরিমাণ টাকা একশত।।
প্রিয়ভক্ত রামচাঁদ সেই টাকা ল’য়ে।
লক্ষ্মীমার নিকটেতে দিলেন আনিয়ে।।
ঠাকুর বলেন তবে ইহা তুলে লও।
কি তব বাসনা মনে আর কিবা চাও।।
লক্ষ্মীমাতা বলে মম বাসনা কি আর।
চিরদাসী অভিলাষী শ্রীপদ তোমার।।
ঐশ্বর্য প্রকাশ হল ভকত সমাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
No comments:
Post a Comment