শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
১৭ অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (২য় অংশ) - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ১৭ অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (২য় অংশ)


                     অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (২য় অংশ)

    সূর্যনারায়ণের সর্পাঘাত
    পয়ার
    এবে শুন স্বামী হীরামন গুণ কথা।
    লেখা আছে ডুমুরিয়া পূর্বের বারতা।।
    স্বামী হীরামন যবে ডুমুরিয়া গেল।
    সূর্য নারায়ণ যে তামাক সেজে দিল।।
    কলিকা ঢালিয়া পরে মৃত্তিকা উপরে।
    বলে এই তামাক রাখ যতন করে।।
    তামাক যতন করে গৃহেতে রাখিস।
    সাপে কামড়ালে, খেলে সেরে যাবে বিষ।।
    সেই যে তামাকটুকু যতন করিয়া
    ঝাঁপিয়া ভিতরে রাখে পুটলী বাঁধিয়া।।
    সাতাশে তারিখ চৈত্র মাস বুধবার।
    বেদগ্রামে যাইবেন গান গাইবার।।
    বাটী গিয়া বলে মোরে শীঘ্র দেও খেতে।
    গান গাইবারে হবে বেদগ্রামে যেতে।।
    ইহা বলি ব্যস্ত হয়ে হইল উতলা
    জাগ দেওয়া তিল ছিল ভেঙ্গে দিল পালা।।
    পালা ভাঙ্গি উঠানেতে দিল ছড়াইয়া।
    তার মধ্যে সর্প ছিল দংশিল আসিয়া।।
    দেখিল গোক্ষুর সাপ গেল দৌড়াইয়ে।
    বিষের জ্বালায় চক্ষু গেল লাল হয়ে।।
    তাহার অগ্রজ ভ্রাতা সে উমাচরণ।
    ব্যস্ত হয়ে বলে ওঝা আন একজন।।
    নোয়া ভাই তাহার যে রামচাঁদ ছিল।
    ইতিপূর্বে সর্পাঘাতে সে জন মরিল।।
    ইনিও মরিল বুঝি সাপের দংশনে।
    শীঘ্র আন ওঝা নহে বাঁচা নাহি প্রাণে।।
    গোলোক ওঝা আনিতে ধাইয়া চলিল।
    দেখে সূর্যনারায়ণ নিষেধ করিল।।
    যে তামাক দিয়াছিল পাগল গোঁসাই।
    খাইলে সারিবে বিষ আন তাই খাই।।
    ঝাঁপি হতে তামাক বাহির করে দিল।
    তামাক গালেতে দিয়া জল খাওয়াল।।
    নেশা হয়ে সেইভাবে দণ্ড চারি ছিল।
    অমনি সাপের বিষ নির্বিষ হইল।।
    স্নান করি আহার করিল ততক্ষণ।
    বেদগ্রামে কবিগানে করিল গমন।।
    তামাক দিলেন মুখে নির্বিষ বলিয়ে।
    গোক্ষুরের খর বিষ গেল নিশ হয়ে।।
    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ভক্তের আখ্যান।
    রচিল তারক ভক্ত চরিত্র সুগান।।

    প্রেম প্লাবন ও বিনা রতিতে কর্ণের জন্ম
    পয়ার
    বহিল প্রেমের বন্যা ওঢ়াকাঁদি হতে।
    দ্বিজ মুচি শৌচাশুচি ডুবে গেল তাতে।।
    আইল প্রেমের বন্যা বীজ হল নাশ।
    তাহা দেখি পঞ্চ জনের বাড়িল উল্লাস।।
    ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র চারি জাতি।
    রেচক পূরক কুম্ভকাদি নেতি ধৌতি।।
    শাক্ত শৈব গাণপত্য বৈষ্ণব তাপন।
    সবে করে সম পুত প্রণয় প্লাবন।।
    কল্‌ কল্‌ শব্দ ওঢ়াকাঁদি গোলাঘাটে।
    হতাশ নিঃশ্বাসে সদা সে তুফান উঠে।।
    ক্ষত্র-বংশ জাত রাম ভরত ত্যজি দেশ।
    পাদপদ্ম ভৃঙ্গ বিশ্বনাথ দরবেশ।।
    দেশে কি বিদেশ বেগে চলিল তুফান
    যবন পাবনকারী হরিপ্রেম বাণ।।
    রাউৎখামার আর গ্রাম মল্লকাঁদি।
    হরি দরশনে সবে যায় ওঢ়াকাঁদি।।
    নারিকেলবাড়ী মাতে সহ সাহাপুর।
    সুরগ্রাম বারখাদিয়া গান্দিয়াসুর।।
    হরমোহন বাড়ই গোপাল বিশ্বাস।
    ঠাকুরে ঈশ্বর বলি করিল প্রকাশ।।
    গোপাল নেপাল তারা দুটি সহোদর।
    গোলোক গোঁসাই জয় গায় নিরন্তর।।
    ঘোষালকাঁদি নিবাসী মহিমাচরণ।
    সকলে মাতিয়া করে নাম সংকীর্তন।।
    ঠাকুর দেখিয়া তারা প্রেমেতে মাতিয়া।
    নয়ন মুদিয়া রাখে হৃদয় ধরিয়া।।
    মল্লকাঁদি গ্রামবাসী মাতিল সকল।
    সকালে বিকালে বলে জয় হরিবোল।।
    সেই সব মহাভাব অগ্রে লেখা আছে।
    হীরামন যেইরূপ মাতিয়া উঠিছে।।
    সেই সময়েতে যত মহাভাব হয়।
    মৃত্যুঞ্জয় ভবনেতে আগে লেখা যায়।।
    শ্রীনিতাই চৈতন্য অদ্বৈত তিন ভাই।
    তাহাদের প্রেমভক্তি তুলনাই নাই।।
    নিত্যানন্দ পুত্র যিনি মৃত্যুঞ্জয় নাম।
    চৈতন্যের দুটি পুত্র অতি গুণধাম।।
    রামকৃষ্ণ জ্যেষ্ঠ ছোট রামনারায়ণ।
    হরিচাঁদ গতপ্রাণ তারা দুই জন।।
    এক মন এক ভাব নাহি ব্যতিক্রম।
    ঠাকুরের ভক্ত বৃন্দাবনের নিয়ম।
    রামদেব মহাদেব অদ্বৈতের পুত্র।
    ঠাকুরের ভক্ত হয় পরম পবিত্র।।
    এই বাড়ী সবে মিলে হল হরিভক্ত।
    মৃত্যুঞ্জয় সঙ্গে মত্ত সকলে থাকিত।।
    রামকৃষ্ণ নির্জনেতে যখন থাকিত।
    আরোপে ঠাকুররূপ নিরীক্ষে দেখিত।।
    ওঢ়াকাঁদি যে ভাবেতে ঠাকুর থাকিত।
    বাটীতে থাকিয়া রামকৃষ্ণ তা জানিত।।
    রামনারায়ণ করে ঠাকুরের ধ্যান।
    একদিনে ঠাকুর বলেন তার স্থান।।
    শোন বাছা তোরে নিতে পারিবে না যম।
    সপ্তবর্ষ অনিদ্রিত কর এ নিয়ম।।
    তাহা শুনি নিদ্রা ত্যজে মনে হয়ে হর্ষ।
    মহাযোগী নিদ্রা নাহি যান সপ্তবর্ষ।।
    হেন হেন মহাজন এই বংশে রয়।
    এই বংশে রামতনু সাধু অতিশয়।।
    জনমিয়া নারীসঙ্গ না করেন তিনি।
    বিবাহ করেছে মাত্র স্পর্শে না রমণী।।
    ঠাকুরানী মনে করে পুত্রের কামনা।
    সাধু বলে স্ত্রী ক্রিয়া করিতে পারিব না।।
    ঠাকুরানী ওঢ়াকাঁদি যাইয়া বলিল।
    একটি পুত্রের মম কামনা রহিল।।
    ঠাকুর বলেন আমি পারি না বলিতে।
    যে লোকের মন নাই স্ত্রীসঙ্গ করিতে।।
    স্ত্রীসঙ্গ করিতে যার নাহি লয় মন।
    তাহাকে কেমনে বলি হেন কুবচন।।
    তবে যদি সাধ কর পুত্র কামনায়।
    থাকগে নির্জনে রামতনুর সেবায়।।
    নিদ্রা না যাইয়া যদি থাকিবারে পার।
    এক পুত্র হবে তব দিলাম এ বর।।
    পঞ্চ বর্ষ নিশিদিনে অনিদ্রিতা রয়ে।
    তনুর চরণ পার্শ্বে রাত্রিতে বসিয়ে।।
    পতি প্রতি রতি মতি প্রীতি অতিশয়।
    পুত্রেষ্টি যজ্ঞের ফল তাতে পাওয়া যায়।।
    শুনিয়াছি শতানন্দ অস্তিকের জন্ম।
    পুত্র পাবে কর যদি সেইরূপ কর্ম।।
    তবে তব পুত্র হবে বিনা সঙ্গমেতে।
    বাঞ্ছাপূর্ণ হবে তব সেই পুত্র হতে।।
    একদিন রামতনু গেল ওঢ়াকাঁদি।
    ঠাকুর বলেন রামতনু শুন বিধি।
    তব নারী করে এক পুত্র আকিঞ্চন।
    আমি কহিয়াছি এক নিগুঢ় কারণ।।
    পঞ্চ বৎসরের মধ্যে নিদ্রা নাহি যাবে।
    বিনা সঙ্গমেতে এক সন্তান জন্মিবে।।
    পঞ্চবর্ষ পূর্ণ হলে কনিষ্ঠ অঙ্গুলি।
    নাভি পদ্মে স্পর্শ কর কর্ণ কর্ণ বলি।।
    তা হলে ঠাকুরানীর বাঞ্ছা হবে পূর্ণ।
    সেই পুত্র হলে তার নাম রেখ কর্ণ।।
    রামতনু শস্যাদির শীল রাখিতেন।
    মাঠে গিয়া ফুঁক দিয়া শিঙ্গা বাজাতেন।।
    একা গিয়া ধান কিংবা তিলের ডাঙ্গায়।
    শীল যেন নাহি পড়ে বলিত তথায়।।
    আমার মহান মধ্যে ধান আর তিল।
    এর মধ্যে ইন্দ্রবেদ না ফেলিও শীল।।
    এতবলি শিঙ্গা ধরি ধ্বনি দিত তায়।
    পড়িত না শীল হরিচাঁদের আজ্ঞায়।।
    হেন সাধু ঠাকুরের আজ্ঞামাত্র রাখে।
    পাদ পার্শ্বে নারী বসা সাধু শুয়ে থাকে।।
    পঞ্চবর্ষ পরিপূর্ণ হইল যখনে।
    নাভিতে অমৃতাঙ্গুলি স্পর্শিল তখনে।।
    সেই হতে ভাগ্যবতী পুত্রবতী হল।
    বিনা রমণেতে এক পুত্র জনমিল।।
    সেইত পুত্রের নাম রাখে কর্ণধর।
    রচিল তারকচন্দ্র কবি সরকার।।

    দেবী তীর্থমণির উপাখ্যান
    পয়ার
    রামকৃষ্ণ চারি পুত্র জ্যেষ্ঠ মহানন্দ।
    শ্রীকুঞ্জবিহারী রাসবিহারী আনন্দ।।
    রামকৃষ্ণ অনুজ শ্রীরামনারায়ণ।
    তার হল পঞ্চপুত্র হরি পরায়ণ।।
    নামে মত্ত বালা বংশ কৃষ্ণপুর গ্রামে।
    সাধু কোটিশ্বর আর ধনঞ্জয় নামে।।
    মতুয়া হইল সবে বলে হরি বলা।
    স্বজাতি সমাজে বাদ রল যত বালা।।
    তাহারা বলেন মোরা শঙ্কা করি কায়।
    হরিনাম ত্যজিব কি স্বজাতির ভয়।।
    হরিবলে কেন হীনবীর্য হয়ে রব।
    সমাজিতে ত্যজ্য করে হরিবোলা হব।।
    মাতিয়াছি মহাপ্রভু হরিচাঁদ নামে।
    নমঃশূদ্র তুচ্ছ কথা ডরি না সে যমে।।
    বাবা হরিচাঁদের করুণা যদি হয়
    বালাবংশ কুলমান কিছুই না চায়।।
    হরি প্রেম বন্যা এসে কূল গেছে ভেসে।
    জাতি মোরা হরিবোলা আর জাতি কিসে।।
    সাধুর ভগিনী ধনী তীর্থমণি কয়।
    তিনি কন হরিবোলা কারে করে ভয়।।
    মাতিল পুরুষ নারী ভয় নাই মনে।
    অভক্তের ভয় কিসে মানিনে শমনে।।
    অন্যে বলে জাতিনাশা আরো দর্প করে।
    পাষণ্ডীরা মতোদিগে যায় মারিবারে।।
    তাহা শুনি তীর্থমণি রাগে হুতাশন।
    বলে আমি দলিব সে পাষণ্ডীর গণ।।
    একদিন বেকি দাও করেতে করিয়া।
    বলে যে আসিবি তারে ফেলিব কাটিয়া।।
    ক্রোধিতা হইল দেবী যেন উগ্রচণ্ডা।
    বেকি দাও হাতে নিল যেন খর খাণ্ডা।।
    তাহা দেখে ভয় পেল যত পাষণ্ডীরা।
    ভীত হয়ে উত্তর না করিল তাহারা।।
    মেয়ের স্বভাব নাইয়ে হরিবোলা।
    সে কারণে লোকে বলে তীর্থরাম বালা।।
    আর শুন তাহার চরিত্র গুণধাম।
    হরিপ্রেম রসে মেতে বলে হরিনাম।।
    বিবাহিতা হয়েছিল বোড়াশী গ্রামেতে।
    তার পতি মরিল সে অল্প বয়সেতে।।
    রূপবতী অতিশয় যৌবন সময়।
    ঠাকুর যাইত তথা সময় সময়।।
    ঠাকুরে করিত তীর্থ পিতৃ সম্বোধন।
    ঠাকুর জানিত তারে কন্যার মতন।
    ক্ষণে তীর্থ ক্ষণে মা! মা! বলিয়া ডাকিত।
    মাঝে মাঝে বোড়াশী যাতায়াত করিত।।
    একদিন তীর্থমণি পাকশাল ঘরে।
    ঠাকুরকে মনে করি ভাসে অশ্রুনীরে।।
    পায়স পিষ্টক রাঁধি পাকশালে বসি।
    মনে ভাবে বাবা যদি আসিত বোড়াশী।।
    স্বহস্তে তুলিয়া দিতাম শ্রীচন্দ্র বদনে।
    এত ভাবি অশ্রুধারা বহিছে নয়নে।।
    দিবা অবসান প্রায় এমন সময়
    সকলে খাইল তীর্থ কিছু নাহি খায়।।
    বদন বিশ্বাস বলে বধূমার ঠাই।
    খাও গিয়া, বধূ বলে ক্ষুধা লাগে নাই।।
    মীরাবাঈ রাঁধিতেন খিচুড়ির ভাত।
    প্রীত হয়ে খেত গিয়ে প্রভু জগন্নাথ।।
    সেই মত মহাপ্রভু তীর্থমণি ঘরে।
    চলিলেন ভক্তি অন্ন খাইবার তরে।।
    তীর্থমণি গৃহে প্রভু গেলেন যখন।
    জল আনি তীর্থমণি ধোয়ায় চরণ।।
    কেশ মুক্ত করি পাদ পদ্ম মুছাইয়ে।
    করিছেন পদ সেবা আসনে বসায়ে।।
    পায়স পিষ্টক আদি ব্যঞ্জন শাল্যন্ন।
    অগ্রে তুলে রেখেছিল ঠাকুরের জন্য।।
    ঠাকুরের সেবা পরে প্রসাদান্ন যাহা।
    তীর্থমণি যতনে ভোজন কৈল তাহা।।
    তাহা দেখে সবে বলে বদনের কাছে।
    দেখগে এখনে বৌর ক্ষুধা লাগিয়াছে।।
    কেহ গিয়া জানাইল বদনের ঠাই।
    দেখগে বধূর ঘরে নাগর কানাই।।
    ইতি উতি বদন করেছে অনুমান।
    ভাবে বধূ হতে বুঝি গেল কুলমান।।
    বদন বিশ্বাস বলে ঠাকুরকে রুষি।
    দেখ প্রভু আর তুমি এসনা বোড়াশী।।
    চিরদিন জানি মতোদের ব্যবহার।
    মানা করি মোর বাড়ী আসিওনা আর।।
    শ্রীহরি গমন কৈল ওঢ়াকাঁদি যেতে।
    কেঁদে কেঁদে তীর্থমণি আগুলিল পথে।।
    মহাপ্রভু নিজধামে করিলে গমন।
    বাবা! বাবা! বলে তীর্থ করিত ক্রন্দন।।
    দিবানিশি অই চিন্তা মুদে দ্বি-নয়ন।
    কিছুদিন পরে সিদ্ধ আরোপ সাধন।।
    আরোপে প্রভুর রূপ যখনে দেখিত।
    নয়ন মেলিলে রূপ দেখিবারে পেত।।
    মহাপ্রভু থাকিতেন ওঢ়াকাঁদি বসি।
    লোকে দেখে প্রভু যেন আছেন বোড়াশী।।
    ষোড়শ হাজার একশত অষ্ট নারী।
    প্রতি ঘরে এক কৃষ্ণ বাঞ্ছাপূর্ণকারী।।
    যখন করিত তীর্থ দেখিবারে মন।
    বাঞ্ছা-কল্পতরু হরি দিত দরশন।।
    গৃহকার্য যখন করিত তীর্থমণি।
    বাবা বলে ডাকিত যেমন উন্মাদিনী।।
    সবে বলে বধূ গেল পাগল হইয়ে।
    শিকল লাগায়ে পায় রাখিত বাঁধিয়ে।।
    বদন বলিল আমি চিরদিন জানি।
    সাধ্বী সতী পুত্র বধূ অব্যভিচারিণী।।
    চেহারায় বাহিরায় সতীত্বের জ্যোতি।
    তবে কেন বধূ হেন হল ছন্নমতি।।
    বাবা! বাবা! বাবা! বলে ডাক ছেড়ে উঠে।
    ঝাড়া দিলে লোহার শিকল যেত কেটে।।
    বদনের দর্প, দর্পহারী কৈল চুর।
    এর মধ্যে তীর্থমণি এল কৃষ্ণপুর।।
    ভ্রাতৃ অন্ন ভুক্তা অতি নির্ভয়া হৃদয়া
    মহাভাব অনুরাগে তেজময়ী কায়া।।
    তীর্থমণি বালার সুকীর্তি চমৎকার।
    কহে কবি রসরাজ রায় সরকার।।

    শ্রীমদ্রসিক সরকারের উপাখ্যান
    পয়ার
    প্রভু জগন্নাথ এল ওঢ়াকাঁদি গ্রাম।
    ভকত ভনে সদা ভ্রমণ বিশ্রাম।।
    বাল্যাদি পৌগণ্ডলীলা সফলাডাঙ্গায়।
    কৈশোরে হইল ভক্ত মিলন তথায়।।
    ওঢ়াকাঁদি আমভিটা যখন যুবত্ব।
    ভক্তসঙ্গে দিবানিশি হরিনামে মত্ত।।
    মত্ত রাউৎখামার আদি মল্লকাঁদি।
    হেনকালে প্রভুর বসতি ওঢ়াকাঁদি।।
    ওঢ়াকাঁদি যবে হল লীলার প্রচার।
    সবে কহে ওঢ়াকাঁদি উড়িয়ানগর।।
    ওঢ়াকাঁদি ঘৃতকাঁদি আর মাচকাঁদি।
    আড়োকাঁদি তিলছড়া আর আড়ুকাঁদি।।
    রামদিয়া ফুকুরা নড়াল সাধুহাটি।
    নারিকেল বাড়ী পরগণে তেলিহাটি।।
    সাধুহাটি মাতিল রসিক সরকার।
    অলৌকিক কীর্তি তার অতি চমৎকার।।
    কলেজেতে পড়িতেন সেই মহামতি।
    বয়স তখন প্রায় হবে দ্বাবিংশতি।।
    প্রথম মুন্‌সেফ হইল বিচারপতি।
    তিন দিন চাকরি করিল মহামতি।।
    মানসে বিমর্ষ কার্য পরিত্যাগ করি।
    ছুটি নেয়া ছলে চলে আসিলেন বাড়ী।।
    কায়স্থ কুলেতে উপাধ্যায় সরকার।
    তাহার পিতার নাম হয় গঙ্গাধর।।
    পিতা হন অসন্তোষ চাকুরী ছাড়ায়।
    মহাদুঃখী তার খুল্লতাত মহাশয়।।
    খুড়া শ্রীকৃষ্ণমোহন বলে বার বার।
    চাকুরী করনা বাপ এ কোন বিচার।।
    তিনি জানালেন সেই রসিকের মায়।
    রসিকের মাতা গিয়া ঠাকুরে জানায়।
    রসিকের কি হয়েছে নাহি শুনে কথা।
    চাকরী না করে রহে হেট করি মাথা।।
    যদি কিছু বলি কহে না করিও ত্যক্ত।
    ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ আমি তার ভক্ত।।
    চল প্রভু সাধুহাটি সরকার বাড়ী।
    তব বাক্যে যদি বাছা করেন চাকুরী।।
    মহাপ্রভু উত্তরিল সাধুহাটি গ্রাম।
    রসিক প্রভুর পদে করিল প্রণাম।।
    ঠাকুর বলেন বাছা বলতআমায়।
    চাকুরী করনা কেন বলে তব মায়।।
    রসিক বলেন পদে নিবেদন করি।
    আর না করিব আমি পাপের কাছারী।।
    আমা হতে হবে না সূক্ষ্ম সুবিচার।
    অপরাধী হব লয়ে বিচারের ভার।।
    কোন অসতের বাক্যে সতেরে মারিব।
    নির্দোষীকে দোষী, দোষী নির্দোষী করিব।।
    দারোগার বংশ নাই অত্যাচার জন্য।
    বিচারে মুন্‌সেফী কার্য সেইরূপ গণ্য।।
    তাই বুঝে ছুটি লই আর নাহি যাই।
    ধন দিয়া কি করিব তোমা যদি পাই।।
    পিতা মাতা খুড়া বলে চাকুরী করিতে।
    ধন কি নিধন-কালে যাইবে সঙ্গেতে।।
    পড়ে রবে ধন জন কি দালান কোঠা।
    চুল গাছ সঙ্গে নিতে পারে কোন বেটা।।
    কেবা মাতা কেবা পিতা কিসের চাকুরী।
    কিবা রাজ্য কিবা ভার্যা দিন দুই চারি।।
    আপনি বলেন যদি চাকুরী করিতে।
    পাপ পুণ্য নাহি জানি যাই চাকুরীতে।।
    ঠাকুরের সঙ্গে ছিল মহেশ ব্যাপারী।
    বলিলেন রসিকেরে দণ্ডবৎ করি।।
    রসিক বলিল মোরে প্রণমিলে কেনে।
    প্রণামের স্থান আছে দেখনা নয়নে।
    যশোমন্ত সুত হরিচাঁদ জগন্নাথ।
    বর্তমানে সে চরণ কর প্রণিপাত।।
    মহেশ বলিল হেন স্থান যে দেখায়।
    তার পদে দণ্ডবৎ আগে হতে হয়।।
    ঠাকুর বলেন শুন রসিকের মাতা।
    তোমার এ ছেলে না শুনিবে কারু কথা।।
    তোমার গর্ভেতে জন্ম এ মহাপুরুষ।
    অনুমানে বুঝি হবে ত্রেতার মানুষ।।
    রসিক গেলেন জয়পুর রাজধানী।
    ভেটিতে গেলেন জয়পুর নরমণি।।
    ধর্ম শাস্ত্র আলাপ রাজার সঙ্গে করে।
    রাজা করে সবিনয় রসিকের তরে।।
    পড়েছি বিপদে বড় গৌরাঙ্গ লইয়া।
    পণ্ডিতেরা নাহি মানে স্বয়ং বলিয়া।।
    রসিক বলেন আমি বিচার করিব।
    গৌরাঙ্গকে স্বয়ং বলিয়া মানাইব।।
    সভা হল নবদ্বীপ পণ্ডিতের দলে।
    শাক্ত শৈব বৈষ্ণবেরা এল দলে দলে।।
    শান্তিপুর উলাকাশী নদীয়া দ্রাবিড়।
    যেখানে যেখানে ছিল পণ্ডিত সুধীর।।
    সপ্তাহ পর্যন্ত সভা হয় প্রতি মাস।
    এইরূপে বিচার হইল ছয় মাস।।
    বনবাসী পরমহংস এসেছিল যারা।
    সুবিচারে পরাজয় হইলেন তারা।।
    ছয় মাস পরে সভা শেষ সুবিচার।
    স্বয়ং বলিয়া তারা করিল স্বীকার।।
    পরমহংসরা বলে কাল্‌কে আসিব।
    গৌরাঙ্গে স্বয়ং বলে স্বীকার করিব।।
    আর যত প্রতিপক্ষ স্বীকার করিল।
    স্বীকার করিয়া তারা ভকত হইল।।
    পরমহংসরা আর না আসিল ফিরে।
    এ দিকেতে জয়ডঙ্কা বাজে জয়পুরে।।
    বৈষ্ণবেরা সবে জয় জয় ধ্বনি করে।
    জয় গৌর স্বয়ং গৌর বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
    সবে মিলে বলেন গৌরাঙ্গ জয় জয়।
    জয় শ্রীগৌরাঙ্গ জয় রসিকের জয়।।
    জয়পুরে রাজা করে জয় জয় ধ্বনি।
    রামাগণে বামাস্বরে করে হুলুধ্বনি।।
    জয়পুর জয় পূর্ণ জয় জয় জয়।
    পুষ্প ফেলে মারে কেহ রসিকের গায়।।
    বৈষ্ণবেরা রসিকের করিছে কল্যাণ।
    রসিকের কণ্ঠে করে পুষ্পমাল্য দান।।
    কোন কোন বৃদ্ধা নারী মনের পুলকে।
    ধান্য দূর্বা দিতেছেন রসিক মস্তকে।।
    রসিক বলেন মম সাধ্য কিছু নয়।
    যার কার্য সেই করে তাঁর জয় জয়।।
    সেই শ্রীগৌরাঙ্গ মোর এল ওঢ়াকাঁদি।
    নমঃশূদ্র কুলে অবতার গুণনিধি।।
    যশোমন্ত রূপে জীবে ভক্তি শিখাইল।
    জয় হরিচাঁদ জয় সবে মিলে বল।।
    গৌরাঙ্গ স্বয়ং বলি মীমাংসা হইল।
    রসিকের সভাজয় তারক রচিল।।

    নিঃস্বার্থ অর্থ দান
    পয়ার
    চাকুরী করিয়া ত্যাগ রসিক আসিল।
    হরিচাঁদ চিন্তা করি গৃহেতে রহিল।।
    তিলছড়া গ্রামে তাঁর সম্পত্তি যা ছিল।
    মালেকের রাজকর বাকী পড়ে গেল।।
    বিষয় বিক্রয় হয়, না রহে সম্পত্তি।
    জমিদার সঙ্গে নাহি হইল নিষ্পত্তি।।
    মালেকের টাকা বাকী সাড়ে সাত শত।
    তার মধ্যে অভাব হইল দুই শত।।
    সপ্তাহ মধ্যেতে অই টাকা হবে দিতে।
    দুই শত টাকা না পারিল মিলাইতে।।
    রসিক বিপদাপন্ন তুচ্ছ অর্থ দায়।
    প্রভু হরিচাঁদ তাহা জানিল হৃদয়।।
    গোলোকে বলেন প্রভু হয়ে অবসন্ন।
    রসিক বিপদাপন্ন তুচ্ছ অর্থ জন্য।।
    গুরুচরণকে বল একথা আমার।
    টাকা দিয়া দায়মুক্ত করহ তাহার।।
    পাগল বলিল বড় কর্তার নিকটে।
    রসিকেরে টাকা দিয়া বাঁচাও সংকটে।।
    গুরুচাঁদ চলিল দুশত টাকা লয়ে।
    গোলোক পাগল টাকা সঙ্গে নিল বয়ে।।
    টাকা দিয়া এল সেই রসিকের ঠাই।
    দেখিয়া আশ্চর্য কার্য বিস্মিত সবাই।।
    রসিক বলেন মহাপ্রভু অন্তর্যামী।
    তাঁর কৃপাবলে এ বিপদমুক্ত আমি।।
    ক্ষণমাত্র করিলেন প্রেম আলাপন।
    টাকা দিয়ে গৃহেতে আসিল দুইজন।।
    এই টাকা নেয়া দেয়া অর্থ বোঝা ভার।
    দিলেও না নিলেও না চাহিল না আর।।
    গোলোক নাথের মন বুঝিল গোলোক।
    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।।

    ভক্ত রামকুমার আখ্যান
    পয়ার
    সাধুহাটি যুধিষ্ঠির বিশ্বাস হল মত্ত।
    পরিবার-সহ হল হরিচাঁদ ভক্ত।।
    তাহার ভগিনী হয় আনন্দা নামিনী।
    প্রভু বলে ভক্তা মধ্যে তারে আমি গণি।।
    নড়াইল গ্রামে ভক্ত শ্রীরামকুমার।
    ভবানী নামিনী হয় ভগিনী তাহার।।
    একদিন ঠাকুরকে আনিব বলিয়া।
    ভাই বুনে পরামর্শ করিল বসিয়া।।
    রাত্রিভরে সে ভবানী বধূগণে লয়ে।
    ভক্তিরসে নানা মিষ্টি তৈয়ার করিয়ে।।
    ব্রহ্ম মুহূর্তের কালে যাত্রা করিলেন।
    তরী রামকুমার বাহিয়া চলিলেন।।
    দুদণ্ড আড়ই দণ্ড পথ পরিমাণ।
    দণ্ডেকের মধ্যেতে তথায় চলি যান।।
    ঘোর ঘোর ভোরকালে কেহ না গা তুলে।
    হেনকালে ওঢ়াকাঁদি গিয়া পহুঁছিলে।।
    ছড়া ঝাটি জল আনা গৃহাদি মার্জন।
    রান্নাঘর পরিষ্কার প্রাঙ্গণ লেপন।।
    গাত্রোত্থান করিয়া উঠিলা ঠাকুরানী।
    (একলাইন গ্যাপ)
    মন জানি অন্তর্যামী সত্ত্বর উঠিল।
    ভগবান ভবানীর নৌকায় বসিল।।
    ভবানী উঠিল রামকুমার উঠিল।
    ঠে ধরি ধীরে তরী বাহিয়া চলিল।।
    অর্ধ পথে যেতে যেতে হল ঘোর মেঘ।
    দক্ষিণে বাতাস বহে অতিশয় বেগ।।
    প্রভু রামকুমারে বলেন কি করিবি।
    এই বাতাসেতে নৌকা কেমনে বাহিবি।।
    কুমার বলেন প্রভু মেঘে নাহি ডরি।
    আপনি আছেন নায় এই শঙ্কা করি।।
    মহাপ্রভু বলে তবে না হও বিমুখ।
    দিলাম উহারে ভার যা ইচ্ছা করুক।।
    তরণী বাহিয়া যায় শ্রীরামকুমার।
    চতুর্দিকে মেঘ দিনে ঘোর অন্ধকার।।
    অবিরলধারে ঘন মেঘ বৃষ্টি হয়।
    বৃষ্টিবিন্দু নাহি পড়ে ঠাকুরের নায়।।
    নিরাপদে উদয় হইল নড়াইল।
    আনন্দে প্রভুকে লয়ে সেবা করাইল।।
    পায়স পিষ্টক আদি লাড্ডুক শাল্যন্ন।
    ডাল বড়া ভাজা শাক শুক্তাদি ব্যঞ্জন।।
    সেবাদি শুশ্রূষা ইষ্ট গোষ্ঠ দিবা ভরি।
    সন্ধ্যা সমাগম ক্রমে হইল শর্বরী।।
    প্রভুকে নিজ বাসরে রাখিল কুমার।
    গেল দিন কহে দীন কবি সরকার।।

    ভক্ত মহেশ ও নরহরি শালগ্রাম
    পয়ার
    নড়াল কানাই আর ভক্ত সনাতন।
    শ্যামাচরণ বিশ্বাস ভুক্ত বহুজন।।
    ভকত ভবনে যান প্রভু জগন্নাথ।
    সনাতন শ্যামের বাটীতে যাতায়াত।।
    ফলসী নিজামকাঁদি আর তালতলা।
    মত্ত মাতালের প্রায় হল হরিবোলা।।
    হরিশ্চন্দ্র মহেশ কনিষ্ঠ ভজরাম।
    তিন ভাই হরিভক্ত সুন্দর সুঠাম।।
    শ্রীউমাচরণ চণ্ডী বৈরাগী ঠাকুর।
    হরিনাম করে তারা মধুর মধুর।।
    নেহাল বেহাল হল আর গঙ্গাধর।
    হরিচাঁদে মানে তারা স্বয়ং ঈশ্বর।।
    মহেশ প্রভুকে লয়ে নিজ বাড়ী যান।
    নেহাল জমিতে গিয়া নিগড়ায় ধান।।
    ঠাকুর কহিছে তুই আয়রে নেহাল।
    নেহাল দাঁড়ায় যেন সুদাম কাঙ্গাল।।
    নিড়ানিয়া ঘাস ছিল আইলের পরে।
    তার এক তৃণ সাধু দশনেতে ধরে।।
    আর এক গোছা সাধু ধরে স্কন্ধ পরে।
    গলে জড়ায়া ধরি কহে যোগাড় করে।।
    অই ভাবে উঠিলেন ঠাকুরের নায়।
    দণ্ডবৎ হইয়া পড়িল রাঙ্গা পায়।।
    ঠাকুর উঠিল এসে মহেশের বাড়ী।
    গড়াগড়ি যায় সবে প্রভু পদে পড়ি।।
    উমাচরণের বাড়ী যান হরিশ্চন্দ্র।
    যেন সবে হাতে পেল আকাশের চন্দ্র।।
    দক্ষিণ দেশের ভক্ত ওঢ়াকাঁদি যায়।
    পথে যেতে তিষ্ঠেন নিজামকাঁদি গায়।।
    উমাচরণ বাড়ই মহেশ ব্যাপারী।
    বারুণীর অগ্রে মহোৎসব এই বাড়ী।।
    মতুয়ারা নাহি করে স্বজাতিকে গ্রাহ্য।
    লৌকিক সামাজিকতা করেছেন ত্যজ্য।।
    সামাজিক পুরোহিত হইয়েছে বন্ধ।
    মহেশ বলেন সামাজির ভাগ্য মন্দ।।
    মহেশের ভাইঝির মৃত্যু হয়েছিল।
    পুরোহিত আনিবারে মহেশ চলিল।।
    গ্রাম্যলোকে পুরোহিতে দিলে না আসিতে।
    পুরোহিত নাহি এল সে শ্রাদ্ধ করিতে।।
    পুরোহিত, নিবাসী নিজামকাঁদি গ্রাম।
    স্বভক্তি অন্তরে দ্বিজ পূজে শালগ্রাম।।
    পিছুভাগে দাঁড়াইল সে মহেশ গিয়া।
    দ্বিজ গেল পূজামন্ত্র সকল ভুলিয়া।।
    ঠাকুর বলেন একি হইল বালাই।
    বিগ্রহ পূজিতে মন্ত্র হারাইয়া যাই।।
    নরসিংহ শালগ্রাম পূজেন ব্রাহ্মণ।
    মন্ত্রভুলে যাই কেন ভাবে মনে মন।।
    ভাবিলেন অমঙ্গল হইবেক ভারি।
    পিছুদিক চেয়ে দেখে মহেশ ব্যাপারী।।
    একদৃষ্টে চেয়ে দেখে মহেশ পানেতে।
    নরসিংহ শালগ্রাম মহেশের মাথে।।
    মূর্তিমন্ত নরসিংহ শালগ্রাম শিরে।
    মহাপ্রভু হরিচাঁদ তাহার ভিতরে।।
    ব্রাহ্মণ বলেন আর নাহিক বিলম্ব।
    চল যাই আগে গিয়া করি তব কর্ম।।
    অমনি উঠিল দ্বিজ মহেশের নায়।
    সমাধা করিল শ্রাদ্ধ আসিয়া ত্বরায়।।
    মহেশ ঠাকুরে বলে স্বজাতি সমাজে।
    মম বামপদ তুল্য কেহ নাহি বুঝে।।
    উমাচরণের বড় আর্তি ঠাকুরেতে।
    তার পুত্র যাদব পরম নিষ্ঠা তাতে।।
    কয় ভাই এক আত্মা একযোগ প্রাণ
    হরিচাঁদে আত্ম স্বার্থ করিয়াছে দান।।
    গোলোকচাঁদের পদে ছিল দৃঢ় ভক্তি।
    মহানন্দ পাগলকে আত্মা দিয়া আর্তি।।
    যতলোক ওঢ়াকাঁদি বারুণীতে যায়
    যাতায়াতে উমাচরণের বাড়ী রয়।।
    সকলকে বলে সাধু হইয়া কাতর।
    এই নিমন্ত্রণ রল বৎসর বৎসর।।
    যত লোক ওঢ়াকাঁদি যান এই পথে।
    ময়ালয় তিষ্ঠিবেন আসিতে যাইতে।।
    এই দেশ জলা ছিল না ফলিত ধান।
    মতুয়ারা আসাতে এ দেশের কল্যাণ।।
    এদানি ফলেছে ধান তোমরা না খেলে।
    এ দেশেতে সুফলেতে ধান্য নাহি ফলে।।
    গৃহস্থের গৃহে যদি সাধুতে না খায়।
    সে গৃহের আর বৃদ্ধি কখন না হয়।।
    এক বর্ষ তোমরা না এলে এই বাড়ী।
    ধান্য না হইলে মোরা মন্বন্তরে মরি।।
    আসিও থাকিও সবে খাইও যাইও।
    গৃহস্থের শ্রীবৃদ্ধি হইবারে দিও।।
    পিতা পুত্র পরিজন সবে একমন।
    আত্মা দিয়া সবে করে সাধুর সেবন।।
    এইভাবে সাধু সেবে সবার পুলক।
    হরিচাঁদ ভক্ত এরা ভুবন তারক।।
    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।
    প্রেমানন্দে হরি হরি বলে সর্বলোক।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.