শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
১৬ অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (১ম অংশ) - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ১৬ অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (১ম অংশ)


                   অন্তখণ্ডঃ তৃতীয় তরঙ্গ (১ম অংশ)

    অন্তখণ্ড
    তৃতীয় তরঙ্গ
    বন্দনা

    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।

    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ
    ।।
    জয় উমাকান্ত প্রভু কনিষ্ঠ তনয়।
    জয় শশীভূষণ সুধন্যচাঁদ জয়।।
    (উপেন্দ্র সুরেন্দ্র শ্রীগুরুচাঁদ আত্মজ।
    জয় ভগবতী শ্রীশ্রীপতিচাঁদ ভজ।।
    জয় আদিত্য সতীশ প্রমথ মন্মথ।
    জয় শ্রীশচিপতি মতুয়াগণ নাথ।।)
    জয় জয় ওঢ়াকাঁদি শ্রীধাম সুন্দর।
    যথা মহাপ্রভু হইলেন অবতার।।
    হরি বংশে যত মাতা ঠাকুরানীগণ।
    কায়মন বাক্যে বন্দি সবার চরণ।।
    তারক যাহার দেহ মহানন্দ প্রাণ।
    হরিবর করাঙ্কিত হরি লীলা গান।।

    লালচাঁদ মালাকারের উপখ্যান
    পয়ার
    রাজপাট বাসী লালচাঁদ মালাকার।
    হরিচাঁদ পদে নিষ্ঠা ভকতি তাহার।।
    বৈশাখ মাসের শেষ হইয়াছে আম্র।
    সুখ দৃশ্য ফলভরে শাখা সব নম্র।।
    এক গাছে আম তার বড় মিষ্ট হয়।
    বার্ষিকসে আম্র দেন প্রভুর সেবায়।।
    প্রথম পাকিলে আম ঠাকুরকে এনে।
    ঠাকুরের সেবা করে আনন্দিত মনে।।
    কোনবার ওঢ়াকাঁদি দেন পাথাইয়া।
    কোনবার দেন আম কিনিয়া আনিয়া।।
    মাঝে মাঝে মহাপ্রভু যান সে বাটীতে।
    এবার হয়েছে মন ঠাকুরকে নিতে।।
    আসিয়া প্রভুর সঙ্গে কথা নাহি কয়।
    জেনে মন নারায়ণ তার বাড়ী যায়।।
    একদা সকালে প্রভু বসিয়া নির্জনে।
    একমাত্র তারক বসিয়া প্রভুর স্থানে।।
    হরিচাঁদ কহিলেন তারকের ঠাই।
    চলরে তারক মোরা রাজপাট যাই।।
    রাজপাট লালচাঁদ কট করিয়াছে।
    আমাকে খাওয়াবে আম সে খাবে পাছে।।
    গতহাতে ফতেপুরে আম কিনিয়াছে।
    আর কত আম তার গাছে পাকিয়াছে।।
    ঝাকা ভরি রাখিয়াছে তুলিয়া ঘরেতে।
    আমি গেলে সেই আম মোরে দিবে খেতে।।
    যাব কিনা যাব তাই ভাবি মনে মনে।
    আমারে নিবে সে বেটা আসে বা না কেনে।।
    তারক কহেন প্রভু যে ইচ্ছা তোমার।
    ইচ্ছাময় তব ইচ্ছা, সে ইচ্ছা সবার।।
    শুনিলাম শ্রীমুখেতে লালচাঁদ কথা।
    আমার হয়েছে ইচ্ছা যাইবারে তথা।।
    তাহা শুনি প্রভু কহে মনে হয়ে সুখী
    ক্ষণে থাক দেখি লালচাঁদ আসে নাকি।।
    হেনকালে লালচাঁদ হইল উদয়
    পূর্বাকাশে রবি চারি দণ্ডের সময়।।
    মাথে লম্বা চুল তার মুখে গোপ দাড়ি।
    সন্ন্যাসীরা থাকে যেন বিশ্বেশ্বর বাড়ী।।
    ঠিক যেন বন হতে পরমহংসেরা।
    সুগন্ধেতে কাশী আমোদিত করে তারা।।
    তেমতি বসিল এসে প্রভুর সম্মুখে।
    ঠাকুর পরম সুখী লালচাঁদ দেখে।।
    পরমহংস তাহারা উলঙ্গ থাকয়
    লালচাঁদ তেন কিন্তু উলঙ্গ সে নয়।।
    ছিন্নবস্ত্র দিয়া মাত্র পরিয়াছে লেংটি।
    তার এক কোণা দিছে তাগা সঙ্গে আটি।।
    নিতম্ব বাহির ঠিক উলঙ্গের প্রায়।
    দূর হতে দেখিলে উলঙ্গ বোধ হয়।।
    বরণ তাহার ঘোর কাল স্থুলাকার।
    কাল অঙ্গ মধ্যে আলো করে দীপ্তকার।।
    ঠাকুরের মুখ তাকাইয়া লালচাঁদ।
    বদনে ঈষৎ হাসি অন্তরে আহলাদ।।
    তাহা দেখি তারক ভেবেছে মনে মনে।
    এই বুঝি লালচাঁদ বুঝি অনুমানে।।
    পূর্বে ছিল কপিল বশিষ্ঠ বেদব্যাস।
    পরাশর কাত্যায়ন কণ্ব দিগবাস।।
    মরীচি অঙ্গিরা শতাতপ সতানন্দ।
    গৌতম বাল্মিকী অত্রি সিদ্ধমুনি বৃন্দ।।
    আজন্ম কাননবাসী মহাযোগে যোগী
    ইনি কোন মহাজন এল কিবা লাগি।।
    যতি হংসী গৃহী বনচারী কি সন্ন্যাসী
    প্রভু সঙ্গে লীলারঙ্গে মর্তলোকবাসী।।
    ইতি উতি ভাবি বসিলেন সেইখানে।
    ঠাকুরের বামে লালচাঁদের দক্ষিণে।।
    এক হালসী কইমাছ আনিয়া ছিলেন
    ঠাকুরের সম্মুখেতে রেখে বসিলেন।।
    ঠাকুর কহেন কি করিবি লালচাঁদ।
    আম খেতে দিবি তোর মনে আছে সাধ।।
    গাছে আছে আম আর কেনবা কিনিলি।
    হাটে গিয়া বুঝি আম দেখে ভুলে গেলি।।
    কেনা আম গাছে আম আমে আমদানী।
    দুগ্ধ আমদানী কত বল তাই শুনি।।
    ঠাকুর বলেন আর শুনাবি কি তাই।
    দুগ্ধ আমদানী দোয়া আছে দুটি গাই।।
    যারে লালচাঁদ, কল্য আমি যাইব।
    মধ্যাহ্নে তোমার বাড়ী ভোজন করিব।।
    মৎস্য দিকে লালচাঁদ চাহে বারে বারে।
    প্রভু বলে মাছ কিছু দিবি নাকি মোরে।।
    ঠাকুর কহেন তবে মন জেনে তারে।
    উপরের চারি কই দিয়া যা আমারে।।
    বড় চারি কই ছিল উপরেতে গাঁথা।
    তাহা দিয়া লালচাঁদ নোয়াইল মাথা।।
    অন্তঃপুর মধ্যে গিয়া প্রণাম করিয়া।
    লালচাঁদ চলিলেন ঠাকুরে দেখিয়া।।
    প্রভু বলে নিমন্ত্রণ করিলা আমাকে।
    আদরের বস্তু এই চেননা তারকে।।
    লালচাঁদ কইমাছ গলায় ধরিয়া।
    করযোড় করি চেয়ে রহে দাঁড়াইয়া।।
    প্রভু বলে তারক করহ দরশন।
    লালচাঁদ তোমাকে করেন নিমন্ত্রণ।।
    লালচাঁদ নিম্নত্রিল কথা নাহি কয়।
    মৎস্য হালসী হাটে গলে লয়া দাঁড়ায়।।
    করিতেছে লালচাঁদ বড়ই বিনয়।
    করযোড় তারক করিল সে সময়।।
    তারপর লালচাঁদ বিদায় হইল।
    বাহির বাটীতে আসি ঠাকুর বসিল।।
    তারকে লইয়া প্রভু বসিলেন তথা।
    বলিতে লাগিল সব মোহন্তের কথা।।
    বেলা অপরাহ্ণ হল সন্ধ্যার অগ্রেতে।
    তারক চলিল প্রাঙ্গণেতে ঝাড়ু দিতে।।
    রাত্রি হল ঠাকুর বসিল বাটী মধ্যে।
    ভক্তগণ বসিলেন ঠাকুর সান্নিধ্যে।।
    ভোজন হইলে পরে স্বীয় স্বীয় স্থানে।
    বঞ্চিলেন নিশি সবে হরষিত মনে।।
    প্রভাতে উঠিয়া প্রভু তারকেরে কয়।
    চল চল লালচাঁদ বাটী যেতে হয়।।
    গিয়াছে ভোলা কুকুর সংবাদ দিয়াছে।
    আমরা যাইব সে সংবাদ জানায়েছে।।
    বলিতে বলিতে এল কাঙ্গালী বেপারী।
    মৃত্যুঞ্জয় আসিলেন বলে হরি হরি।।
    ঠাকুর বলেন সবে চল রাজপাট।
    পথ বড় কম নয় সবে চল ঝাট।।
    যাই যাই যাই বলে হইতেছে কথা।
    হেনকালে লালচাঁদ পুত্র এল তথা।।
    প্রভু বলে নিতে এল লালচাঁদ ছেলে
    শুভযাত্রা করে সবে হরি হরি বলে।।
    যাইতে ভক্তের বাসে উল্লাসিত কত।
    তিন দিন পর্যন্ত চাহেন প্রভু পথ।।
    প্রভু হরিচাঁদ শ্রীরামচন্দ্র চৌধুরী।
    মৃত্যুঞ্জয় গোস্বামী ও কাঙ্গালী বেপারী।।
    এইরূপে যাত্রা করিলেন ছয়জন।
    রচিল তারকচন্দ্র প্রভুর গমন।।

    ভোলা কুকুরের বিবরণ
    পয়ার
    ভোলা নামে কুকুর প্রভুর বাড়ী রয়।
    দৈবে কোথা হতে এসে রয়েছে তথায়।।
    ঠাকুরের মন জানি সে ভোলা কুকুর।
    সাথে সাথে যায় যথা গমন প্রভুর।।
    ভক্তগণ যায় যদি প্রভুর বাটীতে।
    প্রিয় ভক্ত গেলে আসে তার নিকটেতে।।
    স্কন্ধ পরে হাতা দিয়া মুখ দিয়া মুখে।
    অনিমিষ নেত্রে মুখ তাকাইয়া দেখে।।
    কোন কোন ভক্তের সাথে বসি খায়।
    নির্বিকার ভক্ত হলে কিছু নাহি কয়।।
    একদিন তারক আহারে বসেছিল।
    সঙ্গেতে কুকুর ভোলা খাইতে লাগিল।।
    তারক বলেনা কিছু দেখিয়া ঠাকুর।
    ডেকে বলে তাড়াইয়া দেওরে কুকুর।।
    তখনে তারক কুকুরের মাথা ধরে।
    তখনে উঠিল ভোলা চলে গেল দূরে।।
    তাহাতে তারক বড় পাইলেন স্বাদ।
    খাইলেন কুকুর সে ভোলার প্রসাদ।।
    একদিন অনেক মতুয়া ভাদ্রমাসে।
    প্রভু দরশনে গেল ওঢ়াকাঁদি বাসে।।
    ভক্তের নিকটে ভোলা ঘুরিয়া বেড়ায়।
    কারু কাছে গিয়া তার নিকটেতে রয়।।
    কারু স্কন্ধে হাতা দিয়া ক্ষণকাল রয়।
    হাতা নাড়ে মুখ নাড়ে লাঙ্গুল ঘুরায়।
    এক এক বার গিয়া কাহার নিকটে।
    গণ্ডুস্থল চাটে কারু পদাঙ্গুল চাটে।।
    রামকৃষ্ণ বিশ্বাস বসতি মল্লকাঁদি।
    তিনি যান সেদিন শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।।
    বেলছেন দিন গেল রবি ডুবে যায়।
    লোক সংখ্যা হল বেশী বাড়ী যেতে হয়।।
    ঠাকুর আছেন ঘরে না হন বাহির।
    কহিতে নারিনু কিছু জীবন অস্থির।।
    ক্ষণেক ভ্রমণ করি মনেতে ভাবিয়া।
    সেই ভোলা কুকুরকে ধরিলেন গিয়া।।
    স্কন্ধ পরে হাতাদিয়া চাটিবারে যায়।
    হেনকালে রামকৃষ্ণ কুকুরকে কয়।।
    আলাপ করত ভালো আমরা কি করি।
    তাহা ত দেখনা তুমি অই দুঃখে মরি।।
    যাহ ভোলা একবার প্রভুর গোচরে।
    বলগে অনেক লোক বাড়ীর বাহিরে।।
    ভোলা গেল রামকৃষ্ণ যায় পাশে পাশে।
    ভোলা গেল যেই গৃহে প্রভু শোয়া আছে।।
    যবে ভোলা কুত্ত গেল পদের নিকটে।
    মহাপ্রভু তৎক্ষণাৎ শয্যা হতে উঠে।।
    প্রভু বলে আসি আমি সবে বল গিয়া।
    আসিতেছি কিছুক্ষণ থাকুক বসিয়া।।
    তাহা শুনি ভোলা কুত্ত আসিয়া বাহিরে।
    আসিতেছে ঠাকুর দেখাল লেজ নেড়ে।।
    কিছুক্ষণ পরে এল প্রভু দয়াময়।
    মনোকথা কহি সবে করিল বিদায়।।
    ভোলা কুত্ত পরিচ্ছেদ হয়ে গেল সাঙ্গ।
    রচিল তারকচন্দ্র কুকুরের রঙ্গ।

    মহাপ্রভুর লালচাঁদের বাটীতে গমন
    পয়ার
    এইরূপে যাত্রা করিলেন ছয়জন।
    মহাপ্রভু বলিলেন অগ্রে যাও একজন।।
    তথা যেতে পথে মোর আছে বড় ভয়।
    সাপে নাহি ছাড়ে মোরে আসিয়া জড়ায়।।
    তাহা শুনি কাঙ্গালী চলিল আগে আগে।
    চলিলেন মহাপ্রভু তার পিছু ভাগে।।
    বরইহাট গ্রাম গিয়া হইল উদয়।
    ভক্তদের বাটী গিয়া উঠিল সবায়।।
    ভক্ত কহে মহাপ্রভু নিবেদন করি।
    বাল্যভোজ নিতে হবে তোমার এ বাড়ী।।
    মহাপ্রভু বলে যদি বাড়ী মোর হয়।
    কি আছে বাল্য সেবার শ্রীঘ্র লয়ে আয়।।
    অমনি ভক্ত যায় জাল বাহিবারে
    ঠাকুর বলেন মোরা মাছ খাব না রে।।
    তাহা শুনি ভক্ত কহে আছে শুধু ভাত।
    কেমনে হইবে প্রভু প্রভু জগন্নাথ।।
    ঠাকুর কহেন কেন শুধু ভাত খাব।
    সুধা হতে সুধা আমি ভোজন করিব।।
    কি দিব কি দিব ভক্ত কহে অবিরত।
    মহাপ্রভু বলে তোর ঘরে আছে ঘৃত।।
    তাহা শুনি ভকত হইয়া উল্লাসিত।
    নারীকে কহিছে ঘরে আছে নাকি ঘৃত।।
    তাহার রমণী কহে ঘৃত আছে ঘরে।
    প্রভু হরিচাঁদ কহে শুন ভাল করে।।
    দধি আছে আরো আছে সুরভী দোহন।
    ঘরে আছে কল্যকার মথিত মাখন।।
    ঠাকুরের পদে পড়ি কহে তার নারী।
    কি দিয়া হইবে প্রভু ভোজন তোমারি।।
    প্রভু কহে ভকতের রমণীর কাছে।
    কুষ্মাণ্ডের শাক, আগা ভাতে দেয়া আছে।।
    দেহ মাগো তাহাতে ভোজন হবে ভারি।
    মধ্যাহ্নে হইবে সেবা লালচাঁদ বাড়ী।।
    তাহা শুনি বসিতে করিয়া দিল ঠাই।
    সভক্তি শাল্যন্ন ভোজে বসিল গোঁসাই।।
    মাখিয়া ঠাকুর দিয়াছেন বদনেতে।
    তারক প্রসাদ নিব বলে হাত পেতে।।
    শাক ভাত মাখন করিয়া একত্তরে।
    এক মুষ্টি দেন প্রভু তারকের করে।।
    তারক যখন দিল বদনে তুলিয়া।
    দোম এঁটে উঠে তার তালুকায় গিয়া।।
    উঠিল বিষম কাশ ভাত উঘাড়িয়া।
    ঠাকুরের পাতে পড়ে ভাত শাক গিয়া।।
    কতক মাটিতে কত মহাপ্রভু পাতে।
    কতক পড়িল মহাপ্রভুর বক্ষেতে।।
    বক্ষে যাহা পড়েছিল বাম হাত দিয়া।
    ধরিয়া দিলেন প্রভু বদনে তুলিয়া।।
    লালচাঁদ এসেছিল ঠাকুরকে নিতে।
    আগুলিল এসে সেই ভক্তের বাটীতে।।
    তিনিও সেবায় বসে ছিলেন সেখানে
    কথা নাহি কয় তবু বলিল তখনে।।
    তিনি কন প্রসাদ পাইতে ইচ্ছা আছে।
    যেমন নিয়াছ প্রভু ভাল দেওয়া দিছে।।
    অমনি তারক কেঁদে পড়িল ধরায়।
    প্রভু কন ওঠ তোর নাহি কোন ভয়।।
    তারক ভোজন করে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
    যাত্রা করিলেন সেই বাড়ী সেবা নিয়া।।
    এইরূপে প্রভু সঙ্গে ভক্তের বিহার।
    গেল দিন কহে দীন রায় সরকার।।

    মহাপ্রভুর লালচাঁদের ভবনে উপস্থিত
    পয়ার
    তথা হতে ভোজন করিয়া ত্বরান্বিত।
    লালচাঁদ ভবনেতে প্রভু উপনীত।।
    পশ্চিম দুয়ারী ঘর পূবের পোতায়।
    বসিলেন প্রভু সেই ঘরের পিঁড়ায়।।
    ভক্তগণ কেহ কেহ বসেছে পিঁড়ায়।
    কেহ কেহ বসিলেন তাহার নীচায়।।
    ইতিপূর্বে এই লীলা প্রথম সময়।
    পাগল বলিয়া খ্যাতি যাদের ধরায়।।
    পূর্ব পূর্ব মহাজন তাদের বারতা।
    স্বয়ং প্রভু কহিছেন সেই সব কথা।।
    মহাপ্রভু কহে কথা শুনিতে মধুর।
    মধুর হতে মধুর অতি সুমধুর।।
    এইরূপে ইষ্ট গোষ্ঠ কৃষ্ণ কথালাপ।
    আর যত এইদানি পাগল প্রস্তাব।।
    প্রভু হরিচাঁদ কহে লালচাঁদ ঠাই।
    তোর বাড়ী বেত আছে শুনিয়াছি তাই।।
    লালচাঁদ কহে প্রভু ভাল বেত আছে।
    লতিয়া উঠিছে বেত বড় বড় গাছে।।
    অই সব বড় আম গাছ দেখা যায়।
    বেত বেয়ে উঠিয়াছে গাছের আগায়।।
    বসিয়া দুজনে হইতেছে দেখাদেখি।
    থলি থলি বেত ফল রহিয়াছে পাকি।।
    এই বেত হতে দুটি বেত দেহ মোরে।
    আর এক ইচ্ছা বেত ফল খাইবারে।।
    লালচাঁদ বলে বেত পাকিয়াছে ভারি।
    টান দিলে বেত ফল যাইবেক পড়ি।।
    ফলধরা বেত বড় ভাল নাহি হয়।
    অফলা পুরান বেত দিব মহাশয়।।
    ঠাকুর বলেন আগে বেত ফল আন।
    তাহা শুনি মৃত্যুঞ্জয় করিল প্রয়াণ।
    ঠাকুর কহেন অই বেত বড় ভাল
    বেশী নহে মাত্র দুটি বেত গিয়া তুল।।
    দুটি বেত তুলিয়া আনহ মম ঠাই।
    বেত তোলা শেষ কথা আগে ফল চাই।।
    মৃত্যুঞ্জয় দুটি বেত কাটিল কেবল।
    একটি নিস্ফল তার একটি সফল।।
    ফল ধরা গাছ কাটি বলে মৃত্যুঞ্জয়।
    তব ফল লাগিবেক প্রভুর সেবায়।।
    সুপক্ক হয়েছে ফল পড়িও না তবু।
    তোমাকে করিবে সেবা স্বয়ং মহাপ্রভু।।
    মৃত্যুঞ্জয় কাঙ্গালী তারক তিনজন।
    বেত টানি বাহির করিল ততক্ষণ।।
    বেত ফল তুলি, ধরি লইল বাটীতে।
    ঝাড়া দিল থলি ধরি পাত্র উপরেতে।।
    এক ঝাড়া দিলে সব ফল পড়ি যায়।
    অর্ধ অর্ধ খোসা মাত্র রহিল বোটায়।।
    অবশিষ্ট অর্ধ খোসা বাছিয়া ফেলিয়া।
    ঠাকুর সম্মুখে দিল কাসন্দ মাখিয়া।।
    একমুষ্টি ধরি প্রভু দিলেন বদনে।
    বলে মৃত্যুঞ্জয় ভাল খাওয়ালি এখনে।।
    কোথা লাগে আম আর কোথা লাগে দুধ।
    বেত ফল মিঠা যেন বিদুরের খুদ।।
    আম ফল খাইতেছি দুই তিন দিন।
    হঠাতে এ বেত ফল খাই বৈবাধীন।। (দৈবাধীন)
    বিদুরের বাড়ী কৃষ্ণ খান একদিন।
    সেই একদিন আর এই একদিন।।
    প্রভু বলে দুটি বেত কাটিলে যতনে।
    একটা আনিলে ওটা গাছে রল কেনে।।
    সেই বেত বাহির করিল তিনজনে।
    মৃত্যুঞ্জয় কহিলেন কাঙ্গালীর স্থানে।।
    ভাল ভাল বেত কত আছে এই গাছে।
    দুটি বেত লই কেন কত বেত আছে।।
    প্রভু আজ্ঞা দুটি বেত আর এক লব।
    তাতে কি প্রভুর কাছে অপরাধী হব।।
    লাগিবে প্রভুর কার্যে মন্দ হবে কিসে।
    তাই ভেবে আর এক বেত কাটে শেষে।।
    বেত কাটি তিন জনে ধরি টান পাড়ে।
    থাকমনে বেত পাড়া পাতা নাহি লড়ে।।
    যারে দেখে তারে ডাকে হাট উঠাইয়া।
    এক এক জন করি বেত টানে গিয়া।।
    এক এক জন করি ধরিতে ধরিতে।
    চৌদ্দ জনে বেত টানে না পারে নামাতে।।
    নাহি ছিঁড়ে নাহি পড়ে না লড়ে না সরে।
    আমের গাছের ডাল কড়মড় করে।।
    রামচাঁদ চৌধুরীর বুদ্ধি বিচক্ষণ।
    বলে বৃথা পরিশ্রম কর কি কারণ।।
    চৌদ্দ জনে বেত টানি কিছুই না হয়।
    এ হেন আশ্চর্য কেবা দেখেছে কোথায়।।
    দুই বেত তুলিবারে প্রভু দেন বলি।
    সে আজ্ঞা লঙ্ঘন করে কেন বেত তুলি।।
    চৌদ্দ জনে টানি বেত নাহিক বিরাম।
    নিশ্চয় জানিও এই ঠাকুরের কাম।।
    কেন মিছা টানাটানি পরিশ্রম কর।
    চল গিয়া প্রভুকে জানাই সমাচার।।
    কে যাবে কে যাবে সবে ভাবে মনে মনে।
    সবে কহে তারকে পাঠাও প্রভু স্থানে।।
    তারক দাঁড়ায় গিয়া প্রভুর সম্মুখে।
    মৃত্যুঞ্জয় কিছুদূরে দাঁড়াইয়া থাকে।।
    প্রভু কন একা কেন আসিলে তারক।
    এক বেত লয়ে বুঝি হাসাইলে লোক।।
    দুটি বেত নিব আর নাহি আবশ্যক।
    তিন বেত কাটিয়াছি কহিল তারক।।
    ঠাকুর কহেন কেন এ কার্য করিলে।
    সামান্য একটি কথা মানিতে নারিলে।।
    যেমন লোভের বশ করিয়াছ তাই।
    চৌদ্দ জনে হার কেন এক বেত ঠাই।।
    ছোট এক বাক্য তাহা না পার মানিতে।
    ধন্যবাদ দেই আমি সে বিন্ধ্য পর্বতে।।
    এখন উঠিতে পারে রাখে কোন জনে।
    উঠিতে না পারে মাত্র এক বাক্য মেনে।।
    বাক্য না মানিতে পার কাপুরুষ হও।
    সিংহের শাবক হয়ে ছাগ রীতি লও।।
    তাহা শুনি তারক জুড়িল দুই হাত।
    অপরাধ ক্ষমা কর অনাথের নাথ।।
    কালীনগরের কর্তা বেত কাটিয়াছে।
    অপরাধ করিয়াছি স্বীকার করেছে।।
    গুরুকার্য করি মোরা মনের হরিষে।
    প্রভু কার্যে বেত নিব দোষ হবে কিসে।।
    লঙ্কাদগ্ধে বন ভাঙ্গে বস্ত্র হরে হনু।
    রাম কার্য রাম করে সমর্পিত তনু।।
    এত বেত লালচাঁদ কি কার্যে লাগাবে
    আমরা লইলে বেত গুরুকার্য হবে।।
    ইহা বলি এই বেত কেটেছেন তিনি।
    ঠাকুর বলেন যাও সব আমি জানি।।
    ধর গিয়া সেই বেত সেই তিন জনে।
    চৌদ্দ জনে টান বেত কিসের কারণে।।
    বেত ধরি টান দিল সেই তিন জন।
    অমনি বাহির বেত হইল তখন।।
    তিন জনে ছাঁটিয়া করিল পরিষ্কার।
    তিন বেত প্রায় দুই বোঝা দুজনার।।
    এদিকে সকলে করে মাধ্যাহ্নিক ক্রিয়া।
    স্নানাদি ভোজন করে হরিবোল দিয়া।।
    প্রভু হরিচাঁদ স্নান করে প্রথমেতে।
    অমৃত খাইনু হরি বলে আনন্দেতে।।
    পরে অন্ন ভোজনে বসেন হর্ষ মনে।
    ঘৃতপক্ক ডাল বড়া শাকাদি ব্যঞ্জনে।।
    অমৃত অম্বল দধি দুগ্ধ আম্রসহ।
    খাইলেন ভক্তসব বড়ই উৎসাহ।।
    পায়স পিষ্টক আদি সেবা খাজা গজা।
    ক্ষীর চুষি, ক্ষীরের লড্ডুক, সর ভাজা।।
    ঠাকুরের বামদিকে আমপোরা ঝাকা।
    প্রভু কন এত আম রাখ কেন একা।।
    লালচাঁদ বলে এই আমগুলি চুকা।
    মূলে টক দেখিতে সুন্দর যায় দেখা।।
    প্রভু কহে মিঠা আম আর নহে চাই
    এ আম খেয়েছি আন ওই আম খাই।।
    ভাল ভাল আম খেয়ে কি করিনু কাজ।
    ভোজনের শেষ চুকা তাই খাব আজ।।
    চুকা আম খাই নাই ওই আম খাব।
    অই আম খেয়ে মন মালিন্য ঘুচাব।।
    লালচাঁদ দেন আম্র ভকতি প্রচুর।
    প্রভু কন কই চুকা অতিব মধুর।।
    মধুর হতে মধুর সুমধুর আম
    শ্রীমুখের মধুবাক্য তাই পরিণাম।।
    যে গাছের চুকা আম্র খাইল ঠাকুর।
    সে গাছের আম হল সে হতে মধুর।।
    ভক্তবৃন্দ সেবা কার্যে ছিল যতজনে।
    তৃপ্ত হল চুকা আম্রে মধু আস্বাদনে।।
    সে কার্য করি হরি যাত্রা করিলেন।
    লালচাঁদ বেত লয়ে সঙ্গে চলিলেন।।
    অগ্রে অগ্রে ভোলা নামে কুক্কুর ধাইল।
    ওঢ়াকাঁদি গোলোকের ঠাই উত্তরিল।।
    পথ হতে আগুলিল গোস্বামী গোলোক।
    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।।

    শ্রীমত্তারকের বিবাহ
    পয়ার।
    তারকের বিবাহ করিতে ইচ্ছা নাই।
    বিবাহ করিতে হবে কহেন গোঁসাই।।
    অনেকে অনেক কহে বিয়া করিবারে।
    আজীবন তারকের প্রতিজ্ঞা অন্তরে।।
    বিবাহ করিতে প্রভু বল কি কারণ।
    না করিব বিবাহ করেছি এই পণ।।
    প্রভু কন যদি এই ভবে আসিলাম।
    ভাবি মনে এক খেলা খেলিয়া গেলাম।।
    চতুর্বিধ ধর্ম মধ্যে প্রধান গার্হস্থ্য।
    গৃহস্থ ধার্মিক কর্ম অতি সুপ্রশস্ত।।
    লোকে কহে ভ্রমি বারো ঘরে বসি তের।
    এবার গৃহস্থ ধর্ম যোগে যত পার।।
    তারক বলেন হরি বিবাহ করিব।
    গৃহিণী গ্রহণ কৈলে পাশ-বদ্ধ হব।
    অর্থ লোভে নারী লোভে কামাসক্ত হয়ে।
    তব নাম প্রেম সব যাইব ভুলিয়ে।।
    প্রভু কন মম বাক্যে বিবাহ করিলে।
    নাম প্রেম বৃদ্ধি হবে মম বাক্য বলে।।
    আমারে আদর করি করে পাপ কর্ম।
    আমার ইচ্ছায় সেই হয় মহাধর্ম।।
    মোরে অনাদর করি করে মহাধর্ম।
    আমার ইচ্ছায় সেই হয় পাপকর্ম।।
    এ বড় নিগূঢ় তত্ত্ব প্রভু মুখ বাক্য।
    তদ্রুপ আমার বাক্য হৃদে কর ঐক্য।
    যদি অর্থ নারী লোভে মোরে ভুলে যাবি।
    তবু মম দয়া বলে আমাকে পাইবি।।
    তারক কহিছে মোর অর্থ কিছু নাই।
    কেনা বেচা করি দিন আনি দিন খাই।।
    প্রভু হরিচাঁদ কহে তাতে কেন ভাব।
    যত অর্থ লাগে তাহা আমি তোরে দিব।।
    বিবাহ করিতে প্রভু কন বার বার।
    তারক বলেন যেই ইচ্ছা আপনার।।
    আসিলেন মৃত্যুঞ্জয় সূর্যনারায়ণ।
    প্রভু দুজনারে কহে সব বিবরণ।।
    তোমরা দুজনে যাও সম্বন্ধ করিতে।
    একেবারে চলে যাও ভাঙ্গুড়া গ্রামেতে।
    অগ্রে যাও গঙ্গারামপুর গ্রাম মাঝ।
    যে মেয়ে শুনিবে কথা কর সেই কাজ।।
    তারক চলিল দুজনারে সঙ্গে লয়ে।
    গঙ্গারামপুর গ্রামে উত্তরিল গিয়ে।।
    সনাতন পাটনি সে দেখিতে পাইল।
    সমাদর করি তার বাটী লয়ে গেল।।
    বলে দয়া করি হেথা করুণ ভোজন।
    সনাতন করিল পাকের আয়োজন।।
    সেই গ্রামে শ্রীগোবিন্দ নামে ভট্টাচার্য।
    তার বাটী হইতেছে তুলটাদি কার্য।।
    একমাস পুঁথি হল অদ্য উদযাপন।
    এই বাড়ী পুঁথি হবে কহে সনাতন।।
    সেই বাড়ী চলিলেন পুঁথি শুনিবারে।
    চারি জন এক ঠাই বসে একত্তরে।।
    পুঁথি কহে কথক বসিয়া ব্যাসাসনে।
    মহাপ্রভু হরিচাঁদ বসে সেই খানে।।
    মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস স্বচক্ষে দেখে তাই।
    সেই পাঠ সাঙ্গ হলে আর দেখা নাই।।
    মধ্যাহ্ন ভোজন করি ভাঙ্গুড়া আইল।
    কৃষ্ণমোহনের বাড়ী উপনীত হল।।
    বলিলেন মৃত্যুঞ্জয় কৃষ্ণমোহনেরে।
    এক মেয়ে চাহি মোরা এ ছেলের তরে।।
    কহেন কৃষ্ণমোহন আছে এক মেয়ে।
    ছেলের লবে না মন সে মেয়ে দেখিয়ে।।
    কৃষ্ণ বর্ণা মেয়ে তত শ্রীমতিও নয়।
    সে মেয়ে লন যদি তবে দেওয়া যায়।।
    মৃত্যুঞ্জয় বলে মোরা শ্রীমতি না চাই।
    কথা যদি শুনে তবে মেয়ে লয়ে যাই।।
    আসিবার কালে বলে দিলেন ঠাকুর।
    মেয়ে দেখিবারে যাও গঙ্গারামপুর।।
    মেয়ে দেখি তথা হতে ভাঙ্গুড়া যাইও।
    যেই মেয়ে কথা শুনে সে মেয়ে আনিও।।
    কৃষ্ণমোহন বলে আমি সাথে সাথে যাব।
    কি লইয়া যাবে তথা সম্বন্ধের ভাব।।
    বাতাসা লইতে হবে সে বাড়ী যাইতে
    তারক বলিল কপর্দক নাই সাথে।।
    সোয়াসের বাতাসা লাগিবে পাঁচ আনা।
    অবাক হইয়া বসি রল তিনজনা।।
    হেনকালে একজন জিজ্ঞাসে তথায়।
    তারক কাহার নাম আছে কি হেথায়।।
    করিতে কবির দল বায়না কারণ।
    বহু পথ পরিশ্রমে করেছি ভ্রমণ।।
    গোবরা কাছারী হতে আমি আসিয়াছি।
    জয়পুর গিয়া এই সংবাদ শুনিয়াছি।।
    বিবাহের সম্বন্ধ করিতে তিনজন।
    এইগ্রামে তারা নাকি করেছে গমন।।
    ভাঙ্গুড়া গ্রামের কথা শুনিলাম তথা।
    এই যায় এই যায় শুনিলাম কথা।।
    অনেকের ঠাই শুনি জিজ্ঞাসা করিলে।
    এই যায় এই গেল অনেকেই বলে।
    আহারাদি করিলাম মনোখালী গ্রাম।
    এই মাত্র তথা হতে আমি আসিলাম।।
    যাওয়া মাত্র বায়নার টাকা লয়ে হাতে।
    সেই লোক বিদায় করিল তরান্বিতে।।
    সেই টাকা ভাঙ্গাইয়া বাতাসা কিনিয়া।
    চলিলেন চারজন একত্র হইয়া।।
    শ্যামচাঁদ কাঁড়ারের বাড়ী উতরিল।
    মেয়েটি দেখিব বলে আলোচনা হ।।
    মেয়েটি লইয়া শ্যাম আসিল বাহিরে।
    মেয়েকে বলিল দণ্ডবৎ করিবারে।।
    মৃত্যুঞ্জয় চরণে করিল প্রণিপাত।
    পদধূলি নিল শ্রীচরণে দিয়া হাত।।
    মৃত্যুঞ্জয় বলে মা মাথার বস্ত্র ফেল।
    শুনিয়া মাথার বস্ত্র অমনি ফেলিল।।
    মৃত্যুঞ্জয় বলে মাতা মেল দুনয়ন।
    অমনি নয়ন করিলেন উন্মিলন।।
    মৃত্যুঞ্জয় বলে মাতা চুল ছেড়ে দেও।
    চুলের বন্ধন ছাড়ি ঘরে চলে যাও।।
    অমনি দাঁড়ায়ে চুল বন্ধন ছাড়িল।
    দণ্ডবৎ করি পরে গৃহে চলে গেল।।
    সীতা যেন গবাক্ষে দেখিল রামরূপ।
    তারকে নিরখি সতী হইল তদ্রুপ।।
    অমনি সম্বন্ধ ঠিক করিল ত্বরায়।
    সেই দিন রহিলেন শ্যামের আলয়।।
    জিজ্ঞাসিল মৃত্যুঞ্জয় কি লইবা পণ।
    শ্যাম বলে লইব না এই মোর পণ।।
    গয়াধামে যাব আমি ভেবেছিনু মনে
    এ ছেলেকে কন্যা যদি দিতে পারি দানে।।
    মেয়ে দিব এই মম আকাঙ্খা কেবল।
    ঘরে বসে পাই তবে গয়া গঙ্গা ফল।।
    যে হইতে মাতা জন্মে আমার ভবনে।
    সেই হতে এই আশা সদা মোর মনে।।
    ঈশ্বর মনের আশা করুণ পূরণ।
    বিনা পণে কন্যাধনে করিব অর্পণ।।
    সম্বন্ধ নির্ণয় করি প্রভুকে বলিল।
    প্রভু বলে যার তার যুগে যুগে রল।।
    প্রভু বলে শ্যাম যদি নাহি লয় পণ।
    তথাপি বত্রিশ টাকা করিও প্রেরণ।।
    তারক ভেবেছে মনে উপায় কি হবে।
    গৃহে নাস্তি কপর্দক কিবা পাঠাইবে।।
    মহাপ্রভু বলে বসে কি ভাবিস একা।
    বৈশাখ মাসেতে বিয়া আমি দিব টাকা।।
    মাঘ মাসে হল সেই কার্য নিরূপণ।
    চারি মাসে হল সে টাকার সংস্থাপন।।
    তিন তারিখেতে তিন ভাগে টাকা দিল।
    পণ নয় সাহায্য বলিয়া পাঠাইল।।
    বৈশাখ মাসের শেষ আটাশে তারিখ।
    বিবাহের সেই দিন হয়ে গেল ঠিক।।
    বিবাহের দিন একদিন অগ্রে তার।
    বায়না কুন্দসী গ্রামে কবি গাওয়ার।।
    সেই দিন গ্রামী লোকে ফলাহার দিতে।
    এক মন দধির বায়না ছিল তাতে।।
    এদিকেতে স্বজাতীর একত্র ভোজন।
    বাজারের নেয়ে মাঝি খাবে সর্বজন।।
    বসিলেন সর্বজন ফলাহার জন্য।
    পঞ্চাশ পঞ্চান্ন জন লোক হল গণ্য।।
    জলপানে পরিপূর্ণ আহার হইল।
    সিকি দধি মাত্র তার খরচে লাগিল।।
    সেই দই চিনি খই সঙ্গেতে করিয়া।
    বরযাত্রা করিলেন নৌকায় উঠিয়া।।
    পথে গিয়া সেই দধি সবে মিলে খায়।
    চিনি চিঁড়ে দই খই যেন তেন রয়।।
    ভাঙ্গুড়া গ্রামেতে গিয়া বাসাবাড়ী করি।
    সেই সব দ্রব্য খাওয়াইল সেই বাড়ী।।
    এ জাতির বিবাহ পদ্ধতি ব্যবহার
    কন্যা কর্তা বাড়ী কেহ না পায় আহার।।
    কন্যা গৃহীতার তথা খেতে দিতে হয়।
    যে না পারে না খাওয়ায়, পারিলে খাওয়ায়।।
    (যে পারে সে খাওয়ায়, না পারিলে নয়।।)
    সেই গ্রামে ভোজ দিতে কৈল আয়োজন।
    ভোজ দিতে তণ্ডুল লাগিবেক দুই মণ।।
    আর এক মণ লাগে সিধা পত্র দিতে।
    চারি মণ দধি লাগে ভোজ ভোজনেতে।।
    নিয়াছিল তারক তণ্ডুল চারি মণ।
    এক মণ দধি তার আছে অর্ধ মণ।।
    তিন মণ চাউল পাকের জন্য দিল।
     দুই মণ পাক হল এক মণ রল।।
    অন্ন দেখি গ্রামবাসী সব লোকে কয়।
    এই অন্নে হইবেক হেন মনে হয়।।
    দুগ্ধ ক্রয় করেছে পায়স রাঁধিবারে।
    পায়স হইল পাক পাকশালা ঘরে।।
    গ্রামবাসী এসে লোক বসাইয়া দিল।
    দুই প্রাঙ্গণেতে লোক ভোজনে বসিল।।
    ডাইল লাবড়া ভাজা ব্যঞ্জন অম্বল
    আহারান্তে সবে বলে উত্তম সকল।।
    হয় নাই কভু কোথা এমন ভোজন।
    পায়সান্ন দিতে জন্যে করে আয়োজন।।
    হেনকালে একজন গোয়ালা আসিল।
    দুই মণ দধি কাঁধে লয়ে দাঁড়াইল।।
    সে বলে আমার এই দধি টুকু লও।
    দয়া করি এই দধি খরচে লাগাও।।
    এ দধির বায়না ব্রাহ্মণ বাড়ী ছিল।
    উদ্বৃত্ত হয়েছে দধি ফেরত করিল।।
    অমনি তারক বলে দেও দেও দেও।
    সত্বর স্বজাতিগণে এ দধি খাওয়াও।।
    সঙ্গে দধি বাটী হতে আনা অর্ধ মণ।
    সে গ্রামে খরচ গেল দধি দুই মণ।।
    দধি ভোজ শেষ হলে পায়স ভোজন।
    সবে বলে হেন ভাল না খাই কখন।।
    বিবাহের পরে জয়পুর আসা হল।
    সঙ্গেতে ফেরত দধি অর্ধ মণ ছিল।।
    চাউল দুমণ ফিরে আর জলপান।
    তার অর্ধ দধি বাল্য ভোজনে লাগান।।
    পাক পরশয়ের জন্য দধি নাহি হবে।
    দুগ্ধ কিনিলেন ভোজে পরমান্ন দিবে।।
    আর আর দ্রব্য সহ হয়েছে রন্ধন।
    সব লোক বসিলেন করিতে ভোজন।।
    খাইলে ভাজা ব্যঞ্জনাদি মৎস্য ঝোল।
    ভোজনের শেষে সবে খাইল অম্বল।।
    হেনকালে এক জন গোয়ালা আসিল।
    এক মণ দধি লয়ে উপনীত হল।।
    গোপ বলে কুণ্ডু বাড়ী ছিল দধি বায়না।
    সব দধি নিল তারা এক মণ নেয় না।।
    এই দধি খেতে দিব আমার গরজ।
    যাহা ইচ্ছা মূল্য দিও হউক খরচ।।
    তারক বলিল এই ঠাকুরের কাম।
    আন দধি দিব আমি দুই টাকা দাম।।
    পূর্বে এক মণ আর এই এক মণ।
    চারি টাকা মূল্য এনে দিলেন তখন।।
    ছাতরায় বাসা ছিল রায়চাঁদ ঘোষ।
    চারি টাকা মূল্য পেয়ে হইল সন্তোষ।।
    ভাঙ্গুড়ার গোয়ালের দুই মণ দই।
    চারি টাকা পাইয়া সন্তুষ্ট হল সেই।।
    শ্রীহরি-চরিত্র সুধা ভকত আখ্যান।
    রচিল তারকচন্দ্র হরি-রস-গান।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.