শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
১৪ অন্তখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ১৪ অন্তখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ


                              অন্তখণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ

    অন্তখণ্ড
    প্রথম তরঙ্গ
    বন্দনা

    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
    জয় জয় যশোমন্ত প্রভুর জনক।
    জয় জয় রামকান্ত ভুবন পারক।।
    জয় ভক্ত শিরোমণি গোবিন্দ মতুয়া।
    যার গানে হরিনামে বহি যায় ধুয়া।
    জয় বন্দ মহেশ ব্যাপারী গুণধাম।
    যাহার মস্তকে নরহরি শালগ্রাম।।
    জয় জয় বদন ঠাকুর গুণধাম।
    উৎসবে ব্যসনে যার মুখে হরিনাম।।
    শয়নে স্বপনে কিংবা মলমূত্র ত্যাগে।
    যার মুখে হরিনাম উচ্চৈঃস্বরে জাগে।।
    জয় জয় ভক্ত প্রধান রামচাঁদ।
    যিনি হন মহাপ্রভু নিত্য পরিষদ।।
    জয় জয় ভজরাম চৌধুরী সুজন।
    জয় স্বরূপ চৌধুরী মঙ্গল দুজন।
    কুবের বৈরাগী রামকুমার ভকত।
    দন্তে তৃণ ধরি বন্দি হয়ে পদানত।।
    জয় চূড়ামণি বুদ্ধিমন্ত দুটি ভাই।
    হরিচাঁদে পেয়ে আনন্দের সীমা নাই।।
    জগবন্ধু বলে ডাক ছাড়িত যখন।
    সুমেরুর চূড়া যেন হইত পতন।।
    অনন্ত প্রভুর লীলা অনন্ত ভকত।
    বিধি অগোচর লীলা শুলীন্দ্র অজ্ঞাত।।
    পূর্বেতে কড়ার ছিল মাতৃ সন্নিধানে।
    করিবেন শেষ লীলা ঐশান্য কোণে।।
    সেইহেতু ওঢ়াকাঁদি শেষলীলা কাজ।
    পয়ার প্রবন্ধে কহে কবি রসরাজ।।
    (জয় জয় শান্তিদেবী জগৎ জননী।
    জয় মাতা সত্যভামা শ্রীগুরু ঘরণী।।
    জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
    প্রেমানন্দে হরিগুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।
    জয় উমাকান্ত প্রভু কনিষ্ঠ তনয়।
    জয় শ্রীশশী উপেন্দ্র সুরেন্দ্রের জয়।।
    জয় চিরকুমার ডক্টর ভগবতী।
    আশৈশব গুরুচাঁদ পদে যার মতি।।
    জয় শ্রীপতিচাঁদ, মাতা মঞ্জুলিকা।
    জয় জয় হরিলীলা ভক্তি প্রীতি শিখা।।
    জয় শ্রীসতীশ, প্রমথ, মন্মথ জয়।
    শ্রীগুরুচাঁদের পুত্র পৌত্রাদির জয়।।
    বন্দি পদাম্বুজ নিত্যঃ-জয় অংশুপতি।
    জয় শচীপতি, জয় হিমাংশুপতি।।
    বন্দি এ তিন প্রভু শ্রীপতিচাঁদাত্মজ।
    হরিবংশ মাতা ঠাকুরানীগণ ভজ।।)

    অথ শ্রীমল্লোচন গোস্বামীর বিবরণ
    লঘু-ত্রিপদী
    গোস্বামী লোচন           প্রেম মহাজন
    বৈষ্ণব সুজন যিনি।
    গ্রাম নড়াইলে              জনম লভিলে
    পূর্বে ছিল ভৃগুমুনি।।
    নাম চূড়ামণি              সাধু শিরোমণি
    লোচনের হন পিতা।
    তুলসী সেবন               শ্রীকৃষ্ণ ভজন
    কহিতেন হরিকথা।।
    তাঁহার নন্দন               ল পঞ্চজন
    করিতেন কৃষিকার্য।
    তীর্থে তীর্থে বাস                    প্রায় বারমাস
    গৃহকার্য করে ত্যাজ্য।।
    পাঁচটি নন্দন               সকলে সুজন
    শ্রীকৃষ্ণ ভজন করে।
    পঞ্চ সহোদর               ভজনে তৎপর
    পিতা যান লোকান্তরে।।
    পাঁচের প্রবীণ               পরিল কৌপীন
    না করিল পরিণয়।
    য়ে গৃহত্যাগী            হইল বৈরাগী
    ভিক্ষা মাগি সদা খায়।।
    কিছুদিন পরে              গ্রাম শিবপুরে
    আখড়ায় বাস করে।
    যত সব লোকে            তার ক্রিয়া দেখে
    ঠাকুর বলেন তারে।।
    লোচন গোঁসাই             দেখে শুনে তাই
    ভাই গেল গৃহ ত্যাজি।
    আমি কি সুখেতে          থাকিব গৃহেতে
    সংসার ভোজের বাজী।।
    বাল্যকালাবধি              করে নিরবধি
    হাই ছাড়ে কৃষ্ণনাম।
    কৃষ্ণ বলে সদা             আর বলে দাদা
    কেন মোরে হলে বাম।।
    ডাকি একদিনে            ভাই তিন জনে
    কহেন মধুর ভাষে।
    আমিও বৈরাগী            হই গৃহত্যাগী
    সবে সুখে থাক বাসে।।
    লোচন জননী              নামেতে আছানী
    কথা শুনি মাতা কয়।
    বাছারে লোচন             শুনিয়া বচন
    জীবন জ্বলিয়া যায়।।
    জনক তোমার             ল লোকান্তর
    সহোদর তব জ্যেষ্ঠ।
    দুঃখিনী দেখিয়া           গিয়াছে ছাড়িয়া
    অন্তরে অনন্ত কষ্ট।।
    কিছুদিন পর               মাতা লোকান্তর
    সাধু পেল অবসর
    পরিয়া কৌপীন            হৈল উদাসীন
    দীনহীন ক্ষুদ্রতর।।
    মেগে খায় ভিক্ষা                    নাহি দীক্ষা শিক্ষা
    নিজেই কৌপীনধারী।
    হা গুরু বলিয়া              ডাক ছেড়ে দিয়া
    হইল দীন ভিখারী।।
    কালোরূপ আলো                    বরণ শ্যামল
    নীল কমল শরীর।
    দ্বিবাহু লম্বিত               অতি সুললিত
    নাভিপদ্ম সুগভীর।।
    শ্রীরামলোচন              কহে কোন জন
    নামে লোচন প্রকাশ।
    কখন কখন                কহে কোন জন
    শ্রীরামলোচন দাস।।
    হা গুরু গোঁসাই             বলে ছাড়ে হাই
    কখন কহিত দাদা।
    মোর এ সময়              থাকিবা কোথায়
    হৃদয় থাকিও সদা।।
    সাধুলোকে সব             বলেন বৈষ্ণব
    হইল বৈষ্ণবোপাধি।
    কাটি কর্মভোগ             ত্যাজি ন্যাসযোগ
    মহারোগ নিল ব্যাধি।।
    হস্ত পদাঙ্গুল               ল স্থুল স্থুল
    ক্ষত হয়ে গেল খসি।
    ছিল মাত্র রেখা            কাষ্ঠের পাদুকা
    পায় বাঁধে দিয়া রসি।।
    বৃদ্ধ পদাঙ্গুল               ছিল মাত্র মূল
    হস্তের তর্জনী মূর্দ্ধ।
    শ্রীকর যুগলে               চতুর আঙ্গুলে
    ল মাত্র অর্ধ অর্ধ।।
    ক্লেদ শুকাইল              ক্ষত সেরে গেল
    রহে চিহ্ন অন্যাঙ্গুল।
    নাসা চক্ষু লাল             বদন অমল
    দন্ত যেন কন্দ ফুল।।
    মুখে নাহি ক্ষত            কমল শোভিত
    অধরে মধুর হাসি।
    অধরোষ্ট প্রান্তে             কুন্দসম দন্তে
    হাসিতে খসিত শশী।।
    শরীর মাঝেতে            স্থানেতে স্থানেতে
    ইচ্ছায় করিত ক্ষত।
    এক ঘা সারিত             আর ঘা করিত
    রক্ত ক্লেদ বহির্গত।।
    কখন নৌকায়              গৃহস্থ আলয়
    যান কখন কখন।
    ক্ষুধার সময়                হইত যথায়
    তথা করিত ভোজন।।
    ভিক্ষাপাত্র হাঁড়ি            লয়ে বাড়ী বাড়ী
    করিতেন সদা ভিক্ষা।
    ক্ষুধার্ত হইলে              খাইতে চাহিলে
    কেহ না করে উপেক্ষা।।
    হিন্দু কি যবনে             ঘৃণা নাহি মনে
    ভোজনে ছিল রীতি।
    যে করে আদর             খায় তার ঘর
    বিচার নাহিক জাতি।।
    লোহাগড়াবাসী             পীতাম্বর ঋষি
    খুশী হয়ে দিত খেতে।
    অভিমান শূন্য              খেত তার অন্ন
    সে ধন্য হল ভক্তিতে।।
    ছিল এক ভক্তা            নাম তার মুক্তা
    জাতি বেবাজের মেয়ে।
    ভকতি করিত              চরণ ধরিত
    খাইত সে বাড়ী গিয়ে।।
    ঋষি পীতাম্বর              ভোজনে তৎপর
    ঘুচে গেল দৈন্য দশা।
    শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে             বেড়াত কাঁদিয়ে
    ত্যজিয়ে জাতির পেশা।।
    তর্জনী মধ্যয়ে             হাত বাঁধাইয়ে
    অর্ধ দ্বি অঙ্গুলী ধরে।
    অন্নেতে ব্যঞ্জন             করিয়া মিশ্রণ
    তুলিয়া দিত অধরে।।
    মুকুতা বেদেনী             দৈন্য ছিল ধনী
    দোকানী সে মনোহারী।
    অদৈন্য সংসার             হইল তাহার
    গোস্বামীর সেবা করি।।
    জয়পুর গ্রামে              ওয়াছেল নামে
    জাতিতে মুসলমান।
    গিয়া তার ঘরে            ভোজনাদি করে
    বাড়িল তাহার নাম।।
    সে হল ফকির             লোকে বলে পীর
    জিগীর মারিয়া ফেরে।
    লোচন বলিয়া              ডাক ছেড়ে দিয়া
    নাম দিয়া রোগ সারে।।
    ত্যজে বেদাচার            জাতি কুলাচার
    বৈষ্ণব আচার ত্যাগী।
    তারকের আশা            মানস পিপাসা
    স্বামীর চরণ লাগি।।

    স্বামীর অপরূপ রূপ ধারণ
    লঘু-ত্রিপদী
    কুবের বৈরাগী              মহা অনুরাগী
    তার বাড়ী একদিনে।
    ভিক্ষার লাগিয়া            তার বাড়ী গিয়া
    ভিক্ষা মাগিল যখনে।।
    গোস্বামীর টের             পাইয়া কুবের
    ধরে গোস্বামীর পদ।
    অদ্য এ বাড়ীতে           হবে সেবা নিতে
    দিতে হইবে শ্রীপদ।।
    দয়া উপজিল              গোস্বামী বলিল
    বলে শীঘ্র দেও খেতে।
    কুবের রমণী               গৃহে নাই তিনি
    গিয়াছেন বস্ত্র ধুতে।।
    ত্বরান্বিত হয়ে             কুবের আসিয়ে
    বলে তাহার নারীকে
    এস শীঘ্রগতি               এসেছে অতিথি
    সেবা করাব তাহাকে।।
    কুবের রমণী               কহিছেন বাণী
    অতিথি এসেছেন কে।
    কুবের কহেন              লোচন এলেন
    সেবা করাব তাহাকে।।
    কুবের রমণী               রুষিয়া অমনি
    কহিছে রাগের সাথ।
    তুণ্ড মহারুগে              দূর করে দিগে
    কে রাঁধিবে তার ভাত।।
    কুবের রুষিয়া              বাটীতে আসিয়া
    নিজে যায় পাকঘরে।
    করে আয়োজন            লোচন তখন
    তাহা জানিল অন্তরে।।
    গোস্বামী লোচন           মধুর বচন
    ডেকে কহে কুবেরেরে।।
    যার যেই কাজ             তার সেই সাজ
    অন্যে কি সাজিতে পারে।।
    বল গিয়ে মায়             আমি তুণ্ড নয়
    পাক করুণ আসিয়ে।
    ভাল হয়ে এলে           ভাল পাক হলে
    আমি খাব ভাল হয়ে।।
    কুবের নারীকে             কহিছেন সুখে
    পাক কর শীঘ্র গিয়ে।
    মোরে পাঠালেন           স্বামী বলিলেন
    খাইবেন ভাল হয়ে।।
    কুবের রমণী               কহিছেন বাণী
    এই কথা নহে সাচা।
    উহা না মানিব             আমি না যাইব
    ছাড়িয়া কাপড় কাঁচা।।
    কহিছেন রাগী             কি কহিলি মাগী
    কুবের ক্রোধেতে পূর্ণ।
    গোঁসাই লোচন             কহিছে বচন
    এ রাগ কিসের জন্য।।
    বাছারে কুবের             কপালের ফের
    মাকে কেন মন্দ বল।
    ক্রোধ নহে ভাল            তুমি আমি ভাল
    মাতাও কহিছে ভাল।।
    চলহ এখন                 আমরা দুজন
    পাক আয়োজন করি।
    মা আসিবে পরে                    পাক করিবারে
    আমরা কি কাজে হারি।।
    গোস্বামী আসিয়ে          কুবেরকে লয়ে
    রাখিয়ে নিজের ঘরে।
    যাইয়া গোঁসাই             সে নারীর ঠাই
    কহিছেন মৃদু স্বরে।।
    মা এস এখন               করহ রন্ধন
    ভোজন করিব আমি।
    সুপুরুষ হয়ে               খাইব বসিয়ে
    দেখিতে পাইবা তুমি।।
    তাহা শুনি সতী            অতি শীঘ্র গতি
    ভকতি করিল মনে।
    অন্নাদি ব্যঞ্জন              করিল রন্ধন
    লোচন বসি ভোজনে।।
    দেখিবারে পায়             শ্যাম নীলকায়
    তাহাতে উঠেছে জ্যোতি।
    অধর শ্রীমন্ত                শশী শোভাবন্ত
    দন্ত মুকুতার পাঁতি।।
    হস্ত পদাঙ্গুল               অতুল রাতুল
    জবা ফুল শোভাকরে।
    কি অতুল পদ              যেন কোকনদ
    চন্দ্র পতিত নখরে।।
    সে রূপ দেখিয়ে            পড়ে লোটাইয়ে
    দিব্য জ্ঞান পেয়ে কয়।
    ডেকেছে কুবেরে                    তোমারে শিবিরে
    শিবের ধন উদয়।।
    কুবের দেখিয়া             পড়িল ঢলিয়া
    তাহার নারীর পায়।
    চেতন পাইয়া              কহিছে কাঁদিয়া
    আমার মস্তকে আয়।।
    তুই নারী ধন্যে            এ রূপের জন্যে
    করেছিলি এ ছলনা।
    তোর স্পর্শ জন্য                    মোর দেহ ধন্য
    সব শূন্য তোমা বিনা।।
    কুবের গৃহিণী               যেমন যক্ষিণী
    তেমনি মানি তোমারে।
    ভবানীর শোভা             পদে দিয়ে জবা
    দেখাইল কুবেরেরে।।
    অদ্য তোর গুণে            আমার ভবনে
    দেখিতে পাইনু তাই।
    এই বাঞ্ছা করি             তোমা হেন নারী
    জনমে জনমে পাই।।
    দেখিতে দেখিতে                    ক্ষণেক পরেতে
    সেই রূপ লুকাইল।
    হরিষে বিরসে              গললগ্নী বাসে
    কুবের পদে পড়িল।।
    ধরিয়া লোচন              করি আলিঙ্গন
    কহিলেন কুবেরেরে।
    যা দেখ নয়নে             তোমাদের গুণে
    যার কাজ সেই করে।।
    ধন্য সে কুবের             ধন্যে এ ভবের
    লোচনের পদ সেবি।
    শ্রবণে মঙ্গল               হরি হরি বল
    রচিল তারক কবি।।

    শ্রীমল্লোচন গোস্বামীর জয়পুর গমন
    পয়ার
    গোস্বামী বেড়ান সদা তরণী বাহিয়া।
    কখন বা পদব্রজ বেড়ান ভ্রমিয়া।।
    ভাদ্র মাসে এক দিন তরীখানি লয়ে।
    একা চলেছেন সাধু সে তরী বাহিয়ে।।
    ধীরে ধীরে চলেছেন তরীখানি ভগ্ন।
    তুণ্ড হাতে ধরে ডাণ্ডি করে করি লগ্ন।।
    নৌকা বেয়ে এসেছেন লোচন ঠাকুর।
    ধীরে ধীরে উত্তরিল এসে জয়পুর।।
    বরষায় জলমগ্ন বাড়ীর নিকটে।
    বসিছে তারক সে বাড়ীর পূর্ব ঘাটে।।
    হরিচাঁদ রূপ চিন্তা বসিয়াছে একা।
    হেনকালে গোস্বামী আসিয়া দিল দেখা।।
    তারকে জিজ্ঞাসা করে তারকের কথা
    বলহে এখানে তারকের বাড়ী কোথা।।
    গোস্বামীকে দৃষ্টি করি তারক চিনিল।
    পূর্বে একদিন ওঢ়াকাঁদি দেখা ছিল।।
    ওঢ়াকাঁদি শ্রীধামে তারক গিয়াছিল
    সে দিন গোস্বামী ধামে উপস্থিত হল।।
    ও হরি! ও হরি! বলে গোস্বামীজী ডাকে।
    মহাপ্রভু ডাক শুনে পরম পুলকে।।
    তাহা শুনি তারক ভাবিল মনে মনে।
    হেন সুধামাখা ডাক ডাকে কোন জনে।।
    সামান্য মানুষ না হইবে এই জন।
    ইচ্ছা হয় সেবা করি যুগল চরণ।।
    বাহির বাটীতে বসি ভাবিতেছি তাই।
    নিকটে আসিয়া তবে জিজ্ঞাসে গোঁসাই।।
    এখানে বসিয়া বাপ! কি ভাবিছ মনে।
    বল শুনি তোমার বসতি কোনখানে।।
    বিনয় তারক কহে শুনহে ঠাকুর।
    তারক আমার নাম বাড়ী জয়পুর।।
    গোঁসাই বলেন তুমি না ভাবিও আর।
    ভিক্ষায় যাইয়া থাকি মধুমতী পার।।
    দেশে দেশে যখন মাগিয়া খাই ভিক্ষা।
    মনন থাকিলে পরে হতে পারে দেখা।।
    টুণ্ডা হাত পদ মোর বেড়াই হাঁটিয়া।
    পদের নীচায় কাষ্ঠ পাদুকা বাঁধিয়া।
    দুই চারি পদ হাটে ঘুরিয়া ঘুরিয়া।
    মহাপ্রভু সঙ্গে রঙ্গে কথা কন গিয়া।।
    ডেকে বলে ওহে হরি তুমিত গোঁসাই।
    আসিলে তোমার বাড়ী বড় ভাল খাই।।
    সেই জন্য আসি আমি সময় সময়।
    তোমার বাটীতে বড় ভাল পাক হয়।।
    লক্ষ্মীর হাতের পাক অন্নাদি ব্যঞ্জন।
    কৃষ্ণের নৈবিদ্য আমি করি যে ভোজন।।
    হরিচাঁদ প্রভু কন থাক এ বেলায়।
    কৃষ্ণের নৈবিদ্য যেন তোমা হতে হয়।।
    থাকিল লোচন হল ভোজন সময়।
    চারিদণ্ড রাত্রিকালে বসিল সেবায়।।
    ঠাকুরে বলেন হরি! তুমিও বসহ।
    আমি এই বসিলাম মাতাকে বলহ।।
    দুই ঘরে দুই প্রভু বসিল সেবায়।
    উত্তরের ঘরে হরিচাঁদ দয়াময়।
    পূর্ব ঘরে পিড়িপরে বসিল লোচন।
    লক্ষ্মীমাতা দেন অন্ন হয়েছে রন্ধন।।
    ভোজন করেছে আর বলেছে লোচন।
    বড়ই সুপক্ক স্বাদু সুক্তার ব্যঞ্জন।।
    হেন ব্যঞ্জনাদি আমি কোথাও না পাই।
    তোমার মন্দিরেতে উদর পুরে খাই।।
    শান্তিমাতা ব্যঞ্জন দিলেন দুইবার।
    তাহা শুনি ব্যঞ্জন দিলেন আরবার।।
    আরবার বলে হরি খাইলাম ভাল।
    কিবা সুব্যঞ্জন মম রসনা রসিল।।
    নদীয়ায় শচীসুত ছিলেন ভিখারী।
    তার বাড়ী পেটপুরে খাইবারে নারি।।
    গৃহস্থ হয়েছ ভাল হইয়াছে ভাল।
    মাতা ভাল পাক ভাল খাই আমি ভাল।।
    তাহা শুনি মহাপ্রভু লক্ষ্মীমাকে কয়।
    পুনঃ ব্যঞ্জনাদি দেহ গোস্বামী সেবায়।।
    এইরূপে ব্যঞ্জন লইল পঞ্চবার।
    প্রভু হরিচাঁদ বলে না লইও আর।।
    তাহা শুনি লোচন ভোজন করে ক্ষান্ত।
    হীননিদ্রা জেগে থেকে নিশি করে অন্ত।।
    সে হইতে তারকের বাঞ্ছা ছিল মনে।
    হেন গোস্বামীর সঙ্গ পাব কতদিনে।।
    হেন প্রভু তারকের ঘাটেতে উদয়।
    গলে বস্ত্র করজোড়ে তারক দাঁড়ায়।
    তারক কহিছে প্রভু আমি সে তারক।
    আপনার দরশনে শরীর পুলক।।
    ঘাটে নৌকা লাগাইল তারক তখনে।
    আনন্দে গোস্বামী লয়ে চলিল ভবনে।।
    সে হইতে গোঁসাই রহিল সপ্ত বর্ষ।
    পূর্ণানন্দ সদা সবে নাহিক বিমর্ষ।
    সময় সময় যাইতেন অন্য স্থানে।
    বেশী হলে থাকিতেন দুই তিন দিনে।।
    তারকের হত যবে একান্ত মনন।
    মন বুঝে এসে দেখা দিতেন তখন।।
    দশদিন এক পক্ষ কিংবা মাসান্তর।
    একারম্ভে থাকিয়া যাইত পুনর্বার।।
    কোলাগ্রামে যাইতেন সাধনার ঘরে।
    দিন দশ দ্বাদশ থাকিত তথাকারে।।
    তারকের হত যদি দেখিবারে মন।
    কোলাগ্রামে গিয়া করিতেন দরশন।।
    সাধনার বাটী ভক্তি পাইত প্রচুর।
    দশ বারো দিন পর যেত জয়পুর।।
    কোলাগ্রামে বসতি নামেতে আরাধন।
    আরাধন দশরথ ভাই দুই জন।।
    ভোলানাথ খুল্লতাত দশরথ নামে।
    বড়ই সুখের বাস ছিল কোলাগ্রামে।।
    তার জ্যৈষ্ঠ তনয় নামেতে নবকৃষ্ণ।
    মথুরানাথ নামেতে তাহার কনিষ্ঠ।।
    আরাধন পুত্র ভোলানাথ নাম ধর।
    দশরথ নন্দন যাদব কোটিশ্বর।।
    দশরথ  গৃহিণী সে ফেলী নামে ধনী।
    গোস্বামীকে বড় ভক্তি করিতেন তিনি।।
    তাহাকে লোচন ডাকিতেন মা বলিয়ে।
    ডাক শুনিতেন মাতা অতি হর্ষ হয়ে।।
    যাদবের মা বলিয়া ডাকিত কখন।
    জ্যেঠি বলে কখনো করিল সম্বোধন।।
    শ্রীনবকৃষ্ণের চারি পুত্র দুই কন্যা।
    জ্যেষ্ঠা কন্যা সাধনা সাধনে বড় ধন্যা।।
    সনাতন নামে ছিল ইহাদের জ্ঞাতি।
    এক বাড়ী তিন ঘর করিত বসতি।।
    তিন ঘর গৃহস্থ একটি বাড়ী পর।
    নাহি ভিন্ন ভাব যেন ছিল একতর।।
    গণনাতে লোক ত্রিশ ঊনত্রিশ জন।
    ছোট বড় নামে প্রেমে মত্ত সর্বজন।।
    তার মধ্যে সাধনা নামেতে ছিল যিনি।
    সাধনে তৎপরা ছিল যোগেতে যোগিনী।।
    অন্নত্যাগী ফলাহারী নিদ্রা না যাইত।
    শীতকালে শয্যাতে না শয়ন করিত।।
    কটিবেড়া বাসমাত্র গায় নাহি দিত।
    ভূমে বাস যোগাসনে যোগেতে বসিত।।
    কোলাগ্রামে গোস্বামী লোচন দেব আসি।
    সাধনার নিকট থাকিত অহর্নিশি।।
    অমায়িক মায়া বাৎসল্যের একশেষ।
    গোস্বামী সঙ্গেতে বঞ্চে নাহি কোন ক্লেশ।।
    কোন কোন দিন যাইতেন ভিক্ষা জন্য।
    জ্ঞান হত বাড়ী যেন হইয়াছে শূন্য।।
    সবে চেয়ে রহিত গোঁসাই আশা পথে।
    শান্ত হত গোস্বামীজী আসিলে বাটীতে।।
    গৃহকার্য করে থাকে গোস্বামী আশায়।
    গোঁসাই আসিলে বড় হরষিত হয়।।
    পুরুষেরা কার্যন্তরে যাইত যখনে
    গোস্বামীর কাছে যাব সদা ভাবে মনে।।
    দিবা ভরি কার্য করি যবে সন্ধ্যা হত।
    গোস্বামীর নিকটে এসে সকলে বসিত।।
    প্রেমাবিষ্ট অনুক্ষণ থাকিত সবায়।
    বাহ্যহারা হয়ে কোন নিশি গত হয়।।
    এইভাবে জয়পুর থাকেন গোঁসাই।
    সময় সময় যেত সাধনার ঠাই।।
    যেই ভক্ত সেই হরি ভজ নিষ্ঠা করি।
    নামের সহিত আছে আপনি শ্রীহরি।।
    মহানন্দ চিদানন্দ রচিতে পুস্তক।
    আদেশে প্রকাশে কবি বাসনা তারক।।

    অবিশ্বাসী দ্বিজের ভ্রান্তি মোচন
    পয়ার
    মাঝে মাঝে যান প্রভু ভিক্ষা করিবারে।
    ভিক্ষা করি আসিতেন বেলা দ্বিপ্রহরে।।
    একজন দ্বিজ তার বাড়ী উলা গ্রাম।
    গৃহস্থ ব্রাহ্মণ তিনি ষষ্ঠীচন্দ্র নাম।।
    কোলাগ্রামে এসেছিল সাধনার বাটীতে।
    দেখিলেন গোস্বামীকে ভকতি করিতে।।
    তাহা দেখি ব্রাহ্মণের মনে হল ঘৃণা।
    একে যে ভকতি করে নির্বোধ সে জনা।।
    অল্প বিদ্যা বুদ্ধিহীন নমঃশুদ্র জাতি।
    কারে কি জানিয়া এরা করিছে ভকতি।।
    সাধনার পিতাকে বলেন সে ব্রাহ্মণ।
    ইহাকে ভকতি কর কিসের কারণ।।
    মেয়ে তব সতী সাধ্বী যোগিনীর প্রায়।
    কি লাগি দিয়াছ সপে ও টুণ্ডার পায়।।
    তাহা শুনি নবকৃষ্ণ বলে ব্রাহ্মণেরে।
    সাধুসেবা সবে মিলে করি হর্ষান্তরে।।
    কৃষ্ণতুল্য ব্যক্তি ইনি গ্রন্থে লেখে এই।
    সর্বরোগী ভোগী ত্যাগী কৃষ্ণতুল্য সেই।।
    ব্রাহ্মণ কহিছে ভাল পেয়েছ গোঁসাই।
    মহা পাপে মহা রোগ হস্ত পদ নাই।।
    নবকৃষ্ণ ক্রোধভরে কহে ব্রাহ্মণেরে।
    সাধু নিন্দা কর না এ বাড়ীর উপরে।।
    ব্রাহ্মণ চলিল বড় বিমর্ষ মনেতে।
    কি বুঝিয়া সাধু বলে না পারি বুঝিতে।।
    ক্রোধ দেখি দ্বিজবর অবাক হইল।
    সাত পাঁচ ভেবে শেষে বাড়ী চলে গেল।।
    আর এক দিন প্রভু আসে উলা হতে।
    আমাদায় গিয়ে ছিল ভিক্ষার জন্যেতে।।
    উলার কুঠির পরে দ্বিজবর ছিল।
    গোঁসাই এসেছে বেগে দেখিতে পাইল।।
    দ্বিজ গোস্বামীকে দেখে ভাবিতেছে মনে।
    টুণ্ডা বেটা এত বেগে চলিছে কেমনে।।
    দেখিয়া চিনিল এই সেই টুণ্ডা বেটা।
    অঙ্গেতে গলিত কুষ্ঠ সাধু বলে কেটা।।
    দশরথ মণ্ডলের বাড়ী গিয়া রয়।
    পরম ভকতি করে তাহারা সবায়।।
    গোস্বামী লোচন আগে ব্রাহ্মণ পশ্চাতে।
    চলিছেন মৌন হয়ে ভাবিতে ভাবিতে।।
    লোচনের শরীর ছিল যে পরিমাণ।
    দ্বিগুণ বলিষ্ঠ দেহ করিছে প্রয়াণ।।
    ব্রাহ্মণ দেখিয়া তাহা গণে চমৎকার।
    ধাবমান হইল লোচনে দেখিবার।।
    নবীন মেঘের বর্ণ যাইতেছে দেখা।
    উপরে উঠিছে যেন অনলের শিখা।।
    হস্ত পদাঙ্গুলী দেখে অক্ষত সম্পূর্ণ।
    নাহি কুষ্ঠরোগ সূর্য মেঘেতে আছন্ন।।
    দেখিয়া ব্রাহ্মণ বড় মানিল বিস্ময়।
    ভাল করে দেখিবারে ধাবমান হয়।।
    ধরিতে না পারে, নারে নিকটে যাইতে।
    যত দূর দূরে আছে ততই দূরেতে।।
    গোস্বামী হাঁটিছে স্বাভাবিক ব্যবহারে।
    ব্রাহ্মণ দৌড়িয়া কাছে যাইতে না পারে।।
    ব্রাহ্মণ যাইত দীঘলিয়া নিমন্ত্রণে।
    জ্ঞান হারাইয়া যায় গোস্বামীর সনে।।
    গোস্বামী উঠিল নবকৃষ্ণের প্রাঙ্গণে।
    তামাক খাইব বলে ডাকিল সাধনে।।
    পুরুষ বলিতে কেহ বাড়ীতে ছিল না।
    যতনে তামাক সেজে দিলেন যতনে।।
    ব্রাহ্মণ আসিয়া পরে হৈল উপস্থিত।
    অমনি লোচন উঠে চলিল ত্বরিত।।
    ভিক্ষা পাত্র রাখি সাধনার নিকটেতে।
    ঘাটে গিয়া নামিলেন জলের মধ্যেতে।।
    দ্বিজ ষষ্ঠী কহে ধন্য ধন্য তোরা সব।
    নমঃশুদ্র কূলে জন্ম নমস্য বৈষ্ণব।।
    মানুষ চিনিয়া সবে হয়েছ মানুষ।
    ব্রহ্ম কূলে জন্ম লয়ে আমরা বিহুশ।।
    কই সেই টুণ্ড প্রভু গেছেন কোথায়।
    সাধনা কহিছে এইমাত্র ঘাটে যায়।।
    ব্রাহ্মণ যাইতেছিল নদীর ঘাটেতে।
    স্নান করি আসে ফিরি দেখা হয় পথে।।
    একমাত্র কৌপীন কটিতে দড়ি গ্রন্থি।
    সিক্ত অঙ্গে এসেছেন ক্লান্তভাব অতি।।
    পূর্ববৎ ক্ষত অঙ্গ অঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন।
    টুণ্ড হস্ত টুণ্ড পদ কত ক্ষত চিহ্ন।।
    দাদা! দাদা! বলিয়া কাতরে ছাড়ে ডাক।
    দেখিয়া শুনিয়া দ্বিজ হইল অবাক।।
    কি দেখিনু কি হইনু কি করিনু ধার্য।
    ব্রাহ্মণ দেখিয়া বড় মানিল আশ্চর্য।।
    হেনকালে ভোলানাথ আসিল বাটীতে।
    লোচন চলিয়া গেল সাধনার সাথে।।
    সাধনার পশ্চিমের গৃহেতে বসিল।
    ব্রাহ্মণ আসিয়া কতক্ষণ চেয়ে রল।।
    ফিরে গিয়া বলিলেন ভোলানাথ ঠাই।
    দ্বিজ বলে কি বলি আমাতে আমি নাই।।
    দুই চক্ষে বারি ধারা বক্ষঃ ভেসে যায়
    ভোলানাথ নিকটেতে কেঁদে কেঁদে কয়।।
    শুন ওহে ভোলানাথ কি বলিব আর।
    টুণ্ড বেটা বলেছিল অবজ্ঞা আমার।।
    তার প্রতিফল পাইলাম হাতে হাতে।
    আমি যাহা দেখিয়াছি না পারি কহিতে।।
    ভোলানাথ বলে দ্বিজ কি বলিবা আর।
    আমার গোঁসাই হয় ব্রাহ্মণ উপর।।
    ওঢ়াকাঁদি বাবা মোর স্বয়ং অবতার।
    ঘুরে ফিরে লীলা করে চেলা বেলা তার।।
    অন্য অন্য যুগে যত অবতার হন।
    এ যুগের ভক্ত তাহা হতে বলবান।।
    টুণ্ড হয়ে থাকে প্রভু আমার বাটীতে।
    বাবা হরিচাঁদ ভক্ত কে পারে চিনিতে।।
    যদি কিছু দেখে থাক কাহারে না কও।
    দেখিয়াছ ভাগ্যক্রমে চুপ করে রও।।
    জাননা শুননা কিবা গাও বরাবরি।
    সুধা গৌর নয়রে আমার গৌর হরি।।
    অপরূপ রূপ কিবা মধুর মাধুরী।
    কখনও পুরুষ হয় কখনও বা নারী।।
    শুনিয়া ঠাকুর আর বাক্য না স্ফুরিল।
    ব্রাহ্মণ অনেক ক্ষণ মৌন হয়ে রল।।
    কবি ভাবিকহে ভাই রবি ডুবে গেল।
    লোচনের প্রতি সবে হরি হরি বল।।

    গোস্বামীর ভিক্ষা বিবরণ
    পয়ার
    ভিক্ষা করি গোস্বামী বেড়ান সর্বক্ষণ।
    প্রাতঃ হতে দ্বিপ্রহর ভিক্ষায় ভ্রমণ।।
    ভিক্ষার তণ্ডুল রাখিতেন যার ঘরে।
    বলিতেন তণ্ডুল বিক্রয় করিবারে।।
    কতক তণ্ডুল রাখি তারকের ঘরে।
    বলিতেন তারকে বিক্রয় করিবারে।।
    একদিন জয়পুর তারকের বাটী।
    গৃহমধ্যে বসিয়া আছেন মাত্র দুটি।।
    হেনকালে একজন তণ্ডুল কিনিতে।
    উপস্থিত হইলেন সন্ধ্যার অগ্রেতে।।
    বলিল তণ্ডুল নাকি আছে তব ঘরে।
    বিক্রয় করহ যদি দেহত আমারে।।
    তারক বলিল আছে রেখেছে গোঁসাই।
    কি দরে খরিদ কর বল শুনি তাই।।
    খরিদ্দার বলে ডর সকলের জানা।
    বাজারের দর এক সের এক আনা।।
    তারক তণ্ডুল এনে তার ঠাই দিল।
    পাঁচ আনা দাম দিয়া পাঁচ সের নিল।।
    তারকের নিকটেতে গোঁসাই বসিয়া।
    বলিছেন মিষ্টভাষে হাসিয়া হাসিয়া।।
    তণ্ডুলের মূল্য কেন পাঁচ আনা লও।
    দশ পাই রেখে আর ফিরাইয়া দাও।।
    আনা আনা লও যদি তণ্ডুলের দাম।
    মন্বন্তর বলি তব হইবে দুর্নাম।।
    তণ্ডুলের এক সের হলে অর্ধ আনা।
    কিনিতে বেচিতে কোন আটক থাকে না।।
    কিনিতেও ভাল আর বেচিতেও তাই।
    উভয়ের মনে কোন গোলমাল নাই।।
    তারক বলিল প্রভু কেন কর মানা।
    বাজার চলিত দর সের এক আনা।।
    গোঁসাই কহিল মূল্য অর্ধ আনা নিব।
    দাম জানিবারে কেন বাজারেতে যাব।।
    সাধুর বাজার বেদ বেদান্তের পার।
    সৃষ্টি ছাড়া বেদ ছাড়া সাধুর বাজার।।
    গুরু তরুমূলে আনন্দ বাজারে থাকি।
    ভবের লোভের হাটে আর কিরে ঢুকি।।
    ভিক্ষার তণ্ডুল খাস ভাণ্ডারের ধন।
    দরাদরি দিয়া কিবা আছে প্রয়োজন।
    এত শুনি তারক লইল দশ পাই।
    দশ পাই ফিরাইয়া দিলেন গোঁসাই।।
    সেই হতে ভিক্ষার তণ্ডুল যত হয়।
    অর্ধ আনা মূল্যে সব করেন বিক্রয়।।
    চারিটাকা জমা হল তারকের ঠাই।
    চারি টাকা নৌকা হতে আনিল গোঁসাই।।
    তারকেরে বলে এই টাকা তুমি লহ।
    তারক বলিল প্রভু কেন টাকা দেহ।।
    গোঁসাই বলিল এই টাকা দিব কেনে।
    তোমাকে দিতে পারিলে শান্তি হয় প্রাণে।।
    তারক কহিছে প্রভু তব প্রাণে শান্তি।
    এ বাক্য মানিতে বড় আমার অশান্তি।।
    আমি কেন গ্রহণ করিব তব স্থান।
    তব কৃপাবলে মম হইবে কল্যাণ।।
    সামান্য অর্থের দ্বারা তুষিবে আমারে।
    বালকে পুতুল দিয়া মোহে যে প্রকারে।।
    অতুল রাতুল পদ দেহ মস্তকেতে।
    অন্যকে তুষিও প্রভু সামান্য ধনেতে।।
    শুনিয়া গোঁসাই তবে কহিছে গর্জিয়া।
    তবে মোর টাকা দেহ শীঘ্র ফিরাইয়া।।
    তারক আনিয়া টাকা রাখিল চরণে।
    প্রভু বলে টাকা রাখ তব সন্নিধানে।।
    তব বাড়ী থাকি আমি শীতে কষ্ট পাই।
    একখানি কাঁথা হলে গায় দিব তাই।।
    গৃহ হতে তারক আনিল এক কাঁথা।
    গোস্বামীর পাদ পদ্মে রাখিলেন তথা।
    গোঁসাই বলেন ঘরে কাঁথা এস থুয়ে।
    একখানি কাঁথা দেহ কিনিয়ে আনিয়ে।।
    তারক বলিল কাঁথা কেহ নাহি বেচে।
    গোঁসাই বলিল কায়স্থ বাটীতে আছে।।
    বাটীর নিকটে তব পশ্চিম দিকেতে।
    বিধবা দুইটি মেয়ে আছে সে বাড়ীতে।।
    সিংহ বাটীতে গেলে কাঁথা পারিবা কিনিতে।
    শুনিয়া তারক যান তাদের বাটীতে।।
    জিজ্ঞাসিল কাঁথা নাকি করিবা বিক্রয়।
    তাহারা বলিল খরিদ্দার পেলে হয়।।
    অমনি রমণী কাঁথা করিল বাহির।
    নিধার্য করিল মূল্য দুই টাকা স্থির।।
    আনিয়া দিলেন টাকা গোস্বামীর স্থানে।
    দুই টাকা মূল্য হল বলিল তখনে।।
    আইল সিংহের নারী মূল্য লইবারে।
    তারক দিলেন মূল্য দুই টাকা তারে।।
    গোস্বামী কহিছে কথা কাঁথাখান খুলে।
    এ কাঁথার মূল্য তুমি কয় টাকা দিলে।
    সুন্দর সেলাই, নাহি এ কাঁথার তুল্য।
    এ কাঁথার হইবেক চারিটাকা মূল্য।।
    এ কাঁথার মূল্য হইবেক চারিটাকা।
    দুই টাকা দিব কেন আমি নহে বোকা।।
    স্বামীর নিকটে তবে কহে দুই নারী।
    গললগ্নী কৃতবাস করজোড় করি।।
    কি কারণে চারিটাকা মূল্য মোরা নিব।
    লইব সাধুর টাকা পাপিনী হইব।।
    তোমরা বিধবা নারী গোস্বামী কহয়।
    কেহ কিছু সাহায্য করিলে ভাল হয়।।
    কাঁথা মূল্য দুই টাকা কর অনুমান।
    আর দুই টাকা আমি করিলাম দান।।
    অবশ্য আমার বাক্য করহ গ্রহণ।
    কদাপি আমার বাক্য না কর হেলন।
    সাধু বলে আমারে করহ যদি গণ্য।
    বাক্য না রাখিলে হবে সাধুর অমান্য।।
    চারিটাকা নিল তারা সন্তুষ্ট হইয়া।
    গোস্বামী সন্তুষ্ট হল চারিটাকা দিয়া।।
    ভাদ্রমাসে একদিন বৈকাল বেলায়।
    গোঁসাই আসিয়া ঘাটে হাঁটিয়া বেড়ায়।।
    বরষার জল গেছে বাড়ীর নিকট।
    জলকূল জড়াইয়া নির্মাইল ঘাট।।
    কাষ্ঠবেচা নৌকা যায় লোহাগড়া হাটে।
    ডাক দিয়া সেই নৌকা লাগাইল ঘাটে।।
    তারক আসিল সেই কাষ্ঠ কিনিবারে।
    কাষ্ঠ কিনিলেন নয় আনা ঠিক করে।।
    কাষ্ঠ নামাইয়া দিল কাষ্ঠ বিক্রেতারা।
    ফেদিগ্রামে বসতি মুসলমান তারা।।
    নয় আনা মূল্য এনে তারক দিয়াছে।
    কি কর কি কর ডেকে ঠাকুর কহিছে।।
    তারক বলেছে এ কাষ্ঠের দাম দেই।
    গোস্বামী বলেন তুমি কর নাকি এই।।
    কত কষ্টে কাষ্ঠ বেচে হইয়া দুঃখিত।
    বুঝে এর মূল্য দেওয়া তোমার উচিৎ।।
    তারক কহিছে যে সময় হল কেনা।
    দাম ঠিক ইহার করেছি নয় আনা।।
    সাধু কহে নয় আনা দিতে পারিবা না।
    আর চারি আনা দিয়া দেহ তের আনা।।
    মেয়ারা কহিছে মোরা বেশী কেন নিব।
    নয় আনা বেচিয়াছি তাহা লয়ে যাব।।
    লোচন কহিছে দাম নেও তের আনা।
    তাহা না নিলে নিতে হবে সতর আনা।।
    মেয়ারা কহিছে সাধু চরণে সেলাম।
    আনার বেশী মোরা না লইব দাম।।
    তারক দিলেন এক টাকা এক আনা।
    মেয়ারা কহিছে তাহা নিতে পারিব না।।
    তের আনা দিয়া শেষে করে সাধাসাধি।
    তারা কহে বেশী নিলে হব অপরাধী।।
    তোমরা বলহ পাপ মোরা কহি গোনা।
    মুখের যবান গেলে কিছুই থাকে না।।
    দুনিয়ায় খাঁটি যার মুখের যবান।
    দুনিয়ার মধ্যে সেই খাঁটি মুসলমান।।
    নয় আনা নিয়া তারা অতিরিক্ত মূল্য।
    কূলে ফেলে দিয়া, নৌকা ভাসাইয়া দিল।
    লোচন তারকে কহে এইত ক্ষমতা।
    মূল্য দিতে পারিলে না গেল মোর কথা।।
    তারক টানিয়া ধরে নৌকা মেয়াদের।
    তোমরা নিলেনা মূল্য মোর কর্মফের।।
    আমাদের গুরু তোমাদের মুরশিদ
    গুরু বাক্য শিরোধার্য সবার সুহৃদ।।
    লয়ে যাও দোষ নাই নিজে ভেঙ্গে খাও।
    অথবা ফকিরে দিয়া খয়রাৎ দেও।।
    অতিরিক্ত মূল্য তারা দুই আনা নিল।
    হাটে গিয়া খোদার নামেতে লুঠ দিল।।
    গোস্বামীর নৌকা মেরামত করিবারে।
    নৌকাখান উঠাইল নদীর কিনারে।।
    তারক আনিয়া নৌকা দিল ধৌত করি।
    পরিষ্কার করে তরী বলে হরি হরি।।
    ধর্মনারায়ণ পুত্র ঈশান নামেতে।
    নৌকা ধৌত করে তারকের সাথে সাথে।।
    পাড়িল গাছের ডাব ঢেঁকিতে কুটিল।
    তারক ঈশান দোঁহে রস বানাইল।।
    সেই রস করিবারে নৌকায় লেপন
    তারক গাবের হাঁড়ি আনিল যখন।।
    লোচন কহিছে ওহে তারক থাকহ।
    অন্যে দিয়া গাব দিব তুমি রহ রহ।।
    গাওনি করিল নৌকা ডাকি ঈশানেরে।
    গাব দিতে পাইলেন হৃদয়নাথেরে।।
    গোঁসাই দয়াল বড় অভিমান শূন্য।
    সে হৃদয়নাথের অবস্থা বড় দৈন্য।।
    দুইদিন গাব দিল মেরামত করি।
    তৃতীয় দিবসে জলে ভাসাইল তরী।।
    তারপর ডাকাইল হৃদয়নাথেরে
    নৌকা মেরামত মূল্য দিব যে তোমারে।।
    চারি টাকা দিল তারে নিল সে যতনে।
    তারক বলেরে হৃদে এত নিলি কেনে।
    হৃদয় বলিল গোস্বামীর পদ ধরি।
    এই টাকা দেহ কেন মনে শঙ্কা করি।।
    দুইদিন খাটিয়াছি পাব অর্ধ টঙ্কা।
    চারি টাকা নিতে প্রভু মনে করি শঙ্কা।।
    গোস্বামী বলেন আমি ভিক্ষা করি খাই।
    পুঁজিকরে খেতে দিব হেন কেহ নাই।।
    দীন জনে দিব দান এই মোর মন।
    নীরু ভীরু লোক মোর পুত্র পরিজন।।
    আমি দেই দয়া করে নেও হয়ে রাজি।
    এই টাকা দিয়া কর ব্যবসার পুঁজি।
    তারক নীরব হল সে কথা শুনিয়া।
    হৃদয় লইল টাকা সন্তুষ্ট হইয়া।।
    ভিক্ষার তণ্ডুল বিক্রি করিতে করিতে।
    ক্রমে চৌদ্দ টাকা হল গোস্বামীর হাতে।।
    তারকের নিকটে কহিছে বারে বারে।
    এই টাকা দিয়া আমি তোষিব কাহারে।।
    একদিন সেই চৌদ্দ টাকা লয়ে সাথে।
    নৌকাবাহি গেল লক্ষ্মীপাশা বাজারেতে।।
    রাধামণি নামে ছিল বৃদ্ধা এক বেশ্যা।
    দিন পাত নাহি চলে না চলে ব্যবসা।।
    গোস্বামী যাইয়া সেই গৃহেতে প্রবেশে।
    হেসে হেসে কহে তারে মৃদু মৃদু ভাষে।।
    একেবারে বৃদ্ধা নয় এমতি বয়স।
    বৃদ্ধামধ্যে গণ্য হয় প্রৌঢ়ার যে শেষ।।
    রাধামণি বাহিরেতে ছিল কার্যান্তরে।
    বারে বারে ডাকে তারে শীঘ্র আয় ঘরে।।
    রাধামণি যেই গেল গৃহের মাঝেতে।
    সেই চৌদ্দ টাকা দিল রাধামণি হাতে।।
    রাধামণি ভীত হয়ে বাহিরেতে গিয়ে।
    নৃত্যমণি বেশ্যাস্থানে বলিল ডাকিয়ে।।
    নৃত্যমণি সেই টাকা গোস্বামীকে দিল।
    গোঁসাই বিরস মনে ফিরিয়া আসিল।।
    লোচন আনিয়া টাকা দিল তারকেরে।
    পরদিন নৃত্যমণি আসিয়া বাজারে।।
    তারকেরে দেখে বলে গোপনেতে ডাকি।
    কেমন গোঁসাই তব মোরে বল দেখি।
    যারে তারে ভকতি করেন মহাশয়।
    আমাদের তত বড় বিশ্বাস না হয়।।
    রাধামণি বৃদ্ধা মাগী তার ঘরে এসে।
    চৌদ্দ টাকা সাধে আর মৃদু মৃদু হাসে।।
    বলে তোর এখনে ত নাহিক যৌবন।
    তোর দশা মোর দশা সমান এখন।।
    তুই বৃদ্ধা কি কারণ থাকিস বাজারে।
    আমি রোগী ভিক্ষামাগি নগরে নগরে।।
    অর্থহেতু অনর্থের কিবা প্রয়োজন।
    তোর ভাল হবে তুই মোর কথা শোন।।
    তারক শুনিয়া তাই নৃত্যকে বলিছে।
    এ কথার মধ্যে কিবা দোষ কথা আছে।।
    টাকা যদি সাধিবেন কাম ব্যবহারে।
    কেন টাকা সাধিল না যুবতী নারীরে।।
    রূপবতী বেশ্যা কত আছে ত বাজারে।
    কেন বা না গেল সাধু তার এক ঘরে।।
    রূপ নাই গুণ নাই প্রৌঢ়া শেষ বৃদ্ধা।
    এটুকু বুঝিয়া দেখ কোনভাবে শ্রদ্ধা।।
    তাহা শুনি নৃত্যমণি গলে বাস দিয়া।
    বলে অপরাধ ক্ষম সাধুকে আনিয়া।।
    তারক আসিয়া বাটী লোচন সম্মুখে।
    জিজ্ঞাসিবে মনোভাব, কথা নাহি মুখে।।
    অমনি লোচন হাসি কহিছে তারকে।
    কিছু কি জিজ্ঞাসা নাকি করিবা আমাকে।।
    কি কহিছে নৃত্যমণি অবলা সে নারী।
    টাকা সাধিয়াছি রাধামণি দুঃখ হেরি।।
    বৃদ্ধ হলে বেশ্যা হয় হরি পরায়ণা।
    এ সময় বেশ্যাবৃত্তি তার তসাজে না।।
    অর্থ জন্য বেশ্যা হয় হয়ে দায় ঠেকা।
    দুষ্ট কার্য হবে ত্যজ্য তাতে দেই টাকা।।
    বলিয়াছি দুষ্ট কার্য তেয়াগিয়া থাক।
    ভিক্ষামাগি খাওয়াইব হরি বলে ডাক।।
    উদর চিন্তায় কেন কুকাজের লোভী।
    হরি বলে মেগে খাব হওগো বৈষ্ণবী।।
    আমি দিব চৌদ্দ টাকা তুমি কিছু দেও।
    পরমার্থ তত্ত্ব নিয়া ভিক্ষা মেগে খাও।।
    তুমিত মোহান্ত ভাল থাক এই দেশে।
    ওরা কেন ভাল হয় না তোমার বাতাসে।।
    যশাই বৈরাগীর ছেলে হয়েছে ঠাকুর।
    তার প্রেম বন্যা এসে লাগে জয়পুর।।
    তুমি জয়পুর সাধনের বাড়ী কোলা।
    প্রেমভক্তি দেয় হরি করি শেষ লীলা।।
    কোলা আর জয়পুর প্রেম চলাচল।
    এর মধ্যে কেন থাকে দুষ্ট আর খল।।
    যাহা ভাল বুঝি তাহা করিয়াছি আমি।
    ভাল মন্দ বিচার করিয়া লহ তুমি।।
    তুমি বহু শাস্ত্র জান পড়িয়াছ কত।
    মুখস্থ করেছ চৈতন্য চরিতামৃত।।
    তাহাতে যাহা লিখিল তাত পড়ে থাক।
    মঙ্গলাচরণ পদ বিচারিয়া দেখ।।
    কৃষ্ণভক্ত বাধা যত শুভাশুভ কর্ম।
    সেওত জীবের এক অজ্ঞানতঃ ধর্ম।।
    লজ্জ ঘৃণা অষ্টপাশ সকল উঘারি।
    শুভাশুভ যত কর্ম দিতে হবে ছাড়ি।।
    কৃষ্ণভক্ত হবে ত বিচার সব ফেল।
    পর উপকারী হয়ে হরি হরি বল।।
    লোচনের লীলা খেলা অলৌকিক কাজ।
    রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

    হীরামন ও লোচন গোস্বামীর বাদানুবাদ
    পয়ার
    রাউৎখামার গ্রামে গোস্বামী লোচন।
    তথায় উদয় এসে হৈল হীরামন।।
    গুরুচরণ বালার প্রাঙ্গণে বসিয়া।
    বকিতেছে হীরামন ক্রোধিত হইয়া।
    হীরামনে সর্বজনে দণ্ডবৎ করে।
    পদধূলি কেহ তুলি লইতেছে শিরে।।
    ক্রোধযুক্ত তাহাতে হইয়া হীরামন।
    বকাবকি যাহা মুখে বলিছে তখন।।
    রমণীর গুহ্যাস্থন অপভ্রংশ ভাবে।
    উচ্চারণ করিছেন ক্রোধের প্রভাবে।।
    অনেকক্ষণ হীরামন বকিতে লাগিল
    ক্রোধভরে লোচন উঠিয়া দাঁড়াইল।।
    লোচন কহিছে ডেকে হারে হীরামন।
    হেন বাক তোরে শিখায়েছে কোন জন।।
    হরি ঠাকুরকে দেখে হইলি পাগল।
    সেই নাকি তোরে শিখায়েছে এই বোল।।
    কি বোল বলিয়া করেছিস ডাকাডাকি।
    তুই নাকি শ্রীহরির পড়া শুকপাখী।।
    যে বোল শুনালি তুই, শোন তোরে কই।
    দু-টা কথা কই তোরে আর কত সই।
    উলঙ্গ হইয়া জলে ঝাঁপিলে কি হয়।
    তাহাতে কাহার কোথা সাধুত্ব বাড়ায়।।
    জলচর পক্ষী জল চরিয়া বেড়ায়।
    মরা শব জলে ভাসে সেও সাধু হয়।।
    পাগল হয়েছে কেন চেননা মাতুল।
    কি উদ্দ্যেশে খেপাইল মাতুলের কুল।।
    বিবাহ করিলি যারে তারে মা বলিলি।
    শ্বশুরকে আজা বলে প্রণাম করিলি।।
    রমণীর মাতা শাশুড়িকে বলে আজি।
    শালাকে বলিলি মামা মনেতে কি বুঝি।।
    হরিচাঁদ নাম লয়ে পোড়াইলি মুখ।
    মাতৃকুল খেলাইয়া পাইলি কি সুখ।।
    জ্ঞান মিশ্র ভক্তিযোগে হয়েছে অজ্ঞান।
    কেন উচ্চারণ কৈলি মাতৃ গুহ্য স্থান।।
    মাতৃ রজ পিতৃবীর্যে জনম সবার
    তাহা কর তুচ্ছ জ্ঞান একি অবিচার।।
    বিবাহিতা রমণীকে ডাক মা বলিয়া
    এতটুকু জ্ঞান আছে অজ্ঞান হইয়া।।
    বিচারের কথা তোরে কহিলাম সার।
    মানা করি মাতৃ কুল খেপাইওনা আর।।
    তাহা শুনি হীরামন হইল কাতর।
    ক্ষমা কর অপরাধ হইয়াছে মোর।।
    কহিছেন হীরামন করিয়া ভকতি।
    ভট্টাচার্য ঠাকুর করুণ অব্যাহতি।।
    আজ হতে পাইলাম ব্যবস্থার পত্র।
    প্রায়শ্চিত্ত করি মোরে করুণ পবিত্র।।
    লোচনের ঠাই হীরামন পেল লাজ।
    রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.