শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
২১ পরিশিষ্ট খণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ২১ পরিশিষ্ট খণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ


                            পরিশিষ্ট খণ্ডঃ প্রথম তরঙ্গ

    পরিশিষ্ট খণ্ড
    প্রথম তরঙ্গ
    বন্দনা

    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    (জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
    প্রেমানন্দে হরি গুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

    ভগবান শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ উপাখ্যান।
    পয়ার
    হরিচাঁদ জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীগুরুচরণ।
    গুরুচাঁদ নাম বলে সব ভক্তগণ।।
    ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত ছিল যত জনে।
    ঠাকুর স্বরূপ বলি গুরুচাঁদে জানে।।
    নির্জনেতে ভাবি হরিচাঁদের চরণ।
    প্রভু গুরুচাঁদ অবতীর্ণ কোন জন।।
    বহু চিন্তা করিলাম বড়ই কঠোর।
    যোগাসনে রাত্রি হল দ্বিতীয় প্রহর।।
    এ সময় আচম্বিতে শব্দ এক হয়
    শূন্য হতে শুনা গেল দৈববাণী প্রায়।।
    বলিলেন তোরা সবে ইষ্টজ্ঞানে সেব।
    হরিচাঁদ পুত্র গুরুচাঁদ মহাদেব।
    মহাদেব কেন জন্ম নিল এই ঠাই।
    ধ্যান তূল্য ভাবনা বিজ্ঞানে জ্ঞানে পাই।।
    তাই লিখি চিন্তিয়া যা পাই ব্যবস্থায়।
    শঙ্কর নন্দন হল গণেশ তাহায়।।
    পার্বতী মা পুত্র ইচ্ছা করিলেন মনে।
    পুত্র চাই জানাইল শিব সন্নিধানে।।
    শিব বলে মম শাপ আছে পূর্বকালে।
    নিজ স্ত্রী গর্ভে কারু জন্মিবে না ছেলে।।
    তুমি আমি বিহারিনু আনন্দ কাননে।
    রতি ভাঙ্গিবারে চেষ্টা করে দেবগণে।।
    ময়ূরকে পাঠাইল তাকে দেই শাপ।
    ব্রহ্ম-ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছয় প্রস্তাব।।
    ময়ূরে দিলাম শাপ দেবতা সহিতে।
    পুত্র না জন্মিবে কারু সপত্নী গর্ভেতে।।
    তবে যদি ওগো দেবী! পুত্র বাঞ্ছা কর।
    করহ পূণ্যক ব্রত শতেক বৎসর।।
    তাহা শুনি হৈমবতী ব্রত আরম্ভিল।
    শতবর্ষ পরে সেই ব্রত পূর্ণ হল।।
    ব্রতপূর্ণ অন্তে দেবী হরিষ অন্তরে।
    হরিদ্রা লইয়া যান স্নান করিবারে।।
    স্নান করি এসে দেবী করে দরশন।
    শয্যাপরে আছে পুত্র করিয়া শয়ন।।
    হেনকালে আসিয়া কহেন মৃত্যুঞ্জয়।
    পেয়েছ সাধের পুত্র ধরহ হৃদয়।।
    ব্রতপূর্ণ ফলে পুত্র পেয়েছে শঙ্করী।
    পুত্ররূপে কোলে পেলে গোলক বিহারী।।
    পার্বতী করেন কোলে সাধনের ধন।
    রূপেতে কৈলাস আলো ভুবনমোহন।।
    গোলক বিহারী হরিপুত্র রূপ হ
    দেখিবারে দেবগণে কৈলাসেতে এল।।
    শঙ্করের পুত্র হল শঙ্কট ভঞ্জন।
    বাঞ্ছাপূর্ণকারী হরি জগৎ রঞ্জন।।
    ভবের আরাধ্য পুত্র পাইল ভবানী।
    সকলে দেখিল কিন্তু আসিল না শনি।।
    সে কারণে মহাদেবী মনে হল রোষ।
    হেন পুত্র পাইলাম শনি অসন্তোষ।।
    তাহা শুনি শনি যায় তাহাকে দেখিতে।
    তার নারী ঋতুমতী ছিল সে দিনেতে।।
    শনির রমণী কয় আমি ঋতুমতী।
    ঋতু রক্ষা সময় হয়েছে কর রতি।।
    শনি কহে যাব আমি কৈলাস পর্বতে।
    হরি হন দুর্গা সুত তাহাকে দেখিতে।।
    হেনকালে রতি! রতি না পারি করিতে।
    বিশেষতঃ মাতা দুঃখী আমি না দেখাতে।।
    দেখিব গোলকনাথে পার্বতীর কোলে।
    না করিব রতিক্রিয়া হেন যাত্রাকালে।।
    এতবলি শনৈশ্চর করিল গমন।
    শনির রমণী স্নান করিল তখন।।
    ঋতু রক্ষা না করিয়া যাইবা যথায়।
    যারে দেখ তার যেন মুণ্ড খসে যায়।।
    রাগে রাগে গেল শনি ক্রোধ ছিল মনে।
    রমণীর প্রতি ক্রোধ ছিল যে তখনে।।
    ক্রোধভরে যায় শনি শিবের ভবন।
    অই ক্রোধে পার্বতীর পুত্রকে দর্শন।।
    মুণ্ড খণ্ড হয়ে গেল গণ্ডকী পর্বতে।
    কীটরূপে শনি যায় মুণ্ড সাথে সাথে।
    কীটেতে পর্বত কাটে খণ্ড খণ্ড শীলে।
    খণ্ড শিলা পড়ে গণ্ডকী নদীর জলে।।
    চক্র বিশেষতে তায় হয় শালগ্রাম।
    শালগ্রাম রূপেতে গোলোকনাথ শ্যাম।।
    যদ্যপিও এই ভাব জাগে কারু মনে।
    গোলোক নাথের মুণ্ড খসে গেল কেনে।।
    একেত শনির নারী তাহার কোপেতে।
    আর ত শনির দৃষ্টি হইল তাহাতে।।
    তার মধ্যে আরো আছে পূর্বের ঘটনা।
    প্রভু বুঝে হরিভক্তের মনের বাসনা।।
    ভগবানের কাজ এই এক কার্য হতে।
    স্বয়ং এর কত কাজ ঘটে সে কাজেতে।।
    ব্রহ্মলোকে যাইয়া দুর্বাসা মুনিবর।
    পারিজাত মালা পাইলেন উপহার।।
    ব্রহ্মা বলে এই মালা যার গলে দিবে।
    অগ্র পূজনীয় সেই হইবেক ভবে।।
    পেয়ে হার মুনিবর ভাবে মনে মন।
    এই মালা মম গলে না হয় শোভন।।
    বনে থাকি বনফল করি যে আহার।
    তপস্বীর কভু নাহি সাজে এই হার।।
    এত ভাবি হার দিল ইন্দ্রদেবরাজে।
    অহংকারে মত্ত ইন্দ্র মালা দিল গজে।
    গজের গলায় মালা বাঁধাইয়া শুণ্ড।
    ছিঁড়িয়া গলার হার করে খণ্ড খণ্ড।।
    ছেঁড়া হার পথে দেখি কুপিল দুর্বাসা।
    ধ্যানস্থ হইয়া সব জানিল দুর্দশা।।
    মুনিবর মনেতে পাইল বড় কষ্ট।
    ইন্দ্রকে দিলেন শাপ হও লক্ষ্মীভ্রষ্ট।।
    মালার মাহাত্ম্য আছে যে পরিবে গলে।
    অগ্রপূজ্য হবে সেই ব্রহ্মাদেব বলে।।
    ভবানীর পুত্র খণ্ড হল যেইকালে।
    চিন্তান্বিত হল বড় দেবতা সকলে।।
    নন্দীকে দিলেন আজ্ঞা শীঘ্র চলে যাও।
    উত্তর শিয়রী যারে শয়নেতে পাও।।
    কাটিয়া তাহার মুণ্ড আনিবা ত্বরায়।
    সেই মুণ্ড জোড়া দিব পুত্রের গলায়।
    নন্দী গিয়া শ্বেতকরী শয়ন দেখিল।
    উত্তর শিয়রী দেখি সে মুণ্ড ছেদিল।।
    সেই মুণ্ড দেবগণ ধরি সকলেতে।
    স্কন্ধে লাগাইয়া দিল শৈল সুতা সুতে।।
    ভগবান পুত্র হল জনক মহেশ।
    গজানন গণশ্রেষ্ঠ নাম যে গণেশ।।
    হেনপুত্র কোলে নিয়া বসিল ভবানী।
    জন্ম-মৃত্যুহরা তারা গণেশ জননী।।
    আর এক আছে তার দৈবের ঘটনা।
    শঙ্খচূড় দৈত্য করে দেবতা তাড়না।।
    দৈত্য ভয়ে ভীত সব দেবতা হইল।
    দেবতার সঙ্গে শিব যুদ্ধেতে চলিল।।
    সপ্ত রাত্রি সপ্তদিন যুদ্ধ করে ভোলা
    যুদ্ধকরে শঙ্খাসুরে জিনিতে নারিলা।।
    দেবগণ স্তব করে বিষ্ণুর সদন।
    কর প্রভু তুলসীর সতীত্ব ভঞ্জন।।
    শঙ্খচূড় বেশ ধরি গিয়া নারায়ণ।
    ছলে করে তুলসীর সতীত্ব হরণ।।
    জানিয়া তুলসী শাপ দিলেন হরিরে।
    পাষাণ হৃদয় হরি ছলিলে আমারে।।
    বিনাদোষে আমার সতীত্ব বিনাশিলে।
    নাহিক শীলতা তুমি হও গিয়ে শীলে।।
    হরি বলে পূর্বে তুমি মোরে কৈলে আশা।
    মোরে পতি পাবে বলে করিতে তপস্যা।।
    কথা ছিল মনোবাঞ্ছা পুরাব তোমার।
    সেই ছলে পতি নাশ করিনু এবার।।
    আমি করি নাই তব সতীত্ব ভঞ্জন।
    বাঞ্ছা পূর্ণ করি শাপ দিলে অকারণ।।
    এক কার্যে দুই কার্য হইল আমার।
    মোরে শাপ দিলে কেন করি অবিচার।।
    পুরাতে তোমার বাঞ্ছা আসি তব ঘরে।
    দেবতার উপকার করিবার তরে।।
    না বুঝি শাপিলা মোরে পাষাণ হইতে।
    পাষাণ হইব আমি গণ্ডকী পর্বতে।।
    অন্যথা করিতে নারি তোমার এই বাক্য।
    আমি শীলা হইলাম তুমি হও বৃক্ষ।।
    থাকিব তোমার মূলে তোমার ছায়ায়।
    ডালে ডালে মঞ্জরীতে পাতায় পাতায়।।
    শালগ্রাম রূপে ব্রাহ্মণের ঘরে রব।
    হেঁটে পিঠে বক্ষে বক্ষে তোমারে রাখিব।
    ভগবান এক কাজ করিতে সাধন।
    বহু কর্ম তাহাতে করেন সমাপন।
    শালগ্রাম হইবে মালার সুতেতে।
    গজ মুণ্ড ধরিলেন পার্বতী কোলেতে।।
    মহামায়া জননীর বাঞ্ছা পূর্ণ করি।
    থাকিল গণেশ রূপে আপনি শ্রীহরি।।
    ভোলানাথ ভাবিলেন আমি বা কি করি।
    আমার হইল পুত্র আপনি শ্রীহরি।।
    অনন্ত বৃষভরূপে আমার বাহন।
    গরুঢ় রূপেতে আমি বহি নারায়ণ।।
    গণেশ রূপেতে হরি আমার নন্দন।
    আমি পুত্র রূপ হয়ে ভজিব চরণ।।
    শিব ভাবে হরি হল আমার নন্দন।
    হরির নন্দন হব আমি অভাজন।।
    আমার বাসনা পূর্ণ করিব কোথায়।
    পুত্ররূপে জন্ম লব গিয়া নদীয়ায়।।
    এইবার সেই লীলা করে নারায়ণ।
    অবশ্য হইব আমি হরির নন্দন।।
    জীব উদ্ধারিতে প্রভু করিলে প্রতিজ্ঞে।
    ভক্ত পারিষদ সব পাঠাইল অগ্রে।।
    স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে।
    আর আর অবতার তাহে এসে মিলে।।
    কেহ অগ্রে আসে কেহ পশ্চাতে আইসে।
    লীলা প্রভাবেতে কালে তার মধ্যে মিশে।।
    সেই মহাদেব অগ্রে এসে শান্তিপুর।
    ভক্তি প্রচারিল হয়ে অদ্বৈত ঠাকুর।।
    কৃষ্ণভক্তি নিন্দা শুনি পাষণ্ডীর মুখে।
    পণ কৈল প্রভুকে আনিব মর্তলোকে।।
    লয়ে ফুল তুলসী করিল অঙ্গীকার।
    অদ্বৈত হুঙ্কারে হল গৌর অবতার।।
    সেও লীলা সাঙ্গ করি ভাবে পঞ্চানন।
    এবার না হল মম বাসনা পূরণ।।
    শেষ লীলা হল যশোমন্তের তনয়।
    অবতীর্ণ হল হরি সফলাডাঙ্গায়।।
    শিব ভাবে হেন দিন আর কবে পাব।
    এবার প্রতিজ্ঞা মম পূরণ করিব।।
    বহুদিন পর এই হয়েছে সময়।
    এবার হইব আমি প্রভুর তনয়।।
    প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিবারে পঞ্চানন।
    ওঢ়াকাঁদি করিলেন জনম গ্রহণ।।
    জন্মিলেন শান্তিদেবী মায়ের উদরে।
    নিজের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিবার তরে।।
    আরো কথা তার মধ্যে জীব পরিত্রাণ।
    সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম প্রেম সুধাদান।।
    অলৌকিক লীলারস পারিনে বর্ণিতে।
    কথঞ্চিৎ বলি সেই প্রভুর কৃপাতে।।
    হরিপাল গিয়াছিল প্রভুর সদনে।
    সম্পত্তি বাড়িবে এই বাঞ্ছা করি মনে।।
    প্রচুর সম্পত্তি তার হল অল্প দিনে।
    তার হল গাঢ় ভক্তি প্রভুর চরণে।।
    উঠিল প্রেমের ঢেউ তাহার হৃদয়।
    এ সকল হল গুরুচাঁদের কৃপায়।।
    যখনেতে প্রভু কৈল লীলা সম্বরণ।
    ভক্তগণ কাঁদে ধরি প্রভুর চরণ।।
    ওহে প্রভু আমাদের তুমি ছেড়ে গেলে।
    কেমনে রাখিব প্রাণ দেহ তাহা বলে।।
    ঋমণি নামিনী রামকুমারের ভগ্নী।
    যম বুড়ি নাম গঙ্গাচর্ণা নিবাসিনী।।
    ইত্যাদি অনেক ভক্ত কাঁদিতে লাগিল।
    প্রভু বলে আমিত তোদের চিরকাল।।
    আমি নাহি ছেড়ে যাব জানিও বিশেষ।
    গুরুচাঁদ দেহে এই করিনু প্রবেশ।।
    গুরুচাঁদে ভকতি করিস মোর মত।
    যাহা চাবি তাহা পাবি মনোনীত যত।।
    এই সেই মহাপ্রভু পিতৃধর্ম রাখে।
    মধুর মাধুর্য রস ঐশ্বর্যতে ঢেকে।।
    জীবেরে ভুলায় প্রভু দেখায়ে ঐশ্বর্য।
    প্রেমিক ভক্তের স্থানে গড়াল মাধুর্য।।
    প্রধান গার্হস্থ ধর্ম গৃহস্থের কাজ।
    পয়ার প্রবন্ধে কহে কবি রসরাজ।।

    শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ মাহাত্ম্য।
    পয়ার
    ঠেকিয়া রোগের দায়, যায় প্রভু স্থানে।
    অমনি আরোগ্য হয় মুখের বচনে।।
    ডুমরিয়া বাসী মহা ভারতের নারী।
    প্রভু স্থানে গেল এক পুত্র কোলে করি।।
    সেই বালকের প্লীহা যকৃত লীভার।
    ছেলের বয়স প্রায় সপ্তম বৎসর।।
    হাত পা গিয়াছে খেয়ে জাগিয়াছে হাড়।
    ঘন ঘন শ্বাস বহে প্রাণ ধড়পড়।।
    অদ্য কি কল্য মরিবে চলিতে অচল।
    হাতপায় শোথ বয় করে টলমল।।
    প্রভুর নিকটে গিয়া দিল ফেলাইয়া।
    মৃত্তিকা উপরে তারে রাখে শোয়াইয়া।।
    প্রভু বলে এ বালক আনিয়াছে কেটা।
    মরিবেনা এ বালক উঠা উঠা উঠা।।
    তিল চাউলের ছাতু পাকা রম্ভা দিয়া।
    খাওয়াও পিতলের পাত্রেতে মাখিয়া।।
    সরিষার তৈল তার সর্ব অঙ্গে মেখে।
    নিশি ভোরে সপ্তা খাওয়াও এ বালকে।।
    বালকের মাতা কহে ধরিয়া চরণ।
    এই সপ্তদিন এর রবে কি জীবন।।
    প্রভুর চরণ ধরি ফুলে ফুলে কাঁদে।
    মরুক বাঁচুক প্রভু রেখ এরে পদে।।
    প্রভু কহে এই রোগে যদি মারা যায়।
    আমি তোর ছেলে হব কপালে যা হয়।।
    এই ছেলে সপ্তদিন মধ্যেতে সারিব।
    এই পুত্র মরে যদি আমি ছেলে হব।।
    এত বলি দিল তার মাতা লয়ে গেল।
    সপ্তাহ মধ্যেতে ছেলে আরোগ্য হইল।।
    অমনি আরাম ছেলে রূপবান হল।
    কোন দিনে কোন ব্যাধি নাহি যেন ছিল।।
    যে রোগের বৃদ্ধি যাতে তাই বলে খেতে
    অমনি আরোগ্য ব্যাধি মুখের বাক্যেতে।।
    একদিন গোঁসাই আমাকে সঙ্গে করি।
    ভক্তের ভবনে যান বলে হরি হরি।।
    যাত্রা করিলেন গ্রাম নারিকেল বাড়ী।
    যাইতেছি মহানন্দ পাগলের বাড়ী।।
    গোঁসাই নিকটে বসি চিন্তিত অন্তর।
    অন্তরে ভাবনা যে বাঁধিব এক ঘর।।
    কিরূপে বাঁধিব ঘর উঠাব কিরূপে।
    ইহাই ভেবেছি বসে ঠাকুর সমীপে।।
    প্রভু বড় দর্প করি কহে সে সময়।
    কোথা বা বসিয়া আছ, গিয়াছ কোথায়।।
    এই পদ্মবনে দেব কমলার স্থিতি।
    পদ্মবনে সদা হরি করেন বসতি।।
    শুনিয়াছ ভারতের প্রথম প্রস্তাব।
    এই পদ্মবনে বাস করেন মাধব।।

    শ্লোক।
    তুলসীকাননং যত্র যত্র পদ্মবনানি চ।
    পুরাণপঠনং যত্র তত্র সন্নিহিতো হরিঃ।।

    পয়ার
    শাস্ত্র গ্রন্থ তাহা তুমি জান ভালমতে।
    পদ্মবনে কিবা শোভা দেখ চক্ষেতে।।
    পদ্মবনে আসিয়া কি জন্য ভক্তি ছাড়।
    কোথায় বসিয়া কোন আগুনেতে পোড়।।
    এই পদ্মবনে কেন না হও ভ্রমর।
    গোবরের পোকা হয়ে তল্লাস গোবর।।
    তাহা শুনি তারকের মন ফিরে গেল।
    গুরুচাঁদ পাদপদ্ম হেরিতে লাগিল।।
    মনের মালিন্য ঘুচে হইল নির্মল
    প্রেমে গদ গদ চিত্ত আঁখি ছল ছল।।
    তারকের মনে তথা হল এই ভাব।
    এহেন মানুষ আর কোথা গিয়া পাব।
    যে হেন অন্তর জানে থাকেন অন্তরে।
    অন্তরের ধন কেন রাখিবে অন্তরে।।
    তাহারে অন্তরে রেখে যাইরে অন্তরে।
    কেমন অন্তর মোর কি ভাবি অন্তরে।।
    অন্তরে অন্তর জানি কহে তারকেরে।
    দেখহে কেমন ভাব হয়েছে অন্তরে।।
    একে বলে কর্মফাঁস বুঝহ অন্তরে।
    কর্মফাঁসে পড়ি জীব ফিরে ঘুরে মরে।।
    জ্ঞান অস্ত্রে কর্মফাঁস হয় কাটিবার।
    জনম মরণ তার নাহি থাকে আর।।
    এই সব প্রেম হল পদ্মবন মাঝ।
    কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

    *শ্রীসুধন্যচাঁদ চরিত সুধা।
    পয়ার
    তৃণাদপি সুনীচেন বাক্য মাত্র জানি।
    বৈষ্ণব ধর্মের শ্রেষ্ঠ এই মাত্র জানি।।
    সে বাণী আদর্শ কর জীবন গঠন।
    করেছে কি না করেছে জানিনা কখন।।
    জীবনে সাক্ষাৎ যেন বিনয়ের মূর্তি।
    সুধার আধার চাঁদ ষোলকলা পূর্তি।।
    বিনয়ের অবতার শ্রীসুধন্যচাঁদ।
    স্মরিলে যাঁহারে খণ্ডে শত অপরাধ।।
    আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখায়।
    শতকোটি প্রণিপাত করি তার পায়।।
    গৃহ ধর্মে অনুরাগী কর্মব্রত সদা।
    অতিথি, মতুয়া লয়ে সদাই ব্যস্ততা।।
    বাল বৃদ্ধ যুবকের অগ্রে করে নতি।
    শ্রীশ্রীঠাকুরের পায় সদা ছিল মতি।।
    অহং বোধ জ্ঞান শূন্য পিতৃগত প্রাণ।
    বলিতেন যান হেথা আছে গুরুচাঁন।।
    সতত যেমনি শত নদ নদী খাল।
    গতি পায় যদি লভে সিন্ধু সুবিশাল।।
    গুরুচাঁদ মহাসিন্ধু তরাবার তরে।
    শত শত নদ-নদী শ্রীঅঙ্গেতে ধরে।।
    ভক্ত যারা তারা নদী সিন্ধু গুরুচাঁদ।
    ভগীরথ সম ডাকে শ্রীসুধন্যচাঁদ।।
    ছায়ার সমান সদা পিতৃ সঙ্গ ধরি।
    গোপনে মহৎ কার্য বহু যান করি।।
    তেজারতি মহাজনী সর্ব কর্মভার।
    হাসিমুখে বহিতেন তিনি কর্ণধার।।
    শাস্ত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন বহু গ্রন্থ রচি।
    সর্ব কর্মে সম পটু যেন সব্যসাচী।।
    শ্রীশ্রীহরিঠাকুরের অপূর্ব জীবনী।
    লিপিবদ্ধ করেছেন জ্ঞান রত্ন খনি।।
    একদা নিশীথ কালে লিখিতে লিখিতে।
    বহু রাত্র কেটে গেল দেখিতে দেখিতে।।
    ঠাকুরের নাম স্মরি করেন শয়ন।
    সহসা আলোকরশ্মি ধাঁধিল নয়ন।।
    দিব্য গন্ধ দিব্য জ্যোতিঃ পরিপূর্ণ কক্ষ।
    মহাভাবে পুলকিত কম্পমান বক্ষ।
    কোনদিন কোন মাল্য দিতেন না গলে।
    হেরিলেন দিব্য মাল্য কণ্ঠে তার দোলে।।
    ভক্ত শিরোমণি সাধু মহা পুণ্যবান।
    ঠাকুরের অনুগ্রহে লভে দিব্য জ্ঞান।।
    এইমত বহুলীলা করি মহীতলে।
    রথযাত্রা দিবসেতে স্বর্গে যান চলে।
    তেরশ পঁয়ত্রিশ সাল পাঁচই আষাঢ়।
    রথযাত্রা ধুমধাম অতি পুণ্যকর।।
    স্বর্গ হতে আসি রথ ভক্তে যায় লয়ে।
    শ্রীপতিচাঁদের চক্ষে অশ্রু যায় বয়ে।।

    *চিরকুমার শ্রীভগবতীচাঁদের কাহিনী
    পয়ার
    সুধন্যচাঁদের জ্যেষ্ঠপুত্র ভগবতী।
    বাল্যাবধি পিতামহ পদে থাকে মতি।।
    আজীবন ব্রহ্মচারী শাপভ্রষ্ট ঋষি।
    চাঁদের অমিয় বিন্দু পড়িল যে খসি।।
    সঙ্গীত চিত্রাদি বিদ্যা করায়ত্ব করি।
    অন্তরে প্রেমানুরাগী সদা হরি হরি।।
    সর্ব কর্ম অগ্রগামী যৌবন সময়।
    দীন দুঃখীদের তরে কাঁদিত হৃদয়।।
    দরিদ্র ভাণ্ডার করি দুর্ভিক্ষের দিনে।
    বাঁচালেন দীন দুঃখী দেশবাসীগণে।।
    কিশোর সুরেশ অভিমন্যু আদি যত।
    পশ্চাতে চলিত তার ইঙ্গিতে সতত।।
    এম. এ. পাশ করিলেন ফিলসফি নিয়া।
    স্ব-গ্রামে প্রথম এম. এ. বিলাতেতে গিয়া।।
    পি. এইচ. ডি. ডক্টরেট হইলেন শেষে।
    প্রথম বিলাত যাত্রী খ্যাতি বহুদেশে।।
    তেরশ আটচল্লিশ সাল ছয়ই ফাল্গুন।
    শেষবার গাহিলেন হরিলীলাগুণ।।
    লীলা খেলা সাঙ্গ করি গোলোকে চলিলা।
    শুনে পুণ্য পুণ্যবান ভগবতী লীলা।।

    *শ্রীশ্রী শ্রীপতিচাঁদে শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের আবির্ভাব
    দীর্ঘ ত্রিপদী
    তেরশত ছয় সন                    ধরা শান্তি নিমগণ
    ধন ধান্যে পরিপূর্ণ দেশ।
    এল শুভ মাঘ মাস         কৃষকের পূর্ণ আশ
    রবিশস্য ফলিয়াছে বেশ।।
    গৃহে শান্তি বিরাজিত       সহকার মঞ্জুরিত
    হাস্যময় ওঢ়াকাঁদি ধাম।
    শ্রীশ্রীঠাকুরের ঘরে         সদাই আনন্দ করে
    অবতীর্ণ নবঘন শ্যাম।।
    শ্রীসুধন্যচাঁদ সুত           দেব শিশু সমপুত
    সতীশ চাঁদের বিয়োগেতে।
    মনোদুঃখে পিতা মাতা   অশ্রুময় শোকগাঁথা
    সদাই গাহিত অন্তরেতে।।
    গুরুচাঁদ কৃপা করি          স্বপ্নে কহিলেন হরি
    ফিরাইয়া দিয়াছে তনয়।
    সরলা সরল মনে                    পেয়ে তার হারাধনে
    কোলে নিয়া জুড়াল হৃদয়।।
    অপার আনন্দ খনি         গুরুচাঁদ নয়ন মণি
    শ্রীপতিচাঁদের অভ্যুদয়।
    ফিরে এল গৃহে শান্তি      নব জলধরকান্তি
    ত্রেতার শ্রীরাম মনে হয়।।
    শৈশবে স্বাধীনচেতা       শিশুমধ্যে যেন নেতা
    সিংহ শিশু খেলিত কৌতুকে।
    পিতামহ চক্ষুমণি          বীরেন্দ্র কিশোরী গণি
    দিনে দিনে বাড়ে চাঁদ সুখে।।
    প্রবেশিকা পাশ করি       চিকিৎসক ব্রত ধরি
    অধ্যায়ন করে কিছু কাল।
    গুরুচাঁদ কাছে লয়ে       কহিলেন বিদ্যালয়ে
    এতকাল রহিলে বহাল।।
    আমার কলেজে এবে      কিছু বিদ্যা শিক্ষা লবে
    এতবলি রাখে তার কাছে।
    অপর ভ্রাতারা সবে        বিভিন্ন স্থানেতে রবে
    তুমি থাক মোর পাছে পাছে।।
    কল্পবৃক্ষ গুরুচাঁদ            শিরে দেয় আশীর্বাদ
    গোপন নিগুঢ় বিদ্যা যত।
    উপযুক্ত শিষ্য কাছে       যা তার ভাণ্ডারে আছে
    সকলি শিখাল মন মত।।
    তেরশ তেতাল্লিশ সনে    গুরুচাঁদ ভক্তগণে
    ডাকিলেন সবে নিজ স্থানে।
    রাসযাত্রা সংঘটন          প্রেমোন্মত্ত ভক্তগণ
    মাতোয়ারা হরিগুণ গানে।।
    আমি লীলা সম্বরিব        মোর কার্যভার দিব
    মোর প্রিয় শ্রীপতিচাঁদেরে
    ও মোর অন্ধের ষষ্ঠী       হরিচাঁদ কৃপাদৃষ্টি
    ওরে ঘিরি সর্বদাই ফিরে।।
    দরবারে ওর ঠাই                    ওর তুল্য কেহ নাই
    ওর মোর আনন্দময় হরি।
    আমি শ্রীপতির সাথে      ফিরিব দিবস রাতে
    আমি রব ওর অঙ্গ ধরি।।
    ছিল সাধু রাধাক্ষ্যাপা      কহে দূরে থাকি বাপা
    সর্বদেশে হরিগুণ গাই।
    কভু মৈমনসিংহে          হরিনাম ধ্বনি শিঙ্গে
    ত্রিপুরা আসামে কভু যাই।।
    লীলা সম্বরিলে প্রভু        বঞ্চিত না হই কভু
    আমারে কহিয়া যেও কথা।
    যেথা থাকি জঙ্গলেতে    দিবাভাগে কিংবা রাতে
    এ কথার কর না অন্যথা।।
    তথাস্ত ঠাকুর রহে         ক্ষ্যাপা এই বাক্য বহে
    ফিরে যায় আশ্রম ত্রিপুরা
    তেরই ফাল্গুন মাসে        কহিতে না ভাষা আসে
    খসি পড়ে পর্বতের চূড়া।।
    সাঙ্গ করি লীলা খেলা     সাজাইয়া মহামেলা
    কাঁদাইয়া মতুয়া মণ্ডলে।
    দেবলোক দিব্যধামে      স্বর্গ হতে রথ নামে
    গোলোকে ঠাকুর যান চলে।।
    অসমাপ্ত কর্মভার                    কঠোর দায়িত্ব তার
    হাসিমুখে বহে শ্রীশ্রীপতি
    ধীরোদাত্ত স্বল্পভাষী        মুখে অপার্থিব হাসি
    হরিচাঁদ গুরুচাঁদে মতি।।
    হোথা আশ্রমের কোণে    রাধাক্ষ্যাপা একমনে
    গুণ গান গাহে হরিনাম।
    শতকোটি চন্দ্রসম         জ্যোতির্ময় অনুপম
    উদিত হইল প্রাণারাম।।
    যেরূপ ওঢ়াকাঁদিতে        শ্রীগুরুচাঁদ সঙ্গেতে
    থাকিত শ্রীনেপাল গোঁসাই।
    রাখিতে এলেন কথা       এ দেহের শেষ কথা
    কহ প্রভু গুরুচাঁদ সাই।
    অশ্রুজলে বক্ষ ভাসে       “মোরা রব কার পাশে
    কে শুধাবে প্রাণের বারতা।
    এত কহিত্রিপুরায়        ক্ষ্যাপা গড়াগড়ি যায়
    পুণ্যবান শোনে সেই কথা।।
    প্রভু কহিলেন হেসে        লীলা শেষে অবশেষে
    সাধনার অন্তে ধামে যাই।
    তোমারে ত কহিয়াছি     আমি শ্রীপতিতে আছি
    তার সঙ্গে রব সর্বদাই।।
    জয় জয় হরিচাঁদ                    ত্রিভুবনে যার ফাঁদ
    গুরুচাঁদ যাঁহার বিভূতি।
    জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ           জয় শ্রীশ্রীপতিচাঁদ
    সর্বলোকে গাহে যাঁর স্তুতি।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.