শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
১১ মধ্যখণ্ডঃ ষষ্ঠ তরঙ্গ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    ১১ মধ্যখণ্ডঃ ষষ্ঠ তরঙ্গ


                               মধ্যখণ্ডঃ ষষ্ঠ তরঙ্গ

    মধ্যখণ্ড
    ষষ্ঠ তরঙ্গ
    বন্দনা
    জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস
    জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস
    ।।
    জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর

    পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার
    ।।
    জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন

    জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
    জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়
    জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
    জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ
    নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

    পাগলের গঙ্গাচর্ণা গমন
    পয়ার
    এই মহোৎসব পরে যত ভক্তগণ।
    গঙ্গাচর্ণা এসে করে নাম সংকীর্তন।।
    রামমোহনের ঘরে বসিয়া সকল।
    কেবল বলেছে হরি বল হরি বল।।
    তখন পাগল এসে কার্তিকের ঘরে।
    জয় হরি গৌর হরি বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
    আসিল সকল ভক্ত সেই গৃহদ্বারে।
    পাগল বলিল যে আসিবি এই ঘরে।।
    একজন এক শ্লোক, করিবি বক্তৃতে।
    না বলিলে শ্লোক, নাহি পারিবি আসিতে।।
    বক্তৃতা করিলে শ্লোক যাহারা যা আসে।
    স্বেদ পুলকাশ্রু কারু হয় প্রেমাবেশে।।
    লেখা পড়া যে না জানে সেও শ্লোক কয়।
    শ্লোক না বলিলে ধেয়ে মারিবারে যায়।।
    কারু মারে লাথি কারু মারে মুষ্ট্যাঘাত।
    শ্লোক বলিতে অমনি লাগে অকস্মাৎ।।
    মহাভাবে প্রেমবন্যা শুনিয়া শোলক।
    তার মধ্যে অম্বিকারে আনিল গোলোক।।
    কার্ত্তিক বৈরাগী স্বামী অম্বিকা গৃহিণী।
    ব্রজগণ কার্ত্তিক সে অম্বিকা গোপিনী।।
    মৃত্যুঞ্জয় দশরথ আসি তার স্থান
    সবে বলে করহ মায়ের স্তন পান।।
    অক্রুর বিশ্বাস রামকুমার বিশ্বাস।
    দুগ্ধপান করে সবে প্রেমেতে উল্লাস।।
    পাগল ধরিয়া সেই অম্বিকার মুখে।
    দুগ্ধ পান করে আর মা বলিয়া ডাকে।
    বলে মাগো এই বার হইবি গর্ভিণী।
    ছেলে হবে তার নাম রাখিও অশ্বিনী।।
    জয় হরি গৌর হরি বলি এই বোল।
    সেখান হইতে যাত্রা করিল পাগল।।
    পুনরায় সবে লয়ে গেল কলাতলা।
    সেখান হইতে করে ওঢ়াকাঁদি মেলা।।
    গোলোক পুলক আদেশিল স্বপ্নাদেশে।
    রসনা রসনা লুব্ধ ভাসে প্রেমরসে।।

    জলে স্থলে নাম সংকীর্তন
    পয়ার
    মতুয়ার গণ সব করিল গমন।
    পদব্রজে চলে যায় বহুতর জন।।
    পাঁচ হাত মুখে এক নৌকা সাজাইয়ে।
    উত্তর দেশীয় সবে যায় তরী বেয়ে।।
    কীর্তন করিছে সবে বাজাইয়ে খোল।
    তার মধ্যে কেহ উঠে বলে হরিবোল।।
    যে নায় উঠিলে লোক ধরে বিশ ত্রিশ জন।
    সেই নৌকায় লোক উঠে বিয়াল্লিশ জন।।
    বার চৌদ্দ জন লোক হইয়াছে বেশী।
    নাম সংকীর্তন করে হয়ে মিশামিশি।।
    দুই নৌকা জুড়ি বাহে কেহ মারে লম্ফ।
    তাহাতে নদীর জল হইতেছে কম্প।।
    গোস্বামী গোলোক নাচে আনন্দ হৃদয়।
    কভু আগা নায় কভু যান পাছা নায়।।
    গায় গায় মিশামিশি লোক সব ভীড়।
    তার মধ্যে গোস্বামী উন্মত্ত নহে স্থির।।
    সকল মতুয়া নাচে করি জড়াজড়ি।
    তার মধ্যে গোস্বামী করেছে দৌড়াদৌড়ি।।
    হাতে হাতে ধরাধরি হইয়া সবায়।
    তার নীচ দিয়া প্রভু যান আগা নায়।।
    যখনে সকলে বসি নামপদ গায়।
    লম্ফ দিয়া গোস্বামী পড়েন পাছা নায়।।
    নদীমধ্যে যত লোক নৌকা পরে ছিল।
    আশ্চর্য মানিয়া সবে নিকটে আসিল।।
    সব নৌকা গিয়া গোস্বামীর নৌকা ধরে।
    সঙ্গে সঙ্গে তাহারাও হরিনাম করে।।
    যত সব বাজে নৌকা হল আগুয়ান।
    সকলে বলে হরি হিন্দু মুসলমান।।
    জলমগ্ন লোক যেন ভুলে খায় জল।
    তেমনি সকলে বলে বল হরি বল।।
    পদ ধরে গান করে ঈশ্বরাধিকারী।
    উঠেছে তরঙ্গ নাচে মধুমতী নারী।।
    অক্রুর বিশ্বাস আগা নৌকার চরাটে।
    দাঁড়ায়ে কীর্তন করে হাতে লয়ে বৈঠে।।
    হাতে বৈঠা লম্ফ দিয়া নেচে নেচে উঠে।
    গোস্বামী লাফিয়া পড়ে তাহার নিকটে।।
    পাগল শুইয়া পড়ি ডাকে হরিচাঁদে।
    অক্রুর দাঁড়ায়ে তার দুই পদ মধ্যে।।
    যেন দুই দাঁড় দুই পার্শ্বে নৌকা বায়।
    হস্ত দিয়া সেই মত নৌকা টেনে যায়।।
    চারি ছয় দাঁড়ে নৌকা যেই মত চলে।
    সেই মত নৌকা চলে হস্ত টান বলে।।
    গোস্বামীর নৌকা সঙ্গে যত নৌকা ধরা।
    সব নৌকা সেইমত চলিল সুধারা।।
    যত নৌকা ধরাধরি করিছে আসিয়ে।
    বাহ্যজ্ঞান নাহি কারু প্রেমে মত্ত হয়ে।।
    সময় সময় কারু বাহ্যস্মৃতি হয়।
    চাহিলে পাগল পানে তাহা ভুলে যায়।।
    হেনকালে জয়পুরবাসী চারিজন।
    হৃদয় সীতানাথ ভোলানাথ রাইচরণ।।
    ষোল হাত দৈর্ঘ্য নৌকা প্রস্থে নয় পোয়া।
    হরিধ্বনি শুনি চারিজন দিল বাওয়া।।
    বহু পরিশ্রমে নৌকা ধরিল আসিয়া।
    ঠেকাইল নৌকা আগানার তল দিয়া।।
    কেহ বলে সর বেটা মরিতে আসিলি।
    নৌকার গলইর তলে নৌকা কেন দিলি।।
    আসিলি নৌকার তলে ডুবিয়া মরিতে।
    ভোলানাথ বলে আমরা এসেছি ডুবিতে।।
    গোস্বামী বলেছে বাছা কে ডুবিতে চাও।
    অক্রুর বিশ্বাস কহে জয়পুর নাও।।
    লম্ফ দিয়া উঠিলেন গোঁসাই গোলোক।
    জয়পুর নাও যদি এইত তারক।।
    না হলে এমন বোল কে পারে বলিতে।
    তারকের গণ নৈলে চাহে কে ডুবিতে।।
    নৌকা মধ্যে নামে মত্ত ছিল যত লোক।
    সকলের মুখে শব্দ তারক তারক।।
    মধ্যে ফাঁক করে দিল সকল তরণী।
    তার মধ্যে জয়পুরে নৌকা নিল টানি।।
    তারকের নৌকা এই বলিয়া গোঁসাই।
    লম্ফ দিয়া বলে তারকের নৌকা বাই।।
    পড়িয়া নৌকার মাঝে ভাসিয়া চলিল।
    অক্রুর বিশ্বাস এসে লাফিয়া পড়িল।।
    রাইচাঁদ নিবারণ বদন গোঁসাই।
    গোলোকের পুত্র গিরি মথুর দুভাই।।
    গোলোক ঠাকুর গিরি মথুরের পিতে।
    ঈশ্বরাধিকারী সবে বসি একত্রেতে।।
    নাম করে প্রেমাবেশে বড় নৌকা থেকে।
    সিংহনাদ প্রায় ধ্বনি উঠে ঝোঁকে ঝোঁকে।।
    বলিতে বলিতে হরি নৃত্য গীত রসে।
    বর্ণির খালের মধ্যে সব নৌকা পশে।।
    যাহারা বিদেশী নৌকা সঙ্গে এসেছিল।
    ছাড়িয়া কতক নৌকা বড় নদী গেল।।
    নিজ নিজ স্থানে যায় কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে।
    কেহ কেহ সঙ্গে রৈল প্রেমে মত্ত হয়ে।
    লোক ভিড় জয়পুরে নৌকার উপরে
    গায় গায় লোক ফাঁক নাহি ডালি জুড়ে।।
    ঊর্ধ্ব সংখ্যা ধরে নায় বিশ ত্রিশ জন।
    নৌকার উপরে লোক ঊনত্রিশ জন।।
    তার মধ্যে গোস্বামী উল্লম্ফন করিছে।
    নৌকা হতে কেহ কেহ কিনারে পড়েছে।।
    নায় নায় যোড়াযোড়ি ক্ষণে লাগে তটে।
    কিনারার লোক গিয়া নৌকাপরে উঠে।
    গোস্বামী গোলোক গিয়া পড়েন কিনারে।
    ফিরে লম্ফ দিয়া পড়ে নৌকার উপরে।।
    নৌকায় যত মানুষ ছিলেন বসিয়া।
    মাথার উপর দিয়া পড়েছে লাফিয়া।।
    কূল হতে পড়ে এসে বড় নৌকা মাঝ।
    দুইবার দেখা গেল পাছে আছে ল্যাজ।।
    আঙ্গুল পাছায় লম্বা আট নয় হাত।
    শরীর প্রমাণ লম্বা তের চৌদ্দ হাত।।
    গোলোক কীর্তনিয়া ঈশ্বরাধিকারী।
    ভক্তি ভয় আনন্দে সকলে বলে হরি।।
    তালুকের মহেশচন্দ্র শ্রীহরি পোদ্দার।
    আড়ঙ্গ বৈরাগী মহানন্দ কোটিশ্বর।।
    এমত অনেক ভক্ত দেখে চমৎকার।
    ধুমকেতু তারা তুল্য লেজের আকার।।
    এমত আশ্চর্য কার্য দেখে সব নরে।
    জয় হরি গৌর হরি বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
    পড়িল গোস্বামী গিয়া কূলের উপর।
    রাখালেরা হরি বলে শুনিতে সুন্দর।।
    মিশিল গোঁসাই সব রাখালের সঙ্গে।
    জয় জয় হরিধ্বনি দিতেছেন রঙ্গে।।
    পাগলের লীলাখেলা বড় চমৎকার।
    বিরচিল কবি চূড়ামণি সরকার।।

    রাখাল সঙ্গে গোস্বামীর তিলবনে নৃত্য
    পয়ার
    নাচে গায় রাখালেরা বলে হরিবোল।
    নেচেছে গোস্বামী যেন উন্মত্ত পাগল।।
    এক এক বার প্রভু উঠেন নৌকায়।
    তখন রাখাল হয় পাগলের প্রায়।।
    কহে কেহ বলে ভাই পাগল কোথায়।
    কোথা গেল বলে কেহ খুঁজিয়া বেড়ায়।।
    যখনে সকলে হয় শোকাকুল মন।
    তখন পাগল এসে দেন দরশন।।
    আসিয়া গোঁসাই কহে ওরে রাখালেরা।
    বল বল হরি বল হে দেরে শালারা।।
    রাখালেরা বলে যাহা বল তাতে রাজি।
    গো-রাখাল বলে ফেলে যেওনা বাবাজী।।
    রাখালের সঙ্গে সঙ্গে পাগল গোঁসাই।
    হুঙ্কারিয়া নাচে আনন্দের সীমা নাই।।
    নাচিতে নাচিতে হরি হরি বলে কাঁদে।
    গোস্বামী হুঙ্কার ছাড়ি ডাকে হরিচাঁদে।।
    কেঁদে কেঁদে তিল বনে লুকাল গোঁসাই।
    অন্বেষণ করি ফিরে রাখাল সবাই।।
    কোথা গেল কোথা গেল রাখালের রব।
    পেলেম বা কারে তারে হারাইনু সব।।
    সকল রাখাল মিলে খুঁজে বনে বন।
    সবে মিলে তিল বন করে অন্বেষণ।।
    তিল তিল অন্বেষণ করিয়া না পায়।
    তাহাতে তিলের চারা গাছ ভেঙ্গে যায়।।
    জমি স্বামী নন্দরায় নমঃশূদ্র তিনি।
    রাখালে মারিতে যায় ধাইয়া অমনি।।
    তিল ভেঙ্গে নাশ কৈলি আমার এ জমি।
    যমালয় তোদের পাঠাব অদ্য আমি।।
    রাখালেরা বলে মার রায় মহাশয়।
    গোস্বামী না পেলে মোরা যাব যমালয়।।
    এ বাক্য গোস্বামী যবে শুনিবারে পায়।
    জয় হরি বল বলে উঠিয়া দাঁড়ায়।।
    এই আমি এই আমি বলেন গোঁসাই।
    রাখালেরা বলে তারে পেয়েছিরে ভাই।।
    ওরে ভাই তিল আলা মারিবিত মার
    মারা ধরা বলে কিছু ভয় নাই আর।।
    গোঁসাই বলেন ওরে কে মারিতে চায়।
    দেখি কেবা মারে তারে ডেকে লয়ে আয়।।
    রাখালেরা বলে গিয়া রায়ের গোচরে।
    মার যদি এস বাবা ডেকেছে তোমারে।
    প্রভু কাছে যোড়করে কহে এক দাই।
    আমার জমিতে এসে নাচো হে গোঁসাই।।
    রায় কহে যাও যাও যে ডাকে তোমারে।
    আমার জমির তিল গেছে একেবারে।।
    আমার জমিতে আর যেওনা পাগল।
    যাও যদি তিল ভেঙ্গে যাইবে সকল।।
    দাই বলে এই তিল ক্ষেত্র মোর হয়।
    নাচো গাও হরি বল যত মনে লয়।।
    গোস্বামী বলেছে তোর তিল ভেঙ্গে যাবে।
    দাই বলে তিল গেলে তিল দিতে হবে।
    যায় যাক থাকে থাক সামান্য এ তিল।
    দয়া করি প্রেমভক্তি দেহ এক তিল।।
    একতিল প্রেমভক্তি মোরে যদি দেহ।
    পরিপূর্ণ হবে গোলা নাহিক সন্দেহ।।
    মোর গৃহে না ধরিবে ছড়িয়ে পড়িবে।
    ধরায় না ধরিবে বিরাজা পার যাবে।।
    ম্লেচ্ছ যবন যারা মোরে কভু নাহি মানে।
    এই যুগে তারাও কাঁদিবে মোর নামে।।
    প্রভুর প্রতিজ্ঞা পূর্বে যাহা যাহা ছিল।
    শেষ লীলার প্রধানসব সম্ভবিল।।
    গোঁসাই তাহার মুখে হস্ত দিয়ে কয়।
    নাচিব তিলের মধ্যে জয় হরি জয়।।
    অমনি চলিল প্রভু রাখাল সঙ্গেতে।
    দক্ষিণাভিমুখ হয়ে চলে সকলেতে।।
    একবার দৌড়ে যায় দক্ষিণের আলি।
    উত্তরাভিমুখ পড়ে চলিল সকলি।।
    পুনরায় দৌড়ে যায় পশ্চিম আইলে।
    আরবার পূর্ব আলি চলিল সকলে।।
    আসে যায় নাচে গায় যেন মল্লযুদ্ধ।
    নেচে নেচে তিল ভাঙ্গে করে কক্ষবাদ্য।।
    তিল গাছ ভেঙ্গে চুরে নেচেছে রাখাল।
    কিয়দংশ গাছে রৈল দুই এক ডাল।।
    ডালপাতা ভূমিসাৎ পাড়ায় পাড়ায়।
    ভেঙ্গে চুরে তিল গাছ পল মৃত্তিকায়।।
    এইমত তিল নৃত্য গীতভঙ্গ করি।
    পাগল বাহির হইল বলে হরি হরি।।
    মহাসংকীর্তন মহা পীযুষের রস।
    রসনা রসনা পেয়ে রসনা বিরস।।

    গোস্বামীর ভোজের আয়োজন
    পয়ার
    নৌকা চলে খালদিয়া পাগল কিনারে।
    শিলনার বালারা সে নৌকা টেনে ধরে।।
    আজ সবে এইস্থানে করুণ বিশ্রাম।
    কৃতার্থ করুণ সবে করি হরিনাম।।
    তাহা শুনি সব নৌকা লাগিল কিনারে।
    বালাদের বাটী নাম সংকীর্তন করে।।
    বাহির বাটীতে নাম সংকীর্তন হয়।
    মহাসংকীর্তন প্রেমবন্যা বয়ে যায়।।
    কেহ কাঁদে কেহ হাসে গড়াগড়ি যায়।
    হরি হরি হরি হরি হরি হরি হরি ময়।।
    মাতিল তিতিল বক্ষ বহে অশ্রুজল।
    গোস্বামী ডাকেন কোথা রাখালের দল।।
    শুনিয়া রাখালগণে দেয় হরিধ্বনি।
    পাগলের সম্মুখেতে করি যোড়পাণি।।
    গোস্বামী কীর্তন মাঝে যখন বিরাজে।
    রাখাল মিশিল এসে কীর্তনের মাঝে।।
    হাতে লড়ি গোস্বামী দাঁড়াল বাঁকা হয়ে।
    রাখালেরা নাচে সুখে আবাধ্বনি দিয়ে।।
    বাল বৃদ্ধ যুবা পৌঢ় কিংবা নর নারী।
    ধন্য যুগে একযোগে বলে হরি হরি।।
    তার মধ্যে বসেছে ঈশ্বর অধিকারী।
    মন্ত্রদাতা গুরু সদা করে গুরুগিরি।।
    সংকীর্তন ক্ষান্ত করি সেবা আয়োজন।
    সবে বলে কিছু পরে করিব ভোজন।।
    গোস্বামী ঈশ্বরচন্দ্র আছেন সভায়।
    তার সেবা না হলে কি সেবা করা যায়।।
    বালারা দাঁড়াল এসে গোস্বামীর ঠাই।
    করযোড়ে বলে পাক করুণ গোঁসাই।।
    গোঁসাই চলিল পাক করিবার তরে।
    পাগল গোঁসাই যান তার সমিভ্যরে।।
    আবার মাতিল সবে নাম সংকীর্তনে।
    দুই প্রভু চলিলেন রন্ধন কারণে।।
    বাহির বাটীতে সবে গান করে যথা
    অধিকারী ঠাকুরের হুক্কা ছিল তথা।।
    ঠাকুরের বিছানায় বালিশ হেলানে।
    এদিকে মাতিল সবে নাম সংকীর্তনে।।
    তার মধ্যে একজন উন্মত্তের ন্যায়।
    নেচে গেয়ে বালিশের নিকটেতে যায়।।
    ঢলিয়া পড়িল গিয়া বালিশের গায়।
    পদ লাগি নচে খোল ভাঙ্গিল তথায়।।
    মধ্য বাড়ী ছাড়িয়া বাহির বাড়ী নাম।
    সেইখানে হুকা ভাঙ্গে কীর্তনের ধাম।।
    পাক করে অন্তঃপুরে মধ্যে এক ঘরে।
    গোলোক ঈশ্বর দুই প্রভু একতরে।।
    অন্তর্যামী পাগল গর্জিয়া উঠিয়াছে।
    কহেন গোঁসাই তব হুক্কা ভাঙ্গিয়াছে।।
    সুতা গ্রন্থি দিয়া জোড়াইয়া সেই হুক।
    সুতা পাকাইয়া বাঁধিতেছে ভাঙ্গা মুখ।।
    পাগল আসিয়া করে তর্জন গর্জন।
    ঠাকুরের হুঁকা ভাঙ্গিলিরে কোন জন।।
    ঘরে বসি হুক্কা বাঁধে দ্বীপ আলোকেতে।
    গোস্বামীর ক্রোধবাক্য শুনি ডরে চিতে।।
    ভয়ে দ্বীপ নিভাইল বসে অন্ধকারে।
    গোস্বামী বলেন বেটা আছে এই ঘরে।।
    দ্বীপ নিভাইয়া বেটা বসে রলি ঘরে।
    ভেবেছিস আমি বুঝি দেখি নাই তোরে।।
    কিরূপে বাঁধিলি হুক্কা দ্বীপ জ্বালা দেখি
    বাঁধন আটে না মোটে তার করিবি কি।।
    দ্বীপ জ্বালাইয়া হুক্কা দেখাল তখনে।
    পতিত হইল ভয়ে গোস্বামীর চরণে।।
    অপরাধ করিয়াছি প্রভু ক্ষমা চাই।
    হুঁকা কিনে দিব এনে আজ্ঞা কর তাই।।
    পাগল কহেন মোরা চলে যাব প্রাতেঃ।
    তুই যাবি কতক্ষণে হুঁকা কিনে দিতে।।
    শীঘ্র করি আন আটালিয়া কালামাটি।
    ভাঙ্গা হুঁকা জোড়া দিয়া করি পরিপাটি।।
    সেই মাটি  এনে দিল পাগলের ঠাই।
    তৈল মাটি দিয়া হুঁকা যোড়াল গোঁসাই।।
    তামাক সাজিয়া নিল রসই ঘরেতে।
    হুক্কা ধরি দিল নিয়া ঠাকুরের হাতে।।
    হস্ত ধৌত কর প্রভু শেষে কর পাক
    ধুমপান কর সেজে এনেছি তামাক।।
    অধিকারী হুঁকা ধরি খাইল তামাক।
    এই নাকি ভাঙ্গা হুক্কা কই যোড়া ফাঁক।।
    ঠাকুর ধরিয়া হুঁকা দেখে আগাগোড়া।
    জিজ্ঞাসা করিছে হুঁকা কোথা দিলে যোড়া।।
    পাগল বলেন হুঁকা প্রবাসে চলিবে।
    বাড়ী গেলে যোড়া ছেড়ে খসিয়া পড়িবে।।
    অধিকারী পাক করি বসিলেন খেতে।
    অর্ধ সেবা হইলে পাগল বসে সাথে।।
    খাইল ডাইল শাক লাবড়া ব্যঞ্জণ।
    টক দধি দুগ্ধ বাকী করিতে ভোজন।।
    হেনকালে পাগল সে পাত্র লয়ে গেল।
    অধিকারী কাছ হতে দূরেতে বসিল।।
    টক পাত্র দধি পাত্র চিনি দুগ্ধ লয়ে।
    একত্র করিয়া সব নিলেন মাখিয়ে।।
    গোস্বামীকে কহে তুমি কর আচমন।
    এ মহাপ্রসাদ আমি করি বিতরণ।।
    আমি তুমি একত্রে খাইব বনমাঝে।
    ইহা খেতে আসিও না শিষ্যের সমাজে।।
    নহে বহির্বাটী গিয়া বৈস সেই খানে
    আর কিবা কার্য আছে এ বৃথা চর্বণে।।
    গোস্বামী বসিল গিয়া ভক্তের সমাজে।
    পাগল প্রসাদ বাঁটে সংকীর্তন মাঝে।।
    দধি দুগ্ধ গোস্বামীর সেবা নাহি হল।
    পাগল সম্মুখ হইতে কাড়িয়া লইল।।
    অবিবেকী সাধারণ লোক যারা ছিল।
    পাগলের ভাব তারা বুঝিতে নারিল।।
    অনেক লোকের মনে বিদ্বেষ জন্মিল।
    এ লীলা তারকচন্দ্র ভাষায় রচিল।।

    পাগলের নামে বিদ্বেষ
    পয়ার
    সবে মিলে কানাকানি করে পরস্পরে।
    এইসব কার্য কি পাগল ভাল করে।।
    ঠাকুরের সম্ভ্রম না রাখে এই বেটা।
    বারজাতি মধ্যে কেন এঁটে ভাত বাঁটা।।
    কেন ঠাকুরের এক সাথে খেতে বসে।
    দধি দুগ্ধ না খাইতে কেড়ে নিল শেষে।।
    পাগল হইল কেন এত অত্যাচারী।
    মহাপ্রভু পিতৃগুরু ঈশ্বরাধিকারী।
    সাথে খায় কেড়ে লয় সেবা না হইতে।
    গৃহস্থের তিল ভাঙ্গে রাখালের সাথে।।
    তিল আলা গৃহস্থেরা কত মন্দ কয়।
    উচিৎ বলিতে গেলে সাধু নিন্দা হয়।।
    এইমত পাগলামী কেন উনি করে।
    এ কথা জানাও সবে ঠাকুর গোচরে।।
    মহোৎসব করি পরে সবে বাড়ী যায়।
    প্রভুর নিকটে গিয়ে একে একে কয়।।
    শুনিয়া ঠাকুর কয় তারে পাই যদি।
    দেখিস কি করি যদি আসে ওঢ়াকাঁদি।।
    থাক সবে গোলোক আসিবে যেই দিনে।
    সেদিন সকলে তোরা আসিস এখানে।।
    কি জন্য করিল বেটা এত পাগলামী।
    গোলোকের পাগলামী ভেঙ্গে দিব আমি।।
    একদিন গোলোক আসিল ওঢ়াকাঁদি।
    সেই দিন সবে গিয়ে হইলেন বাদী।।
    জয় হরি বল রে গৌর হরি বল
    গম্ভীর হুঙ্কার করি উঠিল পাগল।।
    মতুয়ারা বসিয়াছে ঠাকুর নিকটে।
    পাগলে দেখিয়া হরিচাঁদ ক্ষেপে উঠে।।
    বলরে গোলোক মহোৎসবে কি করিলি।
    গুরুঠাকুরের কেন অপমান কৈলি।।
    রাখাল লইয়া কেন তিল ভেঙ্গে দিলি।
    গৃহস্থেরা আসিয়া কেন দেয় গালাগালি।।
    গোলোক কহিছে প্রভু কি কহিব আমি।
    যাহা কর তাহা করি হয় পাগলামী।।
    নাহি মোর জ্ঞান কাণ্ড তাতে হই দোষী।
    ভাল মন্দ নাহি বুঝি প্রেম লয়ে খুশী।
    কে যেন কি করে যায় কিবা হিতাহিত।
    জানিয়া করুণ দণ্ড যে হয় উচিৎ।
    তিল ভাঙ্গি রাখালের সঙ্গে সঙ্গে থেকে।
    হিন্দু দিল গালাগালি দাই নিল ডেকে।।
    যার জমি সেই দাই বলিল নাচিতে।
    তিল ভাঙ্গি দাই বেটা আনন্দিত তাতে।।
    এ যেন কাহার কার্য আমি নাহি বুঝি।
    ভাগবত সিদ্ধ ক্রিয়া জগবন্ধু রাজী।
    পাগল বলিছে তোরা জয় হরি বোল।
    কেবা কি করিতে পারে ক্ষেপিল পাগল।।
    মহাপ্রভু বলে তোরা করিলি নালিশ।
    যাহা কহে কর দেখি ইহার সালিশ।।
    প্রসাদ বিলাইবার পারে কি না পারে।
    যে প্রসাদ বিক্রি হয় আনন্দ বাজারে।।
    কুকুরের মুখ হতে দ্বিজ কেড়ে খায়
    তাহা বিলাইয়া কি গোলোক দোষী হয়।
    আনন্দ  বাজার নহে এ নহে উৎকল।
    ইহা যেই মনে ভাবে সেই মূঢ় খল।।
    এ হেন আনন্দ চিত্ত হয়েছে যাহার।
    তার কাছে এই সেই আনন্দ বাজার।।
    প্রসাদেতে অবিশ্বাস মনেতে ভাবিলি।
    তবে তোরা হাত পেতে কেন তাহা নিলি।।
    প্রসাদ লইয়া কই মন হৈল খাটি।
    ছাই মাটি লয়ে কি করিলি চাটাচাটি।।
    হিন্দু দেয় গালাগালি দাই ডেকে নিল।
    জেনে আয় কার ক্ষেতে হল কত তিল।।
    তোরা যে নালিশ কৈলি না জেনে সন্ধান।
    যা দেখি সে ঠাকুরের ভাঙ্গা হুক্কা আন।।
    ঠাকুরের হুক্কা ভাঙ্গে কীর্তন খোলায়।
    পাকঘরে গোলোক কেমনে টের পায়।।
    সূতা দিয়ে গ্রন্থি দিল গিরে আটে নাই।
    মাটি দয়া গোলোক যোড়ায়ে দিল তাই।।
    বলিতে বলিতে প্রভু আরক্ত নয়ন।
    বলিলেন বাহ্য রুষ্ট কর্কশ বচন।।
    ভাঙ্গা হুঁকা মাটি দিয়া যে দিয়াছে যোড়া।
    তারপরে দ্বেষ করা মোরে নিন্দা করা।।
    রাগাত্মিকা রাগ ধর্ম ওঢ়াকাঁদি গণ।
    এর পরে নাহি কোন সাধন ভজন।।
    মর্ম না জানিয়া কেহ কারে না নিন্দিবে।
    হইলে আত্ম-বিদ্রোহ ছাড়ে খারে যাবে।।
    বাহ্য অঙ্গ ডোরক কপিন মালা আর।
    সব হতে সবাকে করেছি অবসর।।
    সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় হইবেক যেই।
    না থাকুক ক্রিয়া কর্ম হরি তুল্য সেই।।
    কীর্তনেতে লম্ফ করে অসম্ভব কাজ।
    ভীমকায় বিশেষ দেখিলে যার ল্যাজ।।
    প্রসাদ বাটীতে কেন তারে ভাব মন্দ
    সাবধান কেহ কর নাহি আত্মদ্বন্দ্ব।।
    অধিকারী পাক করে লাবড়া ব্যঞ্জণ।
    ভোজনে গোলোক মোরে করে নিবেদন।।
    আমি খাইলাম তাই গোলোক দেখিল।
    সে হেতু কীর্তন মাঝে প্রসাদ বাঁটিল।।
    না জানে পাষণ্ডীগণ এই কার্য কার।
    ঈশ্বরীয় কর্ম এই ঘটনা তাহার।।
    তোরা ইহা না জানিস আমি জানিয়াছি
    গোলোক করিল যাহা আমি করিয়াছি।।
    শুনিয়া মতুয়াগণ কাঁদিয়া আকুল।
    বলে প্রভু আমাদের বুঝিবার ভুল।।
    প্রভু বলে হয়, হয় না জান আপনা।
    নিজ চক্ষে নিজ মুখ নাহি দেখা চেনা।।
    একবার যারে যে বিশ্বাস করে মনে।
    তারে অবিশ্বাস আর করে বা কেমনে।।
    তিল গাছ ভাঙ্গিয়াছে যাহার যাহার।
    জান তথা হতে কিবা আসে সমাচার।।
    আট দশ দিন পরে পুকুরের পাড়ে।
    বসিলেন মহাপ্রভু ভূমি শয্যা করে।।
    এক এক জন করি আইল অনেকে।
    নালিশ করিছে তারা এল একে একে।।
    ঈশ্বরাধিকারী আর গোলোক কীর্তুনে।
    তস্য পুত্র গিরিশ মথুর দুইজনে।।
    তালুকের মহেশ আর নিবারণ বালা।
    ক্রমে ক্রমে হৈলা হরিভকতের মেলা।।
    মৃত্যুঞ্জয় দশরথ আর শম্ভুনাথ।
    মদন বদন বনমালী রঘুনাথ।।
    ক্রমাগত হইল বহুত লোকজন।
    নালিশ করিছে তারা আসিল তখন।।
    ঠাকুর বসিয়া কহিছেন সব কথা।
    হেনকালে পাগল গোলোক এল তথা।।
    ঠাকুর কহিল যারা নালিশ করিলি।
    তিল হল কিনা হল তার কি জানিলি।।
    হেনকালে প্রণমিয়া বলে সেই দাই।
    কোথায় আছেন মোর পাগল গোঁসাই।।
    আমার জমিতে তিনি নাচিয়া গাইয়া
    তিল নষ্ট করেছিল রাখাল লইয়া।।
    ভাঙ্গা ডাল মাটি মধ্যে পড়িয়া যা ছিল।
    য়ে বৃষ্টি ডাল পুষ্টি তিলে বেড়ে গেল।।
    নন্দরায় গোস্বামীকে তাড়াইয়া দিল।
    তবু তার জমিতে যথেষ্ট তিল হৈল।।
    অন্য অন্য কৃষকের যত তিল জমি
    কারু মোটে হয় নাই কারু বহু কমি।।
    তিল ভাঙ্গে আমি খুশী রায় করে দোষী
    তবু অন্য হতে তিল চতুর্গুণ বেশী।।
    রায়ের দুবিঘায় ফলেছে পাঁচ সলি।
    আমার দুবিঘা জমি রায়দের আলি।।
    আমার সে ক্ষেত্রে তিল হল নয় সলি।
    আসিয়াছি গোস্বামীর কথা যাব বলি।।
    আমি চির দাস প্রভু দয়া কর মোরে।
    যবন বলিয়া ঘৃণা না কর আমারে।।
    প্রভু হরিচাঁদ বলে ওহে ভক্তগণ।
    কি কহে যবন সবে করহে শ্রবণ।।
    গোলোক কি করে কেহ না পাইলে দিশে।
    এখন গৃহেতে গিয়া ভাব বসে বসে।।
    শুনি মতুয়ারগণ ভাসে অশ্রুজলে।
    পাগল হুঙ্কার করি জয় হরি বলে।।
    ভাষা ছন্দে কহে কবি তারক সরকার।
    হরি হরি বল ভাই দিন নাহি আর।।
    আদেশিল প্রভু দশরথ মৃত্যুঞ্জয়।
    চতুর্বিংশ বর্ষ পরে পাগল উদয়।।
    মহানন্দ প্রেমানন্দ বলে বার বার।
    দিন গেল গেল না মনের অন্ধকার।।
    হরিলীলামৃত অব্জ অর্ক মহানন্দ।
    বিরচিল তারকের হৃদে মহানন্দ।।

    পাগলের দৈব তামাক সেবন
    পয়ার
    একদা গোলোকচন্দ্র নিশীথে নিদ্রায়।
    জাগরিত রাত্রি দুই যামের সময়।।
    হরিচাঁদ রূপ চিন্তা করেছেন বসে।
    ওঢ়াকাঁদি বাটী ঝাড়ু দিতেছে মানসে।।
    এমন সময় হল তামাক পিয়াস।
    বাঞ্ছাকল্পতরু হরি জগতে প্রকাশ।।
    হুঁকায় পুরিয়া জল তামাক সাজিয়া।
    গোস্বামীকে মহানন্দ হুঁকা দিল নিয়া।।
    তামাক সেবন করি হুঁকা দেওয়া ছলে।
    ডাকিলেন মহানন্দ মহানন্দ বলে।।
    নিদ্রাগত মহানন্দ নাহি শুনে ডাক।
    মহানন্দে না দেখিয়া গোস্বামী অবাক।।
    গা তুলে গোস্বামী যান মহানন্দ দ্বারে।
    ডাকিলেন মহানন্দ আছ নাকি ঘরে।।
    মহানন্দ বলে মোরে ডাক কি কারণ।
    গোস্বামী বলেন কেন এত অচেতন।।
    আমাকে তামাক খেতে হুঁকা ধরে দিলে।
    আশা মাত্র এত ঘুম কেমনে ঘুমালে।।
    মহানন্দ বলে আমি হুঁকা দেই নাই।
    রাত্রির মধ্যেতে আমি বাহিরে না যাই।।
    নাগরে জিজ্ঞাসা করে হুঁকা দিলে নাকি।
    নাগর বলিল আমি কবে দিয়া থাকি।।
    গোস্বামী গোলোক মনে মানিল আশ্চর্য।
    রচিল তারক এত ঠাকুরের কার্য।।

    গোস্বামী হরিচরণ অধিকারীর রথ যাত্রা
    পয়ার
    পলিতা গ্রামেতে অধিকারী উপাধ্যায়।
    নাম শ্রীহরিচরণ সাধু অতিশয়।।
    পাগল গোলোকচাঁদ মন্ত্র শিষ্য তার।
    করিবেন রথযাত্রা শুনি সমাচার।।
    গোস্বামী গোলোক চলিলেন গুরুপাট।
    গিয়া দেখিলেন রথে মিলিয়াছে টাট।।
    পাগলের ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র মহানন্দ।
    তিনজনে চলিলেন হয়ে প্রেমানন্দ।
    রথের বাজারে বহুতর লোক ভিড়।
    তিনজন ভ্রমিতেছে দিতেছেন ভিড়।।
    টাট মধ্যে পেয়ে সাধু মাধবের সঙ্গ।
    দোঁহে করে কোলাকুলি পুলকিত অঙ্গ।।
    মাধবে লইয়া গেল গুরুর গোচরে।
    ভূমে পড়ি অষ্ট অঙ্গে দণ্ডবৎ করে।।
    পদধূলি নিল তুলি দণ্ডবৎ হয়ে।
    ঠাকুর নিকটে ক্ষণে রহে দাঁড়াইয়ে।।
    পাগল কহেন ওহে দয়াল ঠাকুর।
    লোকারণ্য সমারোহ করেছো প্রচুর।।
    অধিকারী ঠাকুর কহেন যুড়ি কর।
    আমি নহে কর্মকর্তা জগৎ ঈশ্বর।।
    জ্ঞান কাণ্ড কর্ম কাণ্ড ঐশ্বর্যে যোগ।
    আমার কর্তৃত্ব এ সকল পাপ ভোগ।।
    গোলোক কহিছে সব ঈশ্বরের খেলা।
    ঠিক যেন মিলিয়াছে শ্রীক্ষেত্রের মেলা।।
    লোকের সংঘট এতে যদি বৃষ্টি হয়।
    আষাঢ় মাসের দিন কি হবে উপায়।।
    অধিকারী মহাশয় কহেন পাগলে।
    বৃষ্টি নাহি হইবে মাধব দিছেন বলে।।
    রথতলে পড়ি অদ্য ত্যাজিবে জীবন।
    তাহাতে আমার আরো ভয়াকুল মন।।
    শুনিয়া পাগলচাঁদ উঠিল গর্জিয়া।
    সত্য কি মাধব ইহা বলেছে আসিয়া।।
    আপনার প্রিয়শিষ্য মাধব সদ্‌জ্ঞানী।
    ভক্ত শিরোমণি সে বৈষ্ণব চূড়ামণি।।
    রজতের খড়ম দিয়াছে তব পায়।
    গুরুপাটে থাকে প্রায় সকল সময়।।
    মাস মধ্যে চারি পাঁচ দিন থাকে বাটী।
    গুরুকার্য সদা করে অতি পরিপাটী।।
    যে কিছু সময় নিজ বাটী গিয়া রয়।
    কৃষিকার্য করে মাত্র সেটুকু সময়।।
    ছয় পাখী জমি একমাত্র চাষ দেয়।
    বীজ বুনাইয়া আর কাছে নাহি যায়।।
    আবাদাদি নিগড়ান কিছুই না করে।
    মাত্র পৌষ মাসে ধান্য কেটে আনে ঘরে।।
    পরিমাণ ধান্য যাহা নিজ বাটী ব্যয়।
    উদ্বর্ত ধান্যাদি গুরু পাটেতে পাঠায়।।
    হেনকালে সম্মুখেতে আইল মাধব।
    বলিতে লাগিল কথা লোকে অসম্ভব।।
    বলে মাধা অসম্ভব কথা বল্লি কেনে।
    বৃষ্টি হইবে না তুই জানিলি কেমনে।।
    অদ্য রাত্রে হবে বৃষ্টি সন্ধ্যার পরেতে।
    চারি দণ্ড বৃষ্টি হবে পারিবি ঠেকাতে।।
    রথের নীচায় পড়ে চাহিলি মরিতে।
    গুরুপাটে আসিলি কি জাহিরী জানাতে।।
    তোর দেহে হেন শক্তি হইয়াছে কবে।
    অসময় মৃত্যু তোরে কোন যমে নিবে।।
    কমল চরণে দিলি রজত পাদুকা।
    যে পদ কমলে সদা কমলা সেবিকা।।
    এনে দে কমল ফুল যারে পদ্মবনে।
    চন্দন মাখিয়া দিব যুগল চরণে।।
    অমনি মাধব যাত্রা করে ফুল জন্যে।
    গোলোক বলেছে মাধা যাস কোনখানে।।
    হারে মাধা নাহি মেধা শক্তি হৃদি পদ্মে।
    বসে থাক মন পাঠা পদ্মবন মধ্যে।।
    মাধব নয়ন মুদি বসিল তখন।
    গোলোক মানসে পুঁজে শ্রীগুরু চরণ।।
    মনে মনে মাধবেরে বনে পাঠাইল।
    বন হতে পদ্ম পুষ্প মাধব আনিল।।
    মনে মনে করিলেন চন্দন ঘর্ষণ।
    চন্দনে মাখিয়া পদ্ম পুঁজে শ্রীচরণ।।
    বিস্মিত মাধব কহে পাগলের পাশ।
    কোথা হতে আসে দাদা চন্দনের বাস।।
    গোলোক কহিছে ভাই দেখ মন দিয়া।
    কে যেন দিতেছে ফুল চন্দনে মাখিয়া।।
    আরোপে মাধব করে চরণ নেহার।
    চন্দনে চর্চিত পদ্ম দেখে পদোপর।।
    তাহা দেখি মাধব উঠিল শিহরিয়া।
    গোলোকের পদ ধরি পড়িল কাঁদিয়া।
    মাধবের হস্ত ধরি গোলোক উঠায়।
    বলে ভাই শুন কিছু বলি যে তোমায়।।
    তোর সঙ্গে মোর হল ভজনের আড়ি।
    ধান্য আর দিসনারে ঠাকুরের বাড়ী।।
    এত দিন গুরুপাটে কেন ধান্য দিলি।
    তুই কি আমার মাকে বারানী পাইলি।।
    যদি দিতে ইচ্ছা থাকে আনিস বানিয়ে।
    জননীর ঠাই দিস তণ্ডুল আনিয়ে।।
    পুনর্বার গুরুপাটে ধান যদি দিস।
    ধান বানিবারে তোর নারীকে আনিস্‌।।
    ফিরে যদি গুরুপাটে ধান যাবি দিয়ে।
    আমার নিকটে মরিবিরে মার খেয়ে।।
    শুনিয়া মাধব পাগলের পদ ধরি।
    দাদা দাদা বলে কেঁদে যায় গড়াগড়ি।।
    পাগল কহিছে মাধা আয় মোর সাথে।
    রথের মেলায় যাই সন্ধ্যার অগ্রেতে।।
    ডাক দিয়া ভ্রাতুস্পুত্র মহানন্দে বলে।
    দোঁহে বৈস পুকুরের দক্ষিণের কূলে।।
    দক্ষিণের পাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্ব নিয়া।
    দুজনে রাখিল সেইখানে বসাইয়া।।
    একখানা ভাঙ্গা চাঁচ দিয়া দুজনায়।
    রাখিলেন নিয়া  এক গাছের তলায়।।
    অল্পক্ষণ পরে বৃষ্টি হবে দণ্ড চারি।
    তখনে এ চাঁচ দিও মস্তক উপরি।।
    বৃষ্টি হবে উত্তরিয়া বাতাস হইলে।
    বাত বৃষ্টি লাগিবেনা এখানে থাকিলে।।
    বৃষ্টি হয়ে গেলে ভাল সুবিধা হইলে।
    তখনে দুজনে যেও বাড়ীপরে চলে।।
    মাধবে লইয়া তবে গোলোক গোস্বামী।
    বাড়ীর উপর গিয়া করে পাগলামী।
    নিজে নানা কার্য করে আরো লোক ধরে।
    সকলে বলিয়া দেয় কার্য করিবারে।।
    লে দিলে কার্য করে কেহ আনে কাষ্ঠ।
    জলপাতা আনে যারা ভক্ত শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ।।
    পাক করিবারে নাহি করে আয়োজন।
    চুলা জালাইতে, সবে করিল বারণ।।
    ঢাকিয়া রাখিল কাষ্ঠ সামগ্রী যতেক।
    সব সাবধান করে করি এক এক।।
    সভা করি বলিলেন কীর্তন করিতে।
    উন্মত্ত পাগল যেন লাগিল নাচিতে।।
    জয় হরি বল হরি গৌর হরি বল
    হুঙ্কার করিয়া নাচে কাঁপে ভূমণ্ডল।।
    লম্ফ দিয়া পাঁচ সাত হাত উর্দ্ধ হয়।
    হেন জ্ঞান হয় যেন শূন্যে উড়ে যায়।।
    এক এক বার কহে কেহ হরিচাঁদ।
    এক এক বার কহে সত্য গুরুচাঁদ।।
    গুরু ঠাকুরকে বলে পাছে ভুলে যাও।
    জগন্নাথ বলে ওঢ়াকাঁদি মুখ চাও।।
    এক এক বার যায় অন্তঃপুর মাঝে।
    এক এক বার আসে বাহিরের কাজে।।
    গুরুমাতা পাগলের পাগলাই হেরি।
    করযোড়ে দাঁড়াইয়া বলে হরি হরি।।
    সন্ধ্যার পরেতে রাত্রি হল দুই দণ্ড।
    এমন সময় মেঘ হইল প্রচণ্ড।
    আইল প্রবল বৃষ্টি হল দণ্ড চারি।
    পাগল বাদল মধ্যে বলে হরি হরি।।
    একবার ঘরে যায় হরিবোল দিয়া।
    একবার বৃষ্টি মধ্যে পড়ে লাফাইয়া।।
    বৃষ্টি মধ্যে ঘুরে যেন কুমারের চাক।
    জলধর রবে দেয় হরি বলে ডাক।।
    জয় হরি বল রে গৌর হরি বল
    মেঘের গর্জন সঙ্গে গর্জিছে পাগল।।
    যখন শ্রীঅঙ্গে লাগে বিদ্যুতের আভা।
    সে সময় হইতেছে বিদ্যুতের শোভা।।
    আকাশে বিদ্যুৎ শোভা জলদ গর্জন।
    পাগলের হাব ভাব তেমন তেমন।।
    বিদ্যুতের জ্যোতি শূন্যে নিক্ষরে যখন।
    পাগলের অঙ্গ জ্যোতিঃ হতেছে তেমন।।
    উভয় জ্যোতিতে মিশামিশি ঠেকাঠেকি।
    ধাঁ ধাঁ দিয়া লোক চক্ষে লাগে চকমকি।।
    পাগল বিক্রম দেখি সবে জ্ঞান শূন্য।
    হরি হরি বলিতেছে নাহিক চৈতন্য।।
    মেঘের গর্জন কিংবা পাগলের রব।
    তাহা কিছু নির্দিষ্ট না হয় অনুভব।।
    জয় হরি বল ধ্বনি শুনা যায় বটে।
    নির্দিষ্ট না হয় শব্দ কোথা হতে উঠে।।
    চৈতন্য পাইয়া কেহ করিতেছে জ্ঞান।
    পাগলের ধ্বনি কেহ করে অনুমান।
    বাহির বাটীতে ছিল চাঁদোয়া টানান।
    অধিকারী কহে চাঁদা শীঘ্র খুলে আন।।
    ছিঁড়ে যাবে ভিজিবে থাকিলে ঐ খানে।
    পাগল করেন মানা বিনয় বচনে।।
    পাগল কহিছে যদি চাঁদোয়া খসাবে।
    আপনার এত ভক্ত কোথায় বসিবে।।
    শুনে মানা করে অধিকারী মহাশয়।
    পাগল সকল লোকে কহিয়া বসায়।।
    চাঁদোয়ার নীচে থাক কেহ না উঠিও।
    বৃষ্টি অন্তে সব লোক উঠিয়া যাইও।।
    সব লোক বসাইয়া বৃষ্টির সময়।
    বারবাটী অন্তঃপুরে পাগল ভ্রময়।।
    কিছু পরে ঝড় ক্ষান্ত বায়ু বন্ধ পিছে।
    জলবিন্দু নাহি পড়ে চাঁদোয়ার নীচে।।
    বৃষ্টি অন্তে আকাশে প্রকাশে সব তারা।
    পাগল বলিল এবে উঠহে তোমরা।।
    মহানন্দ মহানন্দ বলি ডাক দিল।
    মহানন্দ ডাক শুনি নিকটে আসিল।।
    মহানন্দ মাধবেরে কহিল পাগল।
    তোমরা উভয়ে গিয়া দেখহে সকল।।
    রসই করিবে যারা সবে দিল ডাক।
    চুলা জ্বালাইয়া বলে শীঘ্র কর পাক।।
    সবে দেখে পাগলের শুকনা বসন।
    চাঁদোয়া অনাদ্র পূর্বে যেমন তেমন।।
    খাল ঘাট, বাটী আর পুকুরের পথ।
    রথখোলা শুকনা আছয় পূর্ববৎ।।
    মধ্যবাড়ী অন্তঃপুর সকল শুকনা।
    জলা কাঁদা কিছু নাই দেখে সর্বজনা।।
    দেখিয়া সকল লোকে মানিল বিস্ময়।
    হরি হরি বলে সবে কার্যান্তরে যায়।।
    পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের দক্ষিণেতে।
    বিঘত প্রমাণ জল ঘোর ঝটিকাতে।।
    পাগল জিজ্ঞাসা করে মহানন্দ ঠাই।
    কেমনে ছিলিরে বাপ! বল শুনি তাই।।
    মহানন্দ বলে তা কি বলিতে হইবে।
    যে ভাবে রাখিলে মোরা ছিলাম সেভাবে।।
    সেই ভাঙ্গা চাঁচখানি দিয়া আচ্ছাদন।
    সেখানে ছিলাম লোক দশ বারো জন।।
    আমরা শুকনা আছি থেকে সেই স্থান।
    তাহার নীচেতে জল বিঘত প্রমাণ।।
    সেখানে অধিক বৃষ্টি ভাবে বোঝা যায়।
    জলময় হইয়াছে শুকনা ডাঙ্গায়।।
    দেখে শুনে সকলের লাগে চমৎকার।
    কহিছে তারকচন্দ্র রচিয়া পয়ার।।
    গুরুপাটে এইখেলা পাগল খেলিল।
    হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।

    পাগলের গঙ্গাচর্ণা যাত্রা ও লীলাখেলা
    পয়ার
    গঙ্গাচর্ণা যাব বলি পাগল ছুটিল।
    পথমাঝে পাগলামী করিতে লাগিল।।
    কভু হাটে কভু দৌড়ে কভু দেয় বোল।
    জয় হরি বল মন গৌর হরি বোল।।
    সঙ্গেতে ছিলেন ভক্ত মতুয়ারগণ।
    পাটগাতী খেয়া পার হয়েন যখন।।
    কার্ত্তিক বাটীতে থেকে জানিবারে পায়।
    হাটে যায় বলিয়া কার্ত্তিক দ্রুত যায়।।
    গঙ্গাচর্ণা নিবাসী কার্ত্তিকচন্দ্র নাম।
    মধ্যম গণেশচন্দ্র কনিষ্ঠ ছিদাম।।
    রামচন্দ্র বৈরাগীর পুত্র তিন জন।
    তিন সহোদর সবে হরি পরায়ণ।।
    পাগলের প্রিয় ভক্ত প্রধান কার্ত্তিক।
    ঠিক যেন হনুমান নামেতে নৈষ্ঠিক।।
    গৃহকার্য সমাপন যখনেতে হয়।
    নির্জনে বসিয়া হরিচাঁদ রূপ ধ্যায়।।
    ওঢ়াকাঁদি মন দিয়া পাগল ভাবিয়া।
    হৃদাসনে রাখে রূপ যগল করিয়া।
    পাগল যখন যাহা করেন যেখানে।
    কার্ত্তিক অনেক কার্য অন্তরেতে জানে।।
    আসিতেছে পাগল জানিয়া তাহা মনে।
    হাটে যাব বলি সাধু চলিল তখনে।।
    পাগলেরে আনিবারে চলিলেন একা।
    পথিমধ্যে পাগলের সঙ্গে হৈল দেখা।।
    পাগল ধরিল কার্তিকেরে জড়াইয়ে।
    কার্ত্তিক পড়িল পদে দণ্ডবৎ হয়ে।।
    পাগল আনন্দ চিত ধরিল কার্তিকে
    পুলকে পূর্ণিত হয়ে চুম্ব দিল মুখে।।
    চুম্ব দিয়ে বলে হাটে করিয়াছ মেলা।
    আমার জন্যেতে এন একটি কমলা।।
    হাট কর গিয়া বাছা এস ত্বরা করে।
    আমাকে পাইবা রাইচরণের ঘরে।।
    ভক্তগণ সঙ্গে লয়ে চলিল পাগল।
    রাইচরণের বাড়ী উঠিল সকল।।
    চাঁদ মণ্ডলের পুত্র নামেতে বদন।
    তাহার ছেলের নাম শ্রীরাইচরণ।।
    বড়ই নির্মল চিত সাধু সুচরিত।
    হরিচাঁদ ভক্ত হরিনামে পুলকিত।।
    গোলোক তাহার ঘরে লয়ে ভক্তগণ।
    রাত্রি ভরি করিলেন নাম সংকীর্তন।।
    নামে মত্ত নিশি গত তাহা নাহি জানে।
    শেষ যামে ভোজনে বসিল সর্বজনে।।
    ভোজনের শেষে ক্ষণে বিশ্রাম করিল।
    সবে যাও নিজালয় পাগল বলিল।।
    সকল বিদায় হল বলে হরিবোল।
    কার্তিকের গৃহে এসে বসিল পাগল।।
    দিনভরি ফিরি ঘুরি কত বাড়ী গেল।
    সন্ধ্যাকালে কার্তিকের গৃহেতে আসিল।।
    কার্তিকের রমণীকে করি সম্বোধন।
    বলে মাগো অদ্য শীঘ্র করহ রন্ধন।।
    আমার বিশেষ কার্য আছে তোমা লয়ে।
    মাতা পুত্রে হরি কথা কহিব বসিয়ে।।
    শুনিয়া অম্বিকা দেবী রন্ধন করিল।
    ক্ষণমধ্যে পাক অন্তে ভোজ সমাপিল।।
    পাগল কার্তিকে কহে এ কার্য করহ।
    পাকঘরে আমার বিছানা করি দেহ।।
    আজ্ঞামাত্র কার্ত্তিক করিল তখনেতে।
    সেই ঘরে তিনটি বসিল গোপনেতে।।
    পাগল কার্ত্তিক আর কার্তিকের নারী
    হরিকথা আলাপনে বঞ্চিল শর্বরী।।
    হাসে কাঁদে গলা ধরি বাহু ধরাধরি।
    প্রেমে বাহ্য জ্ঞান হারা বলে হরি হরি।।
    যামিনী এমনভাবে পোহাইয়া গেল।
    ঝড় বৃষ্টি রাত্রি যোগে কিছু না জানিল।।
    প্রভাতে বাহির হয়ে দেখিবারে পায়।
    অন্যান্য বাড়ী ঘর ছিন্ন ভিন্ন প্রায়।।
    হরিনামে কি মাহাত্ম্য বাহ্যজ্ঞান নাই।
    রচিল তারকচন্দ্র হরি বল ভাই।।
    পাগল সুযাত্রা করি যান ওঢ়াকাঁদি।
    অপার সমুদ্র লীলা নাহিক অবধি।।
    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত সুধাধিক সুধা।
    পদ্ম মকরন্দ পানে খণ্ডে ভবক্ষুধা।।


    No comments:

    Post a Comment

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.