শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.
(সংলাপ), জিজ্ঞাসা-৫ - মতুয়ার বার্তা

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.

  • Breaking News

    হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা

    ➤ ১. সদা সত্য কথা বলবে। ➤ ২. পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে।➤ ৩. নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ➤ ৪. জগতকে ভালোবাসবে।➤ ৫. সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ➤ ৬. জাতিভেদ করবে না। ➤ ৭. হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ➤ ৮. প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ➤ ৯. ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ➤ ১০. বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ➤ ১১. ষড়রিপু বশে রাখবে। ➤ ১২. হাতে কাম ও মুখে নাম করবে।

    (সংলাপ), জিজ্ঞাসা-৫

    ১~ ছবিতে উপস্থাপিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে সনাতন ধর্মের সকল সম্প্রদায়ের কাছে একটি প্রশ্ন করতে চাই। বুদ্ধ দেব বা গৌতম বুদ্ধ সনাতন ধর্মের দশ অবতারের অন্যতম একজন, তবুও তার মতাদর্শ আলাদা ধর্ম কিভাবে হল?

    ২~ ১ নং এ বর্ণিত বিষয়ে আমার একটি চিন্তাভাবনা আছে। বিষয়টি হল, গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা কখনো আলাদা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেনি, তথাকথিত ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ তাদেরকে পৃথক করে দিয়ে নতুন ধর্ম গঠন করতে বাধ্য করেছে। 


    একই ঘটনা হরিচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তিত মতুয়া দর্শনের ক্ষেত্রে ঘটা শুরু হয়েছে। কোন এক সময় মতুয়া দর্শন পৃথক মতুয়া ধর্ম গঠিত হতেই পারে। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী থাকবে আজকের সনাতনী সমাজ, মতুয়ারা নয়।

    ৩~ এবার সবাইকে একটু পিছনের দিকে নিয়ে যাব। সনাতনী সমাজ যখন জাত পাত ছুৎ অচ্ছ্যুত মার্গে বহু জাতিতে বিভক্ত। কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় না। বিশেষত চিন্তা করুন, সমাজের বিচারে (ধর্মীয় শাস্ত্র বিচারে নয়) নীচ জাতির অবস্থার কথা। ধর্মীয় অধিকারের কথা বাদই দিলাম, এদের ছিল নিজেকে মানুষ বলার অধিকার। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হলে গলায় ঠিলে বেঁধে চলছে। কোন উচ্চবর্ণের লোকেরা যদি ভুল করেও নীচ বর্ণের মানুষের ছায়া মাড়িয়ে ফেলে তবে প্রায়শ্চিত্ত এই নীচু বর্ণের লোককেই করতে হয়েছে। দেবদেবীর পূজা ত দুরে থাক, মন্দির দর্শন করার অধিকার ছিল না। শিক্ষা কর্ম সবজায়গাতেই ছিল এই চরম বৈষম্য। ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা খুব দুরের বিষয়। কেউ যদি শুনত, তার কানে গরম শিষা ঢেলে দেওয়ার বিধান ছিল; কেউ যদি বেদ দেখত তবে চোখ উপড়ে ফেলার বিধান, কেউ যদি পড়ত তবে জিহ্বা কেটে নেওয়ার বিধান বলবৎ ছিল। সবাই সমাজের এই অবস্থার কথা একবার চিন্তা করে দেখুন।

    ৪~ এবার আসি যখন সনাতন ধর্ম দর্শন থেকে যখন মতুয়া দর্শন পৃথকভাবে নতুন সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হল, তখনকার কথায়। যখন হরিচাঁদ ঠাকুর এই অবহেলিত মানুষকে নতুন দর্শন দিলেন, নামকে সহজরূপে দিলেন, তথাকথিত বৈদিকতার (শাস্ত্রীয় নয়, ব্রাহ্মণ্যবাদ কর্তৃক সৃষ্ট বৈদিকতা- ব্রাহ্মণের মুখের কথাই বেদবাক্য) বিরুদ্ধে সহজ সরল অকামনা প্রেম দান করলেন, তখন তৎকালীন তথাকথিত বৈদিক সমাজের মানুষ এদের মোটেও ভালভাবে গ্রহণ করে নাই। পদে পদে বিরোধিতা করেছে। এমনকি কোন অনুষ্ঠানে মতুয়ারা একপাশে অন্যান্যেরা অন্য পাশে বসতে হত, একসাথে বসতেও পারতেন না। এরকমই কোন এক অনুষ্ঠানের মধ্যে তর্কবিতর্কের পরে তথাকথিত বৈদিকতায় নিমজ্জিত সমাজ বিচার করে সিদ্ধান্ত দেন যে, মতুয়াদের সাথে আর চলবে না, আজ থেকেই গ্রাম ভাগ হলো। লক্ষ্য করুন, মতুয়ারা ভাগ হয়নি, তাদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যখন মতুয়াদের ভাগ করে দেওয়া হল, তখন হরিচাঁদ ঠাকুর তার অনুসারীদের ডাক দিয়ে বললেন, 
    তাহা শুনি ডেকে বলে প্রভু হরিচান।
    ভিন্ন সম্প্রদায় মোরা মতুয়া আখ্যান।।
    --- --- --- --- শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত।

    এভাবেই মতুয়াদের আলাদা সম্প্রদায় করে দিয়েছে সনাতন সমাজ।

    ৫~ যখন থেকেই মতুয়া দর্শন প্রচার শুরু হয়েছে তখন থেকেই অন্যান্য সনাতনী সমাজ মতুয়াদের মোটের ভালো চোখে দেখে নাই, এখনো দেখে না। বহুপ্রকার যুক্তি ও কারণ থাকলেও, অন্যান্য অবতার চরিত্র হতে হরিচাঁদ ঠাকুরের চরিত্র বিশ্লেষণ অধিকতর পবিত্র হলেও অন্য কোন সনাতনী সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত হরিচাঁদ ঠাকুরকে অবতার স্বীকার করে নাই, এমনকি তার প্রচারিত মত বা দর্শন মূল সনাতন অনুসারে হলেও ব্রাহ্মণ্যবাদে অন্ধ সমাজ তাকে স্বীকার পর্যন্ত করে না, বরঞ্চ সর্বদা যুদ্ধং দেহী অবস্থায় থাকে। মতুয়া দর্শনের সৃষ্টি হতে খুব বেশিদিন হয়নি, তবুও এর যে প্রচার ও প্রভাব সমাজে পড়েছে, তা দেখেও তথাকথিত বৈদিক ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের হুঁশ হল না। এখনো চরম বিরোধিতা করে চলেছে।

    ৬~ ৫ নং বর্ণনার প্রেক্ষিতে এখন মতুয়াদের কোন কোন নেতা নিজেদের পৃথক ও স্বতন্ত্র ধর্ম ঘোষণার দাবী করে আসছেন এবং সরকারী স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। যদি সনাতনী অন্যান্য সম্প্রদায় বা সমাজ মতুয়াদের প্রকৃত মূল্যায়ন না করে, তবে আজ হোক কাল হোক, তারা পৃথক হয়ে যাবে। এবং এর জন্য দায়ী মতুয়ারা হবেন না, 90% দায়ী থাকবে সনাতনী অন্যান্য মতাবলম্বী সম্প্রদায় বা সমাজ।

    ৭~ মতুয়ারা যদি পৃথক হয়ে নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে তবে সবচেয়ে ক্ষতি হবে সনাতন ধর্মের, মতুয়াদের নয়। যেমন, বৌদ্ধ ধর্ম পৃথক হয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিটা কিন্তু সনাতন ধর্মেরই হয়েছে। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, এটা সত্য। 

    মতুয়া আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেলে মতুয়া দর্শনের প্রচার ও প্রসার এত বেশী হবে যে, খুব অল্প দিনেই সনাতন সমাজকে পিছনে ফেলে দিবে।

    ৮~ আমি চাই না মতুয়া পৃথক ধর্ম হোক, কিন্তু যদি সনাতনী সমাজ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করে তবে যেমন মতুয়া সম্প্রদায় পৃথক হতে বাধ্য হয়েছিল, মতুয়া নতুন ধর্ম হতেও একসময় বাধ্য হবে। আমি চাইনা, মতুয়ারা সনাতন ধর্ম দেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যাক, আমরা চাই সনাতন সমাজ মতুয়া দর্শনের যোগ্য সম্মান দিক, যাতে ঐ পৃথক ভবিতব্যের দিকে না যেতে হয়। এখনই যদি সনাতনী অন্যান্য সমাজ যদি তাদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আনে তবে সময়ই বলে দিবে পরিণতি কি???

    সকল সনাতনী সম্প্রদায়কে একটি প্রশ্ন করে লেখাটি শেষ করব, 
    আপনি যদি আমার মতকে গুরুত্ব না দেন, আমার দর্শনকে অস্বীকার করেন, আমার ভগবানকে অস্বীকার করেন, তবে কিভাবে আশা করেন যে, আমি আপনার সমস্ত দর্শন বা মত মেনে নিয়ে আপনার সঙ্গে থাকব???

    শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত

    শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা

    শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত গান

    শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুুরে আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন.