আদিগীতিঃ
২য় অংশ
শ্রী শ্রী হরিচাঁদের জন্ম
এবে শুন ঠাকুরের জন্ম বিবরণ।
যেভাবেতে হরিচাঁদ অবতীর্ণ হ’ন।।
হরিলীলামৃত গ্রন্থ করেছে বর্ণন।
সংক্ষেপে করিব কিছু শুন সর্বজন।।
বারশ আঠার সালে শ্রীমহাবারুণী।
মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি যে ফাল্গুনী।।
বুধবার দিনে হয় হরি অবতার।
পূর্ববঙ্গে হ’ল হরিচাঁদের বাজার।।
নমঃশূদ্র কূলে হরিচাঁদের উদয়।
সফলা নগরী ধন্য হ’ল দীপ্তিময়।।
যখনেতে হরিচাঁদ ভুমিস্ট হইল।
সুতিকা ঘরেতে এক জ্যোতিঃ প্রবেশিল।।
সেই জ্যোতিঃ শ্রীহরির অঙ্গেতে মিলন।
ক্ষীরোদের শক্তি ইহা কহে সর্বজন।।
তাহে অত্যাশ্চর্য বাক্য কহে সে কুমার।
আমি হরি আমি হরি বলে তিনবার।।
ধাত্রী এই মহাবাক্য করিল শ্রবণ।
আনন্দে পুর্ণিত হ’ল সমগ্র ভুবন।।
চারিদিকে দেখে কত সৌন্দর্যের রাশি।
উদিত হইল যেন অকলঙ্ক শশী।।
বিকশিত কৃষ্ণ কলি মনোহর বেশ।
ধরেছে মধুর বেশ পূর্ববঙ্গ দেশ।।
সৌদামিনী ভাসে যথা জলদের কোলে।
অপরূপ শোভা যেন অন্নপূর্ণা কোলে।।
আজানুলম্বিত ভুজ অতি মনোহর।
তাহে কত চিহ্ন শোভে অতি দীর্ঘতর।।
দুগ্ধ হিঙ্গুল বর্ণ করিয়ে মিশ্রণ।
বিঁধি বুঝি দিল রূপ রেশন বরণ।।
মদন মোহন রূপ অক্রোধিত বপু।
দরশনে সবার হরে কাম রিপু।।
শোভিত বিংশতি মুদ্রা বিংশতি অঙ্গুলে।
রক্তপদ্ম শোভে যেন হরি পদ মূলে।।
নাভি সুগভীর যেন বক্ষ চান্দ্রভাতি।
অধর প্রবল তাহে সুগঠন
অতি।।
বাঁধুলি বরণ তাহে শোভে ওষ্ঠদ্বয়।
খগচঞ্চু জিনি নাশা কিবা শোভা হয়।।
চৌরাশ কপাল তাহে রয়েছে খচিত।
কজ্জ্বল মিশ্রিত ভুরু গুরু বিরাজিত।।
আকর্ণ নয়নদ্বয় কিবা মনোহর।
নোহারিয়া সেই রূপ হারে শশধর।।
নখচন্দ্রে শোভে কোটি চন্দ্রসমুজ্জ্বল।
অঙ্গে ঝলসিছে যেন অমল কমল।।
অষ্টবিংশ মন্বন্তর পুষ্পবন্ত যুগে।
সুদিন উদয় হ’ল কলিজীব ভাগ্যে।।
অবতীর্ণ হরিচাঁদ সফলা নগরী।
হুলুধ্বনি করে যত প্রতিবেশী নারী।।
সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি যে কত গেল।
স্বয়ং এর অবতার কভু না হইল।।
অষ্টবিংশ মন্বন্তরে কলি যুগ ধন্য।
হেন যুগে ক্ষীরোদের হরি অবতীর্ণ।।
ধন্য পিতা যশোমন্ত ধন্য অন্নপূর্ণা।
সফলা নগরী ধন্য ধাত্রীদেবী ধন্যা।।
ধন্য সফলা নগরবাসীগণ ধন্য।
ধন্য ধন্য এইভাবে হরিবংশ ধন্য।।
ঊর্ধ্ববাহু করি বন্দি শ্রীহরি চরণ।
শ্রীহরিচাঁদের প্রীতে হরি বল মন।।
ঠাকুরের গোষ্ঠলীলা ও তিন ভ্রাতার জন্ম
এই রূপে হরিশ্চন্দ্র হইলেন অবতীর্ণ
কলিজীব করিতে উদ্ধার।
যশোমন্ত সুতরূপে ঐশভাব অনুরূপে
উদিলেন সফলা নগর।।
জন্ম মাত্র বাক্য স্ফুরি বলিলেন
আমি হরি
আমি হরি বলে তিন বার।
মৃদু ভূমিকম্প
বাজে ঝাঁজ জগঝম্প
শ্রীমতী বারুণী অভিসার।।
শৈশবেতে বাল্য খেলা কৈশরেতে
গোষ্ঠলীলা
করে খেলা রাখালের সনে।
পাঁচানী হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন
বাঁকা হ’য়ে
যথা কৃষ্ণ খেলে বৃন্দাবনে।।
চৌদিকে রাখালগণ মধ্যে শোভে হরিধন
অপরূপ হ’ত দরশন।
পদ পরে পদ দিয়ে ত্রিভঙ্গ বঙ্কিম হ’য়ে
কৃষ্ণরূপ করিত ধারণ।।
সেরূপ নেহারি সবে প্রেমানন্দে উৎসবে
বলে তুই শোনরে কানাই।
কররে মুরলী ধ্বনি
কোথা রাই বিনোদিনী
কোথা তব সে দাদা বলাই।।
কোথা সেই বৃন্দাবন কোথা গিরি গোবর্ধন
কোথা সেই রাখাল সবাই।
কোথা সেই সখীগণ কোথা বা নিকুঞ্জবন
ধবলী শ্যামলী আদি গাই।।
প্রভু বলে সব আছে সবাই আমার কাছে
কার কাছে কিছু দূরে ঘর।
ক্রমে তারা এসে সবে
আমার পাশে মিলিবে
হবে দেখা কিছুক্ষণ পর।।
গোপী কোপী আছে যত সবে হবে একত্রিত
আর যত নদীয়ার লোক।
মম পাশে এক হয়ে এক মতে মত দিয়ে
সবে হবে প্রেমেতে পুলক।।
আছে যত ব্রজ সখা এখনি পাইবে দেখা
কিছুকাল করহ বিশ্রাম।
শ্রীদামাদি সখা যত সব হয়ে একত্রিত
আর মোর দাদা বলরাম।।
হরির বচনে সবে
মাতিলেন উৎসবে
ব্রজভাব পড়ি গেল মনে।
গোপালের প্রেমকুল আনিয়ে কস্তূরী ফুল
হরিচাঁদে সাজায় যতনে।।
প্রেমানন্দে ফুলে এনে দান করে
শ্রীচরণে
কেহ দেয় মস্তক উপর।
কেহ দিল কর্ণ পরে কেহ দেয় বক্ষপরে
কেহ দেয় কটিদেশ পর।।
সকল রাখাল মিলি করে দিয়ে করতালি
ঘুরে ফিরে করেছে কীর্তন।
হরি বলি ভুমে পড়ি কেহ দেয় গড়াগড়ি
প্রেমবারি হ’তেছে পতন।।
আপনি হরিষ হ’য়ে
রাখালেরে ধরা দিয়ে
করে হরি প্রেম আলিঙ্গন।
একেলা যবে খেলিত আকাশ
পানে চাহিত
মেঘমালা হইত দর্শন।।
হেনভাবে গোষ্ঠলীলা খেলিত মধুর খেলা
হরি মোর রাখাল রাজন।
গোময়ের খণ্ড ধরি রাখিত মস্তক পরি
বলে আমি ধরি গোবর্ধন।।
আকাশের মেঘ চিহ্ন হ’য়ে যেত ছিন্ন ভিন্ন
পুনঃ আর না হ’ত দর্শন।।
নেহারিয়ে দু’নয়নে
যতেক রাখাল গণে
পদতলে হইত পতন।।
খেলিত মধুর খেলা যেন বৃন্দাবন লীলা
আহা মরি কত যে সুন্দর।
ব্রজ নাটু বিশ্বনাথে খেলিত আনন্দ চিতে
ব্রজভাবে মত্ত কলেবর।।
নিরখিলে কাল সর্প করিয়ে ভীষণ দর্প
খেলিতেন লাঙ্গুল ধরিয়া।
ধরিয়া মধুর তান
শ্রীহরি গাহিত গান
মনসার পাঁচালী বসিয়া।।
সে গান শুনে সবে প্রেমানন্দে উৎসবে
বলে ভাই ইহা কোথা পেলি।
নেহারিয়ে তব ধারা আশ্চর্য হইনু মোরা
এযে শুনি মনসা পাঁচালী।।
প্রভু বলে শেখা আছে সাপুড়ে গণের কাছে
প্রভু বলে শেখা আছে সাপুড়ে গণের কাছে
সর্প হেরে মনে পড়ে তাই।
সর্পের লাঙ্গুল ধরি তাই হেন দর্প করি
মনসার এ পাঁচালী গাই।।
রাখালিয়া ভাব যত তাহা বা বর্ণিব কত
খেলে যাহা গোষ্ঠলীলা মাঝ।
মধুর মধুর সাজে
লীলামৃত গ্রন্থ মাঝে
লিখিলেন কবি রসরাজ।।
গোষ্ঠলীলা করি সায়
হরিচাঁদ দয়াময়
ভক্তসনে করেন বিহার।
সে বড় মধুর লীলা খেলিয়ে আশ্চর্য খেলা
নিজ লীলা করেন প্রচার।।
অতপর শুন ভাষ
জন্মিল বৈষ্ণব দাস
সুমধুর চরিত্র যাহার।
শৈশব হইতে তিনি বৈষ্ণবের শিরোমণি
নাম ব্রহ্ম করে মাত্র সার।।
পবিত্র মৃত্তিকাগুলি মনে হ’য়ে কুতূহলী
প্রতি অঙ্গে পরিত তিলক।
ডাকি যত শিশুগণে বলিতেন সুবচনে
অন্তরেতে হইয়া পুলক।।
বলে ভাই শুন সব আমরা হ’ব বৈষ্ণব
তিলকাদি করেছ ধারণ।
এত বলি নিজ হাত সঙ্গীগণে পরাইত
বলে তোরা বৈষ্ণব এখন।।
আমাদের গৃহে যত আসিবে বৈষ্ণব সৎ
অদ্য কিংবা আসিবেক কালি।
বৈষ্ণবের সাথে মিলি মনে
হ’য়ে কুতূহলী
মেতে যাব হরি হরি বলি।।
এরূপ বিশুদ্ধ মতি
বৈষ্ণবের পদে আর্তি
শুন এক অপূর্ব ঘটন।
একদা শ্রীযশোমন্ত হ’য়ে অতি শুদ্ধশান্ত
করাইল বৈষ্ণব ভোজন।।
হরি সংকীর্তন কালে মরিল
পড়িয়া জলে
শ্রীবৈষ্ণব দাস যেই জন।
কেহ নহে জানে তাই কীর্তনে
মত্ত সবাই
রহিয়াছে বৈষ্ণবের গণ।।
ঠাকুরাণী ঘাটে গিয়ে মৃতপুত্র
নেহারিয়ে
উচ্চৈঃস্বরে করেছে রোদন।
বলেরে দারুণ বিঁধি কেড়ে নিলি দিয়ে নিধি
এবা তোর বিধান কেমন।।
যশোমন্ত করে মানা এবে প্রিয়ে কাঁদিও না
কাঁদিবার পাইবা সময়।
শুনিলে বৈষ্ণব সবে মহোৎসব ভঙ্গ হবে
বল দেখি কি হবে উপায়।।
সাধু সেবা হবে বাদ তাতে হবে পরমাদ
এবে তুমি কাঁদিও না আর।
বৈষ্ণব বিদায় কালে মৃত পুত্র করি কোলে
জানাইও দুঃখ আপনার।।
তাই শুনে পুত্র ধনে রাখিলেন সঙ্গোপনে
করে সাধু সেবা আয়োজন।
হইল বৈষ্ণব সেবা বাকী না রহিল কেবা
মহোৎসব হ’ল সমাপন।।
বৈষ্ণব সেবার অন্তে মৃত পুত্র নিয়ে মাথে
যশোমন্ত নাচিতে লাগিল।
সবে বলে একি হ’ল
বৈরাগীর পুত্র ম’ল
কখনেতে কিভাবে মরিল।।
এক সাধু হেনকালে বলেছে সবার স্থলে
কীর্তনের কালেতে মরিল।
(দুই লাইন জ্ঞাপ)
সাধু সেবা হবে বাদ প্রেমানন্দে উৎসব
পুনরায় আরম্ভে কীর্তন।
মৃত পুত্র নিয়ে মাথে যশোমন্ত কীর্তনেতে
হরি বলি করেন নর্তন।।
বালকের মুখ হ’তে
উদ্বমন অকস্মাতে
বহু জল বাহির হইল।
উদরেতে যত ছিল ক্রমে সব বাহিরিল
মৃত পুত্র জীবন পাইল।।
অন্নপূর্ণা মাতা আসি আনন্দ নীরেতে ভাসি
কোলে নিল আপন নন্দন।
বৈষ্ণবের গণ যত
সবে হ’য়ে হরষিত
হরিধ্বনি করে সর্বজন।।
বলেছে বৈষ্ণবগণ
এ পুত্রের পুনর্জীবন
বৈরাগীর সাধু সেবা গুণে।
বৈষ্ণব সেবার তরে কবে কার পুত্র মরে
কে শুনেছে বেদাদি পুরাণে।।
সকল বৈষ্ণব মিলি মনে হ’য়ে কুতূহলী
অন্তরেতে বাড়িল উল্লাস।
হরি হরি হরি বলে পুনশ্চ জীবন পেলে
নাম হ’ল শ্রীবৈষ্ণব দাস।।
পরে জন্মে গৌরিদাস আর
শ্রীস্বরূপদাস
দোঁহে হয় ভ্রাতৃ অনুগত।
ভ্রাতাগণ বলে যাহা সযতনে করে তাহা
সদা রয় প্রফুল্লিত চিত।।
পঞ্চ ভাই ভবে আসি বিলাইল
সুধারাশি
কলি জীবে করিতে চেতন।
ধন্য কলিযুগ ধন্য
আইলেন হরিশ্চন্দ্র
নাম ধর্ম করে বিতরণ।।
জীবগণে হেরে দৈন্য করিতে পুনঃ চৈতন্য
আইলেন প্রেম ধন নিয়ে।
অকামনা ভক্তি যাহা হরিচাঁদ
রূপে তাহা
জীব করে দিলেন বিলিয়ে।।
অষ্ট বিংশ মন্বন্তর
যে ধন গোলক পর
রেখেছিল যতন করিয়া।
গার্হস্থ্য প্রশস্ত ধর্ম
সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম
জীবগণে দিলেন ডাকিয়া।।
শ্রীগৌরাঙ্গ রূপে যবে অবতীর্ণ
হ’ন ভবে
নবরূপে নদীয়া ভুবনে।
নাম ধর্ম প্রচারিল
জীবগণে মাতাইল
তথাপি বাসনা রৈল মনে।।
আপনি হইয়া নম্র
জীবে শিক্ষা দিতে ধর্ম
শচী গর্ভে হইল উদয়।
গৃহ ধর্ম পরিহরি
হইলে কৌপীনধারী
স্বীয় ধর্ম বাকী পড়ে যায়।।
পরিলে যে বহির্বাস না পুরিল অভিলাষ
মন ভাব মনেতে হরিল।
অকামনা প্রেমভক্তি না পারিল বর্ত্তাইতি
এখানেই বাকী থেকে গেল।।
গৃহ ধর্ম না করিল
স্ত্রীঋণে আবদ্ধ রৈল
মাতৃসেবা বাকী রৈল আর।
শোধিতে মায়ের ঋণ পূর্ণ
নহে সেই দিন
জন্ম হয় আর দুইবার।।
পূর্বে বদ্ধ অঙ্গীকারে এল তাই শোধিবারে
হরিচাঁদ রূপে প্রকাশিল।
এবে করি সেই ধর্ম জানাইল সূক্ষ্ম মর্ম
ভক্ত পাশে তাই প্রচারিল।।
নামে রুচি জীবে দয়া মানুষেতে
নিষ্ঠা হৈয়া
ভজ সেই গুরুপদ তরী।
ইহা বিনে নাই কিছু বিফল হইবে পিছু
না পাইবে পারের কাণ্ডারি।।
যার হয় নামে রুচি কিবা হাঁড়ি কিবা মুচী
শূদ্র ডোম ব্রাহ্মণ চণ্ডাল।
যার হবে ভাবোদয় জাতি ভেদ নাহি রয়
শুদ্ধ প্রেম ভক্তি সুনির্মল।।
বিশুদ্ধ ভাবেতে ভক্তি শুদ্ধ
মানুষেতে আর্তি
হরি বলে ঝরে দুই আঁখি।
সদাই আনন্দ মনে মেতে হরি নাম গানে
হৃদে ধরে হরি প্রাণ পাখী।।
গৃহধর্ম রক্ষা করি
তীর্থযাত্রা পরিহরি
সদা কর সত্য আলাপন।
তীর্থযাত্রা বিনিময় তার দরশনে হয়
সত্যবাদী মানব যে জন।।
প্রচারিল সূক্ষ্ম ধর্ম
বিলাইল নাম ব্রহ্ম
কলিজীব নিস্তার কারণ।
হেন প্রভু হতে নাই দৃঢ় করে ভজ তাই
শ্রীহরির যুগল চরণ।।
নাহি কোন যাগযজ্ঞ বাহি বিজ্ঞ অনবিজ্ঞ
সবা ঠাই দিল প্রেমধন।
আপনি করিয়া কর্ম জীবে শিক্ষা দিলা ধর্ম
শুন তাঁর প্রমাণ বচন।।
প্রথমেতে গোচারণে বাণিজ্যে উপার্জ্জেধনে
কৃষিকর্ম পতিত আবাদ।
এল ক্ষীরোদের চাঁদ পুরাইতে ভক্তসাধ
অবতীর্ণ রূপে হরিচাঁদ।।
পঞ্চ ভাই এক প্রাণ নাহি দ্বিধা ভাব জ্ঞান
জ্যেষ্ঠ আজ্ঞা অনুবর্তী রয়।
জগতের শিক্ষা হেতু দেখাইল এই সেতু
মানবের কর্তব্য যা হয়।।
শুধুমাত্র জীব হিতে দেখাইল নানা মতে
কলিজীব উদ্ধার কারণ।
সবাকারে সম দয়া দিতে নিজ পদ ছায়া
হরিচাঁদ অধম তারণ।।
পুষ্পবন্ত কলি যুগে উদিল জীবের ভাগ্যে
ক্ষীরোদের চাঁদ হরিচাঁদ।
কবি কহে হরি বল ভব ভয় দূরে গেল
কেন মন ভাবরে বিষাদ।।
শান্তি মায়ের জন্ম বিবরণ
পঞ্চভাই আত্মা ভিন্ন পঞ্চ দেহ।
জ্যেষ্ঠ আজ্ঞাধীন রহে যেন আজ্ঞাবহ।।
এইভাবে করে বাস সফলা ডাঙ্গায়।
পরেতে বসতি করে ওঢ়াকাঁদি গায়।।
জমিদার অত্যাচার করেছিল তথা।
লীলামৃত গ্রন্থ মাঝে রহিয়াছে গাঁথা।।
লক্ষ্মীমাতা সনে হরিচাঁদের মিলন।
প্রাণেতে বাসনা এই করিব বর্ণন।।
ক্ষীরোদ বাসিনী দেবী জগত জননী।
এই অবতারে হ’ন লোচন নন্দিনী।।
জিকাবাড়ীগ্রাম বাসী শ্রীলোচন হয়।
কন্যারূপে প্রাপ্ত হ’ল শান্তিদেবী মায়।।
বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী যিনি সত্যে বেদবতী।
অম্বরীষ কন্যা যিনি দ্বাপরে শ্রীমতি।।
ত্রেতা যুগে সীতা সতী দ্বাপরে রুক্মিণী।
নদীয়ায় বিষ্ণুপ্রিয়া নিমাই ঘরণী।।
যখনে জন্মিল মাতা লোচনের ঘরে।
ভুমিস্ট হ’লেন যবে সূতিকা আগারে।।
শান্তিমাতা পদভাবি তারক রসনা।
লীলামৃত মাঝে তার ক’রেছে বর্ণনা।।
অন্তর হইতে এক নারী বাহিরিল।
সেই নারী শান্তি মা’র ধাত্রী যেন ছিল।।
রসনা দেখিল তাহা বিভীষিকা প্রায়।
ধ্যানে কি স্বপনে তাহা নাহি জানা যায়।।
হেরিলেন শান্তি মা’র শান্তিময় পদ।
রাঙ্গা পায় যেন ফুটিয়াছে কোকনদ।।
ধাত্রী দেখে কোকনদ উড়িয়া পড়িল।
শান্তি মা’র পাদপদ্মে যেন লুকাইল।।
প্রসবিনী ফুল নাড়ী যবে প্রসবিল।
তথা হতে এক ফুল পদে লোটাইল।।
ধাত্রী বলে প্রসুতিরে বলি মা তোমায়।
তোমার এ কন্যা মাগো সামান্যা তো নয়।।
হেন রূপে জনমিল জগত জননী।
অতি আনন্দিতা হৈল লোচন গৃহিণী।।
এবে শুন শৈশবেতে মায়ের চরিত্র।
শুনিলে দূরেতে যায় কলির কলুত্র।।
তুলসীর বেদী নিত্য করিত লেপন।
অন্তরেতে হরিপদ চিন্তে অনুক্ষণ।।
অন্য মেয়েদের প্রতি বলেন বচন।
আয় সবে করি কাত্যায়নীর ভজন।।
সতীর বেদনা জানে সেই মাতা সতী।
পঞ্চতপা হ’য়ে পায় পতি পশুপতি।।
বালিকা লইয়া মাতা খেলে পূজা পূজা।
মানসে গঠিয়ে মূর্তি দেবী দশভুজা।।
কাত্যায়নী ব্রত করি সে সাবিত্রী সতী।
বনমাঝে জীয়াইল নিজ মৃত পতি।।
এত বলি করে পূজা বালিকার সনে।
করে আত্ম সমর্পণ শ্রীহরি চরণে।।
বালিকা জীবন এইভাবে গত হ’ল।
যৌবনের পারম্ভ ক্রমে দেখা দিল।।
চাহিয়ে কন্যার পানে ভাবিত লোচন।
কা’র ঠাই এই কন্যা করিব অর্পণ।।
এদিকেতে প্রভুর লীলা প্রকাশ হইল।
শিশুকাল হ’তে তাহা সকলে দেখিল।।
ঐশভাব প্রকাশিল প্রভু হরিশ্চন্দ্র।
বিস্মিত হইত সবে বাড়িত আনন্দ।।
যাকে যাহা ব’লে দেন তাহাই হ’তেছে।
আশ্চর্য বহুত কর্ম অনেকে দেখেছে।।
বাঁচাইল বিশ্বনাথে আর মরা গরু।
সবে বলে এই হরি বাঞ্ছাকল্পতরু।।
এইরূপ যশঃখ্যাতি চৌদিকে প্রকাশ।
শুনে লোচনের প্রাণে বাড়িল উল্লাস।।
মনে ভাবে এই পাত্রে কন্যা সমর্পিব।
হেরিয়া যুগল রূপ আনন্দ পাইব।।
সামান্য নহেত যশোমন্তের নন্দন।
কন্যা যোগ্য বর এই বুঝিনু এখন।।
চারিদিকে ব্যক্ত হ’ল হরির চরিত্র।
হরি হ’তে হ’বে এবে জগত পবিত্র।।
অতএব যেতে হয় সফলা নগরে।
এতভাবি শ্রীলোচন চলিল সত্বরে।।
সফলা নগরে গিয়ে দিল দরশন।
যশোমন্ত প্রতি কহে মধুর বচন।।
শুনহে ঠাকুর তুমি মম নিবেদন।
আমার মনের কথা করিব জ্ঞাপন।।
তোমার মধ্যম পুত্র মোরে দাও ভাই।
কন্যা সমর্পিয়ে আমি করিব জামাই।।
এই মত হেসে হেসে কহে মিষ্ট ভাষ।
শুনে যশোমন্ত হয় প্রাণেতে উল্লাস।।
আনন্দে ব’লেছে ভাই ক্ষতি কিবা তাতে।
সমর্পণ কর কন্যা হরিদাস হাতে।।
প্রফুল্ল হইয়ে দোঁহে করে আলাপন।
সম্বন্ধ নির্ণয় করি চলিল লোচন।।
শুভলগ্নে শুভদিনে আর শুভক্ষণে।
মিলিতা হইল মাতা শ্রীহরির সনে।।
আনন্দে ভরিল সেই লোচনের পূরী।
চারিদিক হ’তে এল প্রতিবেশী নারী।।
রামাগণ বামাস্বরে করে জয় জয়।
রাম সীতা উচ্চরিয়ে মঙ্গল গাহয়।।
লোচনের পূরী যেন মিথিলা নগরী।
রামাগণে আনে বারি কক্ষেতে গাগরী।।
কুড়াদি হরিদ্রা করে অঙ্গেতে লেপন।
মুহুর্মুহু করিতেছে মঙ্গলচরণ।।
কেহ কেহ বলা বলি করে সেই ঠাই।
মনোহর রূপ হেন কভু দেখি নাই।।
মনোহর রূপ হেরে প্রতিবাসী নারী।
সকলে রাখিল নাম মনচোরা হরি।।
ভুবনমোহন রূপ কে বল গঠিল।
এরূপেতে মন প্রাণ সকল হরিল।।
হরিরূপে মন প্রাণ সব নিল হরি।
নিশ্চয় হইবে হরি মুকুন্দ মুরারি।।
কেমন মোহন রূপে শোভে এই বর।
কমনীয় মূর্তিখানি অতীব সুন্দর।।
হেন মতে বিমুগ্ধা হইল রামাগণ।
হরিকে জামাতা রূপে পাইল লোচন।।
শান্তি হরি এক সনে গৃহেতে আইল।
শান্তি হরি প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।
প্রভুদের ভাগ বণ্টন
ক্রমে ক্রমে পঞ্চভাই করে পরিণয়।
ওঢ়াকাঁদি করে বাস আনন্দ হৃদয়।।
একদা শ্রীকৃষ্ণদাস বলেছে সবাকে।
আমার বচন ভাই শুনহ প্রত্যেকে।।
পৃথকান্ন হইবার করিয়েছি মন।
কিবা মত তোমাদের বল তা এখন।।
বিস্তার করিয়া তাহা লেখে রসরাজ।
ব্যক্ত শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত গ্রন্থ মাঝ।।
সংক্ষেপেতে লিখিলাম সে ভাবের সূত্র।
লিপি বদ্ধ হ’ল এবে তা’র কিছু মাত্র।।
পৃথক হইল সবে নিজ মন সুখে।
সকলেই বলে ভাষা হাসিপূর্ণ মুখে।।
কৃষ্ণদাস ঠাই যাহা ছিল মূলধন।
সবার সাক্ষাতে তাহা আনিল তখন।।
দুই শত করি তাহা প্রত্যেকে লইল।
হেনকালে মহাপ্রভু সবাকে বলিল।।
আমার নিকটে ভাই পাঁচশত আছে।
তৈলের দোকানে তাহা সুলাভ হ’য়েছে।।
কেহ না জানিত ইহা ছিল গোপনেতে।
আনিয়ে দিলেন হরি সবার সাক্ষাতে।।
গৃহে বসি এই ধন করি উপার্জন।
তার একশত করি লহ পঞ্চজন।।
তিনশত করি পায় এক এক জনে।
লইল আপন অংশ আনন্দ মনে।।
নির্বিবাদে পঞ্চভাই পৃথক হইল।
কেহ ওঢ়াকাঁদি কেহ পদ্মবিলা গেল।।
হরিচাঁদ কৃষ্ণদাস আর গৌরিদাস।
তিন ভাই ওঢ়াকাঁদি সুখে করে বাস।।
শ্রীবৈষ্ণব দাস আর শ্রীস্বরূপ দাস।
দুই ভাই পদ্মবিলা করিল আবাস।।
এদিকে প্রভুর লীলা ক্রমে প্রকাশিল।
চারিদিকে ঠাকুরালী ছড়িয়ে পড়িল।।
ভক্তগন এসে কেহ প্রভুকে লইত।
অধিকক্ষণ ভক্তের গৃহেতে থাকিত।।
একদিন শুন এক আশ্চর্য কথন।
ভক্তাশ্রম হ’তে করে গৃহেতে গমন।।
পরদিন মহাপ্রভু লক্ষ্মীমাকে কয়।
কাজ কর্ম করিব না দেখি কিবা হয়।।
এত বলি চলি যায় রাউৎ খামার।
ভক্ত সনে লভে তথা আনন্দ অপার।।
সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে ভকত আশ্রমে।
অনুক্ষণ সবে থাকে মেতে হরিনামে।।
এইভাবে বহুদিন অতীত হইল।
ভক্ত সনে প্রেমানন্দে ভাসিতে লাগিল।।
একদিন শুন এক আশ্চর্য কথন।
ভক্তাশ্রম হ’তে করে গৃহেতে গমন।।
পরদিন মহাপ্রভু লক্ষ্মীমাকে কয়।
রন্ধন করহ হ’ল ক্ষুধার সময়।।
মাতা বলে প্রভু ঠাই বিনয় করিয়া।
রন্ধন করিব প্রভু বল কিবা দিয়া।।
গৃহেতে তণ্ডুল নাস্তি কি করি এখন।
প্রভু বলে কিছু নাই বল কি এমন।।
মাতা বলে আজ মাত্র একটি জীয়াল।
প্রভু বলে তবে আর কিসের জঞ্জাল।।
ওগো লক্ষ্মী সেই মৎস্য বানাও ত্বরিতে।
রন্ধন গৃহেতে যাও রন্ধন করিতে।।
এত শুনি লক্ষ্মীমাতা ভাবিতে ভাবিতে।
কাতর হৃদয়ে যান রন্ধন গৃহেতে।।
হাঁড়ির মধ্যেতে মাত্র চাপাইয়া জল।
তার মাঝে মৎস্য দিতে ঝরে আঁখিজল।।
আহারে অদৃষ্ট মম না পাই ভাবিয়া।
কতবার জন্মিলাম রমণী হইয়া।।
হেন দশা কভু নাহি হয়েছে আমার।
কোথা মাগো অন্নপূর্ণা এস একবার।।
দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ অদ্য তনয়ার।
নহে নাম হবে ‘কন্যা-ঘাতিনী তোমার।।
এই মত কাঁদে মাতা আকুল হৃদয়।
অন্নপূর্ণা কৃপা যোগে হাঁড়ি পূর্ণ হয়।।
তাতে হ’ল পরমান্ন অতি সুমধুর।
বিশ্বমাঝে কে বুঝিবে এ লীলা প্রভুর।।
কেঁদে গিয়ে লক্ষ্মী মাতা প্রভুকে বলেছে।
সেবিতে আসুন প্রভু রন্ধন হ’য়েছে।।
প্রভু বলে এক পাত্রে পারস করহ।
এক সঙ্গে ‘ওগো লক্ষ্মী তুমিও বৈসহ।।
পৃথক না রব আর হইব মিলন।
ভক্তগণে শান্তি হরি বলিবে বচন।।
একত্র পরম তত্ত্ব একত্র ভোজন।
শান্তি হরি প্রীতে হরি বল সর্বজন।।
মহাপ্রভুর দৈবলীলা প্রকাশ
অপূর্ব কথন
ওহে সাধুগণ
শ্রবণ করহ তাই।
এ লীলা প্রভুর
মধুর মধুর
এমত হবার নাই।।
শান্তি হরি দোঁহে
পরম উৎসবে
ভোজ সমাধিল যবে।
এ হেন সময়
ভক্ত চতুষ্টয়
এল প্রেম উৎসবে।।
তন্ডুলাদি করি
ডাল তরকারি
লবণ তৈলাদি হয়।
দ্রব্য নানা মত
নাম লব কত
নৌকায় পূর্ণিত রয়।।
গন্ধে হীরামন
আনন্দিত মন
রাউৎখামার বাসী।
করি যোড় পাণি
কহে ভক্তির্বাণী
প্রভুর পার্শ্বেতে বসি।।
প্রভুর আজ্ঞা পেয়ে সব দ্রব্য নিয়ে
অন্তপুর মাঝে যায়।
করিয়ে ভকতি
লক্ষ্মী মা’র প্রতি
বিনয় বচনে কয়।।
তব আজ্ঞা হ’লে
সব রাখি তুলে
কোথায় রাখিব বল।
করুণা করিয়া
দাও দেখাইয়া
রাখি দ্রব্যাদি সকল।।
সুমধুর ভাষে
লক্ষ্মীমা’র পাশে
বলেছেন দয়াময়।
আর কি অভাব
পেয়েছ তো সব
কার দ্রব্য কে যোগায়।।
আসে কোথা হ’তে
কে পারে বর্ণিতে
কে বুঝে তাহার তত্ত্ব।
অসার সংসারে
মত্ত সব নরে
নাহি বুঝে পরমার্থ।।
চিনে না তাহায়
কে এনে যোগায়
কাহার রচিত বিশ্ব।
কাহার কারণ
জীয়ে জীবগণ
এ ভবে কে উপাস্য।।
সংসার আহবে
আমিত্ব গৌরবে
ঐহিকেতে মুগ্ধ হ’য়ে।
মোহ মদিরায়
বিভোর মায়ায়
আত্ম তত্ত্ব পাশরিয়ে।।
শুনি লক্ষ্মীমাতা
হেট করি মাথা
ব’লেছেন সকাতরে।
সুখ নহে চাই
আপনাকে পাই
রাখিবেন তাই করে।।
চরণের দাসী
তাই অভিলাষী
নহে প্রভু অন্ন আশ।
শুন প্রাণেশ্বর
বাসনা আমার
থাকি যেন পদ পাশ।।
পূর্বে যা ভেবেছি
এবে বুঝিয়েছি
দেখালেন মোরে তাই।
আপনি যে সার
ব্রহ্ম সারাৎসার
আমার হৃদয় শায়ী।।
শান্তি হরি দোঁহে
মনের উৎসাহে
বলেছে এমত ভাষ।
শুনে সর্বজন
দ্রবীভূত মন
অন্তরেতে প্রেমোল্লাস।
সুমধুর উক্তি
করে বিশ্বপতি
শ্রবণে অমৃত ধারা।
আঁখি ছল ছল
চক্ষে বহে জল
সবে হ’ল মাতোয়ারা।।
আপন মাহাত্ম
নিজে করে ব্যক্ত
ভকতে জানায় তাই।
চিনে লও মোরে
বিশ্ব চরাচরে
আমি সে ক্ষীরোদশায়ী।।
আত্ম পরিচয়
দেন দয়াময়
আপন গৃহেতে বসি।
প্রভু হরিশ্চন্দ্র
দানে মকরন্দ
সুধা সম রাশি রাশি।।
হেন অবতার
হবে নাক আর
আপনি প্রকাশ হ’ল।
সব দ্রব্য রাখি
মনে হ’ল সুখি
হরি হরি হরি বল।।
অথ ছোটার মাহাত্ম্য
লীলামৃত গ্রন্থ মাঝে লিখে রসরাজ।
ব্যক্ত আছে বিশ্ব মাঝে ভকত সমাজ।।
নিত্যানন্দ ভগ্ন করে গোরার যে দণ্ড।
দণ্ড প্রতি বলে তুই বড়ই পাষণ্ড।।
সর্বস্ব ত্যজিয়া যেবা সন্ন্যাসী হইল।
সে কেন বহিবে তোরে তাই মোরে বল।।
এ ভাবে নিত্যানন্দ বলিয়ে বচন।
দণ্ড ভাঙ্গিবার তরে করিল মনন।।
গোরা প্রতি নিত্যানন্দ বলেছে তখন।
প্রমাণের কথা বলি করহ শ্রবণ।।
ঋণ শোধিবার বলে রাধা রসময়ী।
ন্যাসী হলি দণ্ড নিলি তা পারিলি কই।।
ব্রজ বিনে জানিবিনে রাধা রস বিনে।
তাহা না করিয়ে তুই দণ্ড নিলি কেনে।।
সর্বদা বেড়াস তুই রাই রসে ভেসে।
ঋণ শোধিবারে তোর দণ্ড লাগে কিসে।।
ইহার নিগুঢ় তত্ত্ব করহে শ্রবণ।
দণ্ড ভাঙ্গা ঘাট এক আছে নিরূপণ।।
ক্রোধ ভরে নিত্যানন্দ দণ্ড ভঙ্গ কৈল।
দুই খণ্ড হ’য়ে দণ্ড মৃত্তিকায় পৈল।।
মহাক্রোধে দণ্ড ভাঙ্গে দয়াল নিতাই।
দণ্ড পেল মহাশক্তি শুন সবে তাই।।
দণ্ড ভাঙ্গি নিত্যানন্দ করিল গমন।
সেই স্থানে শ্রীঅদ্বৈত দিল দরশন।।
ভগ্ন দণ্ড নেহারিয়ে দুঃখিত হইল।
হায় হায় করি নাড়া তুলিয়ে লইল।।
অন্তরেতে বড় দুঃখ হইল নাড়ার।
মহা অনুরাগ তাহে হইল সঞ্চার।।
যতন করিয়ে সেই দণ্ড রেখে দিল।
মনে মনে শ্রীঅদ্বৈত প্রতিজ্ঞা করিল।।
প্রভু যবে পুনরায় হন অবতার।
সেই কালে প্রকাশিব মাহাত্ম্য ইহার।।
ভক্ত করে এই দণ্ড অর্পণ করিব।
এক খণ্ড আপনার সকাশে রাখিব।।
সেই বাঞ্ছা পুরাইতে অদ্বৈত ঠাকুর।
এ যুগে করিল লীলা অতি সুমধুর।।
গুরুচাঁদ রূপে দণ্ড ভক্তে করে দান।
ভগ্ন দণ্ডে বাড়াইল প্রভুর সম্মান।।
পূর্ব অনুরাগ শক্তি দণ্ডেতে গচ্ছিত।
দণ্ড পরশনে হয় সে ভাব উথিত।।
হস্তেতে করিলে দণ্ড বাড়ায় শকতি।
ভক্তের সমাজে হ’ল ছোটা ব’লে খ্যাতি।।
মহতে মহৎ ভাব রাখে লুক্কায়িত।
প্রকাশ হইয়ে ক্রমে হয় পরিচিত।।
জহুরী মাণিক্য পেলে রাখে যত্ন করে।
ক্রমেই প্রকাশ হয় এ বিশ্ব মাঝারে।।
পূর্ব গুণে স্বীয় গুণ করিয়ে সঞ্চার।
তাহে অনুরাগ দণ্ড নাম হ’ল তার।।
ধরিলে হৃদয় মাঝে বাড়ে মহাশক্তি।
দণ্ডের কারণে দণ্ড প্রতি হয় ভক্তি।।
দণ্ডের উপরে দণ্ড করিতে না পারে।
অশেষ গুণেতে দণ্ড ছোটা নাম ধরে।।
এবে শুন এক কথা হইল শরণ (স্মরণ)।
ছিনু আমি সেইদিন প্রভুর সদন।।
প্রভু পাশে এল এক শুদ্রের নন্দন।
ভকতি করিয়ে বন্দে প্রভুর চরণ।।
বলে প্রভু কেন ইহা না বুঝি কারণ।
কেন করে মতুয়ারা এ দণ্ড ধারণ।।
সামান্য কাঠের দণ্ড কেন করে ভক্তি।
বল প্রভু এই দণ্ডে কিবা আছে শক্তি।।
কিবা গুণ রয় এই ছোটার ভিতরে।
কেন তারা এই ছোটা এত যত্ন করে।।
প্রভু বলে মহাশয় কর অবধান।
ছোটার মাহাত্ম্য কেবা করে সমাধান।।
অনুক্ষণ রহে মোর ভক্তের করেতে।
বহু শক্তি আছে এ ছোটার ভিতরেতে।।
কোন কোন ভকতের করেতে ধারণ।
হরি ব’লে নানা স্থান ভ্রমে কোন
জন।।
যদি কোন সাংঘাতিক রোগী পার্শ্বে যায়।
তৈল মাখি বুলাইবে সে রোগীর গায়।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বলিয়ে মুখেতে।
এই ছোটা বুলাইবে সভক্তি চিত্তেতে।।
তাহাতে রোগীর রোগ হইবে আরাম।
রোগীর নিকট বসি ল’বে হরিনাম।।
ভাগ্যবশে হবে মুক্ত ছোটার গুণেতে।
একারণ এ ছোটা মম ভক্ত হাতে।।
অনুরাগ দণ্ড নাম হয় এ ছোটার।
ধারণে হৃদয় অনুরাগের সঞ্চার।।
(এক লাইন জ্ঞাপ)
সকাতরে প্রভু পদে করে নিবেদন।।
কৃপা করি এই দণ্ড যদি দেন মোরে।
লইতে বাসনা প্রভু আমার অন্তরে।।
আর এক কথা প্রভু করি নিবেদন।
নারিকেলের মালার মালা কি কারণ।।
বহু মূল্য হার ত্যজি কেন ইহা লয়।
কৃপা করি বলিবেন ওহে দয়াময়।।
ছোটার মাহাত্ম্য কথা করি নিবেদন।
কণ্ঠহার তত্ত্ব কথা করে উত্থাপন।।
ভক্ত কণ্ঠহার বিবরণ
প্রভু বলে শুন তবে কারণ তাহার।
যে ভাবে হইল এই ভক্ত কণ্ঠহার।।
শ্রীগৌরাঙ্গ যখনেতে সন্ন্যাস করিল।
এ করোয়া শ্রীগৌরাঙ্গ করেতে ধরিল।।
গৃহত্যাগী হয় এই করোয়া লইয়া।
বিষ্ণুপ্রিয়া পানে আর না চান ফিরিয়া।।
লক্ষ্মীমাতা সে করোয়া এযুগে পাইয়া।
করোয়ার প্রতি মাতা বলেন রুষিয়া।।
গৌরাঙ্গ হইয়ে করে করঙ্গ ধারণ।
বিরহ অনলে দেহ দাহন কারণ।।
তোকে নিয়ে প্রভু মোর হইল সন্ন্যাসী।
না চাহিল মম পানে কাঁদি একা বসি।।
অহর্নিশি করে দগ্ধ জীবন আমার।
তোকে পেয়ে নাথ মোর না ফিরিল আর।।
এবে আর তোকে আমি কভু না ছাড়িব।
খণ্ড খণ্ড করি তোরে হার বানাইব।।
ভক্তগলে দোলাইব বাসনা আমার।
রাখিব যে তোর নাম ভক্ত কণ্ঠহার।।
এত বলি লক্ষ্মী মাতা করোয়া ভাঙ্গিল।
আনন্দিতা হয়ে মাতা এ বর দানিল।।
করুণা রূপিণী মাতা করুণা বিতারি।
ছিদ্র করি দিল তাই করুণাস্ত্র ধরি।।
প্রভুর হস্তের কড়া ভক্তের উপাস্য।
তাই মাতা দিল সবে শুন এ রহস্য।।
যশোমন্ত সূত কৃপা সূত্র দান কৈল।
সেই সূত্রে ভক্ত মাত্রে অধিকারী হৈল।।
জগত জননী মোর ভক্তের লাগিয়া।
এই হার সনে দেন করুণা মাখিয়া।।
এ হার ধারণে হয় ভক্তির উদয়।
তুলনা বিহীন হার শুন মহাশয়।।
যেবা পরে কিংবা তারে যে করে দর্শন।
ভক্তি চিত্তে সে জনেরা যে করে স্পর্শন।।
তার হয় তখনেতে ভাবের উদয়।
হেন ব্যক্তি (ভক্তি বা শক্তি) মাতা এই হারেতে অর্পয়।।
অপার গুণ সম্পন্ন এ হারের হয়।
হারের কারণে হয় ম’তো পরিচয়।।
মহা ব্যাধি দূরে যায় এ হারের গুণে।
ভব ব্যাধি ঘুচে যাবে ধরে জেনে শুনে।।
এই হার বক্ষঃস্থলে করিলে মর্দন।
দূরে যায় সে জনার মনের বেদন।।
অম্লশূল বক্ষঃজ্বালা আরাম হইবে।
অনুক্ষণ ভক্তিভাবে হরিনাম নিবে।।
স্নান করিবার পূর্বে তৈল মাখি তায়।
পরেতে যখন হার পরিবে গলায়।।
লীলামৃত গ্রন্থ মাঝে লিখে রসরাজ।
ব্যক্ত আছে সেই কথা ভকত সমাজ।।
এ কারণ মম ভক্তে ভক্তি যুক্ত হৃদে।
এ হার ধারণ করে পরম আহ্লাদে।।
বহু মূল্য হার তারা পরে না কখন।
অমূল্য এ হার সবে প’রেছে এখন।।
এত শুনি কেঁদে কহে শূদ্র মহাশয়।
আমাকে করুণ কৃপা ওহে দয়াময়।।
নিব আমি এই হার আর এই দণ্ড।
আপনার কৃপাতে এড়া’ব যম দণ্ড।।
বলিতে বলিতে হয় চরণে পতন।
গুরুচাঁদ মৃদু বাক্যে বলেন তখন।।
অভীষ্ট পূরণ হবে শুন বাছাধন।
ম’তোদের সঙ্গ নিলে পাবে প্রেমধন।।
কণ্ঠহার গুণ প্রভু আপনি বলিল।
হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।
জগন্নাথ দেহে গৌরাঙ্গের মিলন বা পুষ্পবন্ত যুগ কথন
প্রভুর চরিত্র সুধা প্রেমের ভাণ্ডার।
আদি অন্ত লীলা যার কলিতে প্রচার।।
বর্ণিতে না পারি কভু প্রভুর চরিত্র।
প্রভু আজ্ঞা মতে শুধু করিলাম সূত্র।।
সত্য ত্রেতা দ্বাপরেতে লীলা বার বার।
তাহে না হইল স্বয়ং এর অবতার।।
স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে।
আর আর অবতার তাতে এসে মিলে।।
অষ্টবিংশ মন্বন্তরে শেষ এই কলি।
ধন্য কলিকাল কহে বৈষ্ণব সকলি।।
এই কলি জীবগণে করিবারে ধন্য।
এ যুগেতে মহাপ্রভু হ’ন অবতীর্ণ।।
এই যুগ হয় নাকি সবার কনিষ্ঠ।
কনিষ্ঠ হইয়ে হল সর্ব যুগ শ্রেষ্ঠ।।
অষ্টবিংশ মন্বন্তর ধন্য এই কলি।
মধু পানে মত্ত হয় যত ভক্ত অলি।।
যখনেতে শ্রীগৌরাঙ্গ সন্ন্যাস করিল।
সেইকালে পুষ্পবন্ত যুগ না হইল।।
কল্পবৃক্ষে শুধুমাত্র কলি দেখা দিল।
পূর্ণাকারে প্রেমফুল নহে প্রস্ফুটিল।।
তাহে মাত্র হ’য়েছিল ফুলের অঙ্কুর।
বহুদিন পরে মিলে রামাই ঠাকুর।।
রামানন্দ নাম যার ভবানন্দ সুত।
যার বাক্যে শ্রীগৌরাঙ্গ হৈল মনঃপুত।।
রামানন্দ বিদ্যালয় করি অধ্যায়ন।
পদ শূন্য পদ শুনি হরিল চেতন।।
সে সব লিখিতে শক্তি নাহিক আমার।
বলিলেন সর্বসিদ্ধ কান্তাভাব সার।।
চৈতন্য চরিতামৃত প্রমাণ তাহার।
সাড়ে তিন পাপড়িতে ফুলের সঞ্চার।।
অতি অনভিজ্ঞ আমি বলিতে সে তত্ত্ব।
এবে শুন শ্রীগৌরাঙ্গ লীলার মাহাত্ম্য।।
রাধা ভাবে মাতোয়ারা শচীর নন্দন।
রাধা রাধা বলে সদা করিত ক্রন্দন।।
যে ঋণ শোধিতে গোরা হলের গৌরাঙ্গ।
হেমাঙ্গ মাঝেতে লুক্কাইল কাল ভৃঙ্গ।।
বদম্ব সঙ্গে পীতাংগ অঙ্গে অঙ্গ যোজনা। (বদম্ব?)
রাধা রসে মত্ত গোরা ধৈরয বোঝেনা।।
ক্ষণে কৃষ্ণ ভাবে মত্ত ক্ষণে রাধা ভাবে।
ক্ষণে ভাবে অহৈতুকী প্রেম কোথা পাবে।।
রামানন্দ রায় পাশে পশি গোরা রায়।
তার স্থানে সেই তত্ত্ব প্রশ্ন যে করয়।।
পদ শূন্য পদ গোরা শুনে তার ঠাই।
হা কিশোরী বলে গোরা ছাড়িলেন হাই।।
তথা হ’তে ধেয়ে গোরা পশিল উৎকলে।
পুরুষোত্তমেতে নিজ অঙ্গ লুকাইলে।।
প্রভুর মনের বাঞ্ছা অপূর্ণ রহিল।
অকামনা প্রেমভক্তি কভু না বর্ত্তিল।।
শ্রীগৌরাঙ্গ মিশে গেল জগন্নাথ দেহে।
শ্রীগৌরাঙ্গ অদর্শনে ভক্তপ্রাণ দহে।।
কবি রসরাজ তাই যতনে লিখেছে।
হরি লীলামৃত গ্রন্থে প্রমাণ র’য়েছে।।
বিপুল ভাবেতে খেদ করে ভক্তগণে।
জীবন রাখিতে নারি তোমার বিহনে।।
পাষাণে কুটিব মাথা অনলে পশিব।
গৌরাঙ্গ গুণের নিধি কোথারে পাইব।।
কোন ভক্ত কেঁদে যায় মন্দির মাঝারে।
আকুল হৃদয় হ’য়ে চৌদিকে নেহারে।।
গোরার গৈরিক বাস জগন্নাথ মুখে।
নেহারিয়ে সেই জন বলে মনোদুঃখে।।
হারে জগন্নাথ তুই দুর্বল রাক্ষস।
গৌরাঙ্গ খাইতে তোরে কে দিল সাহস।।
হারে জগন্নাথ তোর আর নাই রক্ষা।
খাইলি প্রভুকে মন্দিরেতে পেয়ে একা।।
পুনরায় জগন্নাথে ক্রোধ ভরে বলে।
মন্দির সহি তোরে ডুবাইব জলে।।
ক্রমে পশি মন্দিরেতে বহু ভক্তগণ।
জগন্নাথে বলে কত অশ্লীল বচন।।
গোরার বিরহে কেহ হারাইয়ে হুঁশ।
নির্ভয়েতে জগন্নাথে কেহ মারে ঢুষ।।
ব্যাকুল হইয়ে কেহ করে হাহাকার।
সবাকার দুনয়নে বহে শোক ধার।।
ভক্তগণ দুঃখ হেরি শ্রীগৌরাঙ্গ রায়।
দৈববাণী বলে গোরা ভক্তগণে কয়।।
শুন শুন ভক্তগণ আমার বচন।
শ্রীগৌরাঙ্গ লীলা মোর হ’ল সমাপন।।
জগন্নাথ প্রতি নাহি বৃথা কর রোষ।
জগন্নাথে দুঃখ দিলে আমি অসন্তোষ।।
রাক্ষস নহে তো এই জগন্নাথ রায়।
ইচ্ছা করি ওই দেহে ল’য়েছি আশ্রয়।।
তাঁকে যদি কষ্ট দাও আমি
দুঃখ পাই।
জগন্নাথে মম দেহে ভিন্ন ভেদ নাই।।
ঐশন্য কোণেতে আমি জনম লভিব।
বড়ই মধুর লীলা তথায় করিব।।
মানুষ হইয়া রব মানুষে মিশিয়া।
বিশুদ্ধ হইলে কেহ সে লবে চিনিয়া।।
ভক্তগণে প্রভু বাক্যে সান্তনা হইল।
এইভাবে শ্রীগৌরাঙ্গ লীলা সাঙ্গ কৈল।।
কিন্তু তাহে কি হইবে মূল না থাকিলে।
মূল যদি নাহি থাকে কি করিবে ডালে।।
দিন দিন বৃক্ষমূল হল শুষ্ক প্রায়।
পুনঃ অবতার তাহে প্রয়োজন হয়।।
শ্রীগৌরাঙ্গ শ্রীনিবাস রূপেতে প্রকাশ।
নিত্যানন্দ হইলেন নরোত্তম দাস।।
অদ্বৈত শ্রীরামচন্দ্র রূপেতে উদয়।
তিন প্রভু লীলা করে অতি মধুময়।।
পুনঃ প্রেম বৃক্ষমূলে রসের সিঞ্চন।
প্রেমকেলি সহ রাখে বৃক্ষের জীবন।।
পুনঃ হ’ল চারি শাখা মূল বীরভদ্র।
প্রশাখা হইল কত ব্রাহ্মণাদি শূদ্র।।
সেসব লিখিতে গেলে পুঁথি বেড়ে যায়।
অন্যান্য গ্রন্থের মাঝে প্রমাণ আছয়।।
কলির মায়ায় প্রেম শোষণ করিল।
বীরভদ্র সেই প্রেম বজায় রাখিল।।
তথা হ’তে তিন প্রভু হন অন্তর্হিত।
বহুদিন গত ফুল নহে বিকশিত।।
অকামনা প্রেমভক্তি তাতে বর্ত্তে নাই।
সে কারণে আইলেন ক্ষীরোদের শায়ী।।
সফলা নগরে হরি হলেন উদয়।
মনে মনে চিন্তিলেন আপন হৃদয়।।
সন্ন্যাসী ন্যাসী হইয়া না ফুটিল ফুল।
গার্হস্থ্য প্রশস্ত ধর্ম হয় সর্বমূল।।
অকামনা প্রেমভক্তি তাহাতে বর্ত্তিবে।
কলির মায়ায় প্রেম শোষিতে নারিবে।।
এত ভাবি মহাপ্রভু হ’লেন গার্হস্থ্য।
সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম ধর্মই প্রশস্ত।।
হাতে কর গৃহকর্ম মুখে বল হরি।
এক নারি ব্রহ্মচারী এ ধর্ম আচারি।।
সত্যবাদী হ’য়ে রবে মিথ্যা নাহি কবে।
পরদুঃখে দুঃখী হ’য়ে হরিনাম ল’বে।।
চরিত্র পবিত্র রেখে ল’বে হরিনাম।
সহিষ্ণুতা নিয়ে রবে পর ধনে বাম।।
রোগ প্রতিকার হ’বে হরিনাম নিলে।
সহজ উপায় প্রভু সবাকে দানিলে।।
সে কারণ প্রেম ফুল হ’ল বিকশিত।
পুষ্পবন্ত যুগ রসরাজের লিখিত।।
বাল্য খেলা গোষ্ঠ লীলা করে মহাভাব।
নিজ শক্তি দান করি ঘুচাব অভাব।।
ফুল হ’তে অপর্যাপ্ত বাহিরায়
ঘ্রাণ।
বিমুগ্ধ হইল তাই ভক্ত অলি প্রাণ।।
ভক্ত অলি ক্রমে বহু আসিয়া জুটিল।
যত নেয় তত বাড়ে কভু না টুটিল।।
ভ্রমরের নাম কিছু করিব বর্ণন।
লেখনীতে চাহে তাহা করিতে লিখন।।
শ্রীগোলক হীরামন ভক্ত দশরথ।
মৃত্যুঞ্জয় শ্রীলোচন শ্রীরাম ভরত।।
মহেশ ব্যাপারী ক্ষেপা শ্রীরাম চরণ।
শ্রীতারক মহানন্দ মঙ্গল সুজন।।
পূর্ণচন্দ্র শ্রীঅক্ষয় ভক্ত শ্রীকার্ত্তিক।
লালচাঁদ মালাকার পরম নৈষ্ঠিক।।
বুদ্ধিমন্ত চূড়ামণি শ্রীরাম সুন্দর।
আড়ঙ্গ বৈরাগী আর গোবিন্দ অধর।।
ইত্যাদি ইত্যাদি অতি কত বা বলিব।।
গণনা প্রতীত হয় কত বা গণিব।।
প্রেম ফুল হ’তে মধু করি আহরণ।
দেশে দেশে সেই মধু করে বিতরণ।।
অপর্যাপ্ত মধুপানে বিভোর সবাই।
হাতে কাম মুখে নাম গাহিছে সদাই।।
অহৈতুকী প্রেমদান করে হরিশ্চন্দ্র।
এককালে ঘুচাইল জীব কর্ম বন্ধ।।
দুর্গতি করিতে নাশ করিবে আগমন।
অগতির গতি হরি দিল প্রেমধন।।
মধুর মধুর লীলা প্রকাশ করিল।
হরিচাঁদ প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।
No comments:
Post a Comment