৯১নং তাল - একতাল
ধন্যরে যুগ পুষ্পন্ত কলিকাল।
মানব দেহ ধরি দয়াল হরি হল যশোমন্ত দুলাল;
শ্রীধাম ওড়াকান্দি হরি, হল পরকাশ;
পাপ তাপ দুরে গেল, তিমির বিনাশ
ভকত চকোর যারা সুধাপানে মাতোয়ারা,
পেয়ে প্রেম সুধারস, জগৎ হইল বশ,
প্রেমানন্দে বাড়ায়ে উল্লাস (হায় গো)
পূরলরে মনের অভিলাষ, ফিরল’রে চাঁদের কপাল।।
অনর্পিত চরিং চিরাৎ, যে ধন বাকী ছিল,
এই না দয়াল অবতারে, সে ধন বিলাইল,
কেউ না বাকী রল, প্রেম সুধা সবে পেল;
যারে দেখে আপন কাছে, করে ধরে প্রেম যাচে;
এমন দয়াল আর কি ভবে আছে (হায় গো)
জীবের কর্ম বন্ধ গেল ঘুচে, এলরে পরম দয়াল।।
নাম সিন্ধু করি মন্থন, হরি গুণ মণি,
উঠাইল প্রেম সুধা সুরস নবনী,
লয়ে সব ভক্তগণ করে প্রেম বিতরণ,
ব্রহ্মার বাঞ্চিত ধন, পেয়ে নাচে সর্ব্বজন,
অনুদিন বাড়ে অনুরাগ (হায় গো)
প্রেমে তনু ডগমগ হলরে মত্ত মাতাল।।
নদীয়ার চন্দ্র হরি, নদীয়া ছাড়িয়ে;
পুনরায় হল উদয়, ভক্তগণ লয়ে;
ভক্ত গণ লয়ে সাথে, কলুষ নাশিতে;
নব রসের গোরা, প্রেম রসে মাতোয়ারা,
দুনয়নে বনে প্রেমধারা (হায় গো)
ও সেই ব্রজ গোপীর মনোচোরা, এলরে সেই নন্দদুলাল।।
হরি প্রেমের আমার তারক মহানন্দ;
অকাতরে বিলাইতেছে, হরি প্রেমানন্দ;
উদিত হরিচন্দ্র, ঘুচিল তমঃসন্দ;
প্রেমানন্দ বাড়িল, নিরানন্দ ছাড়িল,
প্রেমানন্দে ধুলায় গড়ি যায় (হায় গো)
হরি প্রেমধন পেল সবায়, পেলনা অশ্বিনী কাঙ্গাল।।
৯২নং তাল - একতালা
দয়া করি এস হরি দয়াময়।
প্রিয় ভক্তের সঙ্গে, রসে রঙ্গে, এস হৃদি আঙ্গিনায়।।
এই বাসনা রাত্রি দিনে, বসায়ে আঙ্গিনে,
শ্রদ্ধারস, সচন্দন, দিব ঐ চরণে,
তাই বা হবে কেন, নাহি মম ভক্তি ধন,
মনে মম এই সাধ, কমলা সেবিত পদ
মনোসাথে হেরিব নয়নে, (হায় গো)
এই বাসনা রাত্রি দিনে প্রাণ সপে দিব ঐ পায়।।
ভক্ত বৃন্দ সঙ্গে লয়ে, কীর্ত্তনরূপ হরি,
প্রেমানন্দে, কর কীর্ত্তন, অমি শ্রবণ করি,
প্রেমানন্দে ভাসিব, হাসিব, কাঁদিব,
প্রেম সাগরে অতল নীরে, ডুব দিব বিরাগভাবে;
পুনঃ ফিরে না আসিব, ঘরে (হায় গো)
দেখব ওরূপ নয়ন ভরে, বাসনা মম হৃদয়।।
উচ্চৈঃস্বরে কর কীর্ত্তন, খোল করতাল লয়ে,
আমার মন পাষন্ড, হবে দলন, সে ধ্বনি শুনিয়ে,
শুনে মধুর হরিনাম, পুরাবো মনোষ্কাম;
শুনে হরি সিংহ রব, পলাইবে রিপু সব,
সিংহ ডরে যেন করী ধায়, (হায় গো)
কাম রিপু হবে পরাজয়, কি করবে রবির তনয়।।
হৃদি আকাশ ঈশাণ কোনে, হও এসে উদিত
অনুক্ষণ বরিষণ কর প্রেমামৃত,
মন মতি চকোর, সুধা পিয়ে বিভোর,
পিয়ে মতি চকোর, সুধা পিয়ে বিভোর,
পিয়ে হরি প্রেম সুধা ঘুচাইবে ভব ক্ষুধা,
মায়া হবে বিসর্জন (হায় গো)
দেখিব ও রূপ ভুবন মোহন, মোহন চুড়া হেলবে বায়।।
গোলোকচন্দ্র, তারকচন্দ্র, প্রেমিক মহানন্দ,
অন্তরঙ্গ ভক্ত লয়ে, করে প্রেমানন্দ,
প্রেমানন্দ আসিবে, নিরানন্দ নাশিবে,
কলির কলুষ দাগ, যাবে দশ ইন্দ্র যাগ,
অনুরাগে ছাড়, হুহুঙ্কার (হায় গো)
অশ্বিনী তোর মনের বিকার ঘুচবে শ্রীগুরুর কৃপায়।।
৯৩নং তাল - কাওয়ালী
মান অপমান যাহার সমান, তার মত আর মানী কে;
শুভ অশুভ সমজ্ঞান, তার তুল্য নাই ত্রিলোকে।।
তৃণ হতে সুনীচেন, তার কাছে নাই অভিমান;
প্রাপ্ত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান, ভাসে প্রেম পুলকে।।
তরুরেব সহিষ্ণুতা, অমানীণ মান দাতা;
সদায় বলে হরিকথা, অন্য বলি নাই মুখে।।
সুখে দুঃখে সদায় খুশী, ভুক্তি মুক্তি হয় তার দাসী;
ধর্ম পূণ্য দিবানিশি স্থান দিতে চায় মস্তকে।।
তাতে না হয় বশীভুত, মহা ভাবেতে উম্মত্ত;
জীবকে দিতে গুরুতত্ব, ভ্রমণ করে ভুলোকে।।
নিজের হেতু নাইক মোটে, জীবের জন্য ভবের হাটে;
হয়ে জীবের পারের মুটে, জীবকে পাঠায় গোলোকে।।
মহানন্দ হয়ে দৈন্য, কেঁদে ফিরে জীবের জন্য;
অশ্বিনী তুই ভক্তি শূন্য, মত্ত হলি ঐহিকে।।
৯৪নং তাল - একতাল
কি মধুর নাম আনলেন হরি, জীবের ভাগ্যক্রমে;
নামে জগৎ মাতিল, বাকী নাহি রল, মধুর হরিনামে।।
এ যে অনর্পিত নাম, হরি গুণধাম, অর্পিলেন ধরাধামে;
করতে পাষন্ড দলন, যশোমন্ত নন্দন, মজাল রাধা প্রেমে।।
পিয়ে হরিনাম সুধা, গেল ভব ক্ষুধা, পাষন্ড হৃদয় রমে;
আহা না কর বিরাম, শুধু হরিনাম লওরে দমে দমে।।
নাম ব্রহ্মার বাঞ্চিত, তুলনা রহিত, অবর্ণিত বেদাগমে,,
এবার নামের কল্লোলে, প্রেমের হিল্লোলে, ঢেউ উঠেছে ব্যোমে।
নামে প্রেম সুধা ক্ষরে, জপরে অধরে, জারিবে লোমে লোমে;
এ নাম অতি সুমধুর, মধুর মধুর, আপার মহিমে।।
এ যে দয়াল অবতার, হরিচাঁদ আমার প্রেম বিলায় অধেম;
মূঢ় অশ্বিনী যে কয়, দেখা দাও আমায়, রাইকে লয়ে বামে।।
৯৫নং তাল - একতালা
হারে ও তম দূর হলো, হরিচাঁদের আগমনে।
যত ভকত চকোর প্রেমেতে বিভোর মত্ত সুধা পানে।।
এ চাঁদ অতি সুনির্ম্মল, বড় সুশীতল, হেরিলে নয়নে।
করে প্রেমে মাতোয়ারা, দুনয়নে ধারা, বহে রাত্রি দিনে।।
এ চাঁদ করলে দরশন, কিম্বা পরশন যে করে যখনে।
ও তার কল মান রাশি, অমনি পড়ে খসি, দাসী হয় চরণ।।
এ চাঁদ কাউরে নহে বাম সবার মনষ্কাম, পুরায় নিজগুণে।।
ও চাঁদ কাউরে নহে বাম সবার মনষ্কাম, পুরায় নিজগুণে।।
এ চাঁদ হইয়ে সদয়, ভূতলে উদয়, যশোমন্তের ভবনে।
এ চাঁদ অনাদির আদি, গেলে ওড়াকান্দি, দেখবি বর্তমানে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, হরিচাঁদ উদয়, জীবের ভাগ্য গুণে।
যাবে তম সন্দ তোর, অশ্বিনী বর্ব্বর, হরিচাঁদের কিরণে।।
৯৬নং তাল - ঠুংরী
বাঁকা সখা হরি হে, দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ।
আমি জঙ্গলে জঙ্গলে, ফিরি কাঙ্গাল পানে চেয়ে দেখ।।
না দেখিলে প্রাণে মরি, বিচ্ছেদ জ্বালা সইতে নারি;
তবে জ্বালা সহিতে পারি; তুমি যদি সুখে থাক।।
তুমি আমার গুণমণি, মন ভুলানো তনুখানি;
তাইতে ওরূপ দিন রজনী, দেখতে চায় মোর মন চাতক।।
ভকত চাতক যত, তব রূপের অনগত;
যে হয় তোমার মনের মত, দিবানিশি তার হৃদয়ে থাক।।
গোলোকচাঁদ সেই রূপ দেখি, পালটীতে নারে আঁখি;
ভক্তের হৃদয় সদায় থাকি, ঘুচালে ভক্তের দুঃখ।।
মহানন্দ হেরে সে রূপ, জন্মের মত দিয়াছে ডুব;
অশ্বিনী দেখলি না সে রূপ, ঘুচল না সংসারের পাক।।
৯৭নং তাল - গড়খেমটা
মরি তাই ভেবে মোর, আর কি সে দিন হবে।
যখন বাল্যকালে, মায়ের কোলে, ছিলাম সুনির্ম্মল স্বভাবে।।
পিতামাতা তুষত আমায় আনন্দ উৎসবে,
আমি কান্না নিলে, কর্ণমূলে, হরির নাম শুনাইত মধুর রবে।।
মেরেছি ধরেছি কত, চঞ্চল স্বভাবে।
তবু নাইক কষ্ট, সদায় তুষ্ট কত রস খাওয়াইত মিষ্ট ভেবে।।
গেছে বয়স বেড়ে, সে ভাব ছেড়ে যৌবনের প্রভাবে;
পেয়ে পুত্র দারা, সে ভাব হারা, ডুবেছি সংসার রৌরবে।।
গুরুর তবিল না হল মিল, গণে দেখি এবে;
আমি হুজুরে কি জবাব দিব, যখন এসে হিসাব লবে।।
মহানন্দের বাণী, শোন অশ্বিনী, মরিস না আর লোভে;
তোর স্বভাব গেলে, অভাব যাবে, পড়ে থাকগে গুরুচাঁদকে ভেবে।।
৯৮নং তাল-গড়খেমটা
এ মহাদেশে, তার হরির অভাব কিসে।।
ও যার চরিত্র পবিত্র হৃদয়, সদা প্রেমানন্দে ভাসে।।
জলে হরি স্থলে হরি হৃদয় বাসে;
ওরে অনলে অনিলে হরি, হরিরূপ রসে গেছে মিশে।।
যার হরিকথা হৃদয় গাঁথা, তার তুলনা কিসে;
ও সে হরিকথা কইতে কইতে, নয়ন জলে বয়ন ভাসে।।
হরিনামামৃত অবিরত পান করে যে বসে;
হয়ে নামে রুচি সর্ব্ব শুচি, নেচে বেড়ায় বেহাল বেশে।।
হয়ে নামে নিপুন, নিদ্রা মৈথুন তাড়িয়াছে দ্বেষ দিসে;
হয়ে পাগল পারা, মতোয়ারা, একবার কাঁদে একবার হাসে।
মহানন্দ, পাগল ছন্দ, প্রেম দিয়ে কাম নাশে;
অশ্বিনী তুই রইলি ভুলে, হলি প্রেম ঘটলনা তোর কর্ম্মদোষে।।
৯৯নং তাল – ঠুংরী
বড় ভাব লাগায়ে গেলি মনে।
প্রেমে তনু ডগমগ ধারা বহে দু’নয়নে রে।।
তোর ভাবনা ভেবে মরি, ধৈর্য্য হতে নাহি পারি;
কি করিতে কি না করি, ভাবি নিশি দিনে (রে)।।
তোর ভাবনা বক্রগতি, মানুষ করে ছন্নমর্তি;
তার হৃদয় জ্বলে বিষের বাতি, প্রবোধ নাহি মানে রে।।
ভাবনা রোগ হলে বৃদ্ধি কি করিবে মহাঔষধি;
ভাবনা রোগের নাইক বিধি, আয়ুর্ব্বেদ নিদানে রে।।
১০০নং তাল - আড়া
আপন বলিতে আমার, কেউ হলনা ভবে।
যারে এত ভালবাসি, সেও ডুবায় গৌরবে।।
যার সুখের আশে, আশাময় আকাশে, চাঁদ ধরব বলে উঠিলাম হরিষে।
সেও করিয়া ছল, দিল রসাতল, পরিণামে কি হবে।।
যাহার জন্যতে ক্ষুধা তৃষ্ণা শীতে; অর্থ সঞ্চয় করি সে দুঃখ নাশিতে,
সেও হয়ে বৈমুখ, দিল অশেষ দুঃখ, এখন মরি ভেবে।।
সাধু সঙ্গে নাহি হল সৎ অন্তর, অসৎ সঙ্গে হল সদায় বিহার,
যে আনিল মোরে, এ ভব সংসারে; তারে গণিনা গৌরবে।।
দীনবন্ধু হরি সকরুণ স্বরে’ সুধা করে লয়ে ডাকিল আমারে;
নাহি চহিলাম ফিরে, করমেরই ফেরে অকুলে মরিলাম ডুবে।।
দয়াল মহানন্দ, প্রেম সুধা লয়ে, ঐ যে চলে গেল যাচিয়ে যাচিয়ে,
তাহে না ভজিলাম, গরলে মজিলাম, অশ্বিনী মরিল লোভে।।
১০১নং তাল - ঠুংরী
দেহ পবিত্রময় হলে হৃদয়, সেই দেহে হয় ভাবের উদয়।
অপবিত্র দেহ হলে, তার দেখলে মহাভাব লুকায়।।
ভাবগ্রাহি জনার্দ্দন, ভাবুক জনে কয়,
ভাবের ভাবুক যারা, জানে তারা,
ভাব ছাড়া হরি নাহি রয়, ইহা সাধু শান্ত্রে কয়।।
সদানন্দ হরি আমার ভাবুকের হৃদয়,
যোগী হৃদয় নচ নচ বৈকুণ্ঠ আলয়, হরি ভক্তের কাছে রয়।।
ভাবিলে ভাবুকের দেহে কত ভাব উদয়,
ভাব যোগ্য দেহ হলে, শেষে হরিচাঁদকে পাওয়া যায় ইহা কভু মিথ্যা নয়।।
ভাবের পাগল, প্রেমে বিভোল, আনন্দ হৃদয়,
ও সে প্রেমানন্দে সাঁতার খেলে, ধুলায় গড়ি যায়, কত কেঁদে বুক ভাসায়।।
প্রেমের পাগল মহানন্দ প্রেমধন বিলায়,
জগৎ ভরি পেল সে প্রেম, একবিন্দু অশ্বিনী না পায়, ও তার কঠিন হৃদয়।।
১০২নং তাল - ঠুংরী
হরি তোমারই তুলনা তুমি।
কোন গুণে কার সনে, হরি তুলনা করিব আমি।।
সোনা, চুনি মণি, পরশ পাথর জানি, তব রূপ সনে, কিসে বল গণি,
তুমি শুন্যময়, অন্ত কেবা পায়, অন্তময় অন্তর্য্যামি।।
ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, তুমি সবার পূজ্য তোমার লাগিয়া সব করি তাজ্য,
দেব মৃত্যুঞ্জয়, হয়ে নিরাশ্রয়, তোমারই আশায় বেড়ায় ভ্রমি।।
অনাদির আদি, তুমি গুণনিধি, বেদ বেদাঙ্গ বিধাতার বিধি,
তুমি গুণাকর, গুণের সাগর, স্থাবর জঙ্গম ভূমি।।
লক্ষ্মী দাসী যার, ভান্ডারী কুবের, অনন্ত গুণময় শিরোমণি শিবের,
বিপদ ভঞ্জন, শ্রীমধুসুদন, জগৎ রঞ্জন জগৎ স্বামী।।
প্রেম সম্বন্ধে বলে মহানন্দে, ব্রহ্মা শিব যারে, করযোড়ে বন্দে,
তুল্য নাহি যার, মহিমা অপার, অশ্বিনী কীটস্য কীট কৃমি।।
১০৩ নং তাল - কারফা
তার রুপের কথা গুণের কথা বলা ভুল।
তার কি গুণ কব, কি বর্ণিব, অনাদি যার পায় না মূল।।
তার রুপের কথা, বলব কোথা, চাঁদ সূর্য্য নয় সমতুল;
ও তার অবর্ণিত রূপ রাশি, রূপ সাগরের নাহি কূল।।
তার গুণের কাছে, কি গুণ আছে, সেই গুণেতে দিব তুল;
সেত গুণাতীত, গুণমণি, যার গুণে জগৎ আকুল।।
অনন্ত না পেল অন্ত, মহিমা ভেবে এক ধূল,
ও সে বর্ণশ্বেরী বর্ণেহারী, সমর্পিল জাতিকুল।।
ও তার রূপ গুণের শেষ, না পেয়ে শেষ পাতালাতে করল স্থুল।
ও তার নাম মাহাত্ম্য ব্রহ্মার সুত, জানতে গিয়ে নামাককুল।।
বলে স্বামী মহানন্দ, অশ্বিনী তুই-হ আউল;
ও তুই কি সুখ পেয়ে ভুলৈ রলি, দেখে ভবের শিমুল ফুল।
১০৪ নং তাল - গড়খেমটা
গুরু পুণ্য ফাঁসি গলায় দিলে ধর্মবেড়ী পায়।
লয়ে তত্ত্বমসি দাঁড়াও আসি যাতে মোর মুক্তির বন্ধন কেটে যায়।।
ভুক্তি মুক্তি দুই চাপড়াশী, আমায় ভোগবিলাসে অষ্টপাশে বাঁধতে চায় আসি,
তাই দেখে চিন্ত মহিষী, নয়ন জলেতে বয়ান ভেসে যায়।।
নিবৃত্তি নামেতে ভগিনী, আমার বন্ধন দেখে, মন দুঃখে হয় বিষাদিনী,
আমার শান্তিময়ী জননী যিনি, ঐ দুঃখে পাষাণে বুক বেঁধে রয়।।
গুরুকৃপা সত্যের কাছারী, হয়ে শশব্যস্ত, এই দরখাস্ত করি হুজুরী,
যেন স্বর্গ জেল এড়াতে পারি, নিবেদন করি গুরুর রাঙ্গা পায়।।
বিবেক নামেতে ভাই আমার, আপীল করতে প্রেম বিলাতে হলেন অগ্রসর,
রেখে অনুরাগ ভক্তি জুড়িদার, শ্রদ্ধা অর্থব্যয় করল এ মামলায়।।
তারকচাঁদ কেঁদে কেঁদে কয়, এই মানসা ওড়াকান্দী, হরিচাঁদের পায়,
অশ্বিনী যদি খালাস হয়, চির দাস করে দিব রাঙ্গা পায়।।
১০৫ নং তাল - গড়খেমটা
তুমি নাই রুপে কানাই, তোমায়ে পলকে হারাই।
আড়ালে লুকায়ে রলি, খুজে নারে পাই, কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই।।
তুইরে আমার চক্ষের মণি, বক্ষের ধন দুঃখ হানি,
মরিরে মোর গুণমণি, লয়ে তোর বালাই।
আমারে কাঁদালে দুঃখে, তুমি যদি থাক সুখে,
দুঃখের বোঝা দাও আমাকে, বহিয়া বেড়াই।।
সুখময় সুখের নিধি, সুখে থাক নিরবধি,
আমি দুঃখে যদি, তাতে ক্ষতি নাই।।
ভুক্তি মুক্তি সুখ শান্তি, তাতে সুখ নাই এক ক্রান্তি,
তুমি যাতে থাক শান্তি, তার মত সুখ নাই।।
তারকচাঁদ ডেকে বলে, অশ্বিনী তুই অবোধ ছেলে,
যত্ন বিনে রত্ন মিলে, কভু শুনি নাই।।
১০৬ নং তাল - কারফা
চলরে স্বদলে সেই ভজন বাদীর রণস্থলে।
এ রণে না জয়ী হইলে, পড়বিরে বিষম গোলমালে।।
কর রণের ষড়যন্ত্র, শুদ্ধ রেখ হৃদয় যন্ত্র,
ছেড়ে অন্য তন্ত্রমন্ত্র (হরি) নামের কামান লওরে তুলে।।
শ্রদ্ধা রথে কর রথী, বিবেক বন্ধ সেনাপতি;
মন পবন কর সারথি, চলরে রথ তালে তালে।।
রণে পাঠাও মন মাতঙ্গ, রণে যেন দেয় না ভঙ্গ,
বিপক্ষের সেনা অনঙ্গম, যেন তার রণে পড়েনা ঢলে।।
অনুরাগকে পাঠাও রণে, যুদ্ধ করুক ক্রোধের সনে;
বিনাশ করুক সহজ বাণে, মঙ্কা যায় সেই ক্রোধ মলে।।
লোভ মোহ মদ মাৎসর্য্য, তারে মারুক ধৈর্য্য সহ্য,
হবে দেহে সিংহ বীর্য্য, গুরুর পদে প্রাণ সঁপিলে।।
অশ্বিনী তোর কিসের সন্দ, সহায় গুরু মহানন্দ,
শক্তি দিচ্ছে গোলোকচন্দ্র, যার হুঙ্কারে পাষাণ গলে।।
১০৭ নং তাল - গড়খেমটা
বাম করে ধর ভাবের গোবর্দ্ধন।
আমার অজ্ঞান ইন্দ্রের ঝড়ি বৃষ্টি ঘুচাও হে মধুসূদন।।
জীবাত্মা ব্রহ্মার ভ্রান্তি দূর কর হে কাঙ্গালের ঠাকুর,
আমার মুক্তিরূপ জমাল বৃক্ষ করহে সংচুর;
আমার হৃদ কদম্ব তরুমূলে গো, প্রেম রাধার সঙ্গে হও যুগল মিলন।।
মাৎসর্য্যরূপ কংশ যে অসুর, ক্রোধরূপ তৃণাবর্ত্তাসুর,
আমার লোভ মোহ, অঘা বকা নাশ কর ঠাকুর,
আমার কাম কালীয় কর দমন গো, হিংসা রূপ পুতনা কর নিধন।।
জ্ঞান মিশ্রানন্দালয়ে যাও, আনন্দে নন্দের বাঁধা বও,
আমার মতি যশোমতীর কোলে গোপাল বেশে রও,
তুমি বাৎসল্য রস নবনী খাও গো, সঙ্গেতে লয়ে সখ্য রাখালগণ।।
আত্মারাম রূপ বলায়ের সনে যাও মোদের সাধন তাল বনে,
আমার মদান্ধকার বৃষাসুরকে বধ কর প্রাণে,
নববিধ ভক্তি ধেনুগণে গো, আনন্দে চরাও হৃদি বৃন্দাবন।।
হরিচাঁদ রূপে অবতার করিলে কলির জীব নিস্তার,
মহানন্দ রূপে গুরু নিলে দেহের ভার,
গোঁসাই তারকচাঁদের বাঞ্ছা এবার গো অশ্বিনী পায় যেন যুগল চরণ।।
১০৮ নং তাল - গড়খেমটা
জগৎ পাগল করতে পাগল এল পাগল হরিচাঁদ।
পাগলে পাগল করে পাতিয়া প্রেমের ফাঁদ।।
পাগলে পাগলের মেলা, হতেছে পাগলের খেলা,
সহজ পাগল হরিচাঁদ মোর নিশরিকালা,
ও তার করণ ধারী, নির্ব্বিকারী, মত্ত পাগল গোলোকচাঁদ।।
সেই ফাঁদে বেঁধে হীরামণ, দশরথ মৃত্যুঞ্জয় লোচন,
পাগল হল সর্ব্বস্বধন, দিয়া বিসর্জ্জন,
পাগল মহানন্দ, তারকচন্দ্র, আর এক পাগল বদনচাঁদ।।
জুটে সব ভাবের পাগল, প্রেমরসে হল বিভোল,
পুরুষ নারী করল পাগল, বলে হরিবোল,
লয়ে পাগল সবায়, ষোলকলায় ওড়াকান্দি পূর্ণচাঁদ।।
শুনে পাগলের হুঙ্কার, নাচে ঐ পাগল দিগম্বর,
মিলেছে পাগলের মেলা, আনন্দ অপার,
জীবের শঙ্কা গেল, হরিবল পারের কর্ত্তা পাগলচাঁদ।।
নিলে সেই পাগলের সঙ্গ, উঠবে তোর প্রেমতরঙ্গ,
তালে তালে নাচবেরে মন, মত্ত মাতঙ্গ;
অশ্বিনীর জুড়াবে অঙ্গ, ডেকে বলে তারকচাঁদ।।
১০৯ নং তাল - একতালা
হরি প্রেম বন্যা এসে ভেসে যায়।
আমার জ্ঞান মার্গ, চতুর্ব্বর্গ ধর্ম্ম পূণ্য হল ক্ষয়।।
হরিনাম পবন ডেকেছে, সাগরে তুফান চেতেছে,
যত অভিমানী কর্ম্মী জ্ঞানীর, নৌকা ডুবেছে,
তারা কুল পাব কুল পাব বলে গো,
হরি প্রেম পাথারে সাঁতার খেলায়।
মহাভাব মেঘেরই উদয়, অনুরাগ দেওয়অ গর্জ্জে তায়,
নব রসের বৃষ্টি হয়ে, ধরা ভেসে যায়,
হল নাম সংকীর্ত্তন শিলা বর্ষণ গো
মন্ত্র বীজ শস্যাদি হইল লয়।।
যত সব ফলাফল ছিল, মূল সহ ভাসাইয়া নিল,
আমার মুক্তি তরুর মূলে ভেঙ্গে বন্যায় ডুবাল,
যত বৈদিক ক্রিয়া, গেল ধুয়ে গো
তাই দেখে চিত্রগুপ্ত অবাক হয়।।
প্রেম বন্যা প্লাবিত হয়ে, ত্রিভূবন গেল তলাইয়ে,
গোঁসাই মহানন্দ, তারকচন্দ্র, যায় জোয়ার দিয়ে,
গোঁসাই গোলোকচন্দ্র মকর হয়ে গো,
হুক্কারে কাম কুম্ভীর তাড়িয়ে দেয়।।
হরিচাঁদের ভক্ত যত, দেখে সেই প্রেম বন্যার স্রোত,
পরমহংস হয়ে কেলী করে, হয়ে উন্মত্ত,
গোঁসাই মহানন্দ বলছে ডেকে গো,
অশ্বিনী ডুব দেরে প্রেমের গোলায়।।
১১০ নং তাল - একতালা
হরি প্রেম সাগরে বান ডেকেছে, ঘটেছে মহা প্রলয়।
হয়ে, নামের পূবন, উঠল তুফান, ভীষণ প্রলয় হয়েছেরে।।
সত্য ক্রেতা দ্বাপরেতে, যে প্রলয় না ছিল,
এবার কলির শেষে, হরিচাঁদ এসে সেই প্রলয় ঘটালরে।।
আইল প্রেমেরই বন্যা, বীজ মন্ত্র নাশ হল।
এবার তা দেখিয়া, পঞ্চ জনার আনন্দ বাড়িল রে।।
যে দিন শ্রীধাম ওড়াকান্দি, হরিচাঁদ উদয় হল;
জীবের চিত্ত সন্দ, কম্ম বন্ধ, সকল ঘুচে গেলরে।।
ওড়াকান্দির প্রেমের বন্যায় তরঙ্গ বাড়িল,
ও সে নারিকেল বাড়ী ডুবু ডুব, জয়পুর ভেসে গেলরে।।
প্রেমের বন্যায় পাক পড়িয়া, উথলে উঠিল,
গোঁসাই দশরথ লোচন, গোলোক হীরামন, মৃত্যুঞ্জয় ঝাঁপ দিলরে।।
অভিমানী কর্ম্মী জ্ঞানী, যারা বাকী ছিল,
এবার প্রেম সাগরের ঢেউ লাগিয়ো, তারা সব ডুবিল।।
ডেকে বলে মহানন্দ, কি আনন্দ হল;
এবার অশ্বিনী বিহনে প্রেমে জগৎ মাতিল।।
গান নংঃ ১১১-১৩০
১১১নং তাল - গড়খেমটা
যে দিন গুরু কৃপা করেছে,
আমার ভ্রান্তি মসি; তম নিশি, সেই দিন সুপ্রভাত হয়েছে।
আমার হৃদাকাশে চিদানন্দ, রবি উদয় হয়েছে।।
হেরে আনন্দ ভাষ্কর, ভয় পেয়ে ছয় রিপু তস্কর,
ভেবে তারা বিষম দুষ্কর, হারে পলায়ে গিয়াছে,
আমার হৃদ সরোজে, শান্তিময়ী পুষ্কর বিকাশ হয়েছে।।
পূর্ব্বাহ্ন কি সায়হ্ন, আমার সব ঘুচে হল মধ্যাহ্ন,
শ্রীগুরুর কৃপা ধন্য, সন্ধ্যাকে বন্ধ্যা করেছে,
তাইতে না পেলাম ঠিক, সন্ধ্যা আহ্নিক, আত্মা তম্ময় হয়েছে।।
পোহাল তমঃ নিশি, অনুরাগ এক সিংহ আমি,
চিত্ত গিরি শৃঙ্গে বসি, হারে সে হুষ্কার করতেছে,
আমার কাম ক্রোধরূপ, হস্তী শার্দ্দুল, ভয়ে পলায়ে গিছে।।
হেরে সেই রূপের আলো, নিরানন্দ উলুক লুকাইল,
জ্ঞান আত্মার মত্ততা গেল, জ্ঞান শূন্য বিরাগ এসেছে,
তারা আলোক পেয়ে, পুলক হয়ে দোহে নৃত্য করতেছে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, আমার হরি সূর্য্য হল উদয়;
কু-আশা কুতম লুকায়, জীবের আর ভাবনা কি আছে;
ভেবে অশ্বিনী কয় হরি বিনে, ভবে বন্ধু কে আছে।।
১১২নং তাল - আদ্দা
গুরু পতির বসে বামে।
ও তোর এ দেহ দক্ষিণা দিয়ে, যেও না দক্ষিণাশ্রমে।।
গুরু সন্তোষ অন্তঃপুরে, বসে থাক মন জ্যোতির ঘরে,
তবে ঐহিকে পর পুরুষ তোরে, ছোবেনা মন কোনক্রমে।।
গুরু শাসন শাশুড়ীর পায়, ভক্তি রেখ রে মন সদায়;
তবে বধুভাব হইবে উদয়, থাকবিরে মন শান্তিধামে।।
গুরুচিন্তা শঙ্খ শাড়ী, সাধ করে মন ধারণ করি,
গুরুকৃপা শয্যায় শয়ন করি, মজে থাক মন গুরুর প্রেমে।।
গুরু প্রতি করলে রমণ, পুত্র হবে মনের মতন,
ও তোর অনুরাগ হইবে নন্দন, কন্যা হবে ভক্তি নামে।।
তারক চাঁদের বাক্য ধর, গুরু পতির কারণ কর,
স্বামী মহানন্দের দয়া বড়, অশ্বিনী কেন ডুবলি ভ্রমে।।
১১৩নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ প্রেমের আগুণ লাগল গায়।
আমার হৃদ কাননে, আগুণ লেগে, ধর্ম্ম মন্দির দগ্ধ হয়।।
মন্দিরে পুণ্য ধন ছিল, ও তা পুড়ে ছাই হল,
আমার সাধন ভজন, গিল্টির গহনা, সব পুড়ে গেল;
আমার ঘৃণা আসন লজ্জা বসন গো,
এক কালে পুড়ে হ’ল ভষ্মময়।।
অনলের সহায় মন পবন, প্রেম ঘৃত ঢালছে গুরু ধন,
আমার হিংসা নিন্দা, মহিষ গন্ডার, মল অগনণ,
ও সে কাম বাঘিনী ত্য’জল জীবন গো
ক্রোধ গজ পুড়ে ধরনী লোটায়।।
কুলমান পড়সী যারা, দেশ ছেড়ে পলা’ল তারা,
আমার মুক্তিবাগে, আগুন লেগে, পুড়ে হয় সারা,
আমার যোগ নিদ্রা, বিমাতা ছিল গো,
অষ্টপাশ ছেড়ে মা, পালায়ে যায়।।
প্রতিষ্ঠা ভগিনী ছিল মোর, অনল দেখে সে করে সোর,
আমার প্রেমের আগুণ, নিবাইতে ক’রল বহু জোর,
ও তার পূড়ে গেল, মান্য বাসর গো,
তাই দেখে বিবেক, ভাই নেচে বেড়ায়।।
অনলের তরঙ্গ দেখে, তারকচাঁদ বলেছে ডেকে,
ও তোর জীবন যৌবন আহুরি দে, কাজ কি প্রাণ রেখে;
গোঁসাই মহানন্দ, বলছে সুখে গো
অশ্বিনীর মহাযজ্ঞের সময় যায়।।
১১৪নং তাল-একতালা
করেছি মহাযজ্ঞের আয়োজন।
লয়ে যজ্ঞেশ্বরী, এস হরি, ক্ষীরোদশায়ী নীরদবরণ।।
জ্বালিয়া বিচ্ছেদ হুতাশন, এ দেহ কাষ্ঠ সম্মিলন,
আমার হৃদয় ঘটে, চিত্তপটে দিয়াছি আসন,
আমার ভজন পূজন, অশ্ব দিব গো
আহুতি দিব এ জীবন যৌবন।।
করিব পুণ্যক্ষয় যজ্ঞ, ধর্ম্মকে করলেম উৎসর্গ,
পঞ্চবিধা ভূক্তি মুক্তি, দিব তায় অর্ঘ্য,
আমি বর্গফল, আমেশ্বর দিব গো,
এ যজ্ঞে দিব, প্রতিষ্ঠা চন্দন।।
এ যজ্ঞের শুন পরিণাম, সর্ব্বস্ব ত্যাগ সর্ব্বস্ব বাম,
নাহি স্বর্গ নাহি মর্ত্ত্য, ফলে নিষ্ফল কাম,
আমা লক্ষ্মী ভাগ্য যজ্ঞে দিব গো,
মনেতে করেছি এই আকিঞ্চণ।।
দশ দশা দশমী দিনে, রসে প্রেম গঙ্গা পুলিনে,
আমি মহাযজ্ঞ, সঙ্গ করিব, যোগাসনে,
যে দিন, ব্রহ্মরন্ধ্য যাবে ফেটে গো,
সেই দিন হবে যজ্ঞ সমাপন।।
স্বামী মহানন্দ কয়, এই দশা ঘটবে যে সময়,
আমার হরিচাঁদের শীতল কিরণ, লাগবে তখন গায়,
ওরে অশ্বিনী তুই হ নিরাশয় গো,
এ যজ্ঞের ফলে কি তোর প্রয়োজন।।
১১৫নং তাল-রাণেটী
(আমার) আর কবে ঘুচিবে গুরু, সাধন ভজন পৈশাচ বৃত্তি।
আমার সুখাভিলাষ, হবে বিনাশ, গুরুপদে হবে আর্ত্তি।।
নিষ্কাম বৃক্ষের মূলেতে যাব (হারে) বিচ্ছেদ অগ্নিকুন্ড জ্বেলে বসিয়া রব।
(আমি) চিন্তাভষ্ম গায় মাখিব, (ও গুরু আমি) কাঁদব বলে গুরুপতি।।
ধর্ম পূণ্য হবে বিসর্জন, কবে হবে গুরুপদে আত্ম সমর্পণ।
আমার জ্ঞান পুত্রের হইবে মরণ, (ওরে) ঘটবে প্রেম অবলার রীতি।।
কবে আমার ঘুচবে শুচি বাই, অঘোর পন্থী হয়ে সদা কাঁদিয়া বেড়াই।
(আমি) সন্ধ্যার মুখে মাখিয়া ছাই, (ও কবে) মধ্যাহ্নকে করব স্থিতি।।
কবে আমার ঘুচবে আমিত্ব, গুরুর পদে মন মজাইয়ে করিব নৃত্য।
(আমি) হব গুরুর অনুগত, (আমার) জ্বলবে হৃদয় বিচ্ছেদ বাতি।।
দয়াল মহানন্দ আনন্দ রবি, কবে হৃদয় উদয় হবে (আমি) বসে তাই ভাবি।
গোঁসাই তারকচাঁদ কয়, দেখতে পাবি (ওরে) অশ্বিনী হ’ ছন্নমতি।।
১১৬নং তাল-গড়খেমটা
আমায় কি সপ্ন দেখালে, গুরু স্বপ্ন দেখালে।
আমার সর্ব্বস্ব ধন,করে হরণ, আজ আমার দেউলা নাম লেখায়ে দিলে।।
আমার দেহ জমি, রাজ্য ভূমি, বাকীর দায় নিলাম করিলে,
আমার বাস্তু বাড়ী, নিলে কাড়ি, আজ আমায় চিন্তা কান্থা গলায় দিলে।।
আমার সাধন ভজন, ভ্রাতা দুজন রাজ্য হতে তাড়িয়ে দিলে,
আমার পুণ্য অর্থ, ছিল যত, আজ হতে খাস বাজারে লুঠাইলে।।
আমার সুখ সুন্দরী, বিলাস নারী, ছিলাম যাহার মায়ায় ভুলে,
আমার দুঃখের ভরা, দেখে তারা, সেও আমাকে গেল ফেলে।।
আমার শুচি মাতা, আচার পিতা, চিরকাল যার ছিলাম কোলে,
আমার দশা দেখে, মনের দুঃখে, তারা আমায় ফেল্ল ঠেলে।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, অশ্বিনী তুই অবোধ ছেলে,
যারে মাতা ছাড়ে, পিতা ছাড়ে, অন্তিমে হরিচাঁদ তারে করে কোলে।।
১১৭নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ দৃষ্টি ভূতে, ভুতে পেল যারে।
কি অদ্ভূদ সেই ভূতের দৃষ্টিরে,
পঞ্চ ভূতের দফা সারে হারে কর্ম্ম সারে।।
নাই তার গুরু জনার ভয়, কণ প্রলাপ বাক্য কয়,
কখন হাসে কখন কাঁদে, কখন ধূলায় গড়ি যায়,
কখন বীরাচারে, হুঙ্কার ছাড়েরে,
কখন করুণ স্বরে রোদন করে, কত রোদন করে।।
নিরাশ্রয় ছাড়া ভিটায় রয়, নাই তার ঘৃণা লজ্জার ভয়,
আহার বিহার পরে, জীবের লাগে ভয়,
ও তার লস্ফ ঝম্প, দেখলে পরে,
কত গৃহবাসী গৃহ ছাড়ে, হারে গৃহ ছাড়ে।।
ভৈরবী ভৈরব রবে, কি যেন বলে কি ভেবে,
সে ভারতী বুঝতে শক্তি, ধরে কি সবে; ও তা বুঝলে,
পরে, কর্ম্ম সারে, অমনি দৃষ্টি ভূতে ধরে তারে, হারে ধরে তারে।।
দৃষ্টি রোগের নাহিকবিধান, আয়ুর্ব্বেদ খুজিলে নিদান,
তন্ত্রে মন্ত্রে সারে না রোগ, হল বৈদ্য হতজ্ঞান; কত ওঝা
বৈদ্য হল হদ্দ, দৃষ্টি রোগ না সারতে পারে, হারে সারতে পারে।।
সে রোগের রোগী হীরামণ, গোলোকচাঁদ মৃত্যুঞ্জয় লোচন,
যার হয়েছে দৃষ্টিরোগ, সে আর সারবে না কখন,
বলে গোঁসাই তারক, সে দৃষ্টিরোগ,
অশ্বিনী তোর ঘটল নারে, হারে ঘটল নারে।।
১১৮নং তাল - একতাল
হরি প্রেম মদের নেশা, নেশা যার লেগেছে।
হয়ে মত্ত মাতাল, হালছে বেহাল, প্রেমের মদ খেয়ে,
সে মেতে গিছে, হারে মেতে গিছে।।
গাঁজা ভাং ধুতরায় কি করে, মুষ্টিযোগ দিলে যায় সেরে,
যার লেগেছে, প্রেমের নেশা, ও তার অনুক্ষণ বাড়ে,
ও সে নেশার ঝেঁকে প্রলাপ বকে, সাইজি বলে হাই ছাড়তেছে, শুধু হাই ছাড়তেছে।।
প্রেমের নেশার নাই বিরাম, তিলেক দন্ডে নাই আরাম,
কখন বলে হরেকৃষ্ণ, কখন বলে রাম, ও সে নেশার ভরে,
নৃত্য করে, নয়ন জলে ভাসিতেছে হারে ভাসিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে পাগল, ও সে কেটে ভবের গোল,
আর কোন বোল নাইরে মুখে, কেবল বলছে হরিবোল,
তার হরির নামে, লোমে লোমে সর্ব্ব অঙ্গ জ্বারিতেছে, হারে জ্বারিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে অজ্ঞান, ধর্ম্ম পূণ্য দেয় না স্থান;
অষ্ট পাশের দফা সারা, বেদ বিধি মানবে কেন, ও তার
সন্ধ্যা আহ্নিক, নাই কোন ঠিক, মন মানুষে, মিশে গিছে হারে মিশে গিছে।।
স্বামী মহানন্দ কয়, প্রেমের মদ নিবি কে আয়,
শ্রীগুরুর আনন্দ মেলায়, প্রেমের মদ বিকায়,
বলে তারকচাঁদে, বিষয় মদে, অশ্বিনী ভুলে রয়েছে হারে পড়ে পেচে।।
১১৯নং তাল এক তালা
আমার জন্ম মৃত্যু দুট অশৌচ পল।
তাইতে পূজা ব্রত, হল হত,
আমার বৈদিক ক্রিয়া বাদ পড়িল, হারে বাদ পড়িল।।
হরি প্রেমে রোগে আক্রমণ, আমায় করিল যখন,
ছিল অষ্ট পাশে, মা মহামায়া, ত্যজিল জীবন,
গুরু কৃপা ক্রমে, বিবেক নামে,
সেই দিনে এক পুত্র হল, হারে পুত্র হল।।
ঠেকেছি গুরুদশার দায়, ভাগ্যে কি যেন কি হয়,
শৌচ আচার ত্যাজল আমায়, হ’লেম অশৌচী আশ্রয়,
আমায় সাজিয়ে বেহাল, পথের কাঙ্গাল, ভাবের উত্তরী,
এক গলায় দিল, হারে গলায় দিল।।
শ্রীহরিপদ পদ্ম গয়ায়, শ্রীগুরু পাঠলেন আমায়,
যোগ মায়া জননীর শ্রাদ্ধ করিবার আশায়,
আমার সব ঘুচায়ে মন মুড়ায়ে,
মত পোড়া আউল করিল, আউল করিল।।
কটিতে কটকৌপিন দিয়ে, অনুরাগ ডোর তায় পরায়ে,
নিহেতু এক শিক্ষা শিরে, দিল ঝুলায়ে,
আমায় ভক্তি তিলক ফোঁটা দিয়ে,
বিনা সূতের মালা দিল, হারে মালা দিল।।
মহানন্দের ভারতি, এই রূপে সেজে প্রকৃতি,
দিবা নিশি সেবা কর শ্রীগুরু পতি, অশ্বিনী তোর
কি দুর্গতি, গুরুর প্রতি রতি না হল, হারে মতি না হল।।
১২০নং তাল-কাশ্মিরী
কেউ যদি ঢেউ ধরতে পার, প্রেম সরোবরে।।
অখন্ড ব্রহ্মান্ড সে ঢেউ, চলে ভেদ করে।।
ঢেউ লেগেছে যার অন্তরে, সে কি ঘরে রইতে পারে,
ঝাঁপ দিয়ে সেই প্রেম সাগরে, আর ফিরে এলনা ঘরে।।
ঢেউ লেগে কেউ হয়েছে মাতাল, মাতাইল আকাশ পাতাল,
জয় করে সেই কাল মহাকাল, ঢেউ দিয়ে জগৎ পাগল করে।।
দুই এক জনার যোগ ভাগ্যে, পাগল হল সেই ঢেউ লেগে,
তনুজ্বলে অনুরাগে, প্রেমানন্দে নৃত্য করে।।
ঢেউ লেগে সেই গোলোক পাগল, মুখেতে নাই আর কোন রোল,
জয় হরিবোল গৌর হরিবোল, বলে সদায় হুঙ্কার ছাড়ে।।
মহানন্দ সেই ঢেউ ধরি, রেখেছে ঢেউ হৃদয় পুরী,
মাতাইল পুরুষ নারী, অশ্বিনী তুই মাতলি নারে।।
১২১নং তাল কাশ্মিরী
নিদান বন্ধু বটে, এই ভবের হাটে।
নিদানে পড়িলে মনে কত ভাব উঠে।।
নিদান আমার বন্ধু ধরে যারে, ভোগ বিলাসের দফা সারে,
সুখ পৈশাচি তাড়িয়ে দূরে, দুঃখ সম্পত্তি দেয় গো জুঠে।।
সুখ পেলে মন রয় না বাটী, ধরতে চায় সে বিষের বাটি,
বোঝাই করে ময়লা মাটী, ডুবে মরে ভবের ঘাটে।।
দুঃখ ভার্য্যা তাপ রজকিনী, মনের ময়লা ঘুচান তিনি,
দন্ড সাবান জ্বালিয়া ধনি, মনকে কাচে শাসন পাটে।।
দীন বন্ধু হরি যিনি, নিদানেরই বন্ধু তিনি,
তত্ত্ব জেনে শূলপানি, সদায় সে শ্মশানে ছোটে।।
দয়াল মহানন্দ বলে, গুরু দন্ড না হইলে,
কিসে মনের ময়লা খোলে, অশ্বিনী তুই যাস না চটে।।
১২২নং তাল কাশ্নিরী
মন চল যাই বিদেশ ছেড়ে নিবৃত্তিপুরে।
তথায় আছে শান্তি মা আমার, দেখ মন্দিরে।।
বিদেশে বাণিজ্য দিয়ে, মা আছেন পথ পানে চেয়ে,
ভুলে রলি কি সুখ পেয়ে, এদেশে তোর বন্ধু কেরে।।
হয়ে রলি মায়ার সেবক, খুলে ফেল মণি মজক,
দুদিন পরে দেখবি নরক, দেশে যাওয়া হবে নারে।।
এদেশে রয় দিশে হরি, দিক ভুলায়ে করে চুরি,
নৌকায় দিবে কুঠার মারি, আপন আপন বলিস যারে।।
ধন অনুরাগের বৈঠে বেয়ে চল প্রেমের হাটে,
নাও লাগাসনে ভবের ঘাটে, শুল্লুক জাহাজ যাচ্ছে বুড়ে।।
গুরুচাঁদ তাই করছে মানা, ভবের ঘাটে কেউ যেওনা,
অশ্বিনী তোর মন ভালনা, ডাকলে কেন শুননারে।।
১২৩নং তাল - কাশ্মিরী
মনে ভাবি কাঙ্গাল হব, বেহাল সাজিব।
ছেড়া কান্থা করিয়া ধারণ, গাছতলায় যাব।।
মহামায়া মাতা যিনি, কাতর বাক্যে বলেন তিনি,
কোথায় যাওরে যাদুমণি, কোন প্রাণে তোরে বিদায় দিব।।
প্রবৃত্তি মহিষী এসে, বাঁধতে চায় সে ভোগ বিলাসে,
ভুলাতে চায় মায়া রসে, কেমনে তারে প্রবোধ দিব।।
লোভ মোহ পুত্র ছয়জন, বিনয়বাক্যে করে বারণ,
পুত্রের মায়া করে ছেদন, প্রানান্তে যেতে দিব।।
আমোদ আহলাদ প্রতিবেশী, যাত্রা ভঙ্গ করে আসি,
কি দুঃখে হও বিদেশবাসী, গৃহে তোর কি অভাব।।
পাগলচাঁদ কয় অনুরাগে, আর কতকাল মরবি ভুগে,
অশ্বিনী তুই এই সুযোগে, বাহির হ তোর সঙ্গে যাব।।
১২৪নং তাল -
আমি পিতৃমাতৃ হলেম ত্যাগী বিষয় বিরাগী।
ঘরে বসে কাঁদিবে বিলাস, ভার্য্যা অভাগী।।
ত্যাগ করিলাম পুত্র কণ্যে, গৃহে থাকি যাহার জন্যে,
মন মতি হয়েছে হন্যে, কি যেন কি বস্তু লাগি।।
পিতা কাঁদলে করে হায় হায়, কঠিন পাষাণ বলি তোমায়,
বল ভবে কেউ কারো নয়, পাষাণে বুক বাঁধ রাখি।।
পাখী যত আছ ডালে, মা কাঁদিলে পুত্র বলে।
তোমরা ডেক মা বোল বলে, প্রহরে প্রহরে জাগি।
ভার্য্যা কাঁদলে চিকন স্বরে, কাল ভ্রমর কই তোমারে,
বুঝাইও গুণ গুণ স্বরে কেউ কারো নয় দুঃখের ভাগী।।
গুরুচাঁদের শাসন চোটে, ভব বন্ধন গিছে কেটে,
কাঁদতে হবে ঘাটে মাঠে, অশ্বিনী হও প্রেম বৈরাগী।।
১২৫নং তাল - কাশ্মিরী
এই দেখা ত শেষ দেখা ভাই, বালাই লয়ে যাই।
এ ক্ষেপে দেখা পাই কি না পাই।।
দেখা হল কত শত, হয়না দেখা মনের মত;
মনের দুঃখ আর বলব কত, জন্মের মত বিদায় হতে চাই।।
যা হবার তা হয়ে গেল, ভবের খেলা সাঙ্গ হল;
বন্ধুবর্গে হরিবল, যার আমি ভাই তারে যেন পাই।।
১২৬।
সমর্পিত দেহ মম আমিত্ব কি আর,
আমিত্ব স্বামীত্ব তুমি সর্ব্ব মূলাধার।।
মহাভাব ভাবিনীর বশে, মহাসাগর মহারসে,
দেহ তরী যাচ্ছে ভেসে, না পেলাম কিনার।।
তুমি নিত্য নবীন নেয়ে, এ তরীর কান্ডারী হয়ে,
প্রেম সাগরে বেড়াও বেয়ে, ওগো গুণধার।।
তব কৃপা-অনুযোগে, হরিণাম বাতাসের বেগে,
চ‘লছে তরী অনুরাগে, আনন্দ বাজার।।
গুরুর কৃপায় ঘুচলো ভ্রান্ত, আমি কান্তা, তুমি কান্ত,
পূর্বের মন যদি তাই জানত, থাকত না বিকার।।
স্বামি মহানন্দ বলে, মন প্রাণ না সপিঁলে,
কোথায় হরি পতি মেলে, অশ্বিনী বর্ব্বর।
১২৭।
বিপদ সুপদ মন , উভয় একাকার ।
নিরাশা দরিয়ার মাঝে, দিয়াছি সাঁতার।।
সুমতি কুমতি দুজন, দ্বন্ধ ঘুচে হল এক মন,
হ‘য়ে তারা প্রেমের ভাজন, হ‘ল নির্ব্বিকার।।
ভক্তির কণ্টক যে পঞ্চজন, প্রেমানলে হল দাহন,
তাই দেখে ছয়জন, কাঁদে অনিবার।।
প্রেমানুরাগ হব বলে, ভাসিতেছে নয়ন জলে,
ঝাঁপ দিতে চায় প্রেম সলিলে, অকুল পাথার।।
প্রেম উন্মত্ত হয়ে সবে, হুঙ্কার ছারে সিংহরবে,
প্রাণ দিয়ে সেই প্রাণ বল্লতে, কামনা কি আর।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র, মহানন্দের কি আনন্দ,
দেখলি না অশ্বিনী অন্ধ, আনন্দ অপার।।
১২৮।
যারে নয়ন ধরগে তারে, যে রূপে প্রাণ নিল হরে,
দেখতে দেখতে নয়ন তারে, পলক দিতে যায় গো সরে।।
তুই নয়ন মোর বান্ধব ছিলি, তবে কেন পলক দিলি,
পলকে রূপ হারাইলি, আর কি দেখা পাব ফিরে।।
তুই নয়ন থাকতে প্রহরী, তবে কেন সেই চোরা হরি,
মন প্রাণ করে চুরি, আমায় যায় পাগোল করে।।
যে রূপেতে মন মজিলো, সেও যদি আজ ছেড়ে গেল,
এ জীবনে কাজ কি বল, কাজ কি এ ছার জীবন ধরে।।
মন প্রাণ দিলাম যারে, সেও যদি আজ না চায় ফিরে,
এ দুঃখ আর বলব কারে, ওই দুঃখে মোর বুক বিদরে।।
গোলকচাঁদের মনচোরা, মহানন্দের মনোহরা,
ধরবি যদি অধর ধরা, অশ্বিনী থাক জীয়ন্তে’রে।।
১২৯।
হরি দয়াময় , করলে কি আমায়
তব বিচ্ছেদ জ্বরে , দহিছে হৃদয়।।
প্রেম দাহানলে, সদায় মরি জ্বলে
এই ছিল কপালে, করি কি উপায়।।
তব বিচ্ছেদ জ্বর, হইলো প্রবল
চিন্তা পথ্য তায়, কুপথ্য ঘটালো।।
স্বাত্বিক বিকারে, খেত বৃদ্ধি করে
হরি বিনে, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
বুঝতে নারি গতি, যেন সান্নিপাতি
দুরন্ত পিপাসা, না হয় নিবৃতি।।
দুর্ব্বৈদ্য আসিয়া, শিয়রে বসিয়া
এক বিন্দু বারি না দিল আমায়।।
অধৈর্য্য উলূর্ব্বান, নাহি কোন ঞ্জান
জলধর বিনে, জ্বলে যায় প্রাণ।।
জ্বরে তনু জ্বর, শুষ্ক ওষ্ঠাধার
নিরস রসনা, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
তৃস্না-তন্দ্রা-নিদ্রা, মোহ কম্পকায়
স্বেদ অশ্রু পুলক, বিকারে প্রাণ যায়।।
হেন নাহি বন্ধু, হরি কৃপাসিন্ধু
এক বিন্দু বারি, এনে দেও আমায়।।
বলে মহানন্দ, হরি প্রেমসিন্ধু
অশ্বিনী তোর ভাগ্যে, ঘটলনা এক বিন্দু।।
গুরুচাঁদের পদ কররে সম্পদ,
তবে পাবি সে ধন শ্রীগুরুর কৃপায়।।
১৩০।
হরি নামে পাপ খন্ডে, কহে কোন ভন্ড
হরিভক্ত এমনি শক্ত, চায়না সে বিধাতার ব্রহ্মাণ্ড।।
‘হ’কার উচ্চারনে মাত্র, অষ্টাদশ সিদ্ধি হয় প্রাপ্ত
ভুক্তি মুক্তি দূরীভুত, লুক্কায়িত কর্মকান্ড।।
‘রি’ কার উচ্চারণ হলে, অনর্পিত প্রেম ফলে
মোক্ষ ফল সে ফেলায় ঠেলে, ধর্ম্ম তার কাছে হয় দণ্ড।।
হরিভক্ত সিংহ-শাবক, অন্তরে অনুরাগ পাবক,
নরের আর থাকেনা নরক, শরণ নিলে তিলেক দণ্ড।।
গঙ্গাস্নানে পাপ হত, গঙ্গাকে করে পবিত্র
পরশ মাত্র হরিভক্ত, সাধু হয় যত পাষন্ড।।
গোসাঁই তারকচাঁদের বাণী, শ্রবণ মাত্র হরি ধ্বনি
প্রাপ্ত হয় প্রেম আহলাদিনী, অবিশ্বাসী অশ্বিনী ভন্ড।।
১১১নং তাল - গড়খেমটা
যে দিন গুরু কৃপা করেছে,
আমার ভ্রান্তি মসি; তম নিশি, সেই দিন সুপ্রভাত হয়েছে।
আমার হৃদাকাশে চিদানন্দ, রবি উদয় হয়েছে।।
হেরে আনন্দ ভাষ্কর, ভয় পেয়ে ছয় রিপু তস্কর,
ভেবে তারা বিষম দুষ্কর, হারে পলায়ে গিয়াছে,
আমার হৃদ সরোজে, শান্তিময়ী পুষ্কর বিকাশ হয়েছে।।
পূর্ব্বাহ্ন কি সায়হ্ন, আমার সব ঘুচে হল মধ্যাহ্ন,
শ্রীগুরুর কৃপা ধন্য, সন্ধ্যাকে বন্ধ্যা করেছে,
তাইতে না পেলাম ঠিক, সন্ধ্যা আহ্নিক, আত্মা তম্ময় হয়েছে।।
পোহাল তমঃ নিশি, অনুরাগ এক সিংহ আমি,
চিত্ত গিরি শৃঙ্গে বসি, হারে সে হুষ্কার করতেছে,
আমার কাম ক্রোধরূপ, হস্তী শার্দ্দুল, ভয়ে পলায়ে গিছে।।
হেরে সেই রূপের আলো, নিরানন্দ উলুক লুকাইল,
জ্ঞান আত্মার মত্ততা গেল, জ্ঞান শূন্য বিরাগ এসেছে,
তারা আলোক পেয়ে, পুলক হয়ে দোহে নৃত্য করতেছে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, আমার হরি সূর্য্য হল উদয়;
কু-আশা কুতম লুকায়, জীবের আর ভাবনা কি আছে;
ভেবে অশ্বিনী কয় হরি বিনে, ভবে বন্ধু কে আছে।।
১১২নং তাল - আদ্দা
গুরু পতির বসে বামে।
ও তোর এ দেহ দক্ষিণা দিয়ে, যেও না দক্ষিণাশ্রমে।।
গুরু সন্তোষ অন্তঃপুরে, বসে থাক মন জ্যোতির ঘরে,
তবে ঐহিকে পর পুরুষ তোরে, ছোবেনা মন কোনক্রমে।।
গুরু শাসন শাশুড়ীর পায়, ভক্তি রেখ রে মন সদায়;
তবে বধুভাব হইবে উদয়, থাকবিরে মন শান্তিধামে।।
গুরুচিন্তা শঙ্খ শাড়ী, সাধ করে মন ধারণ করি,
গুরুকৃপা শয্যায় শয়ন করি, মজে থাক মন গুরুর প্রেমে।।
গুরু প্রতি করলে রমণ, পুত্র হবে মনের মতন,
ও তোর অনুরাগ হইবে নন্দন, কন্যা হবে ভক্তি নামে।।
তারক চাঁদের বাক্য ধর, গুরু পতির কারণ কর,
স্বামী মহানন্দের দয়া বড়, অশ্বিনী কেন ডুবলি ভ্রমে।।
১১৩নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ প্রেমের আগুণ লাগল গায়।
আমার হৃদ কাননে, আগুণ লেগে, ধর্ম্ম মন্দির দগ্ধ হয়।।
মন্দিরে পুণ্য ধন ছিল, ও তা পুড়ে ছাই হল,
আমার সাধন ভজন, গিল্টির গহনা, সব পুড়ে গেল;
আমার ঘৃণা আসন লজ্জা বসন গো,
এক কালে পুড়ে হ’ল ভষ্মময়।।
অনলের সহায় মন পবন, প্রেম ঘৃত ঢালছে গুরু ধন,
আমার হিংসা নিন্দা, মহিষ গন্ডার, মল অগনণ,
ও সে কাম বাঘিনী ত্য’জল জীবন গো
ক্রোধ গজ পুড়ে ধরনী লোটায়।।
কুলমান পড়সী যারা, দেশ ছেড়ে পলা’ল তারা,
আমার মুক্তিবাগে, আগুন লেগে, পুড়ে হয় সারা,
আমার যোগ নিদ্রা, বিমাতা ছিল গো,
অষ্টপাশ ছেড়ে মা, পালায়ে যায়।।
প্রতিষ্ঠা ভগিনী ছিল মোর, অনল দেখে সে করে সোর,
আমার প্রেমের আগুণ, নিবাইতে ক’রল বহু জোর,
ও তার পূড়ে গেল, মান্য বাসর গো,
তাই দেখে বিবেক, ভাই নেচে বেড়ায়।।
অনলের তরঙ্গ দেখে, তারকচাঁদ বলেছে ডেকে,
ও তোর জীবন যৌবন আহুরি দে, কাজ কি প্রাণ রেখে;
গোঁসাই মহানন্দ, বলছে সুখে গো
অশ্বিনীর মহাযজ্ঞের সময় যায়।।
১১৪নং তাল-একতালা
করেছি মহাযজ্ঞের আয়োজন।
লয়ে যজ্ঞেশ্বরী, এস হরি, ক্ষীরোদশায়ী নীরদবরণ।।
জ্বালিয়া বিচ্ছেদ হুতাশন, এ দেহ কাষ্ঠ সম্মিলন,
আমার হৃদয় ঘটে, চিত্তপটে দিয়াছি আসন,
আমার ভজন পূজন, অশ্ব দিব গো
আহুতি দিব এ জীবন যৌবন।।
করিব পুণ্যক্ষয় যজ্ঞ, ধর্ম্মকে করলেম উৎসর্গ,
পঞ্চবিধা ভূক্তি মুক্তি, দিব তায় অর্ঘ্য,
আমি বর্গফল, আমেশ্বর দিব গো,
এ যজ্ঞে দিব, প্রতিষ্ঠা চন্দন।।
এ যজ্ঞের শুন পরিণাম, সর্ব্বস্ব ত্যাগ সর্ব্বস্ব বাম,
নাহি স্বর্গ নাহি মর্ত্ত্য, ফলে নিষ্ফল কাম,
আমা লক্ষ্মী ভাগ্য যজ্ঞে দিব গো,
মনেতে করেছি এই আকিঞ্চণ।।
দশ দশা দশমী দিনে, রসে প্রেম গঙ্গা পুলিনে,
আমি মহাযজ্ঞ, সঙ্গ করিব, যোগাসনে,
যে দিন, ব্রহ্মরন্ধ্য যাবে ফেটে গো,
সেই দিন হবে যজ্ঞ সমাপন।।
স্বামী মহানন্দ কয়, এই দশা ঘটবে যে সময়,
আমার হরিচাঁদের শীতল কিরণ, লাগবে তখন গায়,
ওরে অশ্বিনী তুই হ নিরাশয় গো,
এ যজ্ঞের ফলে কি তোর প্রয়োজন।।
১১৫নং তাল-রাণেটী
(আমার) আর কবে ঘুচিবে গুরু, সাধন ভজন পৈশাচ বৃত্তি।
আমার সুখাভিলাষ, হবে বিনাশ, গুরুপদে হবে আর্ত্তি।।
নিষ্কাম বৃক্ষের মূলেতে যাব (হারে) বিচ্ছেদ অগ্নিকুন্ড জ্বেলে বসিয়া রব।
(আমি) চিন্তাভষ্ম গায় মাখিব, (ও গুরু আমি) কাঁদব বলে গুরুপতি।।
ধর্ম পূণ্য হবে বিসর্জন, কবে হবে গুরুপদে আত্ম সমর্পণ।
আমার জ্ঞান পুত্রের হইবে মরণ, (ওরে) ঘটবে প্রেম অবলার রীতি।।
কবে আমার ঘুচবে শুচি বাই, অঘোর পন্থী হয়ে সদা কাঁদিয়া বেড়াই।
(আমি) সন্ধ্যার মুখে মাখিয়া ছাই, (ও কবে) মধ্যাহ্নকে করব স্থিতি।।
কবে আমার ঘুচবে আমিত্ব, গুরুর পদে মন মজাইয়ে করিব নৃত্য।
(আমি) হব গুরুর অনুগত, (আমার) জ্বলবে হৃদয় বিচ্ছেদ বাতি।।
দয়াল মহানন্দ আনন্দ রবি, কবে হৃদয় উদয় হবে (আমি) বসে তাই ভাবি।
গোঁসাই তারকচাঁদ কয়, দেখতে পাবি (ওরে) অশ্বিনী হ’ ছন্নমতি।।
১১৬নং তাল-গড়খেমটা
আমায় কি সপ্ন দেখালে, গুরু স্বপ্ন দেখালে।
আমার সর্ব্বস্ব ধন,করে হরণ, আজ আমার দেউলা নাম লেখায়ে দিলে।।
আমার দেহ জমি, রাজ্য ভূমি, বাকীর দায় নিলাম করিলে,
আমার বাস্তু বাড়ী, নিলে কাড়ি, আজ আমায় চিন্তা কান্থা গলায় দিলে।।
আমার সাধন ভজন, ভ্রাতা দুজন রাজ্য হতে তাড়িয়ে দিলে,
আমার পুণ্য অর্থ, ছিল যত, আজ হতে খাস বাজারে লুঠাইলে।।
আমার সুখ সুন্দরী, বিলাস নারী, ছিলাম যাহার মায়ায় ভুলে,
আমার দুঃখের ভরা, দেখে তারা, সেও আমাকে গেল ফেলে।।
আমার শুচি মাতা, আচার পিতা, চিরকাল যার ছিলাম কোলে,
আমার দশা দেখে, মনের দুঃখে, তারা আমায় ফেল্ল ঠেলে।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, অশ্বিনী তুই অবোধ ছেলে,
যারে মাতা ছাড়ে, পিতা ছাড়ে, অন্তিমে হরিচাঁদ তারে করে কোলে।।
১১৭নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ দৃষ্টি ভূতে, ভুতে পেল যারে।
কি অদ্ভূদ সেই ভূতের দৃষ্টিরে,
পঞ্চ ভূতের দফা সারে হারে কর্ম্ম সারে।।
নাই তার গুরু জনার ভয়, কণ প্রলাপ বাক্য কয়,
কখন হাসে কখন কাঁদে, কখন ধূলায় গড়ি যায়,
কখন বীরাচারে, হুঙ্কার ছাড়েরে,
কখন করুণ স্বরে রোদন করে, কত রোদন করে।।
নিরাশ্রয় ছাড়া ভিটায় রয়, নাই তার ঘৃণা লজ্জার ভয়,
আহার বিহার পরে, জীবের লাগে ভয়,
ও তার লস্ফ ঝম্প, দেখলে পরে,
কত গৃহবাসী গৃহ ছাড়ে, হারে গৃহ ছাড়ে।।
ভৈরবী ভৈরব রবে, কি যেন বলে কি ভেবে,
সে ভারতী বুঝতে শক্তি, ধরে কি সবে; ও তা বুঝলে,
পরে, কর্ম্ম সারে, অমনি দৃষ্টি ভূতে ধরে তারে, হারে ধরে তারে।।
দৃষ্টি রোগের নাহিকবিধান, আয়ুর্ব্বেদ খুজিলে নিদান,
তন্ত্রে মন্ত্রে সারে না রোগ, হল বৈদ্য হতজ্ঞান; কত ওঝা
বৈদ্য হল হদ্দ, দৃষ্টি রোগ না সারতে পারে, হারে সারতে পারে।।
সে রোগের রোগী হীরামণ, গোলোকচাঁদ মৃত্যুঞ্জয় লোচন,
যার হয়েছে দৃষ্টিরোগ, সে আর সারবে না কখন,
বলে গোঁসাই তারক, সে দৃষ্টিরোগ,
অশ্বিনী তোর ঘটল নারে, হারে ঘটল নারে।।
১১৮নং তাল - একতাল
হরি প্রেম মদের নেশা, নেশা যার লেগেছে।
হয়ে মত্ত মাতাল, হালছে বেহাল, প্রেমের মদ খেয়ে,
সে মেতে গিছে, হারে মেতে গিছে।।
গাঁজা ভাং ধুতরায় কি করে, মুষ্টিযোগ দিলে যায় সেরে,
যার লেগেছে, প্রেমের নেশা, ও তার অনুক্ষণ বাড়ে,
ও সে নেশার ঝেঁকে প্রলাপ বকে, সাইজি বলে হাই ছাড়তেছে, শুধু হাই ছাড়তেছে।।
প্রেমের নেশার নাই বিরাম, তিলেক দন্ডে নাই আরাম,
কখন বলে হরেকৃষ্ণ, কখন বলে রাম, ও সে নেশার ভরে,
নৃত্য করে, নয়ন জলে ভাসিতেছে হারে ভাসিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে পাগল, ও সে কেটে ভবের গোল,
আর কোন বোল নাইরে মুখে, কেবল বলছে হরিবোল,
তার হরির নামে, লোমে লোমে সর্ব্ব অঙ্গ জ্বারিতেছে, হারে জ্বারিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে অজ্ঞান, ধর্ম্ম পূণ্য দেয় না স্থান;
অষ্ট পাশের দফা সারা, বেদ বিধি মানবে কেন, ও তার
সন্ধ্যা আহ্নিক, নাই কোন ঠিক, মন মানুষে, মিশে গিছে হারে মিশে গিছে।।
স্বামী মহানন্দ কয়, প্রেমের মদ নিবি কে আয়,
শ্রীগুরুর আনন্দ মেলায়, প্রেমের মদ বিকায়,
বলে তারকচাঁদে, বিষয় মদে, অশ্বিনী ভুলে রয়েছে হারে পড়ে পেচে।।
১১৯নং তাল এক তালা
আমার জন্ম মৃত্যু দুট অশৌচ পল।
তাইতে পূজা ব্রত, হল হত,
আমার বৈদিক ক্রিয়া বাদ পড়িল, হারে বাদ পড়িল।।
হরি প্রেমে রোগে আক্রমণ, আমায় করিল যখন,
ছিল অষ্ট পাশে, মা মহামায়া, ত্যজিল জীবন,
গুরু কৃপা ক্রমে, বিবেক নামে,
সেই দিনে এক পুত্র হল, হারে পুত্র হল।।
ঠেকেছি গুরুদশার দায়, ভাগ্যে কি যেন কি হয়,
শৌচ আচার ত্যাজল আমায়, হ’লেম অশৌচী আশ্রয়,
আমায় সাজিয়ে বেহাল, পথের কাঙ্গাল, ভাবের উত্তরী,
এক গলায় দিল, হারে গলায় দিল।।
শ্রীহরিপদ পদ্ম গয়ায়, শ্রীগুরু পাঠলেন আমায়,
যোগ মায়া জননীর শ্রাদ্ধ করিবার আশায়,
আমার সব ঘুচায়ে মন মুড়ায়ে,
মত পোড়া আউল করিল, আউল করিল।।
কটিতে কটকৌপিন দিয়ে, অনুরাগ ডোর তায় পরায়ে,
নিহেতু এক শিক্ষা শিরে, দিল ঝুলায়ে,
আমায় ভক্তি তিলক ফোঁটা দিয়ে,
বিনা সূতের মালা দিল, হারে মালা দিল।।
মহানন্দের ভারতি, এই রূপে সেজে প্রকৃতি,
দিবা নিশি সেবা কর শ্রীগুরু পতি, অশ্বিনী তোর
কি দুর্গতি, গুরুর প্রতি রতি না হল, হারে মতি না হল।।
১২০নং তাল-কাশ্মিরী
কেউ যদি ঢেউ ধরতে পার, প্রেম সরোবরে।।
অখন্ড ব্রহ্মান্ড সে ঢেউ, চলে ভেদ করে।।
ঢেউ লেগেছে যার অন্তরে, সে কি ঘরে রইতে পারে,
ঝাঁপ দিয়ে সেই প্রেম সাগরে, আর ফিরে এলনা ঘরে।।
ঢেউ লেগে কেউ হয়েছে মাতাল, মাতাইল আকাশ পাতাল,
জয় করে সেই কাল মহাকাল, ঢেউ দিয়ে জগৎ পাগল করে।।
দুই এক জনার যোগ ভাগ্যে, পাগল হল সেই ঢেউ লেগে,
তনুজ্বলে অনুরাগে, প্রেমানন্দে নৃত্য করে।।
ঢেউ লেগে সেই গোলোক পাগল, মুখেতে নাই আর কোন রোল,
জয় হরিবোল গৌর হরিবোল, বলে সদায় হুঙ্কার ছাড়ে।।
মহানন্দ সেই ঢেউ ধরি, রেখেছে ঢেউ হৃদয় পুরী,
মাতাইল পুরুষ নারী, অশ্বিনী তুই মাতলি নারে।।
১২১নং তাল কাশ্মিরী
নিদান বন্ধু বটে, এই ভবের হাটে।
নিদানে পড়িলে মনে কত ভাব উঠে।।
নিদান আমার বন্ধু ধরে যারে, ভোগ বিলাসের দফা সারে,
সুখ পৈশাচি তাড়িয়ে দূরে, দুঃখ সম্পত্তি দেয় গো জুঠে।।
সুখ পেলে মন রয় না বাটী, ধরতে চায় সে বিষের বাটি,
বোঝাই করে ময়লা মাটী, ডুবে মরে ভবের ঘাটে।।
দুঃখ ভার্য্যা তাপ রজকিনী, মনের ময়লা ঘুচান তিনি,
দন্ড সাবান জ্বালিয়া ধনি, মনকে কাচে শাসন পাটে।।
দীন বন্ধু হরি যিনি, নিদানেরই বন্ধু তিনি,
তত্ত্ব জেনে শূলপানি, সদায় সে শ্মশানে ছোটে।।
দয়াল মহানন্দ বলে, গুরু দন্ড না হইলে,
কিসে মনের ময়লা খোলে, অশ্বিনী তুই যাস না চটে।।
১২২নং তাল কাশ্নিরী
মন চল যাই বিদেশ ছেড়ে নিবৃত্তিপুরে।
তথায় আছে শান্তি মা আমার, দেখ মন্দিরে।।
বিদেশে বাণিজ্য দিয়ে, মা আছেন পথ পানে চেয়ে,
ভুলে রলি কি সুখ পেয়ে, এদেশে তোর বন্ধু কেরে।।
হয়ে রলি মায়ার সেবক, খুলে ফেল মণি মজক,
দুদিন পরে দেখবি নরক, দেশে যাওয়া হবে নারে।।
এদেশে রয় দিশে হরি, দিক ভুলায়ে করে চুরি,
নৌকায় দিবে কুঠার মারি, আপন আপন বলিস যারে।।
ধন অনুরাগের বৈঠে বেয়ে চল প্রেমের হাটে,
নাও লাগাসনে ভবের ঘাটে, শুল্লুক জাহাজ যাচ্ছে বুড়ে।।
গুরুচাঁদ তাই করছে মানা, ভবের ঘাটে কেউ যেওনা,
অশ্বিনী তোর মন ভালনা, ডাকলে কেন শুননারে।।
১২৩নং তাল - কাশ্মিরী
মনে ভাবি কাঙ্গাল হব, বেহাল সাজিব।
ছেড়া কান্থা করিয়া ধারণ, গাছতলায় যাব।।
মহামায়া মাতা যিনি, কাতর বাক্যে বলেন তিনি,
কোথায় যাওরে যাদুমণি, কোন প্রাণে তোরে বিদায় দিব।।
প্রবৃত্তি মহিষী এসে, বাঁধতে চায় সে ভোগ বিলাসে,
ভুলাতে চায় মায়া রসে, কেমনে তারে প্রবোধ দিব।।
লোভ মোহ পুত্র ছয়জন, বিনয়বাক্যে করে বারণ,
পুত্রের মায়া করে ছেদন, প্রানান্তে যেতে দিব।।
আমোদ আহলাদ প্রতিবেশী, যাত্রা ভঙ্গ করে আসি,
কি দুঃখে হও বিদেশবাসী, গৃহে তোর কি অভাব।।
পাগলচাঁদ কয় অনুরাগে, আর কতকাল মরবি ভুগে,
অশ্বিনী তুই এই সুযোগে, বাহির হ তোর সঙ্গে যাব।।
১২৪নং তাল -
আমি পিতৃমাতৃ হলেম ত্যাগী বিষয় বিরাগী।
ঘরে বসে কাঁদিবে বিলাস, ভার্য্যা অভাগী।।
ত্যাগ করিলাম পুত্র কণ্যে, গৃহে থাকি যাহার জন্যে,
মন মতি হয়েছে হন্যে, কি যেন কি বস্তু লাগি।।
পিতা কাঁদলে করে হায় হায়, কঠিন পাষাণ বলি তোমায়,
বল ভবে কেউ কারো নয়, পাষাণে বুক বাঁধ রাখি।।
পাখী যত আছ ডালে, মা কাঁদিলে পুত্র বলে।
তোমরা ডেক মা বোল বলে, প্রহরে প্রহরে জাগি।
ভার্য্যা কাঁদলে চিকন স্বরে, কাল ভ্রমর কই তোমারে,
বুঝাইও গুণ গুণ স্বরে কেউ কারো নয় দুঃখের ভাগী।।
গুরুচাঁদের শাসন চোটে, ভব বন্ধন গিছে কেটে,
কাঁদতে হবে ঘাটে মাঠে, অশ্বিনী হও প্রেম বৈরাগী।।
১২৫নং তাল - কাশ্মিরী
এই দেখা ত শেষ দেখা ভাই, বালাই লয়ে যাই।
এ ক্ষেপে দেখা পাই কি না পাই।।
দেখা হল কত শত, হয়না দেখা মনের মত;
মনের দুঃখ আর বলব কত, জন্মের মত বিদায় হতে চাই।।
যা হবার তা হয়ে গেল, ভবের খেলা সাঙ্গ হল;
বন্ধুবর্গে হরিবল, যার আমি ভাই তারে যেন পাই।।
১২৬।
সমর্পিত দেহ মম আমিত্ব কি আর,
আমিত্ব স্বামীত্ব তুমি সর্ব্ব মূলাধার।।
মহাভাব ভাবিনীর বশে, মহাসাগর মহারসে,
দেহ তরী যাচ্ছে ভেসে, না পেলাম কিনার।।
তুমি নিত্য নবীন নেয়ে, এ তরীর কান্ডারী হয়ে,
প্রেম সাগরে বেড়াও বেয়ে, ওগো গুণধার।।
তব কৃপা-অনুযোগে, হরিণাম বাতাসের বেগে,
চ‘লছে তরী অনুরাগে, আনন্দ বাজার।।
গুরুর কৃপায় ঘুচলো ভ্রান্ত, আমি কান্তা, তুমি কান্ত,
পূর্বের মন যদি তাই জানত, থাকত না বিকার।।
স্বামি মহানন্দ বলে, মন প্রাণ না সপিঁলে,
কোথায় হরি পতি মেলে, অশ্বিনী বর্ব্বর।
১২৭।
বিপদ সুপদ মন , উভয় একাকার ।
নিরাশা দরিয়ার মাঝে, দিয়াছি সাঁতার।।
সুমতি কুমতি দুজন, দ্বন্ধ ঘুচে হল এক মন,
হ‘য়ে তারা প্রেমের ভাজন, হ‘ল নির্ব্বিকার।।
ভক্তির কণ্টক যে পঞ্চজন, প্রেমানলে হল দাহন,
তাই দেখে ছয়জন, কাঁদে অনিবার।।
প্রেমানুরাগ হব বলে, ভাসিতেছে নয়ন জলে,
ঝাঁপ দিতে চায় প্রেম সলিলে, অকুল পাথার।।
প্রেম উন্মত্ত হয়ে সবে, হুঙ্কার ছারে সিংহরবে,
প্রাণ দিয়ে সেই প্রাণ বল্লতে, কামনা কি আর।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র, মহানন্দের কি আনন্দ,
দেখলি না অশ্বিনী অন্ধ, আনন্দ অপার।।
১২৮।
যারে নয়ন ধরগে তারে, যে রূপে প্রাণ নিল হরে,
দেখতে দেখতে নয়ন তারে, পলক দিতে যায় গো সরে।।
তুই নয়ন মোর বান্ধব ছিলি, তবে কেন পলক দিলি,
পলকে রূপ হারাইলি, আর কি দেখা পাব ফিরে।।
তুই নয়ন থাকতে প্রহরী, তবে কেন সেই চোরা হরি,
মন প্রাণ করে চুরি, আমায় যায় পাগোল করে।।
যে রূপেতে মন মজিলো, সেও যদি আজ ছেড়ে গেল,
এ জীবনে কাজ কি বল, কাজ কি এ ছার জীবন ধরে।।
মন প্রাণ দিলাম যারে, সেও যদি আজ না চায় ফিরে,
এ দুঃখ আর বলব কারে, ওই দুঃখে মোর বুক বিদরে।।
গোলকচাঁদের মনচোরা, মহানন্দের মনোহরা,
ধরবি যদি অধর ধরা, অশ্বিনী থাক জীয়ন্তে’রে।।
১২৯।
হরি দয়াময় , করলে কি আমায়
তব বিচ্ছেদ জ্বরে , দহিছে হৃদয়।।
প্রেম দাহানলে, সদায় মরি জ্বলে
এই ছিল কপালে, করি কি উপায়।।
তব বিচ্ছেদ জ্বর, হইলো প্রবল
চিন্তা পথ্য তায়, কুপথ্য ঘটালো।।
স্বাত্বিক বিকারে, খেত বৃদ্ধি করে
হরি বিনে, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
বুঝতে নারি গতি, যেন সান্নিপাতি
দুরন্ত পিপাসা, না হয় নিবৃতি।।
দুর্ব্বৈদ্য আসিয়া, শিয়রে বসিয়া
এক বিন্দু বারি না দিল আমায়।।
অধৈর্য্য উলূর্ব্বান, নাহি কোন ঞ্জান
জলধর বিনে, জ্বলে যায় প্রাণ।।
জ্বরে তনু জ্বর, শুষ্ক ওষ্ঠাধার
নিরস রসনা, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
তৃস্না-তন্দ্রা-নিদ্রা, মোহ কম্পকায়
স্বেদ অশ্রু পুলক, বিকারে প্রাণ যায়।।
হেন নাহি বন্ধু, হরি কৃপাসিন্ধু
এক বিন্দু বারি, এনে দেও আমায়।।
বলে মহানন্দ, হরি প্রেমসিন্ধু
অশ্বিনী তোর ভাগ্যে, ঘটলনা এক বিন্দু।।
গুরুচাঁদের পদ কররে সম্পদ,
তবে পাবি সে ধন শ্রীগুরুর কৃপায়।।
১৩০।
হরি নামে পাপ খন্ডে, কহে কোন ভন্ড
হরিভক্ত এমনি শক্ত, চায়না সে বিধাতার ব্রহ্মাণ্ড।।
‘হ’কার উচ্চারনে মাত্র, অষ্টাদশ সিদ্ধি হয় প্রাপ্ত
ভুক্তি মুক্তি দূরীভুত, লুক্কায়িত কর্মকান্ড।।
‘রি’ কার উচ্চারণ হলে, অনর্পিত প্রেম ফলে
মোক্ষ ফল সে ফেলায় ঠেলে, ধর্ম্ম তার কাছে হয় দণ্ড।।
হরিভক্ত সিংহ-শাবক, অন্তরে অনুরাগ পাবক,
নরের আর থাকেনা নরক, শরণ নিলে তিলেক দণ্ড।।
গঙ্গাস্নানে পাপ হত, গঙ্গাকে করে পবিত্র
পরশ মাত্র হরিভক্ত, সাধু হয় যত পাষন্ড।।
গোসাঁই তারকচাঁদের বাণী, শ্রবণ মাত্র হরি ধ্বনি
প্রাপ্ত হয় প্রেম আহলাদিনী, অবিশ্বাসী অশ্বিনী ভন্ড।।
Social Counter
Comments