‘‘ নন্দের নন্দ দুলাল শ্রী শ্রী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুর’’
‘‘শ্রী হরি চাঁদের সত্তা গুরু চাঁদ মাঝে।
সেই হরি গুরু শক্তি গোপালে বিরাজে’’।
বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত মোড়েলগঞ্জ থানার লহ্মীখালী গ্রামে ১২৮০ বঙ্গাব্দে বুদ্ধ পূর্নিমাতে সোমবার প্রাতে গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম- শ্রী রামচরন হাওলাদার, মাতার নাম- কালীতারা, স্ত্রীর নাম কাঞ্চন দেবী, গোপালের দুই পুত্র- হরষিদ ও কাশিনাথ এবং তিন কন্যা- সহচরী, মানিক্য ও সাবিত্রী। গোপাল চাঁদের গুরু ছিলেন শ্রী দেবী চাঁদ। পারিবারিক পরিচয়ে তিনি ছিলেন গোপাল চন্দ্র হাওলাদার। আর ভক্ত মহলে গোপাল সাধু হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত।
গোপাল সাধু ছিলেন ধর্ম ও কর্ম জীবনে সার্থক পুরুষ। লহ্মীখালী ছিল তার সাধন পীঠ এবং সমগ্র বঙ্গভূমি, আসাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চল ছিল তাঁর মতুয়া ধর্ম প্রচারের প্রধান কর্মক্ষেত্র। মতুয়া ধর্ম প্রচারের জন্য গোপাল চাঁদ সর্বস্ব ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেন নাই।
গোপাল সাধু সম্পর্কে আচার্য্য মহানন্দ হালদার বলেছেন
‘‘লইয়া নামের যাদু, আসিলে গোপাল সাধু,
নিজে মেতে মাতায় অপরে।
যে দিকে যেখানে যায়, নরনারী পিছে ধায়,
দেয় নাম গিয়ে ঘরে ঘরে।।
গোপাল সাধু মতুয়া ধর্মান্দোলন ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ সংগঠকই মাত্র ছিলেন না, তিনি শ্রী শ্রী গুরুচাঁদের সর্ব কর্মের ও ইচ্ছা পূরনের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি।
শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের শ্রীমুখের বানীঃ-
যারে দেখে প্রভু তারে ডাক দিয়া কয়।
অসম্ভব কথা এক শোনো মহাশয়।।
আমার একটি শিষ্য নামেতে গোপাল।
বাস করে বাদা বনে শুধু নোনা জল।।
উপরে দেখিলে তারে বোঝা নাহি যায়।
মহা শক্তিশালী বলে সেই মহাশয়।।
বহু কিত্তি আছে তার যাহা শোনা যায়।
দেশ বাসী সবে তার জানে পরিচয়।।
......................................
........................................
........................................
এতবড় দানবীর দেখিয়াছ চোখে?
বারুনীতে এসো আমি দেখাব তাহাকে।।
(শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিত ২১৮-১৯ পৃষ্ঠা)
শ্রীমৎ তারক সরকার রচিত শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত (সিদ্ধান্ত পুরান) গ্রন্থ খানি মুদ্রনে সম্পূর্ন ব্যয়ভার শ্রী শ্রী গোপাল সাধু বহন করেছেন (৫০০-৭০০)। [কলিকাতার ছিদাম মুদী লেনের ‘‘শাস্ত্র প্রাচার প্রেস’’ থেকে সর্ব প্রথম ‘‘লীলামৃত’’- গ্রন্থ মুদ্রিত হয়।] ১৩২৩ বঙ্গাব্দে প্রথম শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত মুদ্রিত হয়। শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের পৌত্র প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের ব্যারিষ্টারী পড়ার জন্য ও সতুয়াবাদের মান উন্নয়নের জন্য ১৪ হাজার টাকা এবং ভারতে শ্রীধাম ঠাকুর নগর গড়তে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন (সর্বোচ্চ দান)। গোপাল সাধু লহ্মীখালীর নিজ বাড়ি গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে উৎসর্গ করেছেন। মতুয়া ধর্ম প্রচারের জন্য সেই যুগে শ্রী গোপালের এত বড় দান, ত্যাগ ভাবতেও অবাক লাগে তার সর্বত্যাগী নিঃস্বার্থ আত্মদানে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ গোপাল চাঁদকে হৃতয় দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি মতুয়া হতে চাও, তবে লহ্মীখালী যাও’’। মতুয়া ভক্তদের মধ্যে এক মাত্র গোপাল সাধুকেই ‘‘সাধু’’ উপাধী দিয়ে ভূষিত করেন শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর।
শ্রী গোপাল সাধু শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি লহ্মীখালীতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়া শ্রী শ্রী গুরু চাঁদের আদেশে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন।
Social Counter
Comments