গান নংঃ ৫১-৭০
৫১ নং তাল - গড়খেমটা
আমার মন মধুকর হওরে বিভোর প্রেম মধুপানে।
ভক্তি পাখা তোল উড়ে চল, প্রেমমধু আছেরে মন যেখানে।।
শ্রীগুরু পাদ পদ্ম কাননে,
গুণ গুণ স্বরে যাও উড়ে মধু যেখানে;
মত্ত হও প্রেম মধু পানে, ভুলে আর যাসনে আর যাসনে বিষয় কাননে।।
গুরু কল্প করুণা ডালে,
গুরুকৃপা চাকে মনের সুখে রও কুতুহলে;
এবার সাধুসঙ্গ ফুলে ফুলে মধুপান করবে রাত্রি দিনে।।
মতুয়া ময়রা রসের দোকানে
বিরাগ ভরে যাওরে উড়ে আনন্দে মনে,
প্রেম রসগোল্লা রস পানে, শান্তি পাবি সে রস আস্বাদনে।।
মধুর মর্ম্ম জেনে হীরামন,
শ্রীগুরু পাদ পদ্ম বনে থাকে অনুক্ষণ;
দশরথ মৃত্যুঞ্জয় লোচন, মধু পান করে প্রফুল্লমনে।।
গোঁসাই গোলোকচাঁদ সেই মধুর মহাজন,
দয়াল মহানন্দ ঘরে দুই করছে বিতরণ,
স্বামী তারকচাঁদের এই আকিঞ্চণ, অশ্বিনী মত্ত হও মধুপানে।।
৫২ নং তাল - গড়খেমটা
এবার সুখ হলনা বসত করে নবরত্নের ঘরে।
ঘরে কাল কামিনী, দিন রজনী চিন্তানলে দগ্ধ করে।।
তিন গুরু ঐক্য হয়ে অষ্টাদশ রস মিশায়ে,
সাধের ঘর গড়াইয়ে, দিয়াছে ঠিক করে,
ও তার দুই খুটির পর পাড়েম সারা, তিন গুণেতে বন্ধন করে।।
শ্রীগুরুর অপার কীর্ত্তি, মটকার পর দুটো বাতি;
জ্বলতেছে দিবারাতি, জগৎ আলো করে;
সাড়ে চব্বিশ চন্দ্র বন্দে বন্দে, রয়েছে ঘরের ভিতরে।।
বাম দক্ষিণে রবি সোম, ক্ষিতি অপ তেজ, মরুৎ ব্যোম;
পঞ্চ তত্ত্বে পুরো দোম, রেখেছে মন্দিরে;
ও তার আগম নিগম জানলে পরে, আব্রক্ষ্ম ভেদ করতে পারে।।
শ্রীগুরু যত্ন করে; অমূল্য রত্ম পূরে;
রেখেছে সাধের ঘরে, সাত তালার উপরে;
এমন অমূল্য ধন থাকতে ঘরে, ভক্তি রতন কিনলি নারে।।
ডেকে কয় মহানন্দ, ছেড়ে দে চিত্ত সন্দ;
অশ্বিনী অজ্ঞানান্ধ, বলব কি আর তোরে;
আমার হরিচাঁদ এ ঘরের মালিক, দেখলি’না রূপ নেহার করে।।
৫৩ নং তাল - গড়খেমটা
কারণ যুদ্ধ কর ধনুক ধর, শ্রীগুরুর সনে।
আপন মন হলে সই, সমরে জয়ী, হবি মন শঙ্কা কি আছে মনে।
শ্রদ্ধারথে করি আরোহণ,
ভজন পূজন অশ্ব যুড়ি করতে চল রণ;
সারথি সাজাও মন পবন, মনা ভাই হানা দে গুরুর রণে।।
অনুরাগে ছাড় হুঙ্কার;
জয় হরিবোল বলে দাও মনধনুকে টঙ্কার;
সমরতে হও অগ্রসর, সাজায়ে সামর্থ্য সৈন্যগণে।।
জ্ঞান ধনুকে যুড়ে ভক্তি বান,
গুরুর প্রতি শীঘ্রগতিকর সু-সন্ধান;
সমরেতে হয়ে সাবধান, ভক্তিবান হান গুরুন চরণে।।
করণ যুদ্ধ করে গোলোকচাঁদ,
হরিচাঁদকে প্রাপ্ত হল পেতে প্রেমের ফাঁদ;
তাই স্বহস্তে লিখলেন তারকচাঁদ; হরিচাঁদ রামরূপ দেখায় হীরামনে।।
গোঁসাই মহানন্দ করিয়া গর্জ্জন,
ডেকে বলে অশ্বিনী তুই যুদ্ধের কথা শোন।
যদি গুরু সঙ্গে করিবি রণ, পলক মারিসনা দুই নয়নে।।
৫৪ নং তাল - গড়খেমটা
ভক্তি রতন না থাকিলে, কৃষ্ণ ধন কি মিলে।
ভক্তির বাধ্য ভবারাধ্য, নন্দের রাধা রয় গোকুলে।।
(হায়) ভক্তির গুণে ব্রজঙ্গনা, কৃষ্ণ পতি পেলে;
ভক্তির গুনে রাইচরণে স্বহস্তে দস্তখত দিলে।।
ভক্তির গুনে প্রহলাদ ভক্ত, কৃষ্ণ ধনকে পেলে;
ভক্তির জোরে, দীন দয়াময়, বিদুরের ক্ষুদ খেয়েছিলেন।।
ভক্তির গুনে যুদ পতি, পাণ্ডব সখা হলে;
ভক্তির গুণে, দীন দয়াময়, বিদুরের ক্ষুদ খেয়েছিলেন।।
ভক্তির গুণে গুহক চণ্ডাল, রাম’মিতে হলে;
ভক্তির গুনে হনুমান’ত, রামরূপ দেখে হৃদকমলে।।
ভক্তির গুণে গোলোকচন্দ্র, হরিচাঁদকে পেলে;
ভক্তি শুন্য দীন দৈন্য অশ্বিনী, তুই রইলি ভুলে।।
৫৫ নং তাল - যৎ
তৃণ হতে সুনীচেন, নৈলে কি প্রেম ঘটে।
কৃষ্ণ প্রেমের নিু গতি, উর্দ্ধেতে প্রেম রয় না মোটে।।
প্রেম পথের কন্টক পঞ্চ, সাধু শাস্ত্রে রটে;
জাতি বিদ্যা মহতঞ্চ, রূপ যৌবন’রে বটে।।
যোগী ঋষি কি সন্ন্যাসী, যে প্রেম পায়না মোটে;
গোপী কপি প্রাপ্ত হল, রামে শ্যামে হয়ে নিষ্ঠে।।
রুহিদাস সে’নত গুণে, কৃষ্ণ প্রেম তার ঘটে;
গঙ্গা বলে ডাকলে পরে, চর্ম্মকাঠয় গঙ্গা উঠে।।
কৃষ্ণ প্রেম সিংহ দুগ্ধ, সুনির্মল মিঠে;
সুবর্ণ পাত্রেতে রয় প্রেম, মেটে পাত্র যায় গো ফেটে।।
পদ শুন্য প্রেম উদয় হল, হরিচাঁদের হাটে;
সবার ভাগ্যে প্রাপ্ত হল, অশ্বিনীর ঘটল না ঘটে।।
৫৬ নং তাল - ঠুংরী
গুরু নিষ্ঠা নামে রুচি হল কই।
অবোধ মন তোরে কই।।
(ও মন) যার হয়েছে নামে রুচি, মুচি হলে সর্ব্বশুচি;
নাম বিরুচি ব্রাহ্মণে কুলাবে কই।
যে হয়েছে গুরুনিষ্ঠ, চন্ডাল হলে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ, ভাগবতে প্রমাণ সই।।
যত্নে গুরু বৈদ্য ধর, নামৌষধি সেবন কর,
কাম কুপথ্য ছাড়, রোগ আরোগ্য হই।
করিলে নিষ্কাম পথ্য, এ দেহ হবে সামর্থ্য, হবিরে মন সর্ব্বজয়ী।।
সাধুসঙ্গ কর মুষ্ঠিযোগ, আরোগ্য হবে ভবরোগ;
আর কত ভুগবি রোগ অবধমন তোরে
না হয় অনুরাগের তেঁতুল গুলে, পান কর মন হরিবলে;
নব রসের ডাবের জলে মহাভাবের কাঁচি দই।
পান কর মন শ্রদ্ধা করে, ভব রোগ তোর যাবে সেরে; জানবিনা আর গুরু বই।।
গোঁসাই তারকচাঁদ কয় হওগে খাঁটি, ছেড়েদে সব ময়লা মাটি;
অসৎ পচাল পঁচাপুটি ভব রোগের বৃদ্ধি ঐ।
মহানন্দের ভাগসাগরে, ডুব দেরে তুই বিরাগ ভরে; অশ্বিনী তোরে সুধাই।।
৫৭নং তাল - ঠুংরী
পতিত পাবনে হবে রণ।
সমরে সাজ মন।।
(ও মন) তুই পতিত, হরি পাবন, সম্মুখ যুদ্ধে হানা দে মন,
মন্ত্রে সাধন না হয় এ দেহ পতন।
তোর পাপ সেনা মদ মত্ত, নাম অস্ত্রে হবে হত, কামাদি সৈন্য ছয় জন।।
ভবরঙ্গ মঞ্চ মাঝে, কুহকিনীর মায়ায় মজে,
চল্লিনা মন আপন বুঝে কি কারণ।
তোর তমঃ দেখে দীনবন্ধু, সঙ্গে সৈন্য ভক্তবৃন্দ, রণে এল হরিধন।।
হরি এল হ’য়ে বক্র, করে ল’য়ে দেয়া চক্র;
কা’টবেরে তোর মায়া নক্র ক’রছে পণ।
তোর কুমতি মন্ত্রীর মুন্ড, ভাঙ্গবে মেরে দয়াদন্ড, হ’বে না তাহা খন্ডন।।
তোর হিংসা নিদআর বংশাবলী, কেটে দিবে জলাঞ্জলী,
যার বলে তুই এত বলি, বলি শোন।
তোর অজ্ঞান অহঙ্কার বংশ, সবংশে করিবে ধ্বংশ, এল রসিক হংসগণ।।
হরিচাঁদের সেনা গোলোক, রণে এল হ’য়ে পুলক;
হঙ্কারে যার কাঁপে গোলোক বৃন্দাবন।
দয়াল মহানন্দের বাণী, শোনরে দুর্ম্মতি অশ্বিনী, এ রনে ভাল মরণ।।
৫৮নং তাল - ঠুংরী
দেহ লঙ্কার শঙ্কা ঘুচাও দয়াময়।
দুর্ম্মতি দুষ্ট দশানন, বাঁচি না তার যন্ত্রনায়।।
শান্তি সীতে অন্বেষণে, পাঠাও দাস্য হনুমানে;
গিয়ে মুক্তি আম্র বনে; খেয়ে করুকচূর্ণ তায়,
প্রেমের আগুন জ্বালাইয়া, মায়া মন্দির পোড়াইয়া, করুক লঙ্কা ভষ্মময়।।
আমার কামরূপ সাগর বন্ধন করি, লঙ্কায় যাও রাম ধনুকধারী,
সাঙ্গোপাঙ্গ সঙ্গে করি, এস হরি রসময়।
সে অলস পাপী কুন্তকর্ণ, স্বহস্তে তায় কর চূর্ন; যার ভারে তাপিত হৃদয়।।
ব্রহ্ম জ্ঞান ব্রহ্মবাণে, দুর্ম্মতিরূপ দশাননে;
বিনাশ কর জানে প্রাণে, তবে অঙ্গ শীতল হয়।
সত্যরূপ লক্ষ্মণে পাঠাও, অজ্ঞান ইন্দ্রজিতে হটাও, সবংশেতে করুক ক্ষয়।।
মাধূর্য্যরূপ বিভীষণে, বসাও হৃদি সিংহাসনে,
এ বাসনা রাত্র দিনে, তবে বাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
সে যে চরিত্ররূপে মন্দোদরী, কর তারে পাটেশ্বরী, বসুক বিভীষণের বাঁয়।
তারকচাঁদ কয় সন্দ কিরে, যে যেমন বাসনা করে,
বাঞ্ছা পূর্ণ করে তারে, হরিচাঁদ মোর দয়াময়।
মহানন্দের চরণ তরী, অশ্বিনী তাই সম্বল করি, ঘুচাও ভব পারের ভয়।।
৫৯নং তাল - কাশ্মিরী
কে কে নিবি আয়না, তোরা, মধুর হরিনাম।
ঐ দেখ ডা’কছে হরি গুণধাম।।
জীবের বড় ভাগ্য ছিল, হরি কল্পতরু এল,
নাম দিয়া জগৎ মাতা’ল কেউকে তা না হ’ল বাম;
সত্য ত্রেতা দ্বাপর গেল, যে তত্ত্ব না বিলাইল,
সেই ধন লয়ে ধরায় এল, পুরা’তে জীবের মনস্কাম।।
হরি ব’লতে আছে কত, এ জগতে অগণিত,
এ নাম নয় সে নামের মত, গোপনে ছিল, গোলোকধাম।।
এ নাম নয় সে নামের মত, গোপনে ছিল, গোলোকধাম।।
রাধাকৃষ্ণ উভয়াঙ্গ, মথনে হয় প্রেম তরঙ্গ,
নাম উৎপত্তি প্রেমের রঙ্গ, গোলোকে ক’রলেন রাধাশ্যাম।।
সেই হরিরনাম ল’য়ে এবার, এল হরিশচন্দ্র আমার,
কলির জীব করিল নিস্তার অশ্বিনী নামে হ’ল বাম।
৬০নং তাল - কাশ্মিরী
হরি নাম সিংহ রবে, পলায় শমন বাঘ।
দেখে ভক্ত সিংহের প্রেম অনুরাগ।।
ষড়রিপু পশু ছয় জন, ছেয়ে তারা হৃদয় কানন,
ভয় পেয়ে করে পলায়ন, ঘু’চল দশ ইন্দ্রিয়ের জাঁক।।
শুনে মদুর হরিধ্বনি, আনন্দে নাচে মেদিনী;
নাচে গঙ্গা সুরধনী ঘুচল কলির কলুষ দাগ।।
হরি সিংহ শাবক যারা, হু-হুষ্কারে কাঁপায় ধরা;
কলির রাজত্ব তারা, কেড়ে নিল দিল না ভাগ।।
প্রেম রসেতে মাতায় জগৎ কিবা কাঙ্গাল কিবা মহৎ
জগতে না থা’কবে অসৎ, সকলে সাধু মহাভাগ।।
হরিচাঁদ জগতে এল, চিত্ত সন্দ ঘুচিয়ে গেল,
সকলে চৈতন্য হ’ল, অশ্বিনী হ’লনা সজাগ।।
৬১নং তাল - গড়খেমটা
প্রেমের পাগল সাজলিনা মন, কিসে মিলবে গুরু বস্তু ধন।
ভবের পাগল সাজিয়ে রৈলি, গোলমালে হ’লি পতন।।
প্রেম-নগরে উঠছে সাড়া, প্রেমের পাগল যারা যারা,
প্রেমানন্দে মাতয়ারা, ডুবু ডুবু দু’নয়ন।।
প্রেম পাগলের এমনি রীতি, হৃদয়ে অনুরাগের বাঁতি;
জ্বলিতেছে দিবারাতি, দে’খতে পায় যুগলমিলন।।
প্রেম রসেতে মত্ত হ’য়ে, অষ্টপাশ সে তেয়াগিয়ে;
আহার নিদ্রা সাইকে দিয়ে, করে প্রেম আস্বাদন।।
প্রেমের পাগল গোলোকচন্দ্র, আর মেতেছে মহানন্দ;
আর এক পাগল তারকচন্দ্র, আর পাগল সে হীরামন।।
মহানন্দের এই মিনতি, ক’রব আমরা হরি পতি,
অশ্বিনী তোর কি দুর্গতি, ভজলিনা গুরুর চরণ।।
৬২নং তাল -রাণেটী
কররে মন মানুষ বর্ত্ত নিত্য মানুষের সাধনা।।
অনুমান কায়া শূন্য ছায়ার কেন কর ভাবনা’
গুরুপদে স’পে দেওরে মন, (হারে) ঘুচবেরে তোর মনের আঁধার জুড়াবে জীবন।
কর বর্তমানে ভজন পূজন, পূরবে তোর মনের বাসনা।।
রামের ভক্ত চিল হনুমান, বনের পশু হয়ে পেল ভজনের সন্ধান।।
হনু রাম পদে সপে দিয়ে প্রাণ অন্য রূপ চক্ষে হেরে না।।
ঘুচবেরে তোর দশ ইন্দ্রিয়ের জাঁক, গুরু পদে মন মজায়ে বাধ অনুরাগ।
যার লেগেছে সেই প্রেমের দাগ, নয়ন দে’খলে যায় গো চেনা?
যাগ যজ্ঞ পূজা মন্ত্র ধ্যান, ভাবটি দিয়া নামটি চেতাও এত কর কেন।
গুরু রূপে মেঘ সাজায়ে, চাতক হয়ে চেয়ে থাক না।।
দয়াল মহানন্দ আনন্দ হৃদয়, ডেকে বলে অশ্বিনী তোর সময়ে বয়ে যায়।
এবার তারকচাঁদকে করে সহায়, গুরুচাঁদের হওগে কেনা।।
৬৩নং তাল - রাণেটী
দয়া করি দয়াল গুরু রেখ আমায় সেবা দাসী।
আমার আর কোন ধন নাই দরদি, কি দিয়া করিব খুশী।।
আমি তব দাসীর যোগ্য নই, (হারে) তবু পোড়া মনে বলে সেবা দাসী হই,
বুঝালে মন বুঝে বা কই, তবু ঐ রূপ ভালবাসি।।
হৃদ কমলে তোমায় বসা’ব, মনে বলে নয়ন জলে চরণ ধোয়াব।।
কেশ দিয়া মোছাইব, এই ভাবনা ভাবি বসি।।
কথায় কথায় বলে অনেক জন, ভষ্ম ফেলতে ভাঙ্গা কুলা করে প্রয়োজন;
আমায় দাসী রেখ তেমনি মতন, সে যোগ্য নই বাঞ্চা বেশী।।
তব দয়া গয়াতে যা’ব কামনা জননী মায়ের শ্রাদ্ধ করিব;
ভ্রান্ত পিতার নামে ন্ডি দিব, হব ও প্রেম তীর্থবাসী।।
হরি চাঁদের মহিমা অপার, তারকচাঁদকে জামিন রেখ অশ্বিনী বর্বর;
তবে গুরুচাঁদ তাই করবেন স্বীকার, মন তুমি যার অভিলাষী।
৬৪নং তাল –
হরি নাম বিনে আর বন্ধু নাই ভাই ভবপার যেতে।।
আমার দয়াল হরি দয়া করি এল জগতে।।
দেবের দুর্লভ প্রেম ভক্তি, লয়ে অগতির গতি;
সদয় হয়ে জীবের প্রতি এসেছে দিতে।।
গুরু নিষ্ঠা নামে রুচি, এই ধর্ম হয় সর্ব শুচি;
এবার প্রাপ্ত হয়ে হাড়ি মুচি গিয়াছে মেতে।।
ন্যাস কুম্ভক কুটিনাটি, রেচক পুরক ময়লা মাটি,
কলিতে নাম যজ্ঞ খাটি, সব ধর্ম্ম হতে।।
যোগীন্যাসী কর্মী জ্ঞানী, ব্রহ্মচারী পূজক ধ্যানী;
করে মলাট লয়ে টানা টানি, বঞ্চিত প্রেমেতে।।
দয়াল মহানন্দ বলে, কাজ কিরে আর ফলাফলে,
অশ্বিনী তুই হরি বলে, ডুবদে প্রেমেতে।।
৬৫নং তাল - একতাল
কেন কর ভাই দ্বেষা দ্বেষী, এস সবে করি মেশামেশি।
হয়ে দেল খোলসা গুরু ভরসা, হব গুরুর সেবাদাসী।।
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র, যোগী ঋষি কি সন্ন্যাসী।
তার কাছেতে সবাই সমান, স্বর্গ নরক গয়া কাশী।।
কেন কর ভাই দলাদলি, কোলাকোলি কর আসি।
ভবে এক পতা বই, পিতা আছে কই, এক পিতা এই ত্রিলোক বাসী।।
জাতি বিদ্যা মহতঞ্চ, রূপ যৌবন সর্ব্বনাশী।
ভবে এই পঞ্চজন, ভক্তির কন্টক, তাদের কেন ভালবাসি।।
একই ক্ষেত্রে এক বিরজেতে, জন্ম নিলাম জগৎবাসী।
রইল এ বড় খেদ, আত্মবিচ্ছেদ, করে হিংসা নীরে ভাসি।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র, ধারণ কর তত্ত্বমসি,
অশ্বিনী তোর কর্ম্ম সূত্র, কেটে আমায় কর খুশী।।
৬৬নং তাল - গড়খেমটা
আমাকে ছুসনালো প্রাণ সজনী।
আমার জাত মেরে রেখেছে, ঘরে হরিচাঁদ গুণমণি॥
আমার বাতাস লাগলে তোদের গায়, শেষে ঠেকবি বিষম দায়;
কুলমান যাবে পাছে ক’রবি কি উপায়।
সদায় হরি বলে কাঁদতে হবে গো, সব লোকে ব’লবে লো কলঙ্কিনী।।
হরির প্রেম ত সহজ নয়, যেমন বিষে উজান ধায়;
ধিক ধিক করে জ্বলবে হিয়ে, করবিরে হায় হায়,
শেষে প্রোমনলে, মরবি জ্বলে গো, পথিক লোকে ব’লবে গো পাগলিনী।।
তার বিরহে বএল মরলেম সই, মনের দুঃখ কার কাছে বা কই;
উড়ু উড়ু করলো প্রাণ কিসে ধৈর্য্য রই।
সে যে মন নিল প্রাণ নিল গো, হরিয়া নিল এ নয়ন মণি।।
আমাতে আমি কি আছি, কি করতে কিনা করিতেছি;
আমার হরিচাঁদের প্রেম সাগরে, মদায় ভাসতেছি।
আমি ক্ষনেক হাসি ক্ষনেক কাঁদি গো; প্রবোধ না মানে দিবা রজনী।।
ডেকে স্বামী মহানন্দ কয়, হরিপ্রেম লেগেছে যার গায়;
সেই সে জানে প্রেমের জ্বালা, কেঁদে বুক ভাসায়।
গোঁসাই তারকচন্দ্র ডেকে সুধায় গো, হরি প্রেম নিলিনা দীন অশ্বিনী।।
৬৭নং তাল - গড়খেমটা
আমি কি আমাতে আছি;
হরিচাঁদের রূপে নয়ন দিয়ে (হারে) ঘরের বাহিরে হয়েছি।।
আমার মন পোড়া এক রোগ হয়েছে সখি, সেই জ্বালায় জ্বলে ম’রতেছি।।
মন পোড়া রোগের রীতি, (হারে) সদয়া জ্বলে বিষের বাতি;
আমার মন হয়েছে ছন্নমতি, কি করতে কিনা করতেছি;
হয়ে পাগল পারা, মাতোয়ারা, সখি কুলের ভয় ভুলে গিয়াছি।।
এ বড় কঠিন ব্যারাম, কিছুতে না হয় গো আরাম,
কেবল বলি মলেম মরমে মরে রয়েছি।
হরি চিন্তামণি ঔষধ দে গো এনে তবে সই পরাণে বাঁচি।।
(কেউ যদি বান্ধব থাক গো)
হরি প্রেম বিচ্ছেদ রোগে, আমি বাঁচিনা তার ভাব উদ্বেগে,
আমার মন লাগেনা ভোগে যোগে, যে রোগে রোগী হয়েছি।
আমি ক্ষনেক হাসি ক্ষনেক কাঁদি সখি, মন পোড়া বাউরি সেজেছি।।
লেগে সেই রূপের ছটা, আমার খসে প’ল পঞ্চ কাঁটা,
জাত কুলের পর দিয়ে বাটা, তরঙ্গে সাঁতার খেলতেছি;
যেদিক ফিরাই আঁছি, সেই দিক দেখি সখি, হরিময় জগৎ দেখিতেছি।।
তারক চাঁদ ডেকে বলে, স্বামী মহানন্দের সঙ্গ নিলে,
তার এই দশা ঘটে কপালে, স্বচক্ষে কত দেখেছি;
এবার অশ্বিনী ঐ রোগে মরুক জ্বলে, তা হলে আনন্দে নাচি!
৬৮নং তাল – ঠুংরী
রূপ সাগরে যে জন ডুবেছে।
সে যে স্বরূপ রূপে নয়ন দিয়ে, মনের মানুষ বলে কাঁদতেছে।।
হয়ে সে রূপের আশ্রিত, ডুব দিয়ে জনমের মত;
ও সে হয়ে রূপের অনুগত, প্রেম সাগরে ভাসতেছে।।
ডুবু ডুবু নয়ন তারা, দুনয়নে বহে ধারা;
ওতার প্রেমে তনু জ্বারা দ্বারা, মরমে দাগ লেগেছে।
হাই-হুতাশ বাতুলের মত, কেঁদে বেড়ায় অবিরত;
ও সে সমর্পিয়া আত্বস্বার্থ, সাঁই বলে হাই ছাড়তেছে।।
হরিচাঁদের প্রেম বাতাসে, গোলোকচাঁদ তরঙ্গে ভাসে;
দয়াল মহানন্দ ঐরূপ রসে, পাগল বেশে ঘুরতেছে।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র; অশ্বিনী তোর যায় না সন্দ;
ঐ দেখ উদয় হ’ল হরিচন্দ্র, জগৎ আলো করছে।।
৬৯নং তাল -ঠুংরী
নিষ্কাম নগরে চল মন।
কেন কামাখ্যা নগরে এসে হারা হলি পরম ধন।।
নিষ্কাম নগরে যাবি, স্বরূপের রূপ দেখতে পাবি;
প্রেমানন্দে সুখে রবি (মনরে) জুড়াবে তাপিত জীবন।।
নিষ্কাম রাজ্যের রসিক ময়রা, প্রেম রসেতে মাতোয়ারা;
প্রেমের দোকান পেতে তারা, করছে বেচা কেনা অনুক্ষণ।।
নিষ্কাম রাজ্যের এমনি রীতি, কাম গন্ধহীন প্রেম পিরীতি,
জ্বেলে অনুরাগের বাতি, তারা দেখতে পায় যুগল মিলন।
নিষ্কাম রাজ্যের রাজা যিনি, হরিচাঁদ প্রেম শিরোমণি;
ভক্তবৃন্দ লয়ে তিনি, সদায় করতেছে প্রেম বরিষণ।।
নিষ্কাম রাজ্যে মহানন্দ, বিলাইতেছে প্রেমানন্দ,
অশ্বিনী তুই অজ্ঞানান্ধ, করলি না রূপ দরশন।।
৭০নং তাল - ঠুংরী
গুরুচাঁদের তবিল ভেঙ্গে ভাই হলেম অপরাধী।
আমার মত কেউ হও’না, এবার ভাল চাওরে যদি।।
গুরুচাঁদ তাই ক’রছে মানা (হারে) জরিমানা কেউ খেওনা, সে আর কুল পাবে না।
অকুলের কুল দিতে হরি, উদয় হল ওড়াকান্দি।।
অবতীর্ণ জীবের জন্য, নিহেতু প্রেম দিবার জন্য আপনি হলেন দৈন্য,
মন বিনা সে চায়না অন্য, আমার হরি গুণনিধি।।
হরিচাঁদের নির্ম্মল করণ, একবিন্দু পেয়েছে যে জন, সে হয় প্রেম মহাজন।
ও তার সাক্ষী গোলোকচাঁদ হীরামন, তারা পার হ’ল বেদ বিধি।।
গুরুচাঁদের এই ভারতী, জ্বেলে অনুরাগের বাতি, ভজ হরিপতি।
প্রাপ্ত হবে মধুর রতি, ও তার সুখের নাই অবধি।।
অশ্বিনী তাই করে হলো, খেলতে গিয়ে ভবের খেলা ঘটেছে বিষম জ্বালা।
অর্থ লোভে সাধুর পোলা, হল হরিপ্রেম বিরোধী।।
Social Counter
Comments